![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ধীক্কার
মাহাবুব আলম মুরাদ
মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেই কবিতা এখন একাদশ শ্রেনীতে উঠে গেছে। তারুন্যের ছোয়ায় মন বিষন উরু উরু হয়ে আছে। ইতোমধ্যে শারীরিকগত ভাবেও তার ভীষন পরিবর্তন ঘটেছে। এখন দেখলেই বোঝা যায় যে তার মাঝে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কচি কচি সেই ভাব তেমন একটা নেই বলেই চলে। তারুন্যের সাথে সাথে রুপের বাহার ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে আর সকলের দৃষ্টির রুপকর্না হচ্ছে। তাইতো কলেজের বালকদের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি লাভের আশায় তাকে ভর্তি করে দেয় মহিলা কলেজে। কিন্তু তবুও পথ-ঘাটে বখাটে ছেলেরা সর্বদা তার পথ চেয়ে থাকে।
কলেজে মোটামুটি অন্যান্য ছাত্রীদের সাথে তার ভাল খাতির হয়ে উঠেছে তার। তাইতো সবাই এখন তার ভক্ত। এরই মাঝে একদিন তার বান্ধবী টুম্পার বড় বোনকে বর পক্ষ দেখতে এসে তাকে তাদের বেশ মনভুত হয়। সেদিনই তারা মেয়ের পক্ষকে তাদের বাড়িতে জানিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। পরে কন্যা পক্ষের উপস্থিতির মধ্যে বিয়ের তারিখ ধার্য্য হয়। সে বিয়েতে টুম্পা কবিতা সহ অন্যান্য বান্ধবীকে দাওয়াত করে। কবিতা বাবা-মাকে রাজী করিয়ে সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে।
বিধাতার এই ধরায় সবাই সুন্দরের পূজারী। ফুটন্ত লাল গোলাপ কার না ভাল লাগে!
তাইতো, অনুষ্ঠানে সবার দৃষ্টি শুধু একজনের প্রতি! সে হচ্ছে কবিতা। যেখানে নতুন বউ থাকবে আকর্ষনের বিষয়। বর পক্ষ কনে পক্ষ উভয় পক্ষের ছেলেরা কবিতাকে সেকি আপ্রায়ন। সে কোন কিছু মুখ দিয়ে প্রকাশ করার আগেই সব তার সামনে হাজির। এর মাঝে অনেক গুলো প্রস্তাব তার নিকট চলে আসে। সুন্দরী মেয়েদের এই এক জ্বালা! কোথাও শান্তিতে থাকতে পারে না! যেখানে যায় সেখানেই ছেলেদের পাশে পাশে ঘোরা ঘোরি, ফুল ফুল দেওয়া, প্রস্তাব দেওয়া, প্রয়োজন না থাকলেও কৌশল বিনিময় করা, আরো কত কী!
কবিতাতো রীতিমত মহা জামেলায় পড়ে গেছে। কি করবে তা ঠিক ভেবে পাচ্ছে না। কিছুক্ষন ভাবে বান্ধবীকে না বলেই চলে যাবে। বললে তো সে কিছুতেই রাজী হবে না। পরে আবার মনে আসে এটাকি উচিত হবে। শেষে কী আর করা! না পারলেও থাকতে বাধ্য।
দিনটি ছিল বসন্তেরই একটা দিন। প্রকৃতির রাজ্যে বসন্তের প্রভাব বিস্তার। তারই ধারাবাহিকতায় গাছে গাছে নতুন পুষ্প, কলি, শাখা-প্রশাখার আগমন। বসন্তের মাতাল হাওয়া, গাছের মগ ডালে বসে বসন্তরাজ কোকিল পাখিদের কুঁহু কুঁহু কন্ঠে সুরেলা গান। এই রকম পরিবেশের মাঝেই তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান বহমান। কবিতা বান্ধবীদের সাথে খাবার টেবিলে বসে পড়ে। খাওয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটা ছেলে তাদের সম্পূর্ণ খাবার পরিবেশন করে। ছেলেটা যেমন সুন্দর তেমন সুঠাম দেহের অধিকারী, বেশ স্মার্ট। তার ব্যবহারও ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সে ছিল বর পক্ষের মেহমান। কেন যানি ছেলেটাকে কবিতার বেশ মনে ধরে। ছেলেটাও কিন্তু কবিতার রুপ, রং, যৌবনে