![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আসুন, "ধর্মান্ধতা পরিহার করে ধর্মিষ্ঠ হই" "বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম" [আল-কোরআন-৯৬. সূরা আল-আলাক] ০১. পাঠ কর (এবং ঘোষনা / প্রচার কর) তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন- ০২. সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে। ০৩. পাঠ কর, আর (ঘোষনা / প্রচার কর) তোমার প্রতিপালক মহামহিমান্বিত। ০৪. যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন- ০৫, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।] পবিত্র কোরআনের ৯৬ নম্বর সূরা 'আলাক'-এর প্রথম এই পাঁচটি আয়াত অত্যন্ত মূল্যবান এবং যা মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে ফেরেশতা জিবরীল (আঃ)-এর মাধ্যমে সর্বশেষ নবী রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর নাযিলকৃত সর্বপ্রথম ওহি অর্থাৎ ঐশীবাণী। মহামহিমান্বিত প্রতিপালকের নামে শিক্ষা লাভের জন্য পাঠ করা ( Study ) অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় থেকে জ্ঞানার্জন করা এবং জ্ঞানের প্রচার ও প্রসারে কলমের ব্যবহার অর্থাৎ 'লিখন' যে অত্যন্ত ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখে তা সর্বজনবিদিত। মহান স্রষ্টা আল্লাহতায়ালা তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে খাঁটি মানুষ রূপে গড়ে তোলার জন্য যে সর্বপ্রথমে এই ধরণের চমৎকার ও কার্যকর ঐশীবাণী প্রদান করে অনুপ্রাণিত করবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে পার্থিব জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝেও আল-কোরআন ও বিজ্ঞানের বিষয়ে জ্ঞান চর্চার তাগিদে সময় বের করে নিতে হয়েছে। যে জ্ঞানের কোন সীমা পরিসীমা নেই, যে জ্ঞানের কথা লিখতে বসলে মহাসাগরের এমনকি আকাশ ও পাতালের সকল জলরাশিকে কালি বানালেও তা ফুরিয়ে যাবে- তার জন্য এই সময়টুকু অতি নগন্য। তথাপি আমার এই ছোট্ট প্রয়াসের জন্য দয়াময় আল্লাহতায়ালা যে আমাকে সুযোগ ও তৌফিক দিয়েছেন সেজন্য আমি অবনত মস্তকে সর্বশক্তিমান স্রষ্টার কাছে প্রতি মূহুর্তে শুকরিয়া আদায় করছি। সত্যের স্বরূপ উদঘাটনে যতটুকু সফলতা অর্জন করতে পেরেছি তার সবটুকুই আল-কোরআনের ঐশীবাণীসমূহের মর্ম সঠিকভাবে অনুধাবনের ফলেই সম্ভব হয়েছে। আর ব্যর্থতার জন্য একজন অতি সাধারন মানুষ হিসেবে আমার অযোগ্যতা ও অজ্ঞতাই সম্পূর্ণরূপে দায়ী। হে বিশ্ববিধাতা করুণাময় মহান আল্লাহ , সর্বপ্রকার অনিচ্ছাকৃত ভুল-ভ্রান্তির জন্য সর্বদা অবনত মস্তকে ক্ষমাভিক্ষা চাই। আর সরল ও সত্যের পথ যতটুকু অর্জন করতে পেরেছি তার উছিলায় একজন হতভাগা পাপী বান্দা হিসেবে তোমার জ্যোতির্ময় আরশের ছায়াতলে চিরকালের জন্য একটুখানি ঠাঁই চাই। আশাকরি ছোটখাট ভুলত্রুটি ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। চিন্তাশীল সুধীজনদের সুচিন্তিত পরামর্শ ও সমালোচনা সাদরে গ্রহণ করা হবে।
এতিমের সম্পত্তি বন্টন সংক্রান্ত মানব মস্তিষ্ক প্রসূত মুসলিম আইনে তাদেরকে অসহায় ও করুণার পাত্র বানিয়ে রাখার যে রীতি চালু আছে- আল-কোরআন কি তা কখনও সমর্থন করে?
বর্তমান মুসলিম আইন অনুসারে পিতা জীবিত অবস্থায় কোন ব্যক্তির মৃত্যু হলে এবং মৃত ব্যক্তির ভাই থাকলে সম্পত্তি বন্টনের সময় ( যখনই বন্টন করা হোক না কেন) মৃতের এতিম সন্তান ও উত্তরাধিকারীদের তার পৈত্রিক সম্পত্তির অংশ থেকে বঞ্চিত করা হয়। কিন্তু আল্লাহর যে হাবিব জন্মের আগেই পিতা-হারা এবং মাত্র ৬ বছর বয়সে মা-হারা হয়েছেন, সেই রাসূলের (সাঃ) কাছে অসহায় এই এতিমরা ছিল অতি আপনজন। সুতরাং তাঁর মত যারা এতিম, তাদের প্রতি কোনরূপ ভিত্তিহীন বিধান কি স্রষ্টার শাশ্বত কিতাবে থাকতে পারে? আল-কোরআনের বিধান অনুসারে এতিমদের প্রতি এরূপ অমানবিক আচরণ কতটা গ্রহণযোগ্য তা অবশ্যই খতিয়ে দেখার দাবি রাখে।
