![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিছু মানুষ সব না জেনেও জানার ভান করে, আবার কিছু মানুষ জেনেও সব না জানার ভান করে। আর আমি? আমি এখনো জানার চেষ্টা করছি....মানুষ, পৃথিবী আর নিজেকে।
আমি একটি রাস্তা। ভাবছেন আমার আবার আত্মকাহিনী কি? আছে…আছে…আমারও বলার মত অনেক কথা আছে। আমার উপর দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক চলে যায় কিন্তু কেউ কোনদিন আমার কথা জানতে চায়নি। তাই বলে কি আমার বলার কিছু নাই? আমি কি সারা জীবন মুখ বন্ধ করে থাকবো নাকি?না…..আজ সৃষ্টিকর্তার কাছে অনেক অনুরোধ করে কিছু সময় পেয়েছি মনের কথা বলার। সৃষ্টিকর্তার অসীম দয়া তিনি আপনাদের ভেতর থেকেই সাধারণ একটি মানুষকে বেছে নিয়েছেন আমার কথাগুলো আপনাদের ভাষায় অনুবাদ করে দেওয়ার জন্য। এই মানুষটি এখন আমার দোভাষী হিসাবে কাজ করছেণ। তার মাধ্যমেই আমি আমার কথা বলতে এসেছি। যদিও বিজ্ঞান মানলে আমার মন থাকার কথা না….আসলেই আমার মন নাই। তবে আমার মন না থাকলেও মনের কথা আছে….আছে অনেক স্বপ্ন…অনেক মৃত্যু….অনেক আনন্দ….হাসি-কান্না, মিথ্যাচার, অন্যায়-অবিচার, বেড়ে ওঠা আর ধ্বংসের কাহিনী। এতদিন ধরে এগুলো বয়ে বেড়াচ্ছি যে এগুলো এখন নিজেরই মনে পড়ে না।
ঠিক কবে আমার জন্ম তা আজ আর মনে নাই। প্রথম কোন পথিকের পদতলে যে আমার শুরু হয়েছে তাও কেউ বলতে পারবে না। সেই পথিকও আজ কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে। আছি শুধু আমি...আমার উপর দিয়ে ছুটে চলা যান-বাহন, মানুষ আরও কত কি। বাংলাদেশের কোন এক ছোট-খাটো শহরে আমার অবস্থান। নাম বললেই আপনারা চিনতে পারবেন। থাক…আজ আর নাম বলব না। হয়তো দেখা হয়ে যাবে কোন একদিন….জীবনের কোন এক ক্ষণে। যে পথিক আমাকে জন্ম দিয়েছে তাকে আমি চিনি না। আপনারা কি চেনেন? তার উপর মাঝে মাঝে খুব রাগ হয়! আবার মাঝে মাঝে কৃতজ্ঞতায় মন ভরে যায়। কেন এই মিশ্র অনুভূতি জানেন? কারণ আমাকে দেখতে হয়েছে রক্তাক্ত ৭১, শিশুর কান্না, মায়ের আর্তনাদ, তরুণ মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুদৃশ্য, ক্ষুধায় কাতর বৃদ্ধ, পাকিস্তানী মিলিটারী, হিংস্র সাপের মত রাজাকার আরও কত কি! আমার এই দীর্ঘ জীবনে কত লোক যে আমার বুকে প্রাণ হারিয়েছে! কতজন যে অন্যের হঠকারিতার শিকার হয়ে ঢলে পড়েছে মৃত্যুর কোলে তার হিসাব নাই। আমার কিছুই করার ছিলো না। ভাবছেন আমার সাথে শুধু খারাপই হয়েছে? না…না…ভালোও হয়েছে অনেক….কত বিয়ের বরযাত্রী বাদ্য বাজিয়ে বউ নিয়ে গেছে আমার উপর দিয়ে, কত ছেলে-মেয়ে বাবার হাত ধরে মেলায় গেছে, কত রাখাল বাঁশি বাজিয়ে গরুর পাল নিয়ে গেছে, ছোট ছোট বালক-বালিকারা আমার ধুলায় গড়াগড়ি খেয়েছে! এসব মনে পড়লে আরও অনেকদিন এই পুথিবীর বুকে থাকতে ইচ্ছা হয়।
