![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার মন কোথায় গেল? কে লইল? কই, যেখানে আমার মন ছিল সেখানেতো নাই। যেখানে রেখেছিলাম সেখানে নাই। কে চুরি করল?
একজন বন্ধু বলল- দেখ, ভাল কোন হোটেল বা রেস্টুরেন্টে তোমার মন পড়ে থাকতে পারে। মানি, ভাল খাবারের লোভ সবার মত আমারও আছে। যেখানে পোলাও-কাবাব, ইলিশ-রুই কাতলার সুগন্ধে মৌ মৌ করছে সেখানে আমার মন থাকতেই পারে। তাই সুহৃদ বন্ধুর প্রবর্ত্তনায় হোটেল রেস্টুরেন্টে মনের সন্ধান করলাম। সেখানে পেলাম না। পোলাও কোরমা কাবাব প্রভৃতি সুস্বাদু অধিষ্টাতৃদেবগণ আমার জিজ্ঞাসায় বললেন, তারা কেউ আমার মন চুরি করেন নি।
বন্ধু বলল, একবার ওঁর নিকট সন্ধান কর। ওঁর কাছে একসময় আমার আমার মন ছিল বটে। তবে আজ তা কেবল অতীত স্মৃতি। ওঁ ছিল দেখতে শুনতে চমৎকার। লম্বা, ভাল স্বাস্থ্য, যৌবন নদী ভরপুর-তৃপ্তিতে টাইটম্বুর। দাঁতে মিসি, হাসি ভরা মুখ। সে রসের হাড়ি ছড়াইতে ছড়াইতে যাইতো, আমি তা কুড়াইয়া লইতাম। এজন্য অনেকে অনেক কথা বলত। পুঁজারি বামনের জ্বালায় যেমন বাগানে ফুল ফুটতে পারত না, তেমনি আমি অনেকের জ্বালায় ওঁর কাছে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারতাম না। আর নয়ত গদ্য ও কাব্য রসে বেশ ভাব বিনিময় হত। এজন্য আমি যতটা দুঃখিত হই না হই, ওঁর জন্য কিছুটা দুঃখিত। কেননা, ওঁ ছিল অসাধারণ। আমার ভালবাসা পাওয়ার খুবই উপযুক্ত। কিন্তু বেচারি তা পেল না। বলাই বাহুল্য, আমার ভালবাসা থেকে বঞ্চিতকে আমি খুবই হতভাগা বলে মনে করি।
ওঁর কথা যখন চলেই এল তখন স্পষ্ট করে বলাই ভাল। ওঁর সবকিছুই আমার কাছে চমৎকার মনে হত। ওঁর বাসার আসেপাশে কতদিন যে ঘুরেছি, ওঁর স্কুলে যাওয়ার পথে কতক্ষণ যে দাঁড়িয়ে থেকেছি, ওঁকে একনজর দেখতে কত সময় যে ব্যয় করেছি তা ভাবলেই আজ লজ্জা আমাকে গ্রাস করে। ওঁকে আমি ভালবাসতাম। আর আমি এমন ধরনের মানুষ- যে ভালবাসলে অন্ধের মত ভালবাসে। আমি পাগলের মতই ওঁকে ভালবেসেছিলাম। কিন্তু আমার এ ভালবাসার কথা কোনদিন মুখ ফুটে ওঁকে বলিনি। বোবা ভালবাসার যন্ত্রণায় আমি শুধু ছটফট করেছি।
আজ এ অধ্যায়ও অতীত। ওঁকে তিন বছরের চেষ্টায় হৃদয়পট থেকে বিতাড়িত করতে পেরেছি। আজ ওঁর দৃষ্টিতে, ওঁর চলার পথে আমার মন নেই। আমার মন তবে গেল কোথায়?
বিষন্ন বিহ্বল, তীব্র কষ্টের বোবা কান্না নিয়ে আমি পথে বের হলাম। দেখি, এক যুবতী চারদিকে রুপের মায়াবী জাল বিস্তার করে, নিজ পদভরে রাস্তাটুকুকে ধন্য করে, আশেপাশের সব সৃষ্টি জগৎকে বিমোহিত করে হেটে যাচ্ছে। তার মুখে জ্যোৎস্নার আলো। যা দেখলেই ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছা করে- অথচ ধরাছুঁয়ার বাইরে। গভীর কৃঞ্চযোগল ভ্রু, গভীর চঞ্চল নয়নতারা দেখে মনে হল যেন পদ্মবনে কতকগুলো ভ্রমর ঘুরে বেড়াচ্ছে- বসছে না,উড়ে বেড়াচ্ছে। তার গমন পথে যেভাবে অঙ্গ দুলছে- মনে হল লাবন্যের নদীতে ছোট ছোট ঢেউ উঠেছে। তার প্রতি পদক্ষেপ মনে হল আমার পাজড়ের হাড় ভেঙ্গে চলে যাচ্ছে। একে দেখে আমার বোধ হল- নিঃসন্দেহে এই আমার মন চুরি করেছে।
মনের সন্ধানে তার সঙ্গে সঙ্গে চললাম।
সে ফিরে দেখে রুষ্টভাবে জিজ্ঞেস করল, একি, সঙ্গ নিয়েছ কেন?
আমি বললাম, তুমি আমার মন চুরি করেছ।
যুবতী এমন ভাবে হেসে উঠল যা শুনে মনে হল, নাহ! এর কাছে আমার মন নেই। থাকতে পারে না।
সেই থেকে মনের সন্ধান করা বাদ দিয়েছি।
কিন্তু মনে মনে বুঝেছি, এ পৃথিবীতে আমার মন কোথাও নেই। শারীরিক সুখ স্বাচ্ছন্দতায় আমার মন নেই। যে রহস্যালাপে আমি প্রিয় ছিলাম, সে রহস্যালাপে আমার মন নেই। যে আড্ডাবাজীতে আমি সেরা ছিলাম, সে আড্ডায় আমার মন নেই। আমার সংগ্রহে কতগুলো বই ছিল, এতেও আমার মন নেই। কিছুতেই আজ আর আমার মন নেই। আমার মন তবে গেল কোথায়??
বিঃদ্রঃ বাংলা সাহিত্যে হুতুম পেঁচা নামে পরিচিত বিখ্যাত লেখকের লেখার অনুকরনে....
©somewhere in net ltd.