মৃত্যু জীবনের ইতি টানলেও মানুষের জন্মের সাথে সাথে বংশের যে ভিত রচিত হয় তা মৃত্যুর পরও অটুট থাকে। মৃত্যু বংশ সম্পর্ককে রহিত করতে পারেনা বলেই অনেক কাল পরেও কোন মৃত ব্যক্তির পরিচয় আমরা বংশ তালিকা থেকে বাদ দিতে পারিনা। পুত্র ও কন্যারা শুধু তাদের পিতার বংশধর নয়; পৌত্র, পৌত্রী, নাতি, নাতনী হিসেবে তারা তাদের দাদা/ নানারও বংশধর। সুতরাং পিতা জীবিত অবস্থায় কোন ব্যক্তি উত্তরাধিকারী রেখে মৃত্যুবরণ করলে এবং তার ভাই বর্তমান থাকার অজুহাতে মৃত ব্যক্তির ভাগের পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে তার এতিম বংশধরদের বঞ্চিত করার প্রশ্নই আসে না। তার অংশের পৈত্রিক সম্পত্তিও তার রেখে যাওয়া বা ত্যাগ করে যাওয়া সম্পত্তি হিসেবে গণ্য না হওয়ার কোন কারন থাকতে পারেনা। যখনই বন্টন করা হোক না কেন- অন্যান্য ভাই বোনদের সাথে মৃত ভাই/ বোনের সম্পত্তিও তার এতিম সন্তান ও উত্তরাধিকারীদের কাছে অর্পণ করা চাই। বিশেষ করে কোন ব্যক্তি বংশধর রেখে মৃত্যু বরণ করলে তার নিজের সম্পত্তির মত পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত তার অংশের সম্পত্তিও এতিম সন্তানদের মধ্যে বন্টন করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির পিতার মৃত্যুর পর বা যখনই সম্পদ বন্টন করা হোক না কেন, ঋণ (যদি থাকে) পরিশোধের ও ওয়াসিয়াতের অংশ প্রদানের পর সেই সময় যে পরিমাণ পৈত্রিক সম্পত্তি বর্তমান থাকবে তা থেকে সম পরিমাণ অংশ অন্যান্য জীবিত ভাইদের সাথে আনুপাতিক হারে মৃত ভাইয়ের নামেও বরাদ্দ রাখতে হবে এবং তা বিধি মোতাবেক উত্তরাধিকারীদের কাছে বন্টন করে দিতে হবে। কারন এতিমের সম্পত্তির দাবি ও হক কোন অবস্থাতেই বাতিল হয়ে যাবে না, বরং সর্বাবস্থায় তা রক্ষা করাই আল-কোরআনের নির্দেশ। পুত্র ও কন্যা সন্তান থাকা সত্বেও বংশীয় নিকট সম্পর্কের কারনে তাদের মৃত পিতার/ মাতার সম্পত্তি যেমন মৃত ব্যক্তির বাবা ও মা অর্থাৎ সন্তানদের দাদা ও দাদী/ নানা ও নানী পেতে পারেন। তেমনি যখনই সম্পত্তি বন্টন করা হোক না কেন, যদি মৃত ব্যক্তির বংশধর বা সন্তান থাকে তাহলে মৃত ব্যক্তির ভাই/ বোনেরা বর্তমান থাকা সত্বেও পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত মৃত ব্যক্তির অংশটি তার উত্তরাধিকারীরা নির্দিষ্ট অনুপাতে পাবার অধিকার রাখে। অর্থাৎ পিতা-মাতার মৃত্যুর পরও তাদের সন্তানেরা সর্বাবস্থায় তাদের দাদা-দাদী/ নানা- নানীর সম্পত্তি থেকে তাদের বাবা/ মায়ের নামে বরাদ্দকৃত অংশটি পাবার অধিকার রাখে।
কিন্তু হায়! কোন অদৃশ্য মোহে এবং কবে থেকে এতিম সন্তান- সন্ততিদেরকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার রেওয়াজ শুরু হয়েছে তা মহান স্রষ্টাই ভাল জানেন। অথচ আল্লাহর কিতাবে তো নেই, এমনকি কোন হাদিছেও এ ধরনের বৈষম্যমূলক নির্দেশ বা বিন্দুমাত্র ইংগিতও নেই। দুর্বল পেয়ে এতিমদেরকে যেন ঠকানোর চেষ্টা করা না হয় এবং উপযুক্ত সময়ে তাদের হাতে তাদের প্রাপ্য সম্পত্তির ন্যায্য হিস্যা অর্পণ করা হয় সে বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও অসহায় এতিম সন্তানদেরকে তাদের মৃত পিতার/ মাতার অংশ হিসেবে প্রাপ্য পৈত্রিক সম্পত্তির অর্থাৎ তাদের দাদার/ নানার সম্পত্তির ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এতিমদেরকে করুণার প্রাত্র হিসেবে তাদের দাদার/ নানার সম্পত্তি থেকে ১/৩ অংশ পাবার আশায় আরও অনিশ্চিত ও দোদুল্যমান অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়ার বিধান চালু করা হয়েছে। যেখানে সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্বেও মা, বোন ও কন্যাদের প্রাপ্য অংশটুকু বুঝিয়ে দিতে গিয়ে কত রকমের বাহানার আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। সেখানে এরূপ অপশনাল অংশ থেকে দুর্বল এতিমরা যে পদে পদে বঞ্চিত হতেই পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মানব মস্তিষ্ক প্রসূত এই বিধান কখনই আল-কোরআন ও হাদিছ সম্মত নয়। যে হাদিছের উপর ভর করে এরূপ সিদ্ধান্ত দেয়া হয় তার প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন।
…………………………………….
Tafsir Ibn Kathir- Quran Tafsir-
It is recorded in the Sahihayn that Sa`d bin Abu Waqqas said, "O Allah's Messenger! I have some money and only a daughter inherits from me, should I will all my remaining property (to others)'' He said, "No.'' Sa`d said, "Then may I will half of it'' He said, "No.'' Sa`d said, "One-third'' He said, "Yes, one-third, yet even one-third is too much. It is better for you to leave your inheritors wealthy than to leave them poor, begging from others.'' Al-Bukhari mentioned in his Sahih that Ibn `Abbas said, "I recommend that people reduce the proportion of what they bequeath by will to a fourth (of the whole legacy) rather than a third, for Allah's Messenger said: (One-third, yet even one-third is too much.)''
………………………….............