১৯৭১ এ আমরা একটা স্বাধীন দেশ পেলাম। চারদিকে আনন্দ উৎসব আর স্বাধীনতার স্বাধ...। ছোট ছোট শহরগুলো বড় হয়ে উঠতে লাগলো। পরিবর্তন সবখানে। ঢাকা, আমাদের রাজধানীর সাথে যোগাযোগের গুরুত্ব বাড়লো। আমার অবস্থান রাজধানী আর একটা বিভাগীয় শহরের মাঝখানে। যদিও একসময় শীতল মাটির পরশ ছিলো কিন্তু ক্রমেই ইট-পাথর আর পিচের নিচে চাপা পড়ে যায়। আমার দিকেও নজর পড়লো সবার। আমাকে নতুন করে ভেঙে-চুরে তৈরি করার প্রস্তুতি শুরু হলো। আমি নাকি এখন থেকে আর ছোট খাটো মফস্বলের পথ নই! আমার নতুন পরিচয়, আমি এখন “বিশ্বরোড”। প্রথম প্রথম খুব অবাক হয়েছিলাম! তাহলে কি আমার উপর দিয়ে সারা বিশ্বের মানুষ চলাচল করবে নাকি!! কিন্তু না….বিশ্বরোডের নামে শুধু আমার দুইপাশ চওড়া করা হলো…শক্ত পাথর আর উত্তপ্ত পিচ দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হলো আমার সারা শরীর! দিন রাত অসংখ্য নারী-পুরুষ ব্যস্ত হয়েছিলো আমাকে নতুন রূপ দেওয়ার জন্য। খুব কষ্ট হয়েছিলো সেদিন! কিন্তু তারপরেও মনকে এইভেবে শান্তনা দিয়েছিলাম যে এর ফলে হয়তো আরও কিছু মানুষের উপকার হবে। তা ছাড়া আর কি ভাববো বলেন? আপনারাই আমার জন্ম দিয়েছেন। আমার মা-বাবা সবই তো আপনারা। আমার জন্মই তো আপনাদের জন্য। আপনারা প্রতিনিয়ত আমাকে পদদলিত করে ছুটে চলেছেন। তবুও কি আমি কিছু বলেছি? আমি নিশ্চয় আমার জন্মদাতাদের সাথে খারাপ আচরন করতে পারি না।
এরপর কেটে গেছে বহু বছর….অনেক ঘটনার সাক্ষী আমি। সেসব বলতে গেলে আবার যার মাধ্যমে এই কথাগুলো বলছি উনি রাগ করবেন। কথা শুরু করার আগেই উনি আমাকে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছেন যে আমি রাজনীতি বা ধর্ম এই সব বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। আমি অবশ্য এই কথাটা শুনে খুব অবাক হয়েছিলাম! এ কেমন কথা! সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। তাদের কাছে আমার সব কথা যদি বলতে না পারি তাহলে কেমন হয়! কিন্তু যখন শুনলাম যে এ সব কথা বললে নাকি আমার দোভাষীর সমস্যা হতে পারে তখন বিস্মিত না হয়ে পারিনি। কেন? সমস্যা হবে কেন? আমি তো কোন মিথ্যা বলতে আসিনি! কিন্তু আপনাদের এই বিচিত্র সমাজে সত্য বললেই নাকি যত সমস্যা। তাই সব কথা আজ আর বলতে পারছি না। মূলত যে কথা বলতে আমার এই আগমন তাই আগে শেষ করি।
ইতিমধ্যেই আপনাদের বলেছি আমাকে কিভাবে নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে। শুধু একবারই নয়….এরপরই বহুবার আমাকে নতুন রূপ দেওয়ার নামে বহু অন্যায়-অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে! আচ্ছা ঠিক আছে বাবা, সংস্কার করবি তো কর। আমার তো আর না বলার ক্ষমতা নাই। কিন্তু সংস্কারের নামে অন্যায় কেন? দেশ স্বাধীনের পর যতবারই সংস্কার করা হয়েছে ততবারই অনিয়ম আর দুর্নীতি করা হয়েছে আমার উপর। যতবারই আধুনিক করার জন্য কাজ হয়েছে ততবারই আরও বেশি ভেজাল হয়েছে। একটু একটু করে আমাকে পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। হ্যাঁ…আমি বলছি এসব করা হয়েছে। এই তো বছর খানেক আগে সরকার যখন আমাকে সাজানোর জন্য আপনাদেরই ট্যাক্সের টাকা থেকে বরাদ্দ দিলো তখন এর একটা বড় অংশ সরকারী নেতা আমলাদের পেটে চলে গেল! কিছু গেল কন্ট্রাক্টারের পকেটে। অবশিষ্ট যা