![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গত ২৫ এপ্রিল নেপালে রিখ্টার স্কেলে ৮.১ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে অনেক হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। আমরা মন থেকে নেপালের জনগণকে, বিশেষ করে ভূমিকম্প কবলিত এলাকার জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। আশা করি তাদের সবকিছু তাড়াতাড়ি আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তাড়াতাড়ি তাদের জীবন আবার সুন্দর হয়ে উঠবে। কারণ, তারা একা নয়, সারা বিশ্ব তাদের পাশে আছে। সারা বিশ্ব তাদের সাহায্য করছে।
আসলে ভূমিকম্প নিয়ে আমাদেরকে একটি বিষয় খুব গুরুত্বসহকারে চিন্তা করা উচিত, তা হল ভূমিকম্পের সময় কি করলে মানুষের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। আমরা জানি জাপানে ঘন ঘন ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে, তবে সে দেশে হতাহতের হার অন্যান্য দেশের চেয়ে কম। এর একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল সে দেশে সবসময় জনগণকে সংশ্লিষ্ট জ্ঞান জানায় এবং বিশেষ করে সবসময় এমন প্রশিক্ষণ ও মহড়ার আয়োজন করে। এর ফলে ভূমিকম্পের সময় নিজেকে রক্ষা করা এবং উদ্ধার করার পদ্ধতি তারা খুব ভালোভাবে আয়ত্ত করেছে। এ পদ্ধতিতে তারা বেশ ইতিবাচক ফলও পেয়েছে ।
প্রথমে আমরা দৃষ্টিতে ফেরাতে চাই এ শতাব্দীতে ঘটা সবচেয়ে ভয়াবহ কয়েকটি ভূমিকম্পের দিকে।
২০০৩ সালের ২১ মে, আলজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে রিখ্টার স্কেলে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে প্রায় ২৩০০ জন নিহত এবং ১০ হাজারেরও বেশি লোক আহত হয়। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের উত্তর দিকের সমুদ্রে ৮.৭
মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর ফলে সুনামিও সৃষ্টি হয়। এতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এতে নিহত হয় ২ লাখেরও বেশি লোক। ২০০৫ সালের ২৮ মার্চ একই স্থানে আবারও ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে ৯ শ'রও বেশি লোক নিহত হয়। ২০০৮ সালের ১২ মে চীনের সি ছুয়ান প্রদেশের ওয়েন ছুয়ান জেলায় রিখ্টার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে কমপক্ষে ৬২৩৪ জন নিহত ও ৪৬ হাজারেরও বেশি লোক আহত হয়।
২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি হাইতিতে ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে প্রায় ৩ লাখ লোক নিহত এবং ৩ লাখেরও বেশি লোক আহত হয়। একই বছরের ১৪ এপ্রিল চীনের ছিং হাই প্রদেশের ইয়ু সু জেলায় রিখ্টার স্কেলে ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে ২৬৯৮ জন নিহত এবং ২৭০ জন নিখোঁজ হয়।
২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সমুদ্রে রিখ্টার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে এবং সুনামি সৃষ্টি হয়। এতে ১৫ হাজার ৮৮১ জন নিহত এবং ২৬৬৮ জন আহত হয়। আরো আতংকের বিষয় হল ভূমিকম্প ও সুনামির প্রভাবে দেশটির ফুকুশিমার পরমাণু বিদ্যুত্ কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় পদার্থ নির্গত হয়। যা আরো গুরুত্বর আরো ভয়ঙ্কর।
এসব হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা হয়তো অনেক সহজেই বলা যায় বা উল্লেখ করা যায়, তবে এর পেছনে রয়েছে অনেক পরিবারের সীমাহীন দুঃখ ও দুর্ভোগ।
এবার আমরা দেখতে চাই ভূমিকম্প কি এবং এর কারণ। ভূমিকম্প মানেই আতঙ্ক। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ভূমিকম্প হয়ে থাকে। কখনও কি ভেবে দেখেছেন ভূমিকম্প কেন হয়? কেন বিশেষ বিশেষ কিছু স্থানে ভূমিকম্প বেশি হয় আবার কিছু স্থানে মোটামুটি ভূমিকম্প হয় না বললেই চলে? এ প্রশ্নগুলো শত শত বছর ধরে মানুষকে ভাবালেও এর উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত। পৃথিবীতে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে চলেছে৷ কিন্তু এসবের মধ্যে ভূমিকম্পই হচ্ছে সবচেয়ে ভয়াবহ। কারণ এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের
চেয়ে অনেক বেশি। মাটির নীচ থেকে হঠাত করেই যেন কেঁপে ওঠে গোটা পৃথিবী। লণ্ডভণ্ড করে দেয় পুরো এলাকা।
আসলে ভূমিকম্প কেন হয়ে থাকে?
