![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ইতিবাচক চিন্তার শক্তিতে বিশ্বাস করি এবং আমার কাজ এবং কথার মাধ্যমে অন্যদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করি। আমার ব্লগে আসার জন্য ধন্যবাদ। আসুন, একসাথে কাজ করে সফলতার পথে এগিয়ে যাই!
১. হাংগরের প্রভাত
পাহাড়ের বুক ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক ছোট্ট হাংগর, বাঁশের কাঠামো আর পাতা-ছাওয়া ছাদে গড়া। এখানেই এচিং মার্মার বসবাস। খাগড়াছড়ির দীঘিনালার শেষপ্রান্তে, যেখানে রাস্তা শেষ, সেখান থেকেই শুরু হয় তার জীবন।
প্রতিদিন ভোরে সে জাগে পাখির কিচিরমিচিরে, ঘুমচোখে প্রথম যে দৃশ্য দেখে তা হলো বন ঝোপের ফাঁক দিয়ে ছুটে চলা ছড়ার জল।
"ইনুংপাই, উখুইলাং খুই!" — তার দিদিমা সবসময় বলতেন, “জল যদি হাসে, পাহাড়ও কাঁদে।”
২. বন্ধুত্ব ও অতীত
নুথোয়াই তার শৈশববন্ধু। একসাথে মিঠাছড়ার পাড়ে ছোটবেলায় মাছ ধরেছে, দিঘির কচুরিপানায় গা ভাসিয়েছে। এখন তারা বড় হয়েছে—এচিং জুমের কাজে, আর নুথোয়াই বনে কাঠ কাটে।
আর মিংথু মার্মা? গ্রামের নিঃশব্দ মেয়ে। একসময় তার বাবা ছিল গ্রামের পুরোহিত। এক পাহাড়ি ধসের রাতে, তার পরিবার ছিটকে গিয়েছিল ছড়ার জলে। সেই থেকেই মিংথু “দূরদৃষ্টি” পেয়েছে বলে অনেকেই বিশ্বাস করে।
এচিং কখনো তা মানত না—তবে মিংথুর চোখে যে একটা অদ্ভুত নীরবতা আছে, তা অস্বীকারও করতে পারত না।
৩. স্বপ্ন ও সতর্কতা
সেই রাতটা ছিল কুহেলিকা-ঢাকা। মেঘলা আকাশের নিচে এচিং স্বপ্ন দেখে—
ছড়ায় অদ্ভুত ছায়া-জল নেমে আসছে। কালো জল নয়, যেন নিঃশব্দ গর্জনের মতো এক অদৃশ্য শক্তি।
জল ভাসিয়ে নিচ্ছে জুম, ঘর, পাখি, মানুষ... সব। শিশুরা চুপচাপ নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
ঘুম ভাঙে। গলা শুকনো। হৃদয় ধড়ফড়।
সে জানালার বাইরে দেখে—ছড়া এখনও শান্ত। কিন্তু কোথাও যেন কিছু বদলেছে।
৪. অবিশ্বাস ও ধীরে আতঙ্ক
পরদিন সে নুথোয়াইকে বলে:
“ভাই, গতরাতে স্বপ্ন দেখলাম—আমাদের ছড়া বদলে গেছে। মনে হলো ঈশ্বর কিছু ভুল করছেন।”
নুথোয়াই হেসে বলে,
“তুইও দিদিমার মতো পাগল হসনি তো?”
এচিং পরের দিন যায় কারবারী বুড়ো লাকপোর কাছে। বুড়ো শুনে চুপ করে থাকে, তারপর বলে—
“মার্মা পুরাণে ‘তাই-চ্রুং’ আছে। ছায়া যখন জলকে পবিত্র করে ফেলতে চায়, তখন ঈশ্বর চোখ ফিরিয়ে নেয়। হয়তো তুই তাই দেখেছিস।”
কেউই ভয় পায় না।
তবে ছড়ার জল এখন ঘোলা, মাছেরা মরতে শুরু করেছে। পাথরজুড়ে জমে কুচকুচে একধরনের শেওলা, যা এ অঞ্চলে কেউ আগে দেখেনি। শিশুরা রাতে দুঃস্বপ্নে চিৎকার করছে।
এক মহিলা হারিয়ে ফেলেছে নিজের নাম, শুধু বারবার বলছে,
“ওলাঃ ওলাঃ ছাং লুই...”— “ছায়া নামছে... ছায়া নামছে...”
৫. মিংথুর দূরদৃষ্টি
এচিং মিংথুকে জিজ্ঞেস করে—
“তুই তো জানিস কিছু। বল, প্লাবন আসছে?”