বাঁচলো তা দিয়ে কোন মতে জোড়াতালি দিয়ে শেষ করা হলো কাজ। হায়রে মানুষ! যে রাস্তা দিয়ে তাদেরই মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয় স্বজন চলাফেরা করে তার সাথেও দুর্নীতি। কেউ তার প্রতিবাদও করে না! প্রথম প্রথম খুব অবাক হতাম। কিন্তু এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আপনারাই তো এইসব জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন, আপনারাও এর দায়ভার এড়াতে পারেন না।
শেষ বার নতুন রূপ দেওয়ার পর দীর্ঘদিন কেউ আর আমার খোঁজ খবর নিতে আসেনি। ভালোই চলছিলো সবকিছু….কিন্তু গতবছর বন্যার পানি দীর্ঘ ২ সপ্তাহ থেকে আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে গেল। কেউ আমার ক্ষতগুলো সারিয়ে দিতে এগিয়ে এল না। সবাই যেন কেমন গা-ছাড়া ভাব! দেখেও না দেখার ভান করে চলে যায়। তারপর বেশ কিছু দিন কেটে যায়। মালবাহী ট্রাকগুলো অতিরিক্ত মাল বহন করে অশুরের মত আমার বুকের উপর দিয়ে চলে যায়। আমার কি কষ্ট হয় না বলেন? বড় বড় বাস দূর-দূরান্তের যাত্রী নিয়ে আমার উপর দিয়ে ছুটে চলে। আধুনিক সব বাইকে করে বড়লোকের হিরো টাইপ সন্তানেরা ১০০/১১০ কিঃ মিঃ বা তারও বেশি বেগে ছুটে যায়। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি এদের দিকে। বড় বড় সাহেবরা সব দামি দামি গাড়ি হাঁকিয়ে চলে যায়। সবার কত ব্যস্ততা! আর এদিকে আছে ভুটভুটি নামের নছিমন-করিমনের যন্ত্রণা! কি বলে যে বোঝাবো আপনাদের! এদের অত্যাচারে আমি ধীরে ধীরে আরও জীর্ণ শীর্ণ হয়ে যেতে থাকি। আমার অবস্থা যেন পথের মাঝে পড়ে থাকা ক্ষুধায়-দুঃখে কাতর জরাজীর্ণ পোশাক পরিহিত পাগল ভিখারীর মত। মানুষের এত উপকারে আসি আমি….তবু আমাকে এভাবে ফেলে রাখতে কি তাদের একটুও খারাপ লাগে না? আমি বুঝি না কেন মানুষ ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে! কেন তারা বাসের ছাদে ঝুলে! কেন বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়? কেন সামান্য অর্থের জন্য স্বজাতির সঙ্গে বেঈমানী করে? আপনারাও তো মানুষ। আপনাদের কাছে কি এর কোন উত্তর আছে? এই যখন আমার অবস্থা….তখন হঠাৎ একদিন দুপুরবেলা ঘটে গেলো অঘটন। এইরকম ঘটনা আগেও ঘটেছে। এখন কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব! বিধাতা তো এত সময় আমাকে মঞ্জুর করেননি। তাই সাম্প্রতিক ঘটনাটায় বলি।
রাজধানীর দিক থেকে মালবাহী একটি ট্রাক দ্রুতগতিতে আসছিলো। আমি বার বার ট্রাক চালককে সাবধান করে দিতে চাইলাম! ব্যাটা আস্তে চালা….মালবোঝাই ট্রাক কেউ এভাবে চালায়! কিন্তু ৫ম শ্রেণী পাশ ড্রাইভার আমার কথা বুঝতেই চাইলো না! আর এই দিকে অনেকক্ষণ ধরেই একটা মটরসাইকেলকে খেয়াল করছিলাম আমি। মটরসাইকেলে বসা বাবা-মা, আর মায়ের কোলে ছোট্ট একটি শিশু। লোকটি ভালই চালাচ্ছিলো। মাঝে মধ্যে স্বামী-স্ত্রী টুকটাক কথাতেই হেসে উঠছিলো। কি যে সুখী লাগছিলো ওদের না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। রাস্তার বাম দিয়ে নিয়ম মেনেই যাচ্ছিলো ওরা। আমিও