![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবী আমার আসল ঠিকানা নয় ।মরণ একদিন মুছে দিবে দেবে সকল রঙ্গীন পরিচয় ।
আরেকটি আরব বসন্ত অনিবার্য
২০১০ সালে মধ্যপ্রাচ্যে গড়ে ওঠা আরব বসন্ত ৮ বছর পেরিয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও বেকারত্বের চ্যালেঞ্জের মুখে এ অঞ্চলটি আরেকটি বিদ্রোহের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১০-১১ সালে গণবিদ্রোহের মুখে আরব বিশ্বের কয়েকটি দেশের শাসকদের ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতার অপব্যবহারও অনেক কমেছে। সম্প্রতি কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত আলজাজিরার এক ফোরামে আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটা অনিবার্য যে, বিশ্বের অধিকসংখ্যক যুবসমাজের মাধ্যমে এ অঞ্চলে একটি পরিবর্তন আসবে। সুদানের খার্তুম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহজাব হারুন বলেন, ব্যাপকভাবে অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ন, চাকরির বাজারে চাপ, অন্যান্য সামাজিক-অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে আরব সমাজের যুবকদের অধিক প্রত্যাশার প্রধান কারণ। এগুলোই মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার কয়েকটি দেশে আরব বসন্তের অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, যতদিন এই অবস্থা স্থিতিশীল থাকবে ততদিন আরব সমাজে প্রতিষ্ঠিত শাসন ক্ষমতা হ্রাস করার চেষ্টা চলবে।
হারুনের সঙ্গে একমত পোষণ করেন ইউনিভার্সিটি অব কাতারের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর মউদ আল ওলিমাত। তিনি বলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ফ্যাক্টারগুলো আরব বিশ্বকে আরেকটি অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ওই অঞ্চলে সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কার না ঘটলে ক্ষমতাসীনরা নতুন একটি বিপ্লব ও সহিংসতার মুখে পড়তে পারেন। তিনি আরব দুনিয়ার রাজতন্ত্রেরও সমালোচনা করেন, যারা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। মউদ বলেন, যখন এসব নাগরিক অতি রক্ষণশীল রাষ্ট্রগুলোতে পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করবে, তখন তারা যেকোনো ভয়-ভীতিকে পেছনে ফেলে বিপ্লবে নেমে পড়তে পারেন। ফোরামে বক্তারা আরও বলেন, আরব বিশ্বের ৪০ কোটি মানুষ রয়েছে যাদের বয়স ২৫ বছরের চেয়ে কম। আরব বিশ্বের বিভিন্ন বিষয় তাদেরকে সহজেই নাড়া দেয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অভাব এবং সমাজে আইনের শাসনের কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরেকটি আরব বসন্তের কারণ হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
২০১০ সালের ১৮ ডিসেম্বর তিউনিসিয়া থেকে শুরু হয়েছিল আরব বসন্ত বা আরব বিদ্রোহ। দেশটির এক মফস্বল শহর সিদি বাউজিদে মুহাম্মদ বুয়াজিজি নামে ২৬ বছরের এক ফল বিক্রেতা প্রশাসনের দুর্নীতি আর বেকারত্বের জীবনে ক্ষুব্ধ হয়ে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ঘটনার মধ্যদিয়েই সৃষ্টি হয় আরব বসন্তের। মাত্র ২৭ দিনের মাথায় প্রেসিডেন্ট জয়নুল আবেদিন বেন আলীর ২৩ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। তিউনিসিয়ার পর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে আলজেরিয়া, জর্ডান, মিসর এবং ইয়েমেনসহ আরবের অন্যান্য দেশে। এতে করে কয়েক দশক ধরে গড়ে ওঠা শাসনযন্ত্র তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। ইয়েমেন, লিবিয়া ও সিরিয়া মারাÍক গৃহযুদ্ধে ডুবে গেছে।
২০১১ সালে মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকেরু পতন হয়। পরে ২০১৩ সালের জুলাইতে দেশটির প্রধম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে পতনের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে লাখ লাখ মানুষ। এতে অন্তত ৯০০ বিক্ষোভকারীকে হত্যা করে সেনাবাহিনী। দীর্ঘদিন স্বৈরশাসন বা চরম রাজতন্ত্র, মানবাধিকার লঙ্ঘন, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, দুর্বল অর্থনীতি, অর্থনৈতিক মন্দা, বেকারত্ব, চরম দরিদ্রতা ও শিক্ষিত হতাশাগ্রস্ত যুবসমাজ বিশেষ করে শিক্ষিত বেকার যুবকদের অসন্তোষ এ বিপ্লবের পেছনে প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছিল। এ ছাড়াও এসব দেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ মুষ্টিমেয় কয়েকজনের হাতে ছিল। যে কারণে তারা কয়েক দশক ধরে ক্ষমতায় ছিল। সম্পদের সুষম বণ্টন হয়নি। ফলে খরা ও খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আন্দোলনের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয় সাধারণ মানুষ।
কপি করা ।
©somewhere in net ltd.