এই হাদিছে স্পষ্ট বলা হয়েছে- "should I will all my remaining property (to others)" অর্থাৎ নিকট আত্মীয় নয় বরং অন্যদের জন্য ১/৩ অংশের কম পরিমাণ উইল করে দেবার বিষয়টি এসেছে। সাদ (রাঃ) যখন তার সমস্ত সম্পত্তি অন্যের নামে ওয়াছিয়ত করে দিতে চাইলেন তখন রাসূল (সাঃ) এরূপ করতে নিষেধ করেছিলেন। বরং সম্পত্তির ১/৩ অংশের চেয়েও কম পরিমাণ দেবার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কারন সমস্ত সম্পত্তি দান করে দিলে মৃত ব্যাক্তির উত্তরাধিকারীরা বঞ্চিত হবে। আর এভাবে আপন আত্মীয়দের অভাবগ্রস্ত অবস্থায় ফেলে রাখাও সমীচিন নয়।
এবার আল-কোরআনে এ সম্পর্কে দয়াময় মহান স্রষ্টা কি নির্দেশ দিয়েছেন তা লক্ষ্য করি। মহান আল্লাহতায়ালা সম্পদ বন্টন সংক্রান্ত নির্দেশনা দেবার আগেই এতিমদের প্রাপ্য অংশ সংরক্ষণ ও প্রদান করার জন্য জোর তাগিদ দিয়েছেন। তাদেরকে সর্বপ্রকার সহায়তা করার পাশাপাশি ভরসা ও সান্তনা দেবার কথা বলা হয়েছে। অভিভাবক সম্পদশালী হলে এতিমরা উপযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের দেকভালের জন্য এতিমের সম্পত্তিতে হাত না দেয়াই উত্তম। কোন কারনে অভিভাবক অভাবে পড়লে খুবই সাবধানে ও সঙ্গত পরিমাণে এতিমের সম্পত্তি থেকে খরচ করতে পারেন। বুদ্ধি-বিবেচনা হবার পর অর্থাৎ উপযুক্ত হলে তারপর এতিমদের অংশ তাদের হাতে অর্পণ করতে হবে। এতিমদের মধ্যে যারা নিকট আত্মীয় তাদের ন্যায্য অধিকার তো আদায় করতেই হবে, সেই সাথে সম্পদ বন্টনের সময় অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন, অভাবগ্রস্ত ও অসহায় এতিমরা উপস্থিত থাকলে আপ্যায়ন করতে ও তাদের হাতে কিছু দিয়ে খুশি করতে বলা হয়েছে।
মহান আল্লাহতায়ালা এতিমদের সম্পদ নষ্ট বা আত্মসাৎকারীর প্রতি কঠিন শাস্তির হুমকি দিয়েছেন। এতিমদের সম্পত্তির ভাল অংশকে খারাপ দিয়ে বদলে দিতে নিষেধ করা হয়েছে। কোনরূপ ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে এতিমদের প্রাপ্য অংশের সম্পত্তি খেয়ে ফেলার পরিণাম যে ইহকালে ও পরকালে ভয়বহ হবে তা মহান আল্লাহতায়ালা আল- কোরআনে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন-
আল-কোরআন-
সূরা আন নিসা (মদীনায় অবতীর্ণ)
(০৪:০২) অর্থ- এতিমদেরকে তাদের সম্পদ বুঝিয়ে দাও। খারাপ মালামালের সাথে ভালো মালামালের অদল-বদল করো না। আর তাদের ধন-সম্পদ নিজেদের ধন-সম্পদের সাথে সংমিশ্রিত করে তা গ্রাস করো না। নিশ্চয় এটা বড়ই মন্দ কাজ।
(০৪:০৫) অর্থ- আর যে সম্পদকে আল্লাহ তোমাদের জীবন-যাত্রার অবলম্বন করেছেন, তা অর্বাচীনদের হাতে তুলে দিও না। বরং তা থেকে তাদেরকে খাওয়াও, পরাও এবং তাদেরকে সান্তনার বানী শোনাও।
(০৪:০৬) অর্থ- আর এতিমদের প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখবে, যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের বয়সে পৌঁছে। যদি তাদের মধ্যে বুদ্ধি-বিবেচনার উন্মেষ আঁচ করতে পার, তবে তাদের সম্পদ তাদের হাতে অর্পন করতে পার। এতিমের মাল প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করো না বা তারা বড় হয়ে যাবে মনে করে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলো না। যারা স্বচ্ছল তারা অবশ্যই এতিমের মাল খরচ করা থেকে বিরত থাকবে। আর যে অভাবগ্রস্ত সে সঙ্গত পরিমাণ খেতে পারে। যখন তাদের হাতে তাদের সম্পদ প্রত্যার্পণ কর, তখন সাক্ষী রাখবে। অবশ্য আল্লাহই হিসাব নেয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট।
(০৪:০৮) অর্থ- সম্পতি বন্টনের সময় যখন আত্নীয়-স্বজন, এতিম ও অভাবগ্রস্ত মানুষ উপস্থিত হয়, তখন তা থেকে তাদের কিছু খাইয়ে দাও এবং তাদের সাথে কিছু সদালাপ করো।
(০৪:০৯) অর্থ- আর তাদের তেমনি ভয় করা উচিত, যদি তারা নিজেদের পেছনে অসহায় সন্তান-সন্ততি ছেড়ে গেলে তাদের জন্যে যেমন আশঙ্কা করত; সুতরাং তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং সংগত কথা বলে।
(০৪:১০) অর্থ- যারা এতিমদের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং সত্ত্বরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।
মনে রাখতে হবে দুঃস্থ, নিঃস্ব এতিমদের নামে ব্যবসা করার কোন সুযোগ নেই। বরং তাদের তদারকি ও সকল ব্যায়ভার ইসলামি রাষ্ট্র বহন করবে।
অথচ দুঃখের বিষয় এই যে, কোন পরিবারে পিতা জীবিত অবস্থায় কয়েকজন ভাই ও বোনের মধ্য থেকে হঠাৎ কোন ভাই/বোন তার নাবলক সন্তান রেখে মৃত্যুবরণ করলে, সেই আপন ভাই/বোনের পৈতৃক সম্পত্তির অংশ থেকে এতিম সন্তানদের বঞ্চিত করা হয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে মৃত্যুর সাথে সাথে আপন সন্তানের এতিম শিশুরা নাকি আপন দাদার/ নানার নিকটতম আত্মীয়দের পর্যায়ে থাকার যোগ্যতা হারায়!!! যে শিশুগুলো পিতাকে হারিয়ে অসহায় হয়ে যায়, ইসলামের নামে নিকট আত্মীয়তার খাতা থেকে সেই এতিমদের নাম মুছে ফেলে তাদেরকে করুণার প্রাত্র হিসেবে এক অনিশ্চিত কঠিন পরিবেশের মুখে ঠেলে দেয়া হয়। সত্যি, বিষয়টি ভাবতেও যেন বুক ফেটে যায়।