এ বিষয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে । বিশেষজ্ঞদের মতে, গোটা ভূপৃষ্ঠই কয়েকটি স্তরে বিভক্ত। আবার প্রতিটি স্তর একাধিক প্লেটে বিভক্ত। এসব বিশাল আকারের প্লেটগুলো যখন একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খায় তখন কেঁপে ওঠে মাটির নীচের তলদেশ। আর এর ফলে আমরা ভূপৃষ্ঠের ওপর ভূকম্পন অনুভব করি। ভূমিকম্পের কারণ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভূপৃষ্ঠের উপরের স্তরে অনেকগুলো প্লেট আছে এগুলো আবার অনেকগুলো সাবপ্লেটে বিভক্ত। এগুলো সবসময় নড়াচড়া করছে। একটার সঙ্গে আরেকটার ঘর্ষণে এই ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়। আবার আগ্নেয়গিরির কারণে ভূ-অভ্যন্তরের ভেতর থেকেও ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়ে থাকে। আবার কোনো কোনো এলাকায় ভূপৃষ্ঠের গভীর থেকে অতিরিক্ত পানি কিংবা তেল ওঠানোর ফলে ভূপৃষ্ঠের অবস্থানের তারতম্য ঘটে।
তাহলে ভূমিকম্পের সময় মানুষ কি করতে পারে? মানে কিভাবে নিজেকে উদ্ধার করতে পারে?
আমেরিকান রেডক্রসের পরামর্শ অনুযায়ী, ভূমিকম্পের সময় সবচেয়ে উত্তম পন্থা হল, ড্রপ- কাভার-হোল্ড অন বা ডাক-কাভার পদ্ধতি। অর্থাৎ কম্পন শুরু হলে মেঝেতে বসে পড়ুন, তারপর কোনো শক্ত টেবিল বা ডেস্কের নীচে ঢুকে আশ্রয় নিন। এমন ডেস্ক বেছে নিন বা এমনভাবে আশ্রয় নিন যেন প্রয়োজনে স্থান বদল করতে পারেন, অপরদিকে উদ্ধার কর্মীদের মতে, বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ার সময় সিলিং যখন কোনো কিছুর ওপর পড়ে তখন একে গুঁড়িয়ে দেয়, ঠিক তার পাশেই ছোট্ট একটি খালি জায়গা বা গর্তের মতো সৃষ্টি হয়। একে তারা বলছেন সেফটি জোন বা ট্রায়াঙ্গল অফ লাইফ। তাই ভূমিকম্পের সময় বড় কোনো সোফা বা বড় কোনো কিছুর পাশে আশ্রয় নিলে বাঁচার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য ছোট্ট একটু গর্তই যথেষ্ট। বিপন্ন অবস্থায় কুকুর, বিড়াল এবং শিশুদের একটা সহজাত প্রবৃত্তি হল কুণ্ডলী করে গুটিসুটি হয়ে যাওয়া। ভূমিকম্পের সময় মানুষেরও এটা অনুসরণ করা উচিত। রাতের বেলা ঘুমানোর সময় ভূমিকম্প হলে কোনো হুড়াহুড়ি করার দরকার নেই। গড়িয়ে মেঝেতে কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে পড়ুন বিছানাকে ঢাল বানিয়ে। তার মানে আবার বিছানার নীচে যেন ঢুকবেন না, বিছানার পাশে আশ্রয় নিন। তেমনি ভূমিকম্পের সময় জানালা বা বারান্দা দিয়ে লাফ দেয়া এসবও করবেন না। ভূমিকম্পের সময় কখনই সিঁড়িতে আশ্রয় নেবেন না।
সিঁড়ির মোমেন্ট অফ ফ্রিকোয়েন্সি বিল্ডিং-এর চাইতে ভিন্ন হয় এবং অনেক সময় বিল্ডিং ভেঙ্গে না পড়লেও সিঁড়ি দ্রুত ভেঙ্গে পড়ে।
চেষ্টা করুন বাসার একেবারে ভিতরের দিকের রুমে না থেকে বাইরের দেয়ালের কাছাকাছি আশ্রয় নিতে। বিল্ডিং-এর ভেতরের দিকে থাকলে সবকিছু ভেঙ্গে পড়ার পর আপনার উদ্ধার পাবার রাস্তা বন্ধ হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বাইরের দেয়ালের কাছাকাছি থাকলে ব্লক কম থাকবে, তাড়াতাড়ি উদ্ধার পাবার সম্ভাবনাও বেশি থাকবে। বড় ভূমিকম্পের পরপরই আরেকটা ছোট ভূমিকম্প হয় যেটাকে আফটার শক বলে। এটার জন্যও সতর্ক থাকুন, না হলে পচা শামুকেই শেষমেশ পা কাটতে হতে পারে।
প্রথম ভূমিকম্পের পর ইউটিলিটি লাইনগুলো (গ্যাস, বিদ্যুত ইত্যাদি) একনজর দেখে নিন। কোথাও কোনো লিক বা ড্যামেজ দেখলে মেইন সুইচ বন্ধ করে দিন।
সবচেয়ে বড় কথা একটি ভূমিকম্পের সময় যেটুকু সময় পাওয়া যায় সেসময় মাথা ঠাণ্ডা রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু আমাদের চেষ্টা করতে হবে। সফল হলেই বাঁচার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে অনেকগুণ ।
©somewhere in net ltd.