নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আসলে বুঝতে পারছি না আমি কে বা কি ?

মাধুকরী মৃণ্ময়

কিংকর্তব্যবিমুড়

মাধুকরী মৃণ্ময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৩০



আমাদের পাড়াটা অদ্ভুত। আব্বা যেহেতু করতো ইসলামী সংগঠন করতো তাই বাড়ি করার জন্য খুজে খুজে এইরকম একটা জায়গা বেছে নিয়েছিলো যেখানে সবাই সেই সংগঠন করে। আমাদের পাড়াতে সেই সময় ছাপ্পান্নটার মতো বাড়ি ছিলো । সবাই সেই সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট। পাড়াতে অসংখ্য আনুমানিক সুন্দরী মেয়ে ছিলো। আনুমানিক বলছি এই কারনে যে কারোর মুখ দেখতে পেতাম না।চোখ দেখে অনুমান করে নিতাম সুন্দরী।মেয়েদের সব বাড়িতে যাওয়া জায়েজ ছিলো কিন্তু কোন ছেলে বিনা অনুমতিতে কারো বাড়ি যেতে পা্রতো না। যে সব ছোট ছোট মেয়েদের দেখেছি বিড়াল মার্কা হাফ প্যান্ট পড়ে ঘুরে বেড়াতে তাদের বয়স দশ পার হলেই বোরকা পরিয়ে দেয়া হয়। তাদের মুখ ইহজীবনে আমাদের আর দেখা হতো না। এখন হঠাৎ হঠাৎ কোনো মেয়ে সালাম দিলে ,প্রথমে বলি আপনার নাম কি । নাম বলার পর চিনতে পারি। তখন মনে হয় এই সেই মেয়ে যার নাক দিয়ে সব সময় সর্দি পড়তো। আমি মাঝে মাঝে ফান করে বলি, কি করে বুঝবো তুই সেই মেয়ে , নেকাব খোল, দেখি তোর নাকের অবস্থা। একটা মেয়ে ছিলো যার নাম সাপলা। ও এতো ফর্সা ছিলো যে, আমি বলতাম তুই কি ফেয়ার লাভলি মাখিস না খাস ? এইবার ঈদে তার সাথে দেখা । আমাকে বললো , ভাইয়া ভালো আছেন। আমি বললাম , আপনি কে। ও বললো, আমি ফেয়ার লাভলী খায়।এই সব সাংকেতিক বাক্যে আমাদের মেয়েদের চেনা লাগে।
ও আচ্ছা আমার নাম আবির। শেরপুর শহরের উপকন্ঠে আমাদের বাড়ি। বাড়ির পেছনে অবারিত ধান ক্ষেত সামনে শহর। আমি শেরপুর জেলার একটা অজপাড়াগা থেকে শহরের বাড়িতে যখন আসি তখন আমি গ্রামের স্কুলের এইট পাশ। ফাইনাল পরিক্ষাই আমার রোল নাম্বার ছিলো বিশ।
আমি যখন শহরের স্কুলে নাইনে ভর্তি হলাম, আমার ভর্তি রোল হলো বাইশ। আমার কিঞ্চিত মন খারাপ। একদিন আমি শুনতে পেলাম আমাদের পাড়াই এক অতি রুপবতী মেয়ে আছে। তার মুখ জগতের কেউ দেখে নাই কিন্তু তার জন্য পুরা শহর দিওয়ানা। ঘটনাক্রমে সেই রুপবতীর বাড়ি আমাদের বাড়ির পাশে। আমি তো যারপরনাই খুশি। রোল বাইস হওয়ার জন্য যে মন খারাপ হয়েছিলো তা ভুলে গেলাম। কিন্তু আমার খুসির আগুনে জল ঢেলে দিলো রাশেদ (রাশেদ আমার স্কুলের প্রথম বন্ধু)। সে বললো , এতো খুসি হওয়ার কিছু নাই, সে আমাদের এক ক্লাস উপরে পড়ে আর তার বাপের নাম ক্যাপ্টেন প্লানেট।সুতারং সাধু সাবধান হও!
তখন মঙ্গলবার দুপুরে কার্টুন হতো ক্যাপ্টেন প্লানেট। তার আব্বা ছিলো অসম্ভব রাগী লোক , আমরা তার নাম দিয়েছিলাম ক্যাপ্টেন প্লানেট। কি কারনে মনে নাই। এই রকম আরো অনেকের নাম দিয়েছিলাম । পাশের বাসার সাইফ চাচার নাম দিয়েছিলাম , খাগড়াই। জানিই না এই শব্দের মানে কি।তার পরের বাসার মোখলেস চাচার নাম দিয়েছিলাম ম্যাশিন ম্যান। কারন বুড়া বয়সে একটার পর একটা বাচ্চা নিতো !