(০৪:১১) নং আয়াতের প্রথমাংশে ব্যবহৃত "আওলাদ"- (أَوْلاَدِ - genitive masculine plural noun ) শব্দটির অর্থ সন্তান-সন্ততি/ বংশধর। সম্পত্তি বন্টন সংক্রান্ত মৌলিক বিধান দেবার শুরুতেই এমন একটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যার মাধ্যমে বংশের সকল সদস্যকে সুদৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। রক্ত সম্পর্ক ছিন্ন তো নয়ই, বরং সন্তান-সন্ততিদের মাঝে সুসম্পর্কের অবিচ্ছিন্ন ভিত রচনা করার জন্যই মূলত এরূপ শব্দ চয়ন করা হয়েছে। এটি মূলত পুরুষতুল্য বা পুংলিঙ্গবাচক ও বহুবচন অর্থাৎ এর মাধ্যমে বিশেষভাবে পুত্র সন্তানদের (পুত্র বা পৌত্র বা নাতি ইত্যাদি) বর্তমান থাকার বিষয়টি নির্দেশিত হয়। এই নির্দেশটি যদি শুধুমাত্র যার যার পুত্র সন্তানের জন্যই সীমাবদ্ধ থাকত তাহলে এখানে "আবনা-উ" শব্দটি ব্যবহার করা হত। কিন্তু ক্ষুদ্র গন্ডি পেরিয়ে বংশের অধস্তন হিসেবে সকল পুত্র সন্তান-সন্ততিদের একীভুত করার লক্ষ্যেই এখানে "আওলাদ" শব্দটি সঠিক মাত্রা পেয়েছে। তবে পুত্র- সন্তানদের সাথে নারীতুল্য বা স্ত্রী-লিঙ্গবাচক কন্যা- সন্তান (কন্যা বা পৌত্রী বা নাতনী ইত্যাদি) বর্তমান থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু এককভাবে শুধুমাত্র কন্যা- সন্তানদের বর্তমান থাকার ক্ষেত্রে এই শব্দটি প্রযোজ্য নয়। এরপর আলাদাভাবে "নিসাআন (4:11:11) - nisāan- (only) women - accusative feminine plural indefinite noun - শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নারীদের অংশ নির্ধারনের বিষয়েও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং "আওলাদ/ সন্তান-সন্ততি/ বংশধর" শব্দটি এখানে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এর মাধ্যমে এই ইংগিতই দেয়া হয়েছে যে, মৃত্যু কখনই রক্তসম্পর্কীত নিকটাত্মীয়তার বন্ধনকে ছিন্ন করে দেয়না। সে কারনেই মৃত ব্যক্তির পুত্র ও কন্যারা শুধুমাত্র তাদের মৃত পিতার সম্পদের নয়, বরং এতিম পৌত্র, পৌত্রী, নাতি ও নাতনীরাও তাদের মৃত বাবা ও মায়ের সূত্রে দাদার/ নানার (কাছ খেকে বাবা/ মায়ের অংশ হিসেবে প্রাপ্ত পৈত্রিক) সম্পদের অংশ পাবার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
আবার বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, এখানে সরাসরি "ইবনুন" (অর্থ ছেলে, পুত্র- একবচন) এবং "ইবনাতুন" (অর্থ মেয়ে, কন্যা- একবচন) শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়নি। বরং ব্যাপক অর্থ বোঝানোর জন্য "আওলাদ" শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং এর মাধ্যমে স্রষ্টা মহান আল্লাহতায়ালা এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে, পূর্ণাঙ্গ পৌরুষের অধিকারী কিংবা পূর্ণাঙ্গ নারীত্বের অধিকারী না হওয়া সত্বেও তাঁরই সৃষ্ট পুরুষতুল্য অর্থাৎ পুরুষালী দেহাবয়ব ও আচরণের অধিকারী খোজা পুত্র-সন্তানেরা অন্যান্য স্বাভাবিক পুত্রদের মত এবং নারীতুল্য অর্থাৎ মেয়েলী দেহাবয়ব ও আচরণের অধিকারী খোজা কন্যা-সন্তানেরা অন্যান্য স্বাভাবিক কন্যাদের মত উত্তরাধিকারী হিসেবে নিছাব অনুসারে সম্পদের অংশ পাবেন। তেমনি মৃত্যুর পর তাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তিও তাদের নিকটাত্মীয়রা পেয়ে যাবেন। এক্ষেত্রে কোন ধরনের প্রতিবন্ধীত্ব যেন সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। তবে সম্পত্তি হস্তান্তরের সময় তাদের মাঝে স্বাভাবিক বুদ্ধি- বিবেচনার উন্মেষ ঘটেছে কিনা তা সরল দৃষ্টিকোন থেকে যাচাই করে নিতে হবে। কিন্তু কোনরূপ কুমতলব এঁটে ঠকানোর চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে ইহকালে ও পরকালে কঠিন আযাবের কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। একইভাবে শুধুমাত্র যৌন প্রতিবন্ধিত্বের কারনে খোজা সন্তানদের যেন ভিন্ন চোখে দেখা না হয়। সেজন্য সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রে ভিন্ন পথ বাতলে না দিয়ে মহান আল্লাহতায়ালা এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যেন তাদের ন্যায্য অধিকার প্রদান করা হয়। কিন্তু হায়! আমরা তার মহৎ শিক্ষাকে ভুলে ধর্মের নামে কতই না সংকীর্ণ মনের পরিচয় দিয়ে চলেছি।
এরপর "লিযযাকারি" (لِلذَّكَرِ - genitive masculine noun) ও "উল উংছাইয়াইনি" (الأُنثَيَيْنِ - genitive feminine dual noun) শব্দদুটি ব্যবহার করে পুরুষ সন্তান ও নারী সন্তানদের অংশের অনুপাত নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে এবং বোঝানো হয়েছে যে, ১ জন পুরুষ সন্তানের অংশ ২ জন নারী সন্তানের সমান। তেমনি এখানে "ওয়াহিদাতান"- (وَاحِدَةً - accusative feminine indefinite noun) শব্দটি ব্যবহার করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে যে, (পুত্র- সন্তানের অবর্তমানে) শুধুমাত্র একজন কন্যা- সন্তান থাকলে তার জন্য তার মৃত পিতা ও মাতার নিজস্ব অর্জিত ও পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির ১/২ অংশ এবং কন্যা- সন্তানের সংখ্যা ততোধিক হলে ২/৩ অংশ থেকে প্রত্যেকে সমান ভাগ পাবে। আর একইভাবে পৌত্র/ নাতির অবর্তমানে পৌত্রী/ নাতনীরাও একই অনুপাতে তাদের দাদা/ নানার কাছে থেকে মৃত পিতা/ মাতার নামে পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের উত্তরাধিকারী হবার অধিকার রাখে।