ওদের জন্য পারলে আরেকটু প্রসারিত করে দিই নিজেকে! হঠাৎ একটা বাঁকের মাথায় ট্রাকটি বেরিয়ে আসলো ডানপাশ চেপে। মটরসাইকেলে বসা বাবা হয়তো স্ত্রী-সন্তানের কথা ভেবে সাবধানে বাম ঘেঁষেই যাচ্ছিলো। কিন্তু ট্রাকটি তাদের এড়াতে পারলো না! ডানে চেপে যাওয়ার সময় পিছলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো! আমি তো পুরা হতভম্ব! ব্যাটা ড্রাইভার!! সারা রাস্তা তোকে সাবধান করলাম শুনলিই না! দিলি তো এখন ধাক্কা দিয়ে ফেলে! ওদের কিছু হলে হয়! তোকে আমি চিবিয়ে খাবো!!! তাড়াতাড়ি মটরসাইকেল আরোহীদের দিকে তাকিয়ে দেখি লোকটির মুখ দিয়ে গল গল করে রক্ত বের হচ্ছে! মাথার ডানপাশের চামড়া নাই! মেয়েটিতো গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে ঘাড় ভেঙেছে! কি রকম উল্টা দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে! যেন আমার কাছেই কৈফিয়ত চাইছে! বাচ্চাটা?....বাচ্চাটা কই? ওকি তাহলে চাকার নিচেই পিষে গেলো নাকি? না…না…ঐ তো…..আমার পাশেই ঘাসের উপর পড়ে আছে! ওমা….বাচ্চাটার তো কিছুই হয়নি! কেন? বিধাতা কি ওকে রক্ষা করেছে! যদি বলি বিধাতাই ওকে রক্ষা করেছে তাহলে ওর বাবা-মাকে করলো না কেন? কি লাভ হলো বাচ্চাটাকে এভাবে এতিম করে বাঁচিয়ে রেখে? আর শালার ট্রাকটা কই? আজ ওর একদিন কি আমার একদিন! কিন্তু একি! ও ব্যাটা তো ভেগেছে! কি আজব মানুষরে বাবা! ধাক্কা মেরে পালিয়ে গেল। একবার দেখলোও না বেঁচে আছে না মরে গেছে! মানুষের জীবনের দাম কি এতই কম? এদিকে পুরুষটার মুখ দিয়ে তখনও রক্ত পড়ছে। হয়তো জীবন প্রদীপ নিভে আসছে তার! যতটুকু সম্ভব দৃষ্টি বাড়িয়ে কি যেন খুজছে সে! কি খুজছো তুমি? তোমার সন্তানকে? ঐতো দেখো….কিছুই হয়নি তার….ভালো আছে। ভাবছো কাঁদছে কেন? আরে বোকা….ভয় পেয়ে কাঁদছে! কিন্তু তোমাকে আমি কি ভাবে বাঁচাবো! তোমার স্বজাতি কেউ তো থামছেই না! কি অদ্ভুত!! একটা মানুষ মরে যাচ্ছে অথচ কেউ থামছে না! কেউ সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছে না! কি লাভ তোমাদের এই পৃথিবীতে বেঁচে থেকে? মরেই যাও তুমি….সেই ভালো। তোমার সন্তান? সেও হয়তো প্রাণ দিবে এই ভাবে আমারই কোন ভাই-বোনের বুকে। এই নিষ্ঠুর মানুষরা তাকেও তোমাদের কাছে পাঠাতে দ্বিধা করবে না দেখে নিও! কি হল? কথা বলছো না কেন? তুমিও কি মরে গেলে নাকি?….ঐ যে কিছু মানুষ আসছে…আর একটু ধৈর্য্য ধরো….হাসপাতালে গেলেই হয়তো তুমি বেঁচে যাবে। তুমিও যদি মরে যাও তোমাদের সন্তানের কি হবে ভেবে দেখেছো? বাবা-মা হারিয়ে এই পৃথিবী তার কাছে কত কঠিন হয়ে যবে ভেবে দেখো! তোমাদেরই সমগোত্রীয় মানুষ আজ এর জন্য দায়ী। ওদের কাছে তোমার সন্তান কতটুকু নিরাপদ ভেবে দেখো! মায়ের অভাব তুমি হয়তো পূরণ করতে পারবে না। কিন্তু ছেলেটির একটা অবলম্বন তো থাকবে। প্লিজ আর কিছুক্ষণ বেঁচে থাকো। এই তো সামনেই হাসপাতাল। ডাক্তাররা হয়তো তোমাকে সারিয়ে তুলবে। তোমাকে তোমার সন্তানের জন্য হলেও বেঁচে থাকতে হবে। ওর যে তুমি ছাড়া আপন বলতে আর কেউ রইলো না……………..!