সেই চেহার না দেখা রুপবতীর নাম রুবি। আমরা যখন রুবি আপাদের বাসার সামনে দিয়ে যেতাম তখন সবাই জোরে জোরে গান গাইতাম , ক্যাপ্টেন প্লানেট, হি ইজ আ হিরো। মাঝে মাঝে রুবি আপা ঝড়ের বেগে মুখে নেকাব দিয়ে বেরিয়ে এসে বলতো, তোদের ঠ্যাং ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দেবো, ফাজিল পোলাপান। আমরা তখন “রকেট, রকেট” বলে দৌড় দিতাম । রুবি আপা খুব জোরে হাটতো , তাই তার নাম ছিলো রকেট ।
তখন আমার কাছে জীবন মানে ক্লাসের পড়া ফাকি দিয়ে ওয়েস্টার্ন পড়া, বিকালে ক্রিকেট। রুবি আপা ছিলো আপার বান্ধবী। একি ক্লাসে পড়তো। আমাকে দেখলে প্রথম প্রথম নেকাব দিলেও পরে আর দিতো না।
আমি, আপা আর রুবি আপা বসে বসে গল্প করতাম। গল্পের প্রধান বিষয় ছিলো গল্প উপন্যাসের চরিত্র এবং তাদের প্রেম বিরহ।
আমি তখন নিউ টেনে , রুবি আপা মেট্রিক পরিক্ষা দেবে। আমরা এক ই স্কুলে পড়তাম। একদিন রুবি আপার ক্লাসের এক ছেলে আমার হাতে একটা চিঠি দিয়ে বললো, তুই আমার মায়ের পেটের ভাই, রুবিরে এই চিঠি পৌছিয়ে দিস বাপ আমার। আমি নিরস কন্ঠে বললাম, বাপ না ভাই সেটা আগে ঠিক করেন।
আমি ভালো মানুষের মতো চিঠি নিলাম , বললাম ,অবশ্যয় দিবো। তারপর সেই চিঠি খুলে নিজে কয়েকবার পড়লাম । চিঠির ভেতর একটা একশ টাকার নোট ছিলো, সেই নোট পকেটে ঢুকালাম এবং সেই টাকাই বিকাল বেলা বিমলের হোটেলে বন্ধুদের সাথে মোগলাই পরাটা এবং গরুর মাংশ খেলাম।
দিন যায়, সপ্তাহ যায়, ছেলেটা আমার পেছনে ঘুরঘুর করে। আমাদের স্কুলে বড় ভাইরা ছিলো বসের মতো। সেই বস আমার পেছনে ঘুর ঘুর করছে , এইটা ভেবে আমি মনে মনে চরম খুসি।
সেই ছেলে একদিন বললো , ভাইরে কি খবর। আমি মুখ কালো করে বলি, খবর ভালো না। চিঠি দিয়েছিলাম। রুবি আপা চিঠি আমার সামনে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলেছে। ছেলেটা বলে , আর টাকাটা। আমি বলি , টাকাও। ছেলেটা পৃথিবী সমান একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে বিদায় নেই।
আমি একদিন রুবি আপাকে ঘটনা খুলে বলি। রুবি আপা হাসতে হাসতে বলে, মোগলাই পরাটা তোর একা খাওয়া ঠিক হয় নাই। আমাকেও দিতে পারতি। রুবি আপার সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে যায়। আপা বাসায় না থাকলেও সে আমার সাথে গল্প করার জন্য আসতো। নতুন একটা ড্রেস কিনলে , পড়ে এসে বলতো , দেখতো কেমন লাগে। আমি দেখতাম অত্যন্ত রুপসি একটা মেয়ে পর্দা করার কথা ভুলে গিয়ে আমাকে নানান ভংগিতে ড্রেস দেখাচ্ছে। আমি উদাস নয়নে বলতাম, ভালো লাগছে না। বুঝতাম , তার যে সুন্দর লাগছে , এই কথা সে আমার কাছ থেকে শুনতে চাই। আমি বলতাম না। মুখ কালো করে বিদায় নিতো।
