নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাতভর বৃষ্টি

দিনভর গান

মাহবুব মোর্শেদ

মাহবুব মোর্শেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাজী নজরুল ইসলাম

২৬ শে মে, ২০১০ রাত ৮:২৫

স্মরণাতীত কালে কবি মৃদুল দাশগুপ্তের একটা বই পড়ছিলাম। বইয়ে কবি মৃদুল জানাইছিলেন, তার আব্বা-আম্মার বিয়ার সময় তারা গিফট হিসাবে একটা বই পাইছিলেন। সেই বই বাড়ির ট্রাঙ্কে রাইখা দেওয়া হইতো। বইটার নাম 'রূপসী বাংলা'। মৃদুল যখন ক্রমে বড় হয়া উঠতেছিলেন এবং পড়তে শিখতেছিলেন তখন রূপসী বাংলা পইড়া তিনি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতেন। মৃদুলের আব্বার বাড়ি ফরিদপুর আম্মার বাড়ি বরিশাল। তিনি পড়তেন, এই বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি। পইড়া আম্মার দিকে তাকায়া কইতেন, এই বাংলা হইলো বরিশাল। তখন তার আব্বা ঈর্ষাগ্রস্ত হইতেন। মৃদুল আবৃত্তি কইরা রূপসী বাংলার একেকটা লাইন পড়তেন আর কইতেন, এইটা বরিশাল নিয়া লেখছে, প্রতিবার তার আব্বার মধ্যে একটা ঈর্ষা খেলা করতো।

মৃদুল দাশগুপ্তের বইটার আর বিশেষ কিছু মনে নাই। কিন্তু তার এই ছেলেখেলার কথা বিশেষভাবে মনে রইছে। কেন মনে রইছে তার একটা ছোট ইতিহাস আছে। সেই ইতিহাসে যাওনের আগে সাম্প্রতিক একটা ঘটনার কথা বলি। অতিসম্প্রতি কবি গৌতম চৌধুরীর লগে আলাপ হইতেছিল। একথা সেকথার পর আমি তারে কইতেছিলাম, কবি উৎপল কুমার বসুর দেশ নাই। উল্লেখ্য, আমি বিশেষ উৎপল-ভক্ত। আমার উপন্যাসে সেই ভক্তির উদাহরণ আছে বইলা উৎপলের কথা আমাদের ব্যক্তিগত আলোচনায় উঠছিল। তো, গৌতম ভাই একটা চমৎকার কথা কইছিলেন আমার উত্তরে। কইছিলেন, উৎপলের যে দেশ, সেই দেশ আপনেরও। উৎপলের সেই দেশের নাম, আধুনিকতা। আমি কইতেছিলাম, যে আধুনিকতার হাত থিকা নিস্তার পাওনের জন্য কত চেষ্টায় আছি। তবে এইটা ঠিক যে, আমরা যারা ঊনিশ শতকের সন্তান তাদের দেশ শেষ পর্যন্ত সেই আধুনিকতাই। অন্য কোনো দেশ সেইখানে মূর্ত হয়া উঠে নাই।

যে কোনো কারণেই হউক, আমাদের গ্রাজুয়েট স্কুলে আমরা কতিপয় সহপাঠী ঊনিশ শতক নিয়া বিশেষ আগ্রহ পাইছিলাম। বাঙালির তথাকথিত রেনেসাঁ, কলকাতা শহরের মধ্যে তার নবজাগরণ এবং শহরের মধ্যে তার বন্দিত্ব ও নানাবিধ পাপ নিয়া কিছু জ্ঞান অর্জন হইছিল। সেই থিকা আমরা জানছিলাম, উনিশ শতকে বাংলার সাহিত্য তার প্রাচীন ও মধ্যযুগের সঙ্গে বিচ্ছেদ তৈয়ার করছে। শুধু তাই নয়, সাহিত্য অন্তকরণে দেশকে বর্জন কইরা নতুন দিকে গেছে। নবজাগরিত, রেনেসাঁ-শাসিত, আধুনিক বাংলা সাহিত্য যতটা না বাংলার ততোধিক ইউরোপীয়। এই বিষয়ে এন্তার লিটারেচার এখন ছাপা কাগজে পাওয়া যায়।

ফলে, বাংলা সাহিত্যের রথী-মহারথীদের আমরা আদর কইরা বলি, আধুনিকতার সন্তান। বাংলা সাহিত্য তার দেশের দেখা পাইছে অনেক পরে। সেই দেশও ইউরোপীয় সাহিত্যের সমান্তরালে বিকশিত হওনের এক ফাঁকে সাহিত্যে দেখা দিছে। তবু একটা দেশ আছিল, বিশ শতকে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যে দেশ আকার পাইছিল তার নাম ভারতবর্ষ। সঙ্গত কারণেই সেই দেশ এক বিশাল ব্যাপার। কর্নাটক হইতে কন্যাকুমারিকা পর্যন্ত এই দেশ রাজনৈতিক কল্পনায় ধরলেও কবির কল্পনায় ধরা দেয় নাই। কবি-সাহিত্যিকরা বাংলা দেশ বা বাংলাদেশ নামে এক দেশের কথা কইতেন, আমরা এখন গ্রাম বাংলা বইলা যে দেশের কথা কই সেই দেশ ছিল তখন বাংলা দেশ বা বাংলাদেশ। বাঙালি সাহিত্যিকদের ভাষা বাংলা হইলেও, তাদের রাজনৈতিক দেশ আছিল ভারতবর্ষ। বাংলা অঞ্চল আধুনিক সাহিত্যে তাই দেশ হয়া উঠতে পারে নাই।

তবু আমরা দেশ খুঁজি। রবীন্দ্রনাথের মধ্যে পূর্ব বাংলা কতটুক সেইটা নিয়া বিতর্কের শেষ নাই। রবীন্দ্রনাথে মুসলমান কী রকম সেই নিয়াও তদন্ত চলে। রবীন্দ্রনাথ নবজাগরণ ও আধুনিকতার উজ্জ্বলতম সন্তান। তার মধ্যে দেশ থাকার দাবি করা কঠিন। তখনকার রাজনীতিতে তার দেশ ভারতবর্ষ। ঐক্যের মধ্যে সংহতির মর্মবাণী তিনি প্রচার করছেন। তবু বাঙালির জাতীয়তা ও জাতি হিসাবে বাঙালির জাতি রাষ্ট্রের চিন্তা তার মধ্যে সামান্য হইলেও উঁকি দিছিল। ওই পর্যন্তই, মুখটা বাইর করতে পারে নাই। রবীন্দ্রনাথের আধুনিকতা সত্ত্বেও তার একটা দেশের বাড়ির দেখা আমরা পাই। লোকে বলে, রবীন্দ্রনাথ বোটের জানালা দিয়া কি কুঠিবাড়ির বারান্দায় বইসা যতটুকু দেশ দেখছেন ততোটুকই রবীন্দ্র-সাহিত্যের দেশ। একথা নিশ্চিত ছোটগল্পে, গানে, কবিতায় ঠাকুর মশায়ের একটা দেশ আছে। সেই দেশ বাংলা। পশ্চিম বাংলা-পূর্ব বাংলা যাই হউক সেই দেশটা কিছুটা চিনা যায়। মজার ব্যাপার, দূর থিকা দেখলেও পূর্ব বাংলা বেশ চিনা যায়।

