নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আসলে বুঝতে পারছি না আমি কে বা কি ?

মাধুকরী মৃণ্ময়

কিংকর্তব্যবিমুড়

মাধুকরী মৃণ্ময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

লক ডাউন

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:১৪



লক ডাউন হওয়ার একদিন পর ফ্লাটমেট চাঁদপুর চলে গেলো। যাওয়ার আগে উনি পাচ কেজি আলু, দশ কেজি চাউল, এক কেজি ডাউল, একটা বড় রুই মাছ কিনে আনলো। বলল, ভাই এইগুলা খায়েন। রান্না করতে অসুবিধা হলে , আমারে ফোন দিয়েন। আমি বলে দিবো কি করা লাগবে।
মুস্তাফিজ ভাই হলো, আমার দেখা বেস্ট নন প্রফেশনাল শেপ। গরুর মাংশের ভেতর আস্ত রসুন দিয়ে ক্যামনে যেনো অল্প আচে রান্না করে । খাইলে স্বাদ মুখে লেগে থাকে দুই দিন। যেদিন মাংশ রান্না হয় , সেদিন ফাতেমা খালাকে ছুটি দিয়ে দিই। ফাতেমা খালা গজ গজ করতে করতে চলে যায়। উনার আত্বসম্মানে লাগে। বলে, মামাগো , আমার রান্না মুখে না রুচলে , আমাকে আল্লার ওয়াস্তে বিদায় দেন। তাও এই অপমান কইরেন না। আমি মাছ রানমু, সবজি রানমু, দুনিয়ার রান্না করবো, শুধু মাত্র মাংশের বেলাই আপনি আমারে চেনেন না । এইডা কেমনধারার কথা।
কোন বুয়া রান্না করতে না পেরে যে দুঃখ পাই, ঢাকার জীবনে আমি প্রথম দেখলাম।
লক ডাউনের জন্য ফাতেমা খালাকে ছুটি দেয়া হয়েছে। উনি যেতে চাই না। বলে, আপনি তো ভাত রানতেও পারেন না। খাবেন কি?! না খায়া মরবেন। আমি আসি। হাত ভালো করে ধুয়ে রান্না করে দিমুনে। আমি রাজি হই না। বলি, বাড়িতে সময় কাটান। মেয়েটাকে সময় দেন ।
উনি মাজায় আচল গুজে সবকিছু পরিস্কার শুরু করে। ঘর ঝাড়ু দিতে দিতে বললো, আপনার মতো আইলসা মানুষ আমি খোদার দুনিয়ার দেখি নাই। আপনি নিশ্চিত না খায়া থাকবেন। আমি দশ দিনের রান্না করে ফ্রিজে রেখে দিই?
আমি কঠিন কন্ঠে বললাম , না বলতে গিয়ে থেমে গেলাম। দেখলাম , উনি কপালে একটা টিপ পড়েছে। ত্রিভুজ আকৃতির লাল টিপ।
আমি বললাম এই সাইজের টিপ কই পাইছেন আপনি। মুখে আচল দিয়ে ফাতেমা খালা হাসে । শখের মইধ্যে শখ একটাই আমার , টিপ পরা। আপনার খালুকে কইছিলাম , সারা জীবনতো গোল গোল টিপ কিইন্না দিলা, এইবার চার কোনা টিপ পরবার শখ জাগছে। উনি চারকোনা পান নাই। তিন কোনা টিপ আইনা দিছে, বংশী বাজার থেকে। আমি আর কথা বাড়ালাম না।
উনি যাওয়ার সময় , দরজার চৌকাঠে হেলান দিলে বললেন, পুরো বিল্ডিং এ কেউ নাই। বিপদে পড়লে আমারে ফোন দিয়েন। হঠাৎ কি যেনো মনে পড়লো , এমন ভংগি তে বললো, আচ্ছা আমি না হয় বাড়ি থেকে রান্না করে দিয়ে যাবো। না খায়া থাকেন না গো মামা।
আমি বললাম, ঠিক আছে সেরকম কিছু হলে আমি ফোন দিবো।

আমি জানি , এই মানুষটা আমাকে ভালো পাই। কারণ উনাকে কখনো আমি কাজের মানুষ হিসাবে দেখি না। আমার ছুটির দিনে উনি রান্না করতে আসলে, আমি পেয়াজ, মরিচ কুটে দিই, তরকারিটা একটু নেড়ে দিই, উনার ছোট মেয়েটার পড়ার খোজ খবর নিই। এইগুলা করতে দেখলে উনার চোখে জল আসে। উনি বলেন ,আপনি মানুষটা ভালা। উনাকে বোধহয় এইরকম কেউ করে না।