মিংথু কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে, চোখ তুলে এচিংয়ের দিকে তাকায়, বলে—
“আমার পরিবার ছড়ায় হারিয়ে গিয়েছিল। আগেও একবার এমন ছায়া এসেছিল, ঠিক যেমন আজকের ঘ্রাণ।”
সে চুপ করে থাকে।
তারপর ধীরে বলে—
“তুই বিশ্বাস করিস বা না করিস, এবারও ঈশ্বর ভুল করতে চলেছেন।”
৬. ভ্রান্তি ও বোধ
এচিং প্রথমে সিদ্ধান্ত নেয়, কিছুই হবে না।
সে ছেলেমেয়েদের পাহাড় থেকে দূরে যেতে মানা করে, স্বপ্নের কথা নিজেই ভুলে যেতে চায়।
কিন্তু সেই রাতে সে দেখে ছড়ার জল বিপরীত দিকে বয়ে যাচ্ছে। আর তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে মিংথুর বাবার ছায়া।
তখনই সে বুঝতে পারে—
যদি ঈশ্বর ভুল করেন, পাহাড় নিজেই ঠিক করবে। কিন্তু সময় থাকতে পাহাড়িদের বাঁচতে হবে।
৭. উপশম ও প্লাবন
সে জুমের বাঁশ দিয়ে এক মাচাং বানায় উঁচু গুহার মধ্যে। ছোট বাচ্চাদের তুলে রাখে সেখানে।
নুথোয়াই তখনও সন্দিহান। তবে যখন তার নিজের বাড়ির দেয়াল ভেঙে ছড়া ঢুকে পড়ে—তখন আর সন্দেহ থাকে না।
সেই রাতেই “ছায়া প্লাবন” নামে।
না, সেটা কেবল জল নয়।
ঘরঘর করে বয়ে আসে ছড়ার গর্জন। গাছগুলো শব্দ না করেই উপড়ে যায়।
মানুষ চিৎকার করে না—তারা শুধু হারিয়ে যায়, যেন কেবল স্মৃতিতে বাঁচবে।
৮. শেষ পাথেয়
এচিং যখন গুহার পাশে দাঁড়িয়ে, তখন সে দেখছে—সবুজ পাহাড় যেন শবের মতো নিঃশব্দে শুয়ে আছে।
এক শিশু জিজ্ঞেস করে—
“এচিং ভাই, ঈশ্বর কি ভুল করতে পারেন?”
এচিং তাকিয়ে থাকে দূরে।
তারপর বলে—
“হয়তো ঈশ্বর ভুল করেন না। আমরা বুঝি ভুলভাবে। কিন্তু পাহাড় জানে ঠিক কিভাবে স্মৃতি টিকিয়ে রাখতে হয়।”
মিংথু এসে দাঁড়ায় তার পাশে।
সে বলে—
“আজ আমরা বাঁচলাম, কারণ আমরা ভয় পেয়েছিলাম ঠিক সময়ে। ভয় কখনও শুধু দুর্বলতা নয়, এ এক ছায়া... যা বাঁচিয়ে রাখে।”
সমাপ্তি
২২ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:০৩
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনার মন্তব্যটি সত্যিই ভাবনায় ফেলল।
"ঈশ্বর" এখানে শুধুই কোনো ধর্মীয় চরিত্র নয়—তিনি গল্পে এক প্রতীক, এক মহাশক্তির রূপক। আর "ছায়া"? সেটাও বাস্তবের বিপরীতে থাকা আমাদের অজ্ঞতা, ভয় ও অনিশ্চয়তার প্রতিমূর্তি।
এই গল্পে ঈশ্বরের ‘ভুল’ আসলে মানুষের সীমাবদ্ধ উপলব্ধি—যেখানে প্রকৃতি, বিশ্বাস, এবং বাস্তবতা এক রহস্যময় আবর্তে মিশে যায়।
অর্থাৎ, ঈশ্বর যদি কাল্পনিক হন, তবে তাঁর ছায়াও তো আমাদের অভ্যন্তরের কল্পনার ছায়া—যা ঠিক সময় হলে বাস্তব বিপদ হয়ে ধেয়ে আসে।
ধন্যবাদ, আপনি গল্পের গভীর প্রশ্নটিকেই ছুঁয়ে ফেলেছেন—
"আমরা যা বুঝি না, তাকে কি কাল্পনিক বলেই ফেলে দিই? নাকি সেটা আমাদের বুঝে ওঠার সীমাবদ্ধতার ছায়া?"
২| ২২ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:১৪
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: গল্পের সবচেয়ে ইত্তেজনাপূর্ন অংশ- যেখানে চূড়ান্ত রূপ নেয়। কখনো তার বিপরীত ও ভাবতে হয়। আপনার গল্পের সেটিং যথাযত। দৃষ্টিকোণ থেকে হয়তো কারোর কারোর কটু ভাবাবে কিন্তু ভাবনারা পরাবাস্তব। লিখে যাবেন সাথে আছি।
২২ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:২৯
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনার মন্তব্যটা একদম গল্পের আত্মায় হাত রেখেছে।
চূড়ান্ত মুহূর্তের উত্তেজনা আসলে আমাদেরই একান্ত, অজানা ভয় থেকে উঠে আসে—যা কখনো ছায়া, কখনো প্লাবন হয়ে ধেয়ে আসে।
আপনার মতো পাঠক যখন বলেন, “কখনো তার বিপরীতও ভাবতে হয়”—ঠিক তখনই একজন লেখক বুঝতে পারে, গল্প শুধু পড়া হয়নি, অনুভব করা হয়েছে।
হ্যাঁ, গল্পটি কখনো কটু, কখনো পরাবাস্তব—কিন্তু জীবনেরই তো অনেক সত্য চোখে দেখা যায় না, তবু তা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে।
আপনার সঙ্গ, এই অনুভূতির স্বীকৃতি—এটাই লেখার বড় প্রাপ্তি।
পাশে থাকুন, কারণ এমন পাঠকরাই লেখাকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যান।
লিখে যাচ্ছি… আপনি পড়ছেন, এটাই সবচেয়ে বড় প্রেরণা।
আবার দেখা হবে কোনো এক ছায়ার পাড়ে।
৩| ২২ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:৫২
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: গল্প ভালো হয়েছে।
২২ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:৫৮
শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: আপনার "গল্প ভালো হয়েছে" বলাটাই গল্পটার জন্য একরকম আশীর্বাদ।
কখনো কখনো কয়েকটা সহজ শব্দেই পুরো লেখার পরিশ্রম সার্থক হয়ে যায়। আপনার এই ছোট মন্তব্য, আমার জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণা। ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে মে, ২০২৫ রাত ৮:৪৯
কামাল১৮ বলেছেন: ঈশ্বর নিজেই এক কাল্পনিক সত্তা।তার আবার ছায়া।