আধুনিক সাহিত্য যখন আরও জটিল আবর্তে, নতুন নতুন দিকে ছড়ায়ে দিশাহারা হয়া পড়ছে তখন নবজাগরেণের আরেক সন্তানের দেখা পাইলাম আমরা। তার সমকালীনরা যখন দেশ, রাষ্ট্র, রাজনীতি সব হারায়া বইসা রইছে তখন এই বোকা লোকটা আধুনিকতার মধ্যে একটা দেশের দেখা পাইছিলেন। লোকটার নাম জীবনানন্দ দাশ। আমার মতে, জীবনানন্দের রহস্য এইখানেই। ওই জটিল চিন্তার আবর্তের মধ্যে একটা দেশের এমন স্থাপনা আধুনিক সাহিত্যের ইতিহাসেই বেশি নাইকা।

জীবনানন্দের কবিতা পড়ে তাই নিশ্চিত বইলা দেওয়া যায়, এই কবিতায় দেশ আছে। লোকটা দেশের মধ্য দিয়া হাঁইটা গিয়া কবিতা লেখছেন।

কিন্তু নজরুল? কাজী নজরুল ইসলাম মুসলমান। হিন্দুর নবজাগরণের বাতাস যদি দুইজন বাঙালিকে জাগায়ে থাকে তবে রোকেয়ার পর নজরুলের নাম করতে হয়। নজরুলের উত্থান আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়। পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্তগ্রাম থিকা জাইগা উইঠা উনি কেমনে এনলাইটেন্ড হিন্দুর সমান্তরালে দাঁড়াইছিলেন সেইটা নিয়া বিশেষ গবেষণা হইতে পারে। ঘটনাটা আমার কাছে, রহস্যময় মনে হয়। বাঙালি মুসলমানের মধ্যে নজরুল ব্যতিক্রম এবং সবচেয়ে বড় প্রতিভা। এবং অবশ্যই তিনি নবজাগরণেরই সন্তান। নজরুলে উত্থানকালে ভারতবর্ষই ছিল দেশ। কোনো উত্তরাধিকার ছাড়া নজরুলকে যতদ্রুত রেনেসাঁ ও এনলাইটমেন্ট আয়ত্ত করতে হইছে সেইটাতে উনি দেশ হারায়ে ফেলবেন এইটা স্বাভাবিক। আর বাংলার যে অঞ্চল কইলকাতার বাইরে, দূরে বিশেষভাবে দেশ তার সঙ্গে নজরুলের আত্মিক যোগাযোগ কখনো তৈয়ার হয় নাই। এই দেশটারে নজরুল অনুভব করেন নাই, এইখানে তিনি সবসময় অতিথি। তার দেশ ছিল, ভারতবর্ষ, রাষ্ট্রও ছিল ভারতবর্ষ। বাংলাদেশ, বাংলা অঞ্চল বা গ্রামবাংলার কোনো ছবি নজরুলের সাহিত্যে আমি দেখি না।

নজরুলের কবিতা গান উপন্যাস গল্পে যে দেশ সেই দেশ কখনো রুক্ষ্ম চুড়ুলিয়া, কখনো মনে হয় ইরান তুরান উত্তরভারতের কোনো অঞ্চলের কথা সেইখানে। বাংলার যেটুকু ছবি সেইটুকু রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দের চাইতে বহু দূর থিকা দেখা।

কিন্তু ভাগ্যের নির্মাম পরিহাস হইলো, নজরুল শুধু মুসলমান বইলাই আমাদের জাতীয় কবি। কোন দেশের? বাংলাদেশের। এইদেশ ১৯৭১-এ তৈয়ার হইছে। কিন্তু ১৯৭১ এর আগেও এইখানে একটা দেশ আছিল। মানুষের মনের মধ্যে একটা রাষ্ট্র আছিল। একটা রাষ্ট্র চিন্তা আছিল। একটা ভূপ্রকৃতি আছিল, নদী, ধানক্ষেত, পাটক্ষেত, বন্যা, ক্ষরা সবই আছিল। সেই দেশটা জাতীয় কবির মনে স্থান করতে পারে নাই।





মন্তব্য ২৫ টি রেটিং +৩/-২

মন্তব্য (২৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মে, ২০১০ রাত ৮:৩৯

শেখ আমিনুল ইসলাম বলেছেন: খুব উচ্চমার্গের লেখা, বুঝতে পারি নাই। আরো কয়েকবার পরা লাগবে :(
ধন্যবাদ

২৭ শে মে, ২০১০ দুপুর ২:৩২

মাহবুব মোর্শেদ বলেছেন: পইরা বইলেন।

২| ২৬ শে মে, ২০১০ রাত ৮:৩৯

শেরিফ আল সায়ার বলেছেন: বিশ্লেষণ কইলাম চরমে গেছে।

নজরুল হইল এমন এক প্রতিভা যে কিনা কোন জমিদার বাড়ির ভেতর থেইক্যা আসে নাই।
বাংলার আরেক কবি নিয়াও কথা হইতে পারে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত। প্রতাপশালী পরিবার থেকা উইঠা আইসাও নিজে খৃষ্টান হইয়া পরিবার ত্যাগ কইরা পাড়ি জমাইছিল বিলাতে। তাতে তার দেশ কই আছিল? তারও দেশ ছিল আধুনিকতা।
তাই তো কইতেই হয়, কবির দেশ যে কই হয় তা হয়তো কবি স্বয়ং কইতে পারবো না।

২৭ শে মে, ২০১০ দুপুর ২:৩৬

মাহবুব মোর্শেদ বলেছেন: নজরুল তাইলে কোত্থেকে আইলেন?

৩| ২৬ শে মে, ২০১০ রাত ৮:৪৩

উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: মাইনাস দিয়া শুরু করলাম। তিনি কবি, এটা তার দ্বিতীয় সত্ত্বা। তার প্রথম সত্ত্বা তিনি একজন বিপ্লবী। তার বিপ্লবী লেখাগুলোই সেজন্যই মানুষজনকে বেশী আকৃষ্ট করে। এই বাংলায় কবি অসম্ভব জনপ্রিয়। সেটা তার ধর্মীয় সত্ত্বার জন্য নয়, বরং বিপ্লবী আপোষহীন মনোভাবের জন্য, অসাম্প্রদায়িক কিংবা প্রেমিক এক চরিত্রের জন্য। এই সবই তার লেখায় ফুটে উঠেছে তীব্র ভাবে। যা তাকে করে তুলেছে স্বতন্ত্র। একটি দেশের সংস্কৃতি শুধু সে দেশের নদী, ধান আর পাটক্ষেতই নয়।

২৭ শে মে, ২০১০ দুপুর ২:৩৭

মাহবুব মোর্শেদ বলেছেন: শুরু আপনে মাইনাস দিয়া করতে পারেন। তবে খিয়াল কইরেন। এইখানে নজরুলে অসাম্প্রদায়িকতা, বিপ্লবী চেতনা নিয়া আমরা আলোচনা করতেছি না। এইখানে নজরুলের দেশ নিয়া আলাপ হইতেছে। এই বিষয়ে আপনের কী মত?

৪| ২৬ শে মে, ২০১০ রাত ৮:৪৭

কোর আই সেভেন বলেছেন: লেখাটা পইড়া মনে হইল প্লাস কেন্‌ একটার বেশি দেয়া যায়না!!!