আপাকে বলতো , তোর ভাইটা বান্দর । আপা হেসে বলতো , ক্যান তোর কি চুল ধরে টানে। রুবি আপা মুখ নিচু করে বলতো , টানে না, টানে না।
আমরা একই স্যারের কাছে ম্যাথ করতাম। একদিন রুবি আপার পায়ের সাথে আমার পা টেবিলের নিচ দিয়ে ঠুকাঠুকি লাগে। আমি বিদ্যুৎ চমকের মতো চমকে উঠি। বিকাল বেলা আমার মাথায় ভূত চাপতো ।ক্রিকেট খেলার ভূত। আমি ব্যাট হাতে রুবি আপার বাসার সামনে দিয়ে খেলতে যাচ্ছি। রুবি আপা সামনে এসে দাড়াতো। বলতো, আজ না খেললে হয় না । চল গল্প করি। আমি তার কন্ঠের আকুতি বুঝতে পারতাম না। বলতাম , পাগল হয়ছেন। গতকাল দশ রানে হেরেছি। আজকে প্রতিশোধ দিবস। দোয়া রাইখেন।
আবার কোন কোন দিন খেলতে যাচ্ছি, রুবি আপার সাথে মুখোমুখি, ওড়নার নিচ থেকে এক বাটি পায়েস বের করে বলতো, খেয়ে যা, আমি রান্না করেছি। আমি বলতাম , ধুর টাইম নাই। পায়েসের বাটি রাস্তার উপর ছুড়ে ফেলে দিয়ে হনহন করে হেটে যেতো। আমি মনে মনে বলতাম , রকেট লাঞ্চার।
রুবি আপার বাম কপালে টিপের মতো গোলাপি একটা জন্ম দাগ আছে। একদিন আমাকে বললো, আচ্ছা আমার কি সবচেয়ে ভালো লাগে। আমি কোন কিছু না ভেবেই বলে দিলাম, আপনার কপালের টিপ।
এক ঈদের দিন । সাজুগুজু করে এসে বললো, আজ তোকে নিজ হাতে সেমাই খাওয়ায়ে দিই। মা সামনে আছে। আমি কিছুতেই খাবো না। মা বললো, বড় আপা দিচ্ছে খা। আমি দৌড় দিয়ে ঘরে গেলাম । রুবি আপা সেমাই হাতে আমার পিছনে পিছনে । বললো, খা প্লিজ। আমি খেলাম। বললো, তুই কি আমার টিপ ছুতে চাস। তার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার হাত পা কাপা শুরু করলো। আমি চেচিয়ে বললাম, আপা তোর বান্ধবী এসেছে।
সকালে কিছুতেই আমার খুব ভাংতো না। আমার ঘুম ভাঙ্গানোর দায়ীত্ব নিলো সে। খুব ভোরে আমার জানালার কাছে এসে আস্তে করে আমার চুলের ভেতর হাত দিয়ে বলতো, ঘুমালে তোর কি সুন্দর দেখাই! বাবু বাবু মনে হয় । আরো অনেক আদুরে কথা বার্তা। আমার ঘুম ভেঙ্গে যেতো। প্রতিদিন আসতো।
রুবি আপা তখন কলেজে উঠে গেছে। আমার সামনে টেষ্ট পরিক্ষা। থার্ড সেমিষ্টার পরিক্ষাই আমি অংকে পেয়েছি আঠাশ।মানে ফেইল। এতে বাড়ির কেউ অবাক হয় নাই। কারন ম্যাথে এইটা আমার সর্বোচ্চ মার্ক। কিন্তু মা খুব চিন্তিত। তার দৃড় বিশ্বাস মাট্রিকে আমি ফেইল মারবো। মা একদিন রুবি আপাকে বললো , আবির কে অংক দেখিয়ে দে। ও তো অংকে গোল্লা।
রুবি আপা রাজি হলো। রাতে খেয়ে আমাদের বাসায় আসতো। রাত দশটা থেকে আমি তার কাছে পড়তাম। মফস্বল শহর, সবাই এগারোটা মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে । রুবি আপা রাত বারোটা পর্যন্ত আমাকে পড়িয়ে আপার ঘরে ঘুমাতে যেতো। কারোর কিছু মনে করার অবকাশ ছিলো না।