এরপরের কাহিনী আর কি বলব….দেরিতে হলেও ওদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। জীবিত না মৃত তা আপনারাই ভালো বলতে পারবেন। আমি তো আপনাদের মত খবরের কাগজ পড়ি না বা টিভি চ্যানেল দেখি না! কিন্তু ওদের কি দোষ ছিলো বলতে পারেন? কি দোষ ছিলো ঐ নিষ্পাপ শিশুর? কেন ওর ভবিষ্যত এইভাবে অনিশ্চিত হয়ে গেলো? ওর তো এখনো অনেক কিছু পাওয়ার আছে! কিছু না পেয়েই ওকে সব হারাতে হলো কেন? এভাবে আরও কত জীবন গেছে আমার বুকে, আরও কত পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে, আরও কত সন্তান এতিম হয়েছে তার হিসাব আর মনে করতে পারি না!
কিন্তু এর জন্য দায়ী কে? আপনারা অনেকেই আমাদের মত রাস্তাদের দোষ দিয়ে থাকেন। শুধু শুধু বলেন ঐ রাস্তা টা খারাপ! কেন? আমরা কি করলাম? আপনারাই আমার জন্মদাতা….আপনারাই আমার রক্ষাকর্তা...আপনারা যেভাবে রাখবেন আমাকে সেভাবেই থাকতে হবে। এরজন্য দায়ী আপনারাই। হ্যাঁ….যারা এই লেখাটি পড়ছেন তারাও দায়ী। আমি এর দায়ভার নিবো না। আপনারাই আমার সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করেন না। আপনারাই ভোট দিয়ে এমন জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেন যারা আমার বরাদ্দের টাকা মেরে খায়। আপনারা দেখেও না দেখার ভান করে চোখ বন্ধ করে থাকেন। আপনারই বেপরোয়া গতিতে আপনাদের বানানো আইন ভেঙে আপনাদের স্বগোত্রীয় মানুষকে হত্যা করেন। আপনারাই প্রতিদিন অসহায় মানুষের রক্তে আমার শরীর রাঙিয়ে দেন। আরি কত রক্ত ঝরলে আপনার বুঝতে পারবেন? আর কত প্রাণ গেলে আপনাদের এ রক্ত ক্ষুধা মিটবে? আপনাদের জন্য কেন আমাকে এত হুলো নিষ্ঠুরতা সহ্য করতে হবে? আমি আর পারছি না! প্লিজ….আমাকে মুক্তি দিন এই যন্ত্রণার হাত থেকে…..বাঁচতে দেন নিরীহ মানুষগুলোকে। প্লিজ আপনারা নিজেরা নিজেদেরকে হত্যা করবেন না! আমি আর আমাকে রক্ত দিয়ে রাঙাতে চাই না...চাই না.....না! আপনারা আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আপনারাই পারেন আমার এ কষ্ট দুর করতে। যদি নিজেদেরকে না বাঁচান তা হলে আমাকেও হত্যা করুন! তারপরও আমি মুক্তি চাই এই যন্ত্রণার হাত থেকে! বিধাতার কাছে অনেক কাকুতি-মিনতি করে কিছু সময় পেয়েছিলাম….এখন আমাকে চলে যেতে হবে। আমাকে দয়া করে এই নিষ্ঠুরতার হাত থেকে বাঁচান! যাওয়ার আগে শেষ কথা বলে যাই, নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন, এই সব সড়ক দূর্ঘটনার জন্য কে দায়ী??? কে দায়ী? কে………….???
*** এটি একটি কাল্পনিক আত্মকথা। এর সকল ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক। কারও সাথে মিলে গেলে তা হবে অনাকাঙ্খিত এবং কাকতালীয় মাত্র।
উৎসর্গঃ সেইসব শিশুদের উদ্দেশ্যে যারা এ পর্যন্ত সড়ক দূর্ঘটনায় বাবা-মাকে হারিয়েছে।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অনুদা এবং ধ্রুব। যারা আমাকে আবার লেখার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই মে, ২০১২ সকাল ১০:৩০
আমি লিখতে চাই না বলেছেন: ভালো লাগলো।