২৭ শে মে, ২০১০ দুপুর ২:৩৮

মাহবুব মোর্শেদ বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ২৬ শে মে, ২০১০ রাত ৮:৫১

নাজমুল হক রাসেল বলেছেন: কিন্তু ভাগ্যের নির্মাম পরিহাস হইলো, নজরুল শুধু মুসলমান বইলাই আমাদের জাতীয় কবি। কোন দেশের? বাংলাদেশের। এইদেশ ১৯৭১-এ তৈয়ার হইছে। কিন্তু ১৯৭১ এর আগেও এইখানে একটা দেশ আছিল। মানুষের মনের মধ্যে একটা রাষ্ট্র আছিল। একটা রাষ্ট্র চিন্তা আছিল। একটা ভূপ্রকৃতি আছিল, নদী, ধানক্ষেত, পাটক্ষেত, বন্যা, ক্ষরা সবই আছিল। সেই দেশটা জাতীয় কবির মনে স্থান করতে পারে নাই।

এটা কি নজরুলের দোষ? তাকে তো একরকম জোর করেই মুসলমানদের কবি, বাংলাদেশের কবি বানানো হয়েছে।

আর আপনার ফেসবুকের নোটেই অনেকেই নজরুলের বাংলার প্রকৃতিতে থাকা না থাকার ব্যাপারটি পরিস্কার করছেন। আর আপনি এখানে নিজেই বলেছেন

নজরুলে উত্থানকালে ভারতবর্ষই ছিল দেশ। কোনো উত্তরাধিকার ছাড়া নজরুলকে যতদ্রুত রেনেসাঁ ও এনলাইটমেন্ট আয়ত্ত করতে হইছে সেইটাতে উনি দেশ হারায়ে ফেলবেন এইটা স্বাভাবিক।

আর উনি দেশ হারিয়ে ফেলেছেন বলেছেন কথাটা একেবারেই সংকীর্নভাবে বললেন। তার সময়ের বাস্তবতাকে আপনি একদমই গোনায় ধরেন নি। কেউ বাংলাকে ভালোবেসেছে প্রকৃতির উপমা দিয়া, কেউ অন্যভাবে। উনি এই দেশের জন্যই জেল খেটেছেন, যুদ্ধ করেছেন। সেখানে প্রকৃতির মতো কোমল বস্তু নাও আস্তে পারে। তাই বলে উনি দেশকে আপন করতে পারেন নাই বলাটা এক রকমের ধৃস্টতা বলেই আমার মনে হয়।

তারপরেও আমরা কিন্তু 'একি অপরুপ রুপে মা তোমার হেরিনু পল্লি জননী' গাই।

২৭ শে মে, ২০১০ দুপুর ২:৪১

মাহবুব মোর্শেদ বলেছেন: নজরুলে বাঙালি মুসলমানের দেশটা নাই এইটা নজরুলের কমতি না। দেশ থাকাটাও জরুরি কিছু না। কিন্তু নজরুলের যে দেশ নাই সেইটা আমাদের জন্য জরুরি।
নজরুল বাংলাদেশের লোক আছিলেন না। এই দেশে উনি অতিথি হিসাবে ঘুইরা গেছেন। ওনার দেশ ওনার পল্লী জননী হিন্দুস্তান।

৬| ২৬ শে মে, ২০১০ রাত ৯:৪৮

বদিউজ্জামান মিলন বলেছেন: মাহবুব কেমন আছ, দোস্ত???? এখনও কি সমকালেই আছ?????? নাকি কালের কন্ঠে গেছ?????

২৭ শে মে, ২০১০ দুপুর ২:৪২

মাহবুব মোর্শেদ বলেছেন: সমকালে আছি, দোস্ত। তুমি ভাল?

৭| ২৬ শে মে, ২০১০ রাত ১০:০৬

মৃদু হাওয়া বলেছেন: নাজমুল হক রাসেলের মন্তব্যের সাথে কিছুটা একমত। একরকম জোর করেই তাঁকে কবি বানানো হয়েছে। দেশে তো অনেক কিছু বদলানো হচ্ছে, আপনার পোষ্ট পড়ে মনে হচ্ছে জাতীয় কবি চেঞ্জ করে নতুন কাউকে করা হোক যিনি বাংলাদেশ নিয়ে কবিতা লিখছেন।

শুদ্ধ বাংলায় লেখাটা লিখলে ভাল লাগত। পড়তে কষ্ট হয়েছে।

২৭ শে মে, ২০১০ দুপুর ২:৪৫

মাহবুব মোর্শেদ বলেছেন: জাতীয় কবি চেঞ্জ করার কোনো এজেন্ডা আমার নাই। এইটা স্রেফ বিশ্লেষণের উদ্দেশেই লিখছি।
শুদ্ধ বাংলা জিনিশটা কী?

৮| ২৭ শে মে, ২০১০ দুপুর ২:৫৬

অনর্থ বলেছেন: এইটা নজরুলকে নিয়া লেখা একটা ভাল বিশ্লেষনধর্মী কাজ। পছন্দ হইসে আমার। ব্লগে নজরুলকে নিয়া লেখা রবীন্দ্রবিদ্বেষী তথা হিন্দুবিদ্বেষী তথা অতিমুসলিম দের বিপ্লবী পোস্টগুলি পড়তে পড়তে টায়ার্ড হইয়া গেসিলাম। ভাল রিলিফ।

প্লাস।

২৭ শে মে, ২০১০ বিকাল ৩:৩৩

মাহবুব মোর্শেদ বলেছেন: থ্যাংকস।

৯| ২৮ শে মে, ২০১০ সকাল ১১:০২

আইরিন সুলতানা বলেছেন:
কাজী নজরুল ইসলামের নামের পূর্বে জাতীয় কবি ব্যাতিরেকে কোন বিশেষণটি যুক্ত করলে তার সাহিত্যচরিত্রকে পরিপূর্ণভাবে বোঝা যায়? বিদ্রোহী কবি। কবির শৈশবকাল থেকেই জীবনসংগ্রাম, পেশাগত জীবনের বৈচিত্র্যতাই তাকে বিদ্রোহী করে তুলেছিল বোধকরি। রবীন্দ্রনাথ যখন স্বপ্ন দেখান আমাদের, নজরুল তখন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন শেখান আমাদের- অধিকার আদায়ের আন্দোলন। অথবা নিজেই শব্দতীর ছুঁড়ে আন্দোলনের সূচনা করেন। ফলাফল ’প্রলয় শিখা’ রচনার জন্য কারাবরণ। তাই রবীন্দ্রনাথ যখন কুঠিবাড়ির বারান্দায় বসে দেশপ্রেম, মানব-মানবীর প্রেমকাব্য রচনা করেন, তখন নজরুলের শব্দবান চিরে ফালা ফালা করে দেয় বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ, ধর্মীয় কুসংস্কার এমনকি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকেও। রবিন্দ্রনাথ যখন চোখ বন্ধ করে অথবা সপ্নাতুর শব্দে দেশ দেখেন, বজরায় বসে বর্ণমালার নাসিকা টেনে ফসলের ঘ্রাণ নেন তখন নজরুলের শব্দ ছুটে বেরিয়ে আসে স্বশরীরে মাঠ-ঘাট-প্রান্তর।