এই আয়াতে ব্যবহৃত "ওয়ালাদুন" ( وَلَدٌ - nominative masculine indefinite noun) শব্দটি মূলত পুরুষতুল্য বা পুংলিঙ্গবাচক এবং কর্তৃকারক । সুতরাং "ওয়ালাদুন" শব্দটি যখন পজেটিভ সেন্সে ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ অন্ততঃ একজন সন্তান বর্তমান থাকার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, তখন সেই সন্তানটিকে নিশ্চয় ছেলে নয়ত মেয়ের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হতে হবে অর্থাৎ হয় সে পুরুষতুল্য নয়ত নারীতুল্য হবেই। তাই "ওয়ালাদুন" শব্দটি মূলত পুরুষতুল্য বা পুংলিঙ্গবাচক এবং একবচন হওয়ায় এর দ্বারা এই একমাত্র সন্তানটির উপস্থিতি বোঝানোর কারনে তার পুরুষতুল্য বৈশিষ্ট্যকেই নির্দেশ করে অর্থাৎ সেই সন্তানটি পুত্র-সন্তানের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হবে। আবার বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয় যে, এই আয়াতের শেষ অংশে "আবাউকুম" অর্থ (ābāukum - your fathers) "তোমাদের পিতারা" এবং "আবনা-উকুম" অর্থ "তোমাদের ছেলেরা/ পুত্ররা" শব্দ দুটি ব্যবহার করা হয়েছে । "আবা-উ" (آبَآؤُ - nominative masculine plural noun) এবং "আবনা-উ" ((أَبناؤُ - nominative masculine plural noun) শব্দ দুটির মাধ্যমে আমাদের পিতা ও পুত্র-সন্তানদের কথা সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এরপূর্বে ব্যবহৃত "ওয়ালাদুন" শব্দটি দ্বারা একজন সন্তান বর্তমান থাকার ক্ষেত্রে যে তাকে পুরুষ অর্থাৎ পুত্র-সন্তানই ধরতে হবে তা পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে "ওয়ালাদুন" শব্দটি যখন নেগেটিভ সেন্সে ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ একজন সন্তানও না থাকার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, তখন এর দ্বারা পুত্র ও কন্যা নেই অর্থাৎ কোন সন্তানই নেই নির্দেশ করে।
আল-কোরআনের (০৪:১১) নং আয়াতের নির্দেশ অনুসারে সহজেই বোঝা যায় যে, মৃত ব্যক্তির "ওয়ালাদুন" অর্থাৎ অন্ততঃ একজন পুত্র-সন্তান বর্তমান থাকলে মৃত ব্যক্তির পিতা ও মাতা প্রত্যেকে অথবা যিনি জীবিত থাকবেন তিনি মৃত ব্যাক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তির ১/৬ অংশ পাবেন। একইভাবে এতিম পৌত্র, পৌত্রী, নাতি ও নাতনীরা তাদের বাবা/ মার মৃত্যুর পরও বাবা/ মায়ের নিজস্ব সম্পত্তির মতই আনুপাতিক হারে তাদের দাদা ও নানার সম্পত্তির [পুত্রের ঘরের সন্তানেরা (পৌত্র ও পৌত্রীরা) তাদের বাবার এবং কন্যার ঘরের সন্তানেরা (নাতি ও নাতনীরা) তাদের মায়ের অংশ হিসেবে প্রাপ্ত পৈত্রিক সম্পদের] অংশিদার হবার অধিকার রাখে। কারন আল-কোরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, যে মৃত ব্যাক্তির পিতা-মাতা ও পুত্র নেই (কালালাহ্) তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে তার ভাই/ বোন ওয়ারিশ হবেন। কিন্তু এমন কোন ইংগিত আল-কোরআনে নেই যার মাধ্যমে এই অন্যায় দাবি করা যায় যে, পিতা জীবিত থাকাকালীন কোন ব্যক্তির মৃত্যু হলে তার "আওলাদ" বা বংশধর থাকা সত্বেও তিনি (সেই মৃত ব্যক্তি) পৈত্রিক সম্পত্তি পাবার তালিকা থেকে বাদ পরবেন এবং মৃত ব্যক্তির অপর কোন ভাই বর্তমান থাকার কারনে মৃত ব্যাক্তির "আওলাদ" অর্থাৎ এতিম সন্তান-সন্ততিরা তাদের মৃত পিতা/ মাতার অংশ হিসেবে প্রাপ্য পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবেন। সুতরাং সম্পত্তি যখনই বন্টন করা হোক না কেন মৃত হওয়া সত্বেও তার সন্তান-সন্ততিদের মাধ্যমে বংশধারা অব্যহত থাকায় সেই মৃত ব্যক্তির অছিলায় এতিম পৌত্র. পৌত্রী ও নাতি, নাতনীরা নির্দিষ্ট আনুপাতে অবশ্যই তাদের দাদা/ নানার কাছ থেকে প্রাপ্ত তাদের পৈত্রিক সম্পত্তির অংশিদার হবার অধিকার রাখেন এবং এটাই স্বাভাবিক।
তাহলে (০৪:১১) নং আয়াতের সঠিক অনুবাদ করলে দাঁড়ায়-
..........................................
সূরা আন নিসা (মদীনায় অবতীর্ণ)
(০৪:১১) অর্থ- আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তান- সন্ততিদের/ বংশধরদের (পুত্র ও কন্যা সন্তান-সন্ততিদের) সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু'জন নারীর অংশের সমান। অতঃপর যদি শুধু নারীই হয় দু' এর অধিক, তবে তাদের জন্যে ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই (নারী) হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক। মৃতের পিতা-মাতাদের মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের ( وَلَدٌ) একজন পুত্রসন্তান থাকে। যদি ( وَلَدٌ) কোন সন্তানই ( পুত্র ও কন্যা) না থাকে এবং পিতা-মাতারাই ওয়ারিশ হয়, তবে মাতা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। অতঃপর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই-বোন "ইখওয়াতুন"- ikh'watun- brothers and sisters) থাকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ ওছিয়্যতের পর, যা করে মরেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতাদের ও পুত্রদের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না। এটা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত অংশ নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, পরম কুশলী।
..........................................
"হে আল্লাহ! অজ্ঞতা হেতু অনিচ্ছাকৃত ভুল-ভ্রান্তির জন্য অবনত মস্তকে ক্ষমাভিক্ষা চাই"
...........................................
এখানে দেখুন- Zain Bhikha - Orphan Child
এখানে দেখুন- Heal the World - Zain Bhikha
২৭ শে মে, ২০১২ সকাল ১০:২৬
মাহফুজশান্ত বলেছেন: হুম.........
তব সত্য তো প্রকাশ করতেই হলে। বঞ্চিতদের বেহাল দশা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে আপাতত এ ছাড়া আর কোন পথ নেই।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
২| ২৮ শে মে, ২০১২ সকাল ১১:৫৯
প্রকৃতির প্রতিফলন বলেছেন: Islam is the complete code of life- এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই।
ভাই একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন জিজ্ঞাস করিঃ
আপনি কি করেন?