একদিন পড়াতে পড়াতে সে বললো, একটা খেলা খেলবি। আমি বললাম , কি খেলা। সে বললো, যখন আমরা দুজন থাকবো তখন আমরা একে অপরকে তুমি করে বলবো। আমি বললাম , এই খেলা আমার পছন্দ না। আপনাকে তুমি করে বলতে পারবো না। আমার লজ্জা লাগে। সে বললো, কেউ তো শুনছে না। আমি বললাম না শুনুক। দরকার নাই। আপনিতে কি অসুবিধা। সে বললো, সমস্যা আছে। আমি তোর মুখে তুমি শুনতে চাই, সত্যি চাই। আমি বললাম, তুমি আমাকে ভালোমতো পড়ান। রুবি আপা আপা হি হি করে হেসে উঠে বললো, ইউ নিড টু মোর প্র্যাক্টিস।
রুবি আপার বোঝানোর ক্ষমতা ছিলো অসধারন। অংকে আমি ভালো করা শুরু করলাম।
একদিন রাতে রুবি আপা নিজে অংকে করে আমাকে বোঝাচ্ছে। আমি দেখছি। আচমকা খেয়াল করি আমার পায়ের পাতার উপর গরম কি যেনো। পা সরাতে গেলাম, পারলাম না। রুবি আপা তার পায়ের পাতা দিয়ে আমার পা চেপে ধরে রেখেছে। আমার অংক তখন মাথায় উঠে গেছে। আমি তার দিকে তাকালাম। তার কোন ভ্রুক্ষেপ নাই। সে গভীর মনোযোগ দিয়ে অংক করছে আর টেবিলের নিচে আমার পা জোর করে চেপে রেখেছে। পরের দিন একি কাহিনি। তার পরের দিন, তার পা আর আমার পায়ের পাতায় থাকেনি, আস্তে আস্তে উপরে উঠা শুরু করেছে। বাধা দিলাম। বললাম, আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না। সে কিছুই হয় নি , এমন ভাব করে বললো, কেনো এইটা তো সরল অংক , না বোঝার কি আছে । আমি বললাম, অংক না, আপনার পা।
সে এক ঝটকাই পা সরিয়ে বললো, গাধা তুই না বুঝিস অংক না বুঝিস অন্যকিছু। আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম, মনে হলো আমিই অন্যায় করেছি। তারপর থেকে রুবি আপা আমাকে পড়াতে আসতো না।
পথে দেখা হলে বলতো, কি রে, কিছু খেতে মন চাই তোর। আমি বলতাম, না। সে বই এর ভাজ থেকে দশ বিশ টাকা বের করে বলতো বন্ধুদের সাথে গিয়ে খাস। আমি নিতাম।
এরপর আমাদের বাসায় কম আসতো।যখন আসতো তখন প্রথমে আমার ঘরে উকি দিয়ে আপার ঘরে যেতো। আমাকে ডাকতো না। আমিও খুব একটা পাত্তা দিই নাই। তখন আমার জগত ঘুরছে অনুর্ধ উনিশ ক্রিকেট লিগ নিয়ে।
একদিন দুপুরে আকাশ কালো করে মেঘ করলো । কিছুক্ষনের মধ্যেই ঝুম বৃষ্টি নেমে গেলো। টিনের চালে এতো জোরে বৃষ্টি পড়ছে , মনে হচ্ছে চাল ভেঙ্গে যাবে। দুনিয়াতে এই জল তরংগের শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দের অস্তিত্ব নেই তখন। আমি দরজা , জানালা বন্ধ করে কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম। হঠাৎ শুনলাম আমার দরজা কেউ জোরে জোরে বাড়ি মারছে। প্রথমে পাত্তা না দিলেও পরে কান পেতে বুঝলাম আসলেই কেউ একজন দরজা নক করছে। দরজা খুলে দেখি রুবি আপা।
আমি সেই প্রথম আবিস্কার করলাম রুবি আপার জন্য সারা শহরের ছেলে কেনো এতো পাগল। মনে হচ্ছিলো, গভীর সমুদ্র থেকে কোনো জলপরী উঠে এসে আমার দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। তার শরীর থেকে সমুদ্রের পানি এখনো ঝরে পড়ছে । বললো, গাধার মতো দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছিস ক্যান। দেখছিস না আমি ভিজে গেছি। ঢুকতে দে। আমি বললাম, জুতা খুলে ভেতরে আসেন, জুতাই কাদা। আমি বাইরের রুমে থাকতাম। মানে আমার রুম থেকে একেবারে বাড়ির বাইরে যাওয়া যাই আবার বাড়ির ভেতরেও ঢুকা যায়। দুইটা দরজা। আমি বাড়ির ভেতরে যাওয়ার দরজা খুলতে গেলাম। রুবি আপা বললো, খুলিস না। আমি খুললাম না। রুবি আপা যেয়ে বাইরের দরজা মেরে দিলো। ঘর নিকষ কালো আন্ধকার হয়ে গেলো।