বদ্ধুদেব বসু রবীন্দ্রনাথের পরে নজরুলকেই প্রথম মৌলিক কবি হিসেবে দেখেন। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যমায়ার দৃঢ় মোহ থেকে নজরুলই আমাদের বার করে এনেছিলেন। তার শব্দ ভাণ্ডার, শব্দের প্রতি দখল অনন্যের চেয়েও বেশী। সাহিত্যে দেশী-বিদেশী শব্দের সংমিশ্রণ, কিংবা সুরের মধ্যে দেশী-বিদেশী মিশ্রণ অসামান্য দক্ষতায় করে গেছেন তিনি। সংগীতের মূল ঘর হলো উচ্চাঙ্গ সংগীত। সেই রাগাশ্রিত সংগীতকে নানা ব্যঞ্জনায় তুলে ধরেছেন আমাদের কানে।

নজরুল আর রবীন্দ্র সাহিত্যের একটা সোজা ফাঁড়াক আছে - একটি সহজেই পাঠযোগ্য, আবৃত্তি যোগ্য, গুণগুণ যোগ্য, মুখস্ত যোগ্য আর অন্যটি পাঠে কিঞ্চিত সময় ব্যায় হয়, মুখস্ত করতেও খানিক পরিশ্রম বেশী হয়। সুর অহরহ গুনগুণ বা একটু পটুয়া না হলে গাওয়া সহজ হয়ে ওঠেনা। শিক্ষা জীবনের বহু বাধা, উথ্থাত-পতন স্বত্বেও (যা রবীন্দ্রনাথের জীবনে স্বভাবতেই অনেকাংশে সহজলভ্য ছিল) নজরুলের সাহিত্যজ্ঞানের এমনতর বহর এবং বাহার এক রহস্যই বটে। মুসলিম কবি হয়েও হিন্দুশাস্ত্রের চরিত্রগুলি নিয়ে তার জবরদস্ত দখল ছিল।নজরুল কোন রকম রাখঢাক ছাড়াই বলে ওঠেন স্পষ্ট, দৃঢ় কন্ঠে “আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন/আমি স্রষ্টা-সূদন, শোক-তাপ হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন/আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন/আমি খেয়ালী-বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন!” যে নজরুল বিধাতাকে প্রত্যাহ্বান করেন সেই তিনিই একের পর এক ইসলামি গান রচনা করে চলেন। ”ও মোর রমজানের ওই রোজার শেষে এরো খুশীর ঈদ…”, এই গান ছাড়া আমাদের বাঙালি, বাংলাদেশীদের ধর্মীয় ও সামাজিক আচার ঈদ তো হয়ই না যেন। এবং নজরুল তার শেষ আর্জি জানান, ”মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিয়ো ভাই, যেন গোরের থেকে মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই” ।

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের জন্য লিখিত কাব্য-সংগীত যখন আমাদের ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা যোগায়, তখন সেগুলো কেবলই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সহযোগী হয়ে ওঠে।
“...দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার,
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝিপথ
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মত্?
কে আছ জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত্।...
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার। ...”

এই কাণ্ডারী হওয়ার আহ্বান আর ভারতবর্ষে সীমাবদ্ধ থাকেনি, এই গান আত্মস্থ করেছিল আমাদেরই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে।

”...কারার ঐ লৌহ কপাট
ভেঙে ফেল কররে লোপাট
রক্ত জমাট শিকল পূজার পাষাণ বেদী ...”

আমাদের মুক্তিযুদ্ধে এই গানের অবদান কে অস্বীকার করবে!

১০| ২৮ শে মে, ২০১০ সকাল ১১:০৫

আইরিন সুলতানা বলেছেন: প্রেম পূজারী রবীন্দ্রনাথ নারীকে নিয়ে বহু রচনা করেছেন। মানব-মানবীর প্রেম নিয়ে তার বহু গান সময়ে-অসময়ে-বিরহে-পুলকে আমরা গুনগুণ করবোই। তার শব্দ দিয়ে নারীকে পেলব, কোমল রূপে তুলে ধরেছেন সাহিত্য প্রেমীদের কাছে। নারীকে জ্ঞানীও করেছেন তিনি অসীম ব্যক্তিত্ব দিয়ে। নারী যখন তার সাহিত্যে আরাধ্য হয়ে ওঠে সেই নারীকে নেতৃত্বের আসন কি দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ?? নারীর অপর নাম কল্যানী দিয়েছেন তার সাহিত্যে, কিন্তু জগতের তাবৎ কল্যাণের কৃতিত্ব কি নারীকে উদারচিত্তে দিতে পেরেছেন? রবীন্দ্রনাথের বেলায় একটি অভিযোগ ওঠে- তিনি পুরুষবাদি ছিলেন। নারীপ্রেমী ছিলেন, নারী বন্দনায় মুগ্ধ ছিলেন কিন্তু নারী স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন। নারীকে প্রেমিকারূপে দেখতে আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু নারীকে নেত্রী হিসেবে দেখতে আগ্রহী ছিলেন না। আর তাই রবীন্দ্রনাথ যখন লিখেন, “শুধু বিধাতার সৃষ্টি নহ তুমি নারী! পুরুষ গড়েছে তোরে সৌন্দর্য সঞ্চারি..........পড়েছে তোমার ’পরে প্রদীপ্ত বাসনা- অর্ধেক মানবী তুমি, অর্ধেক কল্পনা।” , তখন নজরুল বলেন,

“সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!
বিশ্বে যা-কিছু মহান্ সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”

রবীন্দ্রনাথের চোখে নারী ছিল কামনা-বাসনার আধার। তিনি নারীকে পূজা করিতে দ্বিধা করতেন না, কারণ তাতে তিনি পুরুষ হিসেবে নারীকে স্বীকৃতি দেয়ার পুরো কৃতীত্বটুকু নিতে চাইতেন। তিনি নারীকে পুরুষের চরণদাসী রুপে দেখতেই স্বস্তি পেতেন । এক হিসেবে রবীন্দ্রনাথ সমসাময়িককালরে প্রথাগত চিন্তারই বাহক ছিলেন। প্রথা ভাঙ্গার ডাক দেয়ার মত সাহসী হতে তিনি আগ্রহী ছিলেন না। তিনি তাই অবলীলায় বসে বসেন, “.... ইউরোপের অনেক মেয়েই সকাল থেকে রাত্তির পরযন্ত পিয়ানো ঠং ঠং এবং ডোরেমিফা চেঁচিয়ে মরছে, কিন্তু তাদের মধ্যে ক’টা মোজার্ট কিংবা বিথোভেন জন্মালো”

আর নজরুল তখন লিখেন, “...শিখালে কাঁকন চুড়ি পরিয়াও নারী, ধরিতে পারে যে উদ্ধত তরবারী.... তুমি গোলকুণ্ডা কহিনূর হীরাসম, আজো ইতিহাসে জ্বলিতেছো চির মম..রণরঙ্গিণী ফিরে এসো, তুমি ফিরিয়া আসিলে ফিরিয়া আসিবে, লক্ষী, স্বরসতী..চাঁদের কন্যা চাঁদ সুলতানা, চাঁদের চেয়েও জ্যোতি!”