পুরুটাই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। খাওয়া দাওয়া শেষে দুজনে জড়িয়ে পড়ে গল্প গুজবে। এরই মাঝে এক জনের সাথে অন্য জনের ভাবের আদান প্রদান। পরিচয় পর্বটা প্রায় শেষ হয়ে যায়। কবিতা ছেলেটার কাছ থেকে জানতে পারে সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্য বিভাগের অনার্স ফাইনাল ইয়ারের একজন ছাত্র। পড়ালেখার পাশাপাশি সে প্রাইভেট একটা কোম্পানীর সাথে জড়িত। মোটামোটি ভাল একটা মাইনেও দেওয়া হয় তাকে। পরিবারে দুই ভাই বোনের মাঝে সে ছোট। বাবা একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। মা পেশায় একজন কলেজ শিক্ষিকা। এরই ধারাবাহিকতায় কবিতা নিজেকে ও নিজের পরিবারকে তার মাঝে পরিচয় করে দেয়।
এভাবেই এক দেখাতেই মুহুর্তের পরিচয়ে তাদের মাঝে মনের আদান প্রদান প্রায় শেষ হয়ে যায়। সাথে মোবাইল নাম্বারও।
সন্ধ্যার পরে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে আবেগ প্রবণ হৃদয়ে কবিতা বাড়ি ফিরে আসে। সারাটা রাত তার দুচোখে আনন্দ অশ্রু ঝরনা হয়ে ঝরতে থাকে। বালিশের উপর শুয়ে এপাশ ওপাশ গড়াগড়ি খাওয়া শুরু হয়ে যায় সাথে সাথে সারা দেহের ছট পটানি। চোখ থেকে ঘুম কোথা যেন উদাও হয়ে গেছে। কবিতা অবাক হৃদয়ে বলতে থাকে এরই নাম বুঝি প্রেম! এরই নাম ভালবাসা!
মোবাইলে প্রতি রাত তাদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত। একটা রাতও যেন যোগাযোগ মিস করার মত নয়! তাদের সম্পর্ক প্রায় এক বছর ফেরিয়ে আরেক বছরে অগ্রযাত্রা। এরই মাঝে একদিন কবিতাদের বাড়িতে এক বর পক্ষ তাকে দেখতে আসে। ছেলে আমেরিকায় নিজস্ব ব্যবসা বানিজ্য পরিচালনা করে। বেশ পয়সাওয়ালা। ঢাকা শহরে দশ তলা বিশিষ্ট চার চারটা বাড়ি। আর কত কী! কবিতাকে দেখে তাদের সকলের বেশ পছন্দ হয়। তারা কবিতার গলায় সোনার চেইন, হাতে আংটি পরিয়ে বায়না করে যায়। কিন্তু কবিতা এই বিয়েতে তেমন মত দেয় না। বাবা মাকে সে তার পছন্দের ছেলেটির কথা বললে তারা কিছুতেই রাজী হয়না।
অবশেষে তার বিয়ের দিন নির্ধারিত হয়। বিয়ের ঠিক দুই দিন পূর্বে কবিতা তার প্রেমিকের সাথে কথা বার্তা চূড়ান্ত করে তারা পালিয়ে বিয়ে করবে। তারই ধারাবাহিকতায় কবিতার প্রেমিক তাকে একটা ঠিকানা দিয়ে বলে সেখানে যাতে ঠিক বিকেল তিনটায় উপস্থিত থাকে। তার সে ঢাকা থেকে এসে সেখান থেকে কবিতাকে নিয়ে ঢাকায় ফিরে যাবে। আর তারা সংসার গড়বে ঢাকায় সাজানো গোছানো একটা অট্টালিকার চার দেওয়ালের মাঝে। কিন্তু কবিতার প্রেমিক তাকে সম্পূর্ন নিষেধ করে যাতে সংসার থেকে কোন টাকা পয়সা, গয়না ঘাটি কিছুই না নিয়ে আসে। শুধু মাত্র ব্যবহার উপযোগী কিছু জামা-কাপড় সঙ্গে নিয়ে আসে। সে শুধু তাকেই চায়, চায় তার কোন ধন সম্পদ, টাকা পয়সা, সোনা অলংকার। তার সে কবিতাকে না জানিয়ে বিয়ের জামা-কাপড়, গহনা থেকে শুরু করে সকল কেনা-কাটা সম্পর্ন করে সেগুলো বাসায় রেখে কবিতাকে নেওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় গ্রামের মাটিতে।