২৮ শে মে, ২০১২ দুপুর ১২:০৬
মাহফুজশান্ত বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আপনার প্রশ্নের উত্তর উপরে দেয়া আছে- একটু কষ্ট করে দেখে নিন প্লিজ।
৩| ২৮ শে মে, ২০১২ দুপুর ১২:০৯
কুয়াশা বলেছেন: আপনার কাছে আমার একটা প্রশ্ন সেটা হচ্ছে আপনি কোন একটা ব্যাংকে এ্যাকাউন্ট করতে গেলেন। কাউকে একজন নমিনি করলেন। কিছুদিন পর ঐনমিনি মারা গেল। কিন্তু আপনি বেচে আছেন। তাহলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকি ঐ একাউন্টের সমস্ত টাকা কি ঐ নমিনির সন্তানদের দিয়ে দিবে? তা কখনই দিবে না। কারণ এ্যাকাউন্টের মূল মালিক তখনও বেচে আছে। মূল মালিক বেচে থাকতে নমিনি মারা গেল কি অন্য কিছু হল এটাতো ব্যাংক কতৃপক্ষের ব্যাপার না। ব্যাংক কতৃপক্ষ তখনই নমিনিকে খুজবে যখন মূল মালিক মারা যাবে। এখানেও ব্যপারটা ঐ রকমই আমার পিতা বেচে থাকতে যদি আমি সন্তান রেখে মারা যাই তাহলে আমার সন্তানদের তার দাদার সম্পত্তিতে কোন হক থাকবে না। তবে আমার বাবা যদি আমি বেচে থাকা কালিন কোন সম্পত্তি আমাকে দেন আমি মারা যাওয়ার পর আমার সন্তানরা ঐ সম্পত্তিতে উত্তরাধীকার হবে। আপনি যে উদহারণ গুলি দিয়েছেন সেখানে দাদা সরাসরি তার পৌত্রদের সম্পত্তি দিতে পরবে এরকম কোন নজির নাই। আপনার উদাহরণ গুলি আমি মারা গেলে আমার সম্পত্তিতে কারা কারা উত্তরাধীকার হবে সেটা বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু সরাসরি দাদা পৌত্রদের উত্তরাধীকার হিসাবে সম্পত্তি দিতে পারবে না।
সাধারণ ভাবে দুনিয়ার প্রচলিত নিয়মে প্রথমেই আমি একটা উদহারণ দিয়েছি। এইখানে তো কেউ কখনও প্রশ্ন তোলেনা যে নমিনি মারা গেলে নমিনির সন্তানদের ঠকানো হচ্ছে। তাহলে ঐ একই নিয়মে আল্লাহর কোরআনে এতিমদের ঠকানো হচ্ছে কিভাবে?
২৮ শে মে, ২০১২ দুপুর ১২:৫৫
মাহফুজশান্ত বলেছেন: ব্যাংক একাউন্টের নমীনি করার বিষযটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রসঙ্গ। কারন কাকে নমিনি করা হবে তা মালিকের ইচ্ছা/ অনিচ্ছার উপরে নির্ভর করে। তিনি চাইলে তার আত্মীয় কিংবা অনাত্মীয়,বন্ধু-বান্ধব, ব্যবসা পার্টনারকেও নমীনি করতে পারেন।
কিন্তু উত্তরাধীকারের মধ্যে সম্পত্তি বন্টনের বিধান কাউকে নমীনি করা বা না করা বা কারো দয়া-দাক্ষিণ্যের উপরে নির্ভরশীল নয়। এটি মহান স্রষ্টা কর্তৃক সু-নির্ধারিত।
(০৪:১১) নং আয়াতে "আওলাদ"- (أَوْلاَدِ - genitive masculine plural noun ) অর্থাৎ সন্তান-সন্ততি/ বংশধরদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং মৃত্যু হলেই যে মূল মালিকের সাথে তার বংশধরদের দূরত্ব সৃষ্টি করে দিয়ে তাদের হক থেকে- বিশেষ করে এতিমের হক থেকে তাদের বঞ্চিত করতে হবে, এমন কোন ইংগিতই আল-কোরআনে নেই। এটি মানুষের বানানো নীতি এবং যা অমানবিক। বরং মহান আল্লাহতায়লা তার কিতাবে সর্বাবস্থা এতিমের হক সংরক্ষণ ও যথাযথভাবে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। যুক্তির মারপ্যাচে যা অস্বীকার করা অবিচারই শুধু নয়, চরম গোনাহ বটে। সুতরাং "আওলাদ/ সন্তান-সন্ততি/ বংশধর" শব্দটি এখানে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এর মাধ্যমে এই ইংগিতই দেয়া হয়েছে যে, মৃত্যু কখনই রক্তসম্পর্কীত নিকটাত্মীয়তার বন্ধনকে ছিন্ন করে দেয়না। সে কারনেই মৃত ব্যক্তির পুত্র ও কন্যারা শুধুমাত্র তাদের মৃত পিতার সম্পদের নয়, বরং এতিম পৌত্র, পৌত্রী, নাতি ও নাতনীরাও তাদের মৃত বাবা ও মায়ের সূত্রে দাদার/ নানার (কাছ খেকে বাবা/ মায়ের অংশ হিসেবে প্রাপ্ত পৈত্রিক) সম্পদের অংশ পাবার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। যে শিশুগুলো পিতাকে হারিয়ে অসহায় হয়ে যায়, ইসলামের নামে নিকট আত্মীয়তার খাতা থেকে সেই এতিমদের নাম মুছে ফেলে তাদেরকে করুণার প্রাত্র হিসেবে এক অনিশ্চিত কঠিন পরিবেশের মুখে ঠেলে দেয়া হয়।
শুধু তাই নয়, এতিমদেরকে করুণার প্রাত্র হিসেবে তাদের দাদার/ নানার সম্পত্তি থেকে ১/৩ অংশ পাবার আশায় আরও অনিশ্চিত ও দোদুল্যমান অবস্থার মধ্যে ফেলে দেয়ার বিধান চালু করা হয়েছে। যেখানে সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকা সত্বেও মা, বোন ও কন্যাদের প্রাপ্য অংশটুকু বুঝিয়ে দিতে গিয়ে কত রকমের বাহানার আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। সেখানে এরূপ অপশনাল অংশ থেকে দুর্বল এতিমরা যে পদে পদে বঞ্চিত হতেই পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মানব মস্তিষ্ক প্রসূত এই বিধান কখনই আল-কোরআন ও হাদিছ সম্মত নয়।
তাই সম্পত্তি যখনই বন্টন করা হোক না কেন- অন্যান্য ভাই বোনদের সাথে মৃত ভাই/ বোনের সম্পত্তিও তার এতিম সন্তান ও উত্তরাধিকারীদের কাছে অর্পণ করা চাই। বিশেষ করে কোন ব্যক্তি বংশধর রেখে মৃত্যু বরণ করলে তার নিজের সম্পত্তির মত পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত তার অংশের সম্পত্তিও এতিম সন্তানদের/ উত্তরাধিকরীদের মধ্যে বন্টন করে দিতে হবে। বিশেষ করে কোন ব্যক্তি বংশধর রেখে মৃত্যু বরণ করলে এক্ষেত্রে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে সম পরিমাণ অংশ অন্যান্য জীবিত ভাইদের সাথে মৃত ভাইয়ের নামেও বরাদ্দ রাখতে হবে এবং তা বিধি মোতাবেক বন্টন করে দিতে হবে।