সেই যুগের প্রেক্ষিতে রবীন্দ্রনাথ যখন একদমই প্রথাগত সমাজকে ধারণ করেন, তখন নজরূল এমনকি আজকের যুগের প্রেক্ষিতেও উত্তরাধুনিক মনষ্ক।
হুমায়ুন আজাদ তাঁর নারী রবীন্দ্রনাথের নারী কেন্দ্রিক মনোভাবকে বোঝাতে ”নারী” গ্রন্থে বলেছেন, “রবীন্দ্রনাথ মনে করেন নারীর পক্ষে কবি-বৈজ্ঞানিক-প্রধানমন্ত্রী হওয়া অস্বাভাবিক...”, হুমায়ুন আজাদ আরো লিখেছেন, “রবীন্দ্রনাথের নারী জৈবিক। জৈবিক হওয়ার অর্থ হলো নারী মানুষ হয়ে ওঠেনি। তার কাজ সন্তান ধারণ আর লালন করে সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখা। পুরুষের কাজ সভ্যতা সৃষ্টি করা।... .... .... .... নারী ওই প্রাণ সৃষ্টি করতে গিয়ে আটকে পড়ছে আঁতুড় ঘরে আর মন-চালিত হয়ে পুরুষ সৃষ্টি করে চলেছে সভ্যতা। এর অর্থ হচ্ছে, নারী মনহীনপ্রানী, যার কাজ নিজের অভ্যন্তরে নতুন প্রাণ সৃষ্টি করা। নারী যেখানে জৈবস্তরে রয়ে গেছে, সেখানে পুরুষ উত্তীর্ণ হয়েছে অভিনব দেবতার স্তরে... ”

”জাপানযাত্রী” রচনাতে রবীন্দ্রনাথ জাপানি দাসী দেখে তার মুগ্ধতা প্রকাশ করেন, “এখনকার ঘরকন্যার মধ্যে প্রবেশ করে সবচেয়ে চোখে পড়ে জাপানি দাসী।... যেন মানুষের সঙ্গে পুতুলের সঙ্গে মাংসের সঙ্গে মোমের সঙ্গে মিশিয়ে একটা পদার্থ; আর সমস্ত শরীরে ক্ষিপ্রতা, নৈপুন্য, বলিষ্ঠতা। ....জানালার বাইরে চেয়ে দেখলুম, প্রতিবেশীদের বাড়িতে ঘরকন্যার হিল্লোল তখন জগতে আরম্ভ করেছে- সেই হিল্লোল মেয়েদের হিল্লোল। ঘরে ঘরে মেয়েদের কাজের ঢেউ এমন বিচিত্র বৃহৎ এবং প্রবল করে সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু এটা দেখলেই বোঝা যায় এমন স্বাভাবিক আর কিছুই নেই...” এই প্রসংগে হুমায়ুন আজাদ বলেছেন, “রবীন্দ্রনাথের জাপানি দাসীবন্দনার মাঝে রয়েছে নারীদের কর্মযোগ্যতা নিয়ে এক ভীতিকর দর্শন : দাসীবৃত্তি নারীদের জন্য স্বাভাবিক। ...”

রবীন্দ্রনাথ যখন নারীকে নিয়ে এমন করে ভাবেন তখন নজরুল রক্ষণশীল সমাজকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে কি বলেন ? “ জাগো নারী জাগো, বন্হি শিখা, জাগো সাহা সীমান্তের রক্ত টিকা.....চিরবিজয়িনী জাগো জয়ন্তিকা .... ”

এই নারীরা তো ”পুরব দেশের পুর নারী......পদ্মাকুলের আমি পদ্মীনি বধু...” ।


(নারী-পুরুষের এই আলোচনা টানার কারণ, আপনার এই লেখার বাইরেও আপনার ফেসবুক স্ট্যাটাস মোতাবেক আপনি নজরুলে আমাদের মানুষ-আমাদের সমাজ পানটা এবং শেষ পর্যন্ত কোন দেশ পান না। আমি নারী-পুরুষকে সেই মানুষ আর সমাজে অন্তন্ভূক্ত করলাম, যেই মানুষ আর সমাজ মিলে একটা দেশ হয়)

১১| ২৮ শে মে, ২০১০ সকাল ১১:১৪

আইরিন সুলতানা বলেছেন: আপনি নজরুলের কাব্যে-গানে প্রকৃতি, বাঙলা খুঁজে পান না। সেই প্রেক্ষিতে বলছি-


”পউষ এলো গো!
পউষ এলো অশ্র”-পাথার হিম পারাবার পারায়ে...
ঐ যে এলো গো-
কুজঝটিকার ঘোম্টা-পরা দিগন-রে দাঁড়ায়ে।।...”

নজরুলর কাব্যে ঋতু কেন্দ্রীক গ্রাম-বাংলা-মানুষ দেখি তার ”পউষ” কাব্যে।

”সাঁঝের প্রদীপ আঁচল ঝেঁপে
বঁধুর পথে চাইতে বেঁকে
চাউনিটি কার উঠছে কেঁপে
রোজ সাঁঝে ভাই এমনি ধারা।।...:”

”সন্ধ্যাতারা” কাব্যে রচিত এই চিত্র কি আমাদের গ্রামগঞ্জের পল্লীবালাদের নয়?

”...আজ কাশ-বনে কে শ্বাস ফেলে যায় মরা নদীর কূলে,
ও তার হলদে আঁচল চ’লতে জড়ায় অড়হরের ফুলে!
ঐ বাবলা ফুলের নাকছবি তার,
গা’য় শাড়ি নীল অপরাজিতার,
চ’লেছি সেই অজানিতার
উদাস পরশ পেতে।। .. “

”অ-কেজোর গান” কাব্যের মটরশুটি, রোদ সোহাগী পৌষের সকাল, প্রজাপতি, আমন ধান, অড়হর ফুল, বাবলা ফুলের নাকছাবি এগুলো আমাদের গ্রামবাংলার রূপ নয়?

গ্রীস্মে তাপদাহ, তাণ্ডব নিয়ে প্রকৃতির ছবি পাওয়া যাবে নজরুল গীতিতে -

”তৃষিত আকাশ কাঁপে রে, প্রখর রবির তাপেরে...” অথবা “এলো, এলো রে, বৈশাখি ঝড় এলো, এলো রে...”

অথবা বর্ষা কিংবা শ্রাবনের বর্ষণ নিয়ে কবি নজরুল হাজির হন -

”এসো হে সজল, শ্যাম ঘন দেয়া, বেণু কুঞ্জ ছায়ায় এসো, তাল-তমাল বনে, এসো শ্যামল, ফুটাইয়া যুথি কুঞ্জ, নিপ কেয়া ...হিজল তমাল বনে ঝুলন ঝুলায়ে তাপিত ধরার বুকে অঞ্জন বুলায়ে যমুনা স্রোতে ভাসায়ে আশার আলেয়া.. ঘন দেয়া..মোহ নিয়া..শ্যাম পিয়া... ”

বৃষ্টিকালীন প্রকৃতিতে, মানুষের মনে যে চঞ্চলতা তা নিয়ে কবি গান লিখেছেন -


”রিমি রিম ঝিম রিম ঝিম নামিল দেয়া, শুনে শিহরে কদম, বিদরে কেয়া..ঝিলে শাপলা কমল, ওই মেলিল দল.... ... ... বারিধারে কাঁদে চারিধার, ঘরে ঘরে আজি রূদ্ধ দুয়ার...”

বৃষ্টির এই বর্ণনায় আমরাইরান-তুরানের প্রতিচ্ছবি দেখি না আমাদের বাংলার বৃষ্টি সিক্ত রূপ দেখি?