আমার বুকের সাথে বুক লাগিয়ে বললো, আমার টিপ টা একটু ছুয়ে দেখ প্লিজ। তার গরম নিঃস্বাসে আমি পুড়ে যাচ্ছিলাম। বললাম, অন্ধকারে দেখতে পারছি না। সে আমার হাত ধরে কপালে ছোয়ালো। আমি মোহবিষ্ট হয়ে গেলাম। সেদিন প্রথম আমার মনে হলো আমি বালক না পুরুষ। আমি কপাল থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে দুই হাত দিয়ে তার মুখ ধরে গোলাপী জন্মদাগে ঠোট ছোয়ালাম। রুবি আপা কাটা কলাগাছের মতো আমার বুকের মধ্যে পড়ে গেলো। আমি প্রথমে ভাবলাম অজ্ঞান হয়ে গেছে। ধরে ঝাকি দিলাম । উহ করে শব্দ করলো।
বৃষ্টি থেমে গেছে । আকাশ পরিস্কার। জানালার ফাক ফোকর দিয়ে আলো আমার রুমে ঢুকছে। আমি দেখতে পাচ্ছি, রুবি আপার ভেজা শরীরের পানিতে আমার সমস্ত শরীর ভিজে গেছে। শুনতে পাচ্ছি, মা আমাকে ডাকছে। বলছে ,বিকেল হয়ে গেছে। আর কতো ঘুমাবি। বাইরের দরজা খুলে বললাম , আপনি যান প্লিজ। রুবি আপা চলে গেলো।
কিছুক্ষন পর রুবি আপার ছোট বোন এসে আমার দরজার সামনে থেকে রুবি আপার স্যান্ডেল নিয়ে গেলো।
এক মাস কেটে গেলো রুবি আপার দেখা নাই। বাড়ির পাশে বাড়ি কিন্তু তারে আমি দেখতে পায় না । কোন এক অদ্ভুত কারনে আমাদের বাড়ির সাথে তাদের বাড়ির সম্পর্কের অবনতি হলো। আমাকে কেউ কিছু বলে না।
একদিন ভোরে চোখ খুলে দেখি যে আমার চুলের ভেতর তার আংগুল। আমার দিকে কি বেদনাভরে চোখে তাকিয়ে আছে! আমার বুক কেপে ওঠে। আমি বলি, কি হয়েছে আপা। আপনি কই ছিলেন। সে কথা বলে না। তাকিয়ে থাকে। আমি বলি, কথা বলেন না ক্যান। সে আমার হাত ধরে বলে, আবির আমার বিয়ে। আমি কি বলবো বুঝতে পারি না। সে আমার হাত থেকে হাত সরিয়ে জানালার গ্রিল ধরে। শক্ত করে ধরে। মনে হয় ওইটাই আমি । তারপর ক্রমাগত বলে যায় , আমার বিয়ে, আমার বিয়ে, আমার বিয়ে। সেদিন সমুদ্রের সব পানি তার চোখে জমা হয়েছিলো।
রুবি আপার বিয়ে হয়ে যায়। সেদিনের পরে সতেরো বছর কেটে গেছে। আমি রুবি আপাকে দেখিনি। ভুল করে সামনে পড়ে গেলে মুখে নেকাব দিয়ে দ্রুত চলে যায়। তার তিন ছেলে। বড় ছেলের কপালে একটা গোলাপি রঙের জন্মদাগ আছে। কোন এক অজানা কারনে সেই ছেলেকে আমি খুব পছন্দ করি। ঈদে নানা বাড়িতে এসে সে আমার গা ঘেষে বিড়ালের মতো বসে থাকে । তার সাথে আমার বন্ধুত্ব। সে আমারে বলে, মামা দেখেন আমার কপালে একটা গোলাপি রঙের টিপ আছে। বিশ্বাস না হলে ছুয়ে দেখেন। আমি ছুয়ে কেপে উঠি।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৩

