নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবের ফেরিওয়ালা !!

কিছুই জানি না নিজের সম্পর্কে...। যখনই জানতে চেয়েছি তখনই হোঁচট খেয়েছি...।

শুভ্র সমুজ্জ্বল

কিছুই জানি না নিজের সম্পর্কে...। যখনই জানতে চেয়েছি তখনই হোঁচট খেয়েছি...।

শুভ্র সমুজ্জ্বল › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেঘের আড়ালে হারিয়ে যাওয়া বিদ্যুৎ চমক

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:২৬

আলো — অন্ধকারে যাই — মাথার ভিতরে

স্বপ্ন নয়, কোন এক বোধ কাজ করে!

স্বপ্ন নয় — শান্তি নয় — ভালোবাসা নয়,

হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়!

আমি তারে পারি না এড়াতে

সে আমার হাত রাখে হাতে;

সব কাজ তুচ্ছ হয়, পণ্ড মনে হয়,

সব চিন্তা — প্রার্থনার সকল সময়

শূন্য মনে হয়,

শূন্য মনে হয়!



উপরের এই কবিতাটির নাম"বোধ"। যিনি লিখেছেন তাঁর নাম জীবনানন্দ দাশ। কাব্যগ্রন্থের নাম 'ধূসর পাণ্ডুলিপি'।নাম জীবনানন্দ, কিন্তু জীবনটা কি আসলেই তাঁর কাছে আনন্দময় ছিল? মনে হয় না। এই একটি কবিতা থেকেই বোঝা যায় জীবন তাঁর কাছে আনন্দময় ছিলোনা, ছিলো হতাশাময়। ভিতরের কঠিন এক হতাশবোধ থেকে তিনি রচনা করেছিলেন এই কবিতাটি। কবিতার প্রতিটি লাইনেই ফুটে উঠেছে হতাশা, শূন্যতা। আনন্দময় জীবনের হাতছানি তিনি আজীবন দূ্র থেকে দেখেছেন কিন্তু সে হাতটিকে কাছে গিয়ে কখনোই ছুঁয়ে দেখতে পারেননি। তাঁর জীবনের পাণ্ডুলিপিটা ছিলো আসলেই 'ধূসর পাণ্ডুলিপি'। শূন্যতার হাহাকার আজীবন ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়েছে তাঁর জীবনে।



আমিও আজ এক ধরণের শূন্যতায় ভুগছি। এ কারণেই হয়তো শূন্যতা নিয়ে লিখা। সন্ধ্যর পর থেকে কিছু একটা পাওয়ার আশায় প্রায় দেড়ঘণ্টা বসেছিলাম। গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা। সারাদিনের ক্লান্তিতে শরীরটা ভেঙে আসছিল। পায়ের তালুতে সুঁই ফুটানোর মতো ব্যথা অনুভব করছিলাম। দেড়ঘণ্টা পর জানলাম-আমাকে খালি হাতেই ফিরে আসতে হবে। ব্যর্থ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়েছিলাম। সন্ধ্যার আকাশে জীবনের প্রতিচ্ছবিটা দেখার চেষ্টা করছিলাম। রঙিন এ জীবনটাকে তখন ধূসর মনে হচ্ছিলো। নিজের সম্পর্কে আমার ধারণা একেবারেই ক্ষুদ্র। নিজেকে সবসময়ই ক্ষুদ্র ভাবি এবং ক্ষুদ্র ভাবতেই ভালো লাগে। অপদার্থ বিশেষণে নিজেকে সবসময়ই বিশেষায়িত করি। আজকে মনে হচ্ছে আরেকটা বিশেষণে নিজেকে বিশেষায়িত করতে হবে। বেহায়া মাহমুদ। হায়া,লজ্জা,শরম যার নেই তাকে বেহায়া বলা হয়। বেহায়ার লিস্টে নিজের নাম দেখতে হবে এই ধারণা আমার ভিতরে ছিলোনা।



জীবনানন্দের জীবনে অনেক কিছুরই অভাব ছিলো। টাকা পয়সার অভাব, বন্ধুবান্ধবের অভাব, ভালবাসার অভাব,কবি হিসেবে স্বীকৃতির অভাব। বিভিন্ন জায়গাতে চাকরি করেছেন। কখনো চাকরি হারিয়েছেন আবার কখনো ছেড়ে দিয়েছেন।তাই টাকা পয়সার অভাব ছিলো তাঁর নিত্য সঙ্গী। খুব চুপচাপ স্বভাবের মানুষ ছিলেন। কেউ তাঁকে দশটা কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি একটা কথার উত্তর দিতেন। এ ধরণের মানুষের বন্ধুবান্ধব খুব একটা থাকেনা। তাঁরও ছিলোনা।

'নির্জন স্বাক্ষর' কবিতায় তিনি লিখেছেন-

পৃথিবীতে নাই তাহা – আকাশেও নাই তার স্থল-

চেনে নাই তারে অই সমুদ্রের জল!

রাতে রাতে হেঁটে হেঁটে নক্ষত্রের সনে

তারে আমি পাই নাই, কোনো এক মানুষীর মনে

কোনো এক মানুষের তরে

যে জিনিস বেঁচে থাকে হৃদয়ের গভীর গহ্বরে!-



তাঁর জীবনের ভালোবাসার অভাব খুব স্পষ্টভাবেই এই লাইন কয়েকটিতে ফুটে উঠেছে। বিবাহিত জীবনে তিনি সুখী ছিলেন কিনা জানিনা। 'বনলতা সেন' কবিতা থেকে বোঝা যায় -ভালোবাসার বিদ্যুৎ হয়তো তাঁর জীবনেও চমকেছিলো। কিন্তু সে চমক আবার খুব দ্রুতই মেঘের আড়ালে হারিয়ে গেছে।

জীবনানন্দের কবিতা নিয়ে এখন যতটা মাতামাতি করা হয়, তাঁর কাব্য-প্রতিভাকে যতটা সমাদরে গ্রহণ করা হয়, জীবদ্দশায় তিনি এর কিছুই পাননি। শুধু না পাওয়া আর না পাওয়া। অনেকেই মনে করেন এই না পাওয়ার হতাশার বোঝা তিনি আর বইতে পারছিলেন না। তাই ট্রামের নীচে ঝাঁপ দিয়ে সকল বোঝা ঝেড়ে ফেলেছেন।।



ভালোবাসার অভাব আর অর্থের অভাব- এই দুটি জিনিস মানুষকে খুব বেশি যন্ত্রনা দেয়। জীবন সম্পর্কে নিজের দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলে দেয়। অর্থ আর ভালোবাসা একটি কি অন্যটির পরিপূরক? হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন- 'টাকার অভাবে ভালোবাসা পালিয়ে যায়। কিন্তু আবার টাকা দিয়ে ভালোবাসা কেনা যায়না'। কিছুদিন আগেও আমার কাছে মনে হতো বাস্তবতা আসলেই এমন।কিন্তু কিছু ঘটনা দেখে এখন মনে হচ্ছে- টাকা যেখানে আছে ভালোবাসাও সেখানে আছে। আমার মনে হওয়া হয়তো ভুলও হতে পারে........................।।



## আমার লেখার কখনোই আগা-মাথা ঠিক থাকেনা। এটারও ঠিক নেই। পুরাই আউলা ঝাউলা অবস্থা। আউলা মানুষের ঝাউলা লেখা………………।। কিছু কারণে অনেক দিন ব্লগ থেকে দূরে ছিলাম। আজ আবার লিখলাম। জীবনের ধূসরতার কিছুটা সহব্লগারদের মাঝেও ছড়িয়ে দিলাম…………।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.