এমনকি নজরুলের প্রেম-বিরহের গানেও ঋতুর প্রভাব ছিল -

”শাওন রাতে যদি, স্বরণে আসে মোরে, বাহিরে ঝড় বহে নয়নে বারি ঝড়ে...” অথবা ”চৈতালী চাঁদনি রাতে...” অথবা “বসন্ত মুখর আজি, দক্ষিণ সমীরণে, মর্মর গুঞ্জনে... ” অথবা ”পরো, পরো চৈতালী সাজে পশমি শাড়ী, আজি তোমার রূপেরও সাথে চাঁদেরও আড়ি..” গানগুলো তারই প্রমাণ।

”পদ্মার ঢেউরে, মোর শূণ্য হৃদয় পদ্ম নিয়ে যা যারে...” অথবা ”ওরে নীল যমুনার জল...” , এই গানগুলোতে এই পদ্মা, এই যমুনা কি কেবল ভারতবর্ষের জন্য বরাদ্দ রাখবো আমরা নাকি এগুলো আমাদের বাংলার নদী- প্রকৃতির সম্পদ।

আমাদের দেশী, গ্রাম বাংলার ফুল নিয়ে নজরুল ইসলাম কতরকম গান উপহার দিয়ে গেছেন। “বেল ফুল এনে দাও, চাইনা বকুল, চাইনা হেনা, আনো আমের মুকুল...” অথবা “হলুদ গাঁদার ফুল, রাঙা পলাশ ফুল, এনে দে নইলে বাঁধবো না বাঁধবো চুল” অথবা “মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী, দেব খোঁপায় তারার ফুল...” অথবা “শিউলী তলায় ভোর বেলায়, কুসুম কুড়ায় কোন পল্লী বালায়.....”

নজরুল আমাদের তমাল, চাঁপা লতার সাথে জড়িয়েছেন, শিরিষ পাতার নূপুর পড়িয়েছেন তার গানে/কাব্যে। এই সম্পদকে কি আমরা আরবী-ফার্সীদের হাতে তুলে দেব? নাকি ভারতবর্ষের বলে এক ঘরে করে রাখবো? এগুলো যে আমাদের বাংলার প্রকৃতিকে, গ্রামগঞ্জকে তুলে ধরছে তাতে কোন সন্দেহ আছে? ”এই রাঙামাটি পথে লো মাদল বাজে, বাজে বাঁশের বাঁশী…”, নজরুল আমাদের হাঁটিয়ে নিয়ে গেছেন বাংলা পথে এভাবেই অথবা এই পথে কিশোরীর চলাচলকে অনুসরণ করেছেন, “চমকে চমকে ধীর ভিরু পায়, পল্লী বালিকা বুনো পথে যায়…”

১২| ২৮ শে মে, ২০১০ সকাল ১১:১৬

আইরিন সুলতানা বলেছেন: নজরুল ইসলাম এবং রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর, দুজনেই মূলত অনবদ্য। এবং স্ব স্ব মহিমায় উজ্জ্বল। তবে তাদের প্রকাশ ভঙ্গিতে যোজন যোজন ফাঁড়াক। একই বিষয়ে তাদের প্রকাশ ভঙ্গিতে বিস্তর ফাঁড়াক দেখা যায়। রবিন্দ্রনাথ যখন বলেন, ”আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনে…”, তখন নজরুল বলেন, “আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে মোর মুখ হাসে, মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে…”। ৪০০০ এরও বেশী সাহিত্য প্রসব করলেও নজরুলের প্রায় রচনাবলীই হয়তবা শব্দের কারুকাজের কারণে অনেকখানি দূর্বোধ্য একেবারে আম সাহিত্য পাঠকের কাছে। এইখানে রবীন্দ্রনাথ বেশ সফল। ফলে সারা বছর রবীঠাকুরকে নিয়েই নানা আয়োজন, আলোচনা দেখা গেলেও নজরুল ইসলামকে নিয়ে আমাদের আয়োজন একরকম বছরে দু’বারের (জন্ম এবং মৃত্যু বার্ষিকী) মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল মাঝে অনেকদিন বলে অনেক নজরুল গবেষকরা অভিযোগ করেছিলেন।আমার দেশ পত্রিকায় মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান বলেছেন, “…তাঁর নির্বাক হওয়ার পর প্রায় ১০ বছরকাল তাঁর গানকে চরম উপেক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। সর্বতোভাবে বর্জনের এবং পরিত্যাগের একটি অঘোষিত চক্রান্তও কার্যকর ছিল।…” এভাবে ভেবে দেখলে, নজরুল যদি জাতীয় কবি না হতেন তো তিনি আমাদের রবীন্দ্রভক্তি এবং প্রচারনার কারণে এই যুগে পিছিয়ে থাকতেন বলে আশংকা করা যায়। রবিঠাকুরের রচনা আমাদের জাতীয় সংগীত, তিনি আমাদের নোবেল এনেদিয়েছেন, তিনি আমাদের বিশ্ব কবি। এর পাশে নজরুলকেও তার অবদানের জন্য জাতীয় কবি মেনে নিয়ে আমার আমাদের বাংলা সাহিত্যের দু’জন প্রতাপশালী প্রতিভাকে অন্তত যথাযোগ্য সমমর্যাদায় অভিষিক্ত করি।

নজরুল যখন অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলেন, সৌভ্রাতৃত্বের কথা বলেন, নারী-পুরুষের সম-অধিকারের কথা বলেন, নারীকে নেতৃত্বে উৎসাহিত করেন, শ্রমিকদের তাদের অধিকার সচেতন হতে বলেন, ছাত্রসমাজকে যুথবদ্ধ হতে বলেন, শৃঙ্খল ভাঙ্গার কথা বলেন, প্রেমের কথা, বিরহের কথা, নদীর কথা, প্রকৃতির কথা বলেন, তখন বুঝতেই হবে তার মননে একটি সমাজচিত্র, দেশচিত্র তো অবশ্যই ছিল।“জননী মোর জন্মভূমি, তোমার পায় ঠেকায় মাথা/ স্বর্গাদপি গরিয়সী স্বদেশ ...”, মননে আঁকা সেই স্বদেশকে নিয়ে নজরুলের অভিব্যক্তি এমনটাই এবং সেই দেশকে কেবল ইরান-তুরান, রুক্ষ চুরুলিয়ার সাথে গুলিয়ে ফেলাটা নজরুলকে নিয়ে আমাদের বোঝার, খোঁজার, ভাবনার সীমাবদ্ধতা।

১৩| ১১ ই জুন, ২০১০ দুপুর ২:২৬

আইরিন সুলতানা বলেছেন:
(আমার ফেসবুক নোটে আপনার মন্তব্যটি আপনার অনুমতি ছাড়াই এখানে কপিপেস্ট করলাম, আলোচনার ধারাবাহিকতা সংরক্ষণের জন্য।)

------------------

Mahbub Morshed বলেছেন :

....সত্যি কথা বলতে কি কে এন ইসলামের সঙ্গে আর এন ঠাকুরের তুলনা ছাড়া আপনের নোটটা আমি লাইক করছি।

খেয়াল কইরেন, নজরুল বিদ্রোহী কবি কি না, তিনি সাম্যের কবি কি না, তিনি নারী মুক্তি নিয়া বিশেষ ভূমিকা নিছেন কি না এইসব নিয়া আমার কোনো তর্ক নাই। এইসব নিয়া আপনে যা কইছেন সেইগুলার সঙ্গে আপাতত আমার দ্বিমতও নাই।

