![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গত ৯ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার ভোরের দিকে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের কাছে শেলা নদীতে সাড়ে তিন লাখ লিটারের ফার্নেল ওয়েলবাহী ট্যাংকার ডুবির পর জাহাজের তেল ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকায়। অদক্ষতা, যথাযথ যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা এবং কালক্ষেপণের কারণে আজ বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন ও এর জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে।
৬০১৭ কিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনের ভেতরে জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে প্রায় ৪৫০ টির মত ছোট-বড় নদী আর খাল। প্রায় ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা(সুন্দরী,গেওয়া, কেওড়া), ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল, ১৩ প্রজাতির অর্কিড, রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও চিত্রল হরিণসহ ৩২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভয়চর, ৩শ প্রজাতির পাখি। বিলুপ্ত প্রায় ইরাবতী ডলফিনসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন, কুমির, ২১০ প্রজাতির মাছ, ১৩ প্রজাতির কাঁকড়া, ২৬ প্রজাতির চিংড়ি, ১ প্রজাতির লবস্টার ও ৪২ প্রজাতির শামুক, ঝিনুক রয়েছে সুন্দরবনে। অযত্নে অবহেলায় সুন্দরবন থেকে বিলুপ্ত হয়েছে ২ প্রজাতির পাখি, ৫ প্রজাতির মাছ এবং ৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। আর বিলুপ্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে ২ প্রজাতির উভচর, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৫ প্রজাতির পাখি ও ৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী।
বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮ (ক) তে প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব-বৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করার কথা বলা হলেও তা সুন্দরবনের ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ৫ ধারা অনুযায়ী সুন্দরবনকে ১৯৯৯ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (Ecologically Critical Area) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যদিও ৫ ধারা ভঙ্গের জন্য এই আইনের ১৫ ধারায় সর্বচ্চ ১০ বৎসর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে।
যে স্থানে জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটেছে সেটি ইরাবতী ডলফিন বা শুশুকের অভয়ারণ্য হিসেবে সরকারিভাবে ঘোষিত। বিশ্বে ইরাবতী ডলফিনের সবচেয়ে বড় বিচরণ ক্ষেত্র এই সুন্দরবন। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর ধারা ১৫ তে অভয়ারণ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সেখানে কিভাবে জাহাজ চলাচল করে তা জনমনে প্রশ্নের উদ্বেগ করেছে।
জাতিসংঘের ইউনেস্কো কমিশন ১৯৯৭ সালে ৬ ডিসেম্বর সুন্দরবনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বা বিশ্ব ঐতিহ্য হিসাবে ঘোষণা করে। ইউনেস্কোর নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৩ অনুযায়ী সরকারিভাবে যথাযথ নিরাপত্তার কথা বলা থাকলেও তা না মানার দরুন আজ এত বড় পরিবেশ বিপর্যয়।
ইউনেস্কোর নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৭ এ চুক্তির অধীন দেশগুলোর মধ্যে বিশ্ব ঐতিহ্য রক্ষায় পারস্পরিক সহযোগিতার কথা লেখা থাকলেও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অর্থায়নে সুন্দরবন থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করছে বাংলাদেশ। যা ভবিষ্যতে সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্যের জন্য হুমকি।
১৯৯২ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটিতে স্বাক্ষর করে। এই কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ৭ এ পরিবেশ রক্ষণাবেক্ষণ এবং অনুচ্ছেদ ৮ এ যেসব স্থানে পরিবেশ সঙ্কটাপন্ন সেসব এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থার কথা বলা থাকলেও সুন্দরবনের ক্ষেত্রে এসব অনুচ্ছেদ মানা হয়নি।
কোন সড়ক বা নদীতে যানবাহন চলাচল করলে দুর্ঘটনা ঘটবেই। আজ যদি সবগুলো আইন মেনে সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকত তবে এই দুর্ঘটনা ঘটত না। তাছাড়া সরকারের বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দুর্বলতা ও উদাসীনতা এই দুর্ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট।
সুন্দরবনকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করার পর সেভাবে সরকারী প্রচারনা না হলেও মওদুদুর রহমান জনগনের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ২০০৫ সালে হুইটলি পুরস্কার জেতেন। এভাবে সরকারি ও বেসরকারিভাবে সুন্দরবন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
শুধু আইন তৈরি করে তা বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহন না করলে মানুষ কর্তৃক সৃষ্ট পরিবেশ বিপর্যয় দিনকে দিন বেড়েই যাবে। এজন্য আইনের প্রয়োগের দিকটি নিশ্চিত করতে হবে।
মাহবুবুন নূর মেহেদী
কলাম লেখক
প্রকাশিতঃ ১৫ই ডিসেম্বর ২০১৪ ইং, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ।
Link:
http://www.alokitobangladesh.com/editorial/2014/12/15/112505
১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৪
মাহদী নূর বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ
২| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:১৩
বলেছেন: ভালো লিখেছেন +
অনেক ধন্যবাদ।।
৩| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৩
ঢাকাবাসী বলেছেন: দেখেন মন্ত্রী বাহাদুর কইসে পাখী জানোয়ারগো কুনু ডেমেজ অইবোনা, পানিরও কুনু ক্ষতি অইবোনা। তাহলে চিন্তা কি? আগেও তিনি বলসেন গাড়ীর ড্রাইভার হবার জন্য গরু ছাগল চিনলেই চলে! খুব ভাল লিখেসেন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩০
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ভালো লিখেছেন +
অনেক ধন্যবাদ।।