ফাতেমা খালা চলে যাওয়ার পর , আমি আর ফোন দিই নাই। ঘুম থেকে উঠি এগারোটার দিকে । তারপর ভাত চড়িয়ে দিই, তারপর ইউটিউব দেখতে দেখতে অখাদ্য রান্না করি। সেটাই কোনরকম খাই।

লকডাউনের তিন দিনের মাথায় একটা ফোন আসে। ওপার থেকে পুরূষ কন্ঠে একজন বলে, আমি ফাতেমার স্বামী বলতেছি। গতকাল রাতে ফাতেমা মারা গেছে। প্রচন্ড স্বাশ কষ্ট। কোথাও ভর্তি করতে পারি নাই। চক্ষের সামনে মরে গেলো, কিছুই করতে পারলাম না। লোকটার গলা ধরে আসে। আমাকে বলছিলো, আপনাকে জানাতে, যেনো খাওয়ার কষ্ট না করেন।
খবরটা শোনার পর আমি ঝিম মেরে বসে থাকি। রাতে ঘুম হয় না।

সেদিন বৃষ্টির রাত । আমি মুভি দেখছি। রাত বারোটা কি একটা হবে। হঠাৎ শুনি রান্নাঘরে পানি পড়ার আওয়াজ। ভাবলাম, আমি ভুল করে ট্যাপ বন্ধ না করে চলে এসেছি। গিয়ে দেখি, আসলেই ট্যাপ বন্ধ করি নাই। বন্ধ করে রুমে আসলাম। কিছুক্ষন পর আবার পানি পড়ার শব্দ। পাত্তা দিলাম না। ভাবলাম, বৃষ্টির রাত , হয়তোবা সানসেট থেকে পানি পড়ছে। আমি মুভি দেখতে লাগলাম। কিছুক্ষন পর শো শো আওয়াজ। জানালা খুলে দিয়ে দেখলাম , বাতাস শুরু হয়েছে কিনা। না, বৃষ্টির পর , একেবারে থমথমে আবহাওয়া। জানালা বন্ধ করে , হেড ফোন কানে দিতে যাবো, এমন সময় শুনলাম ম্যাচ জ্বালানোর শব্দ! ব্যাপার কি !
বাইরে বেরূলাম । রান্নাঘরের লাইট বন্ধ। গ্যাসের চুলা জ্বলছে।
আমি কখন জ্বালালাম? হয়তোবা ভুলে জ্বালাইছি, চা খাওয়ার জন্য। পরে আর মনে নাই। নিভিয়ে দিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হচ্ছি। তখন শুনলাম খনখনে কন্ঠে কে যেনো বলছে, মামাগো , এতো জালাতন করেন ক্যা ? একটু আগে পানি বন্ধ করে গেছেন, এখন আসছেন চুলা বন্ধ করতে। খিচুরি আমি খাবো না আপনি খাবেন? আমার শিরদাড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো। কোনরকমে পেছনে তাকিয়ে দেখি, ফাতেমা খালা পান খাওয়া কালো দাত বের করে হাসছে, উনার কপালে লাল তিনকোনা টিপ অন্ধকারে আগুনের মতো জ্বলজ্বল করেছে।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:০০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

ভয় পাইয়ে দিলেনতো এই মাঝ রাতে !!
আপনি আসলে ফাতেমা খালাকে খুব
ভালোবাসতেন, সম্ভবত মােয়ের আসনে
বসিয়ে ছিলেন তাই তার মৃত্যুকে মেনে
নিতে পারছেন না। তাইসেও আপনার
কষ্ট মেনে নিতে পারছেন না।
হয়তো আরো কোন ব্যাখ্যা আছে।

২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:৩৮

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ফাতেমা খালা হলেও মায়ের কাজটা করতো। উনার এমন অনেক মারা যাচ্ছে এখন।

৩| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:২১

রাজীব নুর বলেছেন: রাষ্ট্রের দুর্দিনে যেসব প্রতিষ্ঠান সেবা দিতে পারে না সেসব থেকে লাভ কি? বাজেয়াপ্ত করে ফেললেই ত হয়।

৪| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৩:৪৬

বিভ্রান্ত পাঠক বলেছেন: ডরাইছি ভাই।। আমাদের বাসায় যে কাজ করে, তার নাম ও একই।।

৫| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৪৬

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: করোনার ভয় আর কত ভাবে আসবে ???

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.