মামলা অন্যখানে। আমি কইতে চাইছি, নজরুলের রচনায় বাংলাদেশ নাই, ১৯৭১ এর পরের বাংলাদেশ না, আগের বাংলাদেশ। বলতে গেলে একটু বেশি বলা হবে। নজরুলের রচনায় আমি বাংলাদেশ খুঁজতেছি মেলা দিন থিকা। পাই নাই। বাংলাদেশের চাইতে হিন্দুস্তান বেশি পাইছি। তারও চাইতে বেশি পাইছি, ইরান-তুরান-আরব। আমি কইতেছি না যে এইটা খারাপ। আমি কইতেছি এইটা বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য একটা আবিষ্কার।

নজরুলে বাংলাদেশ আছে বইলা যে উদাহরণগুলা আপনে হাজির করছেন সেইগুলার প্রধান যুক্তি এই যে, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে নজরুলের গান আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা দিছে। এইটা সত্য। আপনে যা বলছেন
তার চাইতে বেশি দিছে। কিন্তু প্রেরণা দিয়া কি সাহিত্যের দেশ বিচার হয়। আমি যদি কই, বাংলাদেশে দুর্গম গিরি কই আর কান্তার মরু কই তাইলে আপনে মাইন্ড খাইতে পারেন।

যাই হউক, আপনে পদ্মাকুলের পুরনারী, নীল যমুনার জল, হিজল তমাল সহ সামান্য যে কয়টা উদাহরণ দিছেন তা ভাল কইরা খিয়াল করলে দেখবেন নজরুল কত দূর থিকা দৃশ্যগুলা দেখবেন। আপনের হয়তো মনে পড়বে রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পগুলার কথা। সেইখানে বাংলাদেশ কতভাবে হাজির সেইটা আপনে যে কোনো সময় উল্টাইলেই দেখবেন। আর জীবন দামের কথা কী কই!

কলকাতা থেকে বাংলাদেশ যত কাছে, চুড়ুলিয়া থিকা ততো দূরে। নজরুল এই দেশ আয়ত্ত করতে পারেন নাই। ফলে, মরুর বালিকাকে তিনি যেমনে দেখছেন পদ্মার নারী্কেও তেমনে দেখছেন। ....

১৪| ১১ ই জুন, ২০১০ দুপুর ২:৩১

আইরিন সুলতানা বলেছেন: এবার আমার বক্তব্য -


............... নজরুল কে নিয়ে আপনার স্ট্যাটাস এবং পরবর্তীতে ফেসবুকে নোটের বক্তব্যগুলোকে একরকম অভিযোগের মত মনে হয়েছে সবার কাছে। ওই বক্তব্য বিবেচনা করলে আপনি নজরুল সাহিত্যে বিশাল শূণ্যতা দেখেন যান প্রেক্ষিতে আপনি বটম লাইনে বলেন, কেবলমাত্র মুসলমান বলেই নজরুল জাতীয় কবির মরযাদা পেয়েছে। তবে আলোচনায় আপনার অনূভূতি থাকলেও দৃশ্যমান তথ্য ছিলনা। এই মন্তব্যে মনে হলো আপনি আপনার পূর্রবর্তী মতামত থেকে সরে আসছেন এবং কোথাও কোথায় পরিমার্জনাও করেছেন। আগের সেই নাই-মূলক শূন্যতাটা এখন আবিস্কাররূপে আবিভূর্ত হয়েছে। এতে ভাল হলো যে, আমরা আপনার ভাবনাটাকে পরিস্কার করে বোঝার জন্য এক ধাপ এগুতে পারলাম।

নজরুল ইরান-তুরান-আরব নিয়ে লিখেছেন, এটা বলাতে, মানাতে আমার কোন সমস্যা নেই। ফলে আপনার এই আবিস্কারেও আমি পাঠক হিসেবে আনন্দিত হবো। কারণ এই যে ভিনদেশী সাহিত্য, সুরকে আমাদের সংস্কৃতির সাথে সূক্ষভাবে মিশিয়ে দেয়ার ”সফল” প্রচেষ্টা , তাতে পরিশেষে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতিই বলিষ্ঠ হয়েছে। কোন দেশের গণ্ডির নিজস্ব, নির্দষ্ট ঐতিহ্যের পাশাপাশি ভিন্ন সীমানার সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রভাব এবং দুইয়ের ফিউশনেই সেই দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির অগ্রগতি হয়।

বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকরা সময় সময় এই ফিউশনে ভূমিকা রেখেছিলেন। ইদরিস আলী তার ’নজরুল সঙ্গীতের সুর’ বইটিতে বলেছেন -

" ..... বাংলা গানের ইতিহাসে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বংলাভাষায় লঘুসংগীত চর্চায় যে পঞ্চপ্রধান বাংলা গানকে চরম উৎকর্ষ সাধন করেছিলেন তার শেষরূপকার ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। তার পূর্বসুরীরা হলেন যথাক্রমে প্রথম ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (দ্বিতীয় ব্যক্তি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, তৃতীয় রজনীকান্ত সেন, চতুর্থ অতুল প্রসাদ এবং পঞ্চম নজরুল ইসলাম)- যিনি ছিলেন উত্তর-ভারতীয় হিন্দুয়ানী সংগীত পদ্ধতির পৃষ্ঠপোষক, যার গানের কাব্যিক আশ্রয় ছিল মূলত ব্রহ্মসংগীত তথা ধ্রুপদীয় ধারাপুষ্ট। রবীন্দ্রনাথের গান বাংলা কাব্যসংগীতের উচ্চ আদর্শে রচিত হলেও বাঙালির সাঙ্গীতিক ঐতিহ্যকে সমগ্রিকভাবে তিনি রূপায়িত করেননি। তার গানে অতি নির্দিষ্ট ও কাব্য রূপের মধ্যেও যেমন বাঙালির সম্পূর্ণ পরিচয় খুঁজে পাওয়া যায় না- তেমনি সব সৃষ্টিশীলতার মাঝে যে সংস্কার, বিশেষ করে সঙ্গীত কলায় শিল্পীর গায়কি স্বাতন্ত্র্যে অল্পবিস্তর সঙ্গতিপূর্ণ রূপায়ণগত স্বাধীনতাকে যুগ যুগ ধরে স্বীকার করে আসা হয়েছে তার সঙ্গেও রবীন্দ্রনাথের গানের কোন সম্পর্ক বা আপোষ নেই। অর্থ্যাৎ শিল্পীর কন্ঠ শিল্পী দ্বারা নয়, অন্য কারো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত- যা শিল্পীর ব্যক্তিত্ব ও কন্ঠ স্বাতন্ত্রকে অবজ্ঞার শামিল। ফলে রবীন্দ্রনাথের গান বাংলার সর্বশ্রেনী তথা বাংলার রসজ্ঞ সমাজকে তৃপ্ত করতে পারেনি।

এ সর্ম্পকে ”কাজী নজরুলে গান” গ্রন্থে গ্রন্থকারক নারায়ণ চৌধুরীর উদ্ধৃতি:

রবীন্দ্রনাথের মধ্যে পাই ধ্রুপদের গভীর গম্ভীর প্রভাব এবং মধ্যে ও শেষ বয়সের রচনায় লোকসঙ্গীদের আলোছায়ার লীলা; দ্বিজেন্দ্রলালের গানে আছে খেয়াল ও টপ্পার সুরভঙ্গির ছাঁচ ও কোরাস গানগুলোতে পাওয়া যায় ইউরোপীয় কন্ঠসংগীতের ধাঁচে উচ্চাবচ অর্থ্যাৎ কখনও উঁচুতে কখনও নিম্নগ্রামে স্বর- নিক্ষেপের লীলা; রজনীকান্তে পাই ”প্রাচীন বাংলাগান ও রবীন্দ্র-দ্বিজেনন্দ্রের আদর্শে এক-রাগ-ভিত্তিক ধ্রুপদ খেয়াল মেজাজ;অতুল প্রসাদ এনেছেন বাংলা গানে ঠুংরী-সুরভঙ্গি সূক্ষ-ব্যঞ্জনা; আর নজরুল সর্ম্পকে বলতে গেলে বলতে হয়, তিনি বাংল গানকে সমৃদ্ধ করেছেন উত্তর-ভারতীয় খেয়াল-টপ্পা-ঠুংরী-কাজরী-হোরী-লাউনী-নাত-গজল-কাওয়ালী প্রভৃতি বিচিত্র রকমের রঙদার সুরের ঐশ্বর্যে।” (মুক্তধারা, বাংলাদেশে. প্রথম প্রকাশ: ১৯৯৩, পৃষ্ঠা-১৫) । ............. “


১৫| ১১ ই জুন, ২০১০ দুপুর ২:৩৩

আইরিন সুলতানা বলেছেন:
নজরুল ”কেবল “ ভিনদেশী গান-সাহিত্যে মশগুল ছিলেন এরকম আবিস্কারের দাবি হয়ত ন্যায্য হয়না। নজরুল খেজুর পাতা নিয়েও লিখেছেন, আবার হিজল-তমাল নিয়েও লিখেছেন। তিনি ইরানি কিশোরীকে জাফরানি ঘাগরি পরিহিত দেখেছেন, আবার পল্লী বালিকার শাড়ি কাঁটালতায় জড়িয়ে যায় তাও তার নজর এড়ায়নি। এইখানের দুই পরিবেশের যে নিজস্ব চঞ্চলতা তার বর্ননায় নজরুল কার্পন্য করেন নাই। তবে নজরুল ভিন্নধর্মী গানসাহিত্য রচনায় মশগুল ছিলেন এতে সন্দেহ নেই।

আপনি চরুলিয়া আর বাংলাদেশের দূরত্ব বোঝাতে গেলে বলতে হয়, নজরুলের সংগ্রামী জীবন হলো একটি প্রমাণ যে তিনি জীবন, পরিবেশ, ধর্ম, মনুষত্যকে কত কাছ থেকে দেখেছেন।

আমাদের দেশ সমতল ভূমি। তাই এইখানে দূর্গম গিরি কান্তার মরু আপনি খুঁজে পাবেন না এই কথায় আমি একদমই মাইন্ড খাবো না। কিন্তু এই গানটা পুরা শুনেন। দূর্গম গিরি আর কান্তার মরু থাকলেই যে এটা ভিনদেশী গান তা কিন্তু না। এটা মূলত বিপদে সাহস না হারানোর গান।সাহস যোগানোর গান। গিরি আর মরু হলো উপমা এটা আপনার বোঝা কথা। তবে আপনি দূর্গম গিরিতেই আটকে গেলেন আর কান্তার মরুতেই নজরুলকে নিয়ে হাল ছেড়ে দিলেন দেখে আশাহত হলাম। আরেকটু সামনে এগিয়ে আসেন । তাহলে দেখতে পাবেন,

দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল
ভুলিতেছে মাঝি পথ
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল
আছে কার হিম্মত

এই গানে এই যে হাল, পাল, জল, মাঝি, কাণ্ডারী এইগুলোও তো একটু আবিস্কার করা দরকার।

এই নোটে ”বিদ্রোহী কবি” উল্লেখ করার একটা কারণ আছে। ”জাতীয় কবি” উপাধি হলো নজরুলের সাহিত্যপ্রতিভা আর অবদানের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা। আর ”বিদ্রোহী কবি” উপাধি হলো নজুরুলের সাহিত্যধারার যে চলন তার পরিচয়। সব সাহিত্যিকের লেখনিরই নিজস্ব বৈশিষ্ট আছে। কিন্তু নজরুলের বিদ্রোহীপনা একটু বেশীই ব্যতিক্রম। ফলে তার সাহিত্যে প্রেম, প্রকৃতি, বাংলা, ধর্ম সবই তথাকথিত ধারা থেকে ভিন্ন।

বৃষ্টি দেখলে রবীন্দ্রনাথ মনে হতে পারে, ঝড় দেখলে নজরুল আর ঝড়বৃষ্টির পর ভেজা গাঁয়ের মাঠ দেখলে জসিমউদ্দিন, কাজল কালো চোখের প্রেমিকার মুখের দিকে তাকালে জীবনানন্দ । এখানে পাঠক হিসেবেও যার যার একান্ত ব্যক্তিগত স্বভাবের কারণে এই ”মনে করা না করায়” প্রাওরিটি কাজ করবে। তা বলে অন্য সাহিত্যিক ও তার সাহিত্য ম্লান হয়ে যাবে তা নয়।

নজরুলের সাহিত্যকর্মকে বিষয় ভিত্তিক করে সাজালেই দেখা যাবে কোন বিষয় নিয়েই তার ভাবনার অভাব নেই। এটাই সাহিত্যিকের সার্থকতা।

আমি আপনার কাছ থেকে একটু জানতে চাইছি, ঠিক কোন কোন চরণে বাংলার প্রকৃতির মাঝেও আপনি নজরুলসাহিত্যে বাংলাদেশকে দেখেন না, চরুলিয়ার দূরত্বে আটকে যান কিন্তু কুঠিবাড়ির রাজকীয়তা থেকে রচিত রবীন্দ্রসাহিত্যে আপনি আপনার সেই বাংলাকে দেখতে পান ঠিকই। নজরুলকে নিয়ে আপনার যে অনুযোগ, এবং পরবর্তীতে আবিষ্কার তা যদি একটু খানি উদাহরণস্বরুপ হয়তো পাঠকের ক্ষেত্রে নজরুলকে বুঝতে আরেকটু সুবিধে হয় বৈকি।

১৬| ১১ ই জুন, ২০১০ দুপুর ২:৩৫

আইরিন সুলতানা বলেছেন: সত্যি কথা বলতে কি কে এন ইসলামের সঙ্গে আর এন ঠাকুরের তুলনা ছাড়া আপনের নোটটা আমি লাইক করছি।

----------
ইহা কি আমাকে বলিলেন ??

আপনার নোটের তিনটি ভাগের এক ভাগে ছিল রবীন্দ্রনাথ, এক ভাগে নজরুল এবং শেষ ভাগে আগের দুই ভাগের প্রেক্ষিতে উনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। ‍তুলনার সূত্রপাত আপনার নোট থেকেই হইয়াছিল কিন্তুক!

১৭| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:০৯

নবীন পথিক বলেছেন: এই বাংলায় কবি অসম্ভব জনপ্রিয়। সেটা তার ধর্মীয় সত্ত্বার জন্য নয়, বরং বিপ্লবী আপোষহীন মনোভাবের জন্য, অসাম্প্রদায়িক কিংবা প্রেমিক এক চরিত্রের জন্য। এই সবই তার লেখায় ফুটে উঠেছে তীব্র ভাবে। যা তাকে করে তুলেছে স্বতন্ত্র। একটি দেশের সংস্কৃতি শুধু সে দেশের নদী, ধান আর পাটক্ষেতই নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.