কবিতা প্রেমিকের উপর সম্পূর্ণ ভর করে বাবা-মায়ের অজান্তে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় প্রেমিকের নির্দেশিত সেই স্থানে। ঠিক বিকেল তিনটার ত্রিশ মিনিট পূর্বে। শুরু হলো তার অপেক্ষার প্রহর। ইতিমধ্যে তার গড়িতে চারটা বাজার ঘন্টা বেজে উঠে। কিন্তু তার প্রেমিকের দেখা এখন মেলে না। কবিতা তার নাম্বার বার বার কল করে কিন্তু মোবাইল কোম্পানি নেটওয়ার্কের সমস্যা দেখায় বার বার। আবার কিছুক্ষন বন্ধ দেখায়। এভাবেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার আগমন ঘটে প্রকৃতির রাজ্যে।
কবিতার দৃষ্টি শুধু প্রেমিকের পথ চেয়ে। কিন্তু তার আসার কোন লক্ষনই সে দেখতে পায় না। তার মনে নানা প্রশ্ন কেন সে এই মুহুর্তে মোবাইল বন্ধ রেখেছে? কেন সে আমাকে ফোন করছে না? কেন সে এখনো এসে পৌঁছেনি? এসব প্রশ্ন তার মনে বার বার আসতে থাকে আর তার উত্তর সে খুঁজতে থাকে। কিন্তু সে কোন উত্তর খুঁজে পায়না। তার মনে তবুও আসা জাগে সে আসবে। দেখতে দেখতে রাত গভীর হতে থাকে। অবশেষে সকল আশা ভঙ্গ করে ভরাক্রান্ত হৃদয়ে সে বাড়ি ফিরে আসে। আর তার মুখ থেকে বেরুতে থাকে তার প্রেমিকের প্রতি ধীক্কার! ছিঃ! শাওন ছিঃ! এ তুমি কি করলে! আর দুচোখ দিয়ে বেয়ে পড়তে থাকে পাহাড়ের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসা ঝরণার মত অশ্রু।
কোন উপায় না পেয়ে ভরাক্রান্ত হৃদয়ে কবিতা বাধ্য হয়ে বাবা-মায়ের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে। বিয়ের একমাস পরেই মীম তার স্বামীর সাথে পাড়ি জমায় আমেরিকায়। বেশ আনন্দের মাঝে প্রবাহিত হতে থাকে তাদের দাম্পত্য জীবন।
বছর কয়েক পর একদিন কবিতা তার ফুটফুটে ছোট বাচ্ছাটাকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে অকস্মাত তার দৃষ্টি পড়ে পাশের দেওয়ালে ঝুলন্ত দিন পুঞ্জিকাটির দিকে। সাথে সাথে তার সেই দিনের তারিখটির প্রতি। দিনটি ছিল ২৫শে মার্চ। তার স্মৃতিতে বেশে আসে কয়েক বছর আগের এই দিনটির কথা। মানে শাওনের সাথে এই দিনেই তার ভাবের আদান প্রদান হয়। এটি মনে করে শাওনের প্রতি ধেঁয়ে তার অন্তর থেকে ধীক্কার আর ঘৃণা। কারন সেতো এখন স্বামী সন্তানদের নিয়ে বেশ সুখে আছে! শান্তিতে আছ! তাইতো সে এখন আর কিছুতেই শাওনের কোন স্মৃতি মনে রাখতে চায় না।
দুঃখের কথাঃ কবিতা যেদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে আবার ভরাক্লান্তি হৃদয়ে বাড়িতে ফিরে আসে সে দিন কুমিল্লার লাকসামে একটা মালবাহী ট্রাকের সাথে একটা বাস ধাক্কা খেয়ে পাশের ফসল ভর্তি মাঠে কাত হয়ে পড়ে। এতে ৫ জন আহত ও একজন নিহত হয়। আর এই পোড়া কপাল লাশটিই হচ্ছে কবিতার পুরানো সেই প্রেমিক শাওন। দুর্ঘটনাটি খুব বেশি গুরুত্ব মনে না করে মিডিয়া এটাকে তেমন প্রচার করেনি বলেই কবিতা তা জানতে পারে না। শাওন ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে পরলোকে চলে গেছে শুধু মীমের জন্য। অথচ তার মৃত্যুর সংবাদটুকু কবিতা না পাওয়ার কারনে তার মনে জন্ম নিয়েছে শাওনের প্রতি ঘৃণা আর ধীক্কার। এখন শুধু বিধাতার প্রতি জিজ্ঞাসা কবিতার মন থেকে শাওনের প্রতি এই ধীক্কার কাটবে তো কোন একদিন?
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা আগস্ট, ২০১১ রাত ৯:৫২
এ বি এম হায়াত উল্লাহ বলেছেন: ভালো হয়েছে । তবে শেষ টা কেমন জানি হয়ে গেল না ?