![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বরাবরই একজন আশাবাদী মানুষ , হতাশা সহজে আমাকে স্পর্শ করে না । এই ছোট্ট জীবনটা খুব আনন্দে কাটাতে চাই ।মানুষের জয় হোক,বেঁচে থাকুক চির অম্লান ভালোবাসা ।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'পুতুল নাচের ইতিকথা' শুরু করেছি। উপন্যাসের প্রথম লাইন পড়েই ধাক্কার মতো খেলাম, ভদ্রলোকের চমকে দেয়ার দারুণ একটা ক্ষমতা আছে।
শুরুটা করেছেন এভাবে - " খালের ধারে প্রকাণ্ড বটগাছের গুঁড়িতে ঠেস দিয়া হারু ঘোষ দাঁড়াইয়া ছিল। আকাশের দেবতা সেইখানে তাহার দিকে চাহিয়া কটাক্ষ করিলেন। "
এই লাইন দুটি পড়ে বোঝার সাধ্যি নেই যে, হারু ঘোষের মাথায় বাজ পড়েছে, এবং তার অপঘাতে মৃত্যু হয়েছে।
এরপরের বাক্যটি আপাতদৃষ্টিতে কিঞ্চিত হাস্যকর , নির্মম একটি কটাক্ষ এতে লুকায়িত আছে।
"হারুর মাথার কাঁচা-পাকা চুল আর বসন্তের দাগভরা রুক্ষ চামড়া ঝলসিয়া পুড়িয়া গেল। সে কিন্তু কিছুই টের পাইল না।"
বজ্রাঘাতে যার মরণ হয়েছে তার মুখের চামড়া বসন্তের দাগভরা রুক্ষ এটা পাঠককে জানানো যতই হাস্যকর হোক না কেন সে কিন্তু কিচ্ছুটি টের পায়নি! তাই এখানটায় মানিক বাবুর ভাষা কেমন কটাক্ষমূলক, একেবারে ইস্পাতের ফলার মতো ধারালো হয়ে উঠেছে।
ফ্রয়েডের ‘লিভিডো’ আর সমাজতন্ত্রের মন্ত্রে দ্বীক্ষিত মাণিকবাবুকে সম্পূর্ণরূপে পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ‘শশী’। সদ্য ডাক্তারী পাশ করে গ্রামে আসে বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ভিন্নতর সংস্কৃতি কিংবা সহজ ভাষায় উন্নত জীবনের সন্ধ্যানে বেড়িয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু সে আর প্রথাগত জীবনের বাহিরে যেতে পারে না।গ্রামীণ জীবণের প্রতিবেশ, পরিবেশের বৈচিত্র্যতা আর বাস্তবতার ডালপালা এমন ভাবে তাকে আকড়ে ধরে; যা ছিড়ে বের হওয়া শশীবাবুদের সামর্থের বাহিরে।
আমার কাছে সবচেয়ে অবাক লেগেছে যে, কোথাও মাণিকবাবু ‘শশী’কে জোড় করেআটকান নি।আর এখানেই একজন লেখকের স্বার্থকতার পরিচয় পাওয়া যায়। মাণিকবাবুর স্বার্থকতা তথা ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’র প্রকৃত স্বার্থকতাই মিশে গেছে জীবনঘনিষ্ট মানুষগুলোর চরিত্রের পুংখানুপুংখআখ্যান রচণায়।মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনবোধ, সমাজ চেতনা ও বিজ্ঞান মনস্কতার এক পরিপূর্ণ মিথস্ক্রিয়া হচ্ছে এই উপন্যাসটি।
আমার পছন্দের উপন্যাসের ব্যাক্তিগত তালিকাটি শুরু হয় ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ দিয়ে।
©somewhere in net ltd.