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনার পোস্টটা দুইবার এসেছে।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:১০

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: আমার প্রোফাইলে একবার দেখাচ্ছে। বুঝতে পারছি না সমস্যা কোথায়।

২| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৮

নীল আকাশ বলেছেন: লেখা ভাল লেগেছে। কিন্তু পুরো লেখাটা ২বার এসেছে।
নিকাব পড়া মেয়ে এইভাবে বয়সে ছোট ছেলের সাথে! কিছুটা খটমট লাগছে।
তাছাড়া ছেলের যে বয়স বলা হচ্ছে তাতে এই মেয়ের তার সামনে নিকাব পড়া বাধ্যতামূলক।
কেন যেন রূপবতী মেয়েরা কাছে আসে না, শুধু দুরেই সড়ে যায়!
ধন্যবাদ।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৭

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: দুনিয়াতে অনেক কিছুই বাধ্যতামুলক ভাইজান। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে আমরা কোন কিছুই করতে বাধ্য না।

৩| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট আমার খুব প্রিয় কার্টূন ছিল।
রুবি আপা কি আসলেই বাস্তব চরিত্র??

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৮

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: আমি জানতাম, আপনি এই প্রশ্ন করবেন। আপনাকে একটা প্রশ্ন করি, ক্যাপ্টেন প্লানেট কি বাস্তব চরিত্র ?!

৪| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:০১

শায়মা বলেছেন: ভাইয়া গল্প বা ঘটনার বিবরণী একদম এক্সসেলেন্টো!!!!!!

১০০তে ২০০

না পাত্তা দেওয়াটাও মজার হয়েছে !
আর না পাত্তা পেয়ে রুবি আপার কেমনটা রাগ লেগেছিলো। প্রতিশোধ পরায়নতা তা ভেবে নিজেই হাসছিলাম!


কিন্তু তুমি দেখছি বানানে আঠাশের হাফ চৌদ্দ রয়ে গেছো আজও!

হা হা হা

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৩

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: ওফ বানান ! এই ঝামেলা আমার যাচ্ছেই না। পরবর্তি লেখাতে এট লিস্ট পাশ মার্ক পেতে হবে।
গল্প ভালো লেগেছে শুনে খুসি হলাম।

৫| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩৭

শায়মা বলেছেন: আবার খুশি করতে গিয়ে খুশি বানানটাই ভুল করলে ভাইয়া!!!!!!!!!!!!!!! 8-|

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৩৪

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: এই "খুসি" মানে কম খুশি। এই "খুশি" মানে বেশি খুশি।
নিজস্ব বাংলা বানান রীতি।

৬| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩৮

শায়মা বলেছেন: নয়ন তোমারে পাই না দেখিতে


এখানেও ভুল .........

তুমি পরীক্ষায় এইবার চৌদ্দ এর আধা ৭ পেলে ....... :)

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:২৪

মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: আমার এতু ভুল হয় ক্যারে। অবশ্য লেখার সময় আমার উপর রবীন্দ্রনাথ ভর করে। মনে হয় যাহা লিখিবো তাহাই সহি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.