ইসলাম সহজ, সরল ও শান্তির ধর্ম। জীবনকে কঠিন করে তোলার কোন বিধান এতে থাকতেই পারে না। বিশেষ করে এতিমের হক আদায়ের ব্যাপারে তো আল-কোরআনের নির্দেশ খুবই স্পষ্ট।
ধন্যবাদ।
৪| ২৮ শে মে, ২০১২ দুপুর ১:০১
আমি দর্পন বলেছেন: আল কোরআন এতীমদের সম্পদ রক্ষায় ১০০% সহায়ক । বিভিন্ন আয়াতে এর প্রমান আছে । তবে কথা ঐটা, ইসলামে সবার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সঠিক-সুন্দর নিয়মকানুন আছে ঠিকই কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন করবে যারা, সেই মানুষই তো আজ নষ্ট হয়ে গেছে......হক মেরে খেতে চাওয়ার লোকের তো অভাব নাই......
২৮ শে মে, ২০১২ দুপুর ১:২০
মাহফুজশান্ত বলেছেন: হুম.........
তবে সত্য তো প্রকাশ করতেই হলে। বঞ্চিতদের বেহাল দশা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে আপাতত এ ছাড়া আর কোন পথ নেই।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
৫| ২৮ শে মে, ২০১২ দুপুর ২:০০
কুয়াশা বলেছেন: কোন কিছু নিজের মত করে ব্যাখ্যা করলেই সেটা ইসলাম হয়ে যাবে না। আর একটা কথা মিরাস বা সম্পত্তি বন্টন আইন অনেক ক্ষেত্রে আতটাই জটিল যে সঠিক ভাবে বুঝতে না পারার কারণে আনেক আলেমও ইসলাম থেকে দুরে সরে গেছে। সেখানে আপনি তো কোন সার।
২৮ শে মে, ২০১২ দুপুর ২:২৬
মাহফুজশান্ত বলেছেন: কোন কিছু নিজের মত করে ব্যাখ্যা করলেই সেটা ইসলাম হয়ে যাবে না।
আপনার এই অংশের সাথে আমি ১০০% সহমত পোষণ করছি। ইসলামের মূল সোর্স হলো আল-কোরআন এবং এর সাথে বিন্দুমাত্র সাংঘর্ষিক নয় এমন সহী হাদিছও এর অন্তর্ভূক্ত। মিরাসের বিধানও এর বাহিরে নয়। আমি মিরাস সংক্রান্ত বিধান সম্পর্কে একটি কথাও বানিয়ে বলিনি। মানব রচিত যে অংশটি আমার কাছে খটকা লেগেছে তা নিয়ে অনেক দিন থেকেই বিভিন্ন আলেমের সাথে আলাপ করে জানার ও বোঝার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মনে হয়েছে যেন তারা তাদের বিবেক পূর্ব থেকে চলে আসাএকটা গন্ডির মাঝে আবদ্ধ করে ফেলেছেন। ফলে আল-কোরআনের স্পষ্ট নির্দেশকেও উপেক্ষা করতে তারা নারাজ এবং অমানবিক আইন বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর।। যা সত্যি আমাকে অবাক করেছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখা উচিত- "যতদিন জীবন পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে আল-কোরআনকে আমরা একমাত্র জবীন বিধান হিসেবে সবার উর্ধে স্থান দিতে পারব না, ততদিন এই ঐশী কিতাবের প্রেরক মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের হাতে ইসলামের বিজয়ের পতাকা অর্পণ করবেন না।"
আর একটা কথা মিরাস বা সম্পত্তি বন্টন আইন অনেক ক্ষেত্রে আতটাই জটিল যে সঠিক ভাবে বুঝতে না পারার কারণে আনেক আলেমও ইসলাম থেকে দুরে সরে গেছে। সেখানে আপনি তো কোন সার।
মিরাসের বিধান মোটেই জটিল নয়। বরং মানুষই তাদের নিজেদের উদ্ভাবিত ছকে ফেলে এর বারো হাল বানিয়ে ছেড়েছে। যা খুবই দুঃখজনক। আপনি আমাকে যা খুশি ভাবতে পারেন। তবে আল্লাহতায়লা আপনার ও আমার ভাল খবর রাখেন।
৬| ২৮ শে মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২০
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: আপনি একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনার সুচনা করেছেন। এ'ব্যাপারে ইসলামের মধ্যে থেকে আলেমদেরকে যতটা না কথা বলতে দেখা যায় তার চেয়ে বেশী সমালোচনা শোনা যায় ইসলামের বাইরে থাকা ইসলামবিরোধীদের থেকে।
আমি যতদুর জানি এই আইনের উৎস হচ্ছে ইসলামের সম্পদ ব্যাবস্থাপনার অন্যতম মুলনীতি - মালিকানা ও দখল বা পরিপুর্ণ নিয়ন্ত্রনে না আসা পর্যন্ত কোন ব্যাক্তি কোন সম্পদের উপর কোনরকম অর্থনৈতিক কর্মকান্ড যেমন ভোগ, বিক্রি, বন্টন, উত্তরাধীকার কিছুই করতে পারবে না। এই নীতির অধীনে দালালী বা বিনাপুজির সবধরনের ব্যাবসা নিশিদ্ধ করা হয়েছে। একই ভাবে পিতার পুর্বে পুত্র মারা গেলে সে(পুত্র) যেহেতু পিতার সম্পদের মালিক হয়নি তাই তার সন্তানরা(নাতী/নাতনীরা) উত্তরাধীকার পায় না।
আপনি যখন বিষয়টা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন তখন একটা বিষয়ে অনুসন্ধান করা জরুরী মনে করছি। এই ধরনের বন্টন ব্যাবস্থা (অর্থাৎ নাতীদের সরাসরি দাদা থেকে উত্তরাধীকার না পাওয়া) কবে থেকে চালু হয়েছে। রাসুল(স.) বা খোলাফায়ে রাশেদীনের সময়ের কোন রেফারেন্স আছে কী না। সেই সময় বহু মানুষ যুদ্ধে গিয়ে শহীদ হতেন, এবং যুদ্ধে স্বাধারণত যুবকরাই বেশী যায়। কাজেই বৃদ্ধ পিতাকে জিবিত রেখে যুবক পুত্রের শহীদ হওয়ার ঘটনা মোটেই বিরল হওয়ার কথা নয়। সেক্ষেত্রে সেই শহীদের সন্তানদের উত্তরাধীকার কিভাবে দেয়া হত?
আপনি যদি কয়েকটি দৃস্টান্তু সংগ্রহ করে উপস্থাপন করতে পারেন যে সেই সময় এতিম নাতীরা দাদার সম্পদের পুর্ণ উত্তরাধীকার পেত এবং বর্তমানে প্রচলিত আইন অনেক পরে প্রবর্তিত হয়েছে - তাহলে আপনার বক্তব্য অনেক শক্তিশালী হবে। আর যদি রাসুল(স.) বা খোলাফায়ে রাশেদীনের সময় থেকেই এটা চালু থাকে তাহলে আপনাকে এর মর্মউপলব্ধির চেস্টা করতে হবে। কারণ শুধুমাত্র নিজের বুদ্ধি বিবেকের উপর ভিত্তি করে ইসলামের প্রথম থেকে চলে আসা একটা বিধানকে বাতিল করা মনে হয় উচিত হবে না।
২৮ শে মে, ২০১২ রাত ১০:০০
মাহফুজশান্ত বলেছেন: ভাই, ইতিহাস ঘাঁটলে অনেক কিছুই ঘোলাটে লাগবে। যদিও ইতিহাসের মাঝেও অনেক তথ্য লুকিয়ে থাকে, কিন্তু সময়ের আবর্তে তথ্য বিকৃতিরও সমূহ সম্ভাবনা থেকেই যায়।
আল-কোরআনের বিধান ইতিহাস নির্ভর নয়। বরং বিশ্বাসী হিসেবে ইতিহাসের সত্যায়নের জন্য বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে আমাদেরকে আল-কোরআনের উপরে নির্ভর করতে হবে। তা না হলে সবই গোলমেলে ঠেকবে। ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের সাথে সম্পর্ক থাকলেও আল-কোরআন সর্বকালের জন্য প্রেরিত একটি সার্বজনীন বিধান। এটি যেভাবে এসেছিল, মহান স্রষ্টার কৃপায় এখনও ঠিক তেমনি আছে। সুতরাং সরল ও সত্যকে খুজে নেয়াটা বিশ্বাসীদের জন্য খুব একটা কঠিন হবার কথা না। এ বিষয়ে আপনার/আপনাদের যদি কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য জানা থাকে তাহলে আশাকরি সেয়ার করবেন। খুবই উপকৃত হব।
এতকাল পেরিয়ে এসে মুসলিম ইতিহাসের অনেক প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুজে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। সুতরাং শুধুমাত্র ইতিহাসের উপরে নির্ভর করে আল-কোরআনের বিধান সম্পর্কে সিদ্ধান্ত না নেয়াই শ্রেয়। বিশেষ করে উত্তরাধিকার ও সম্পদ বন্টন সংক্রান্ত মুসলিম আইন তো আল-কোরআন, হাদিছ ও ইতিহাস- সবকিছুকেই ছাপিয়ে গেছে। তাই আল-কোরআন যে মানবতার শিক্ষা দেয় তারই আলোকে সহী হাদিছের মর্ম বুঝে আমদেরকে সে পথেই এগুতে হবে। তা না হলে আমাদের মুক্তি নেই।
এ'ব্যাপারে ইসলামের মধ্যে থেকে আলেমদেরকে যতটা না কথা বলতে দেখা যায় তার চেয়ে বেশী সমালোচনা শোনা যায় ইসলামের বাইরে থাকা ইসলামবিরোধীদের থেকে।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। কিন্তু ভাই, ইসলামবিরোধীরা সমালোচনা করেছে বলেই ভুলকে ভুল বলার সৎ সাহস হারিয়ে ফেলাও মোটেই ঠিক নয়। বিশ্বাসী হিসেবে তাদের মিথ্যার জবাব সত্য দিয়ে যেমন দিতে হবে, তেমনি সত্য যত অপ্রিয় হোক না কেন তা গ্রহণ করার মত হিম্মত থাকা চাই। ইনসাফের কথা স্পষ্ট করে তুলে ধরা সত্বেও নিজেই ঠিকভাবে না বুঝে কথায় কথায় অন্যকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দেয়াও ঠিক কি?
শুধুমাত্র নিজের বুদ্ধি বিবেকের উপর ভিত্তি করে ইসলামের প্রথম থেকে চলে আসা একটা বিধানকে বাতিল করা মনে হয় উচিত হবে না।
শুধু নিজের বুদ্ধি বিবেকের উপরে নির্ভর করে যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়- সে ব্যাপারে আমি আপনার সাথে একমত এবং আমিও কখনই সেই ভুল করতে চাই না। কিন্তু ভাই, কোন্ বিধান কিভাবে চলে এলো তা ভুল না ঠিক সেটা খতিয়ে না দেখে অন্ধের মত অনুসরণ করাও মুসলিমের কর্ম হতে পারেনা। আর একমাত্র আল-কোরআনের জ্ঞানই আমাদেরকে সঠিক পথের সন্ধান ও মুক্তি দিতে পারে।
ধন্যবাদ-
৭| ২৯ শে মে, ২০১২ বিকাল ৪:০৮
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: এই প্রসঙ্গে একটা প্রশ্ন গুরুত্বপুর্ণ মনে হচ্ছে - উত্তরাধীকার কি শুধুই সম্পদের? দেনা বা ঋণের ক্ষেত্রে বিধান কি? যদি কেউ সম্পদের পরিবর্তে এক কোটি টাকা ঋণ রেখে মারা যায় তাহলে তার দ্বায় কার উপর বর্তায়??
২৯ শে মে, ২০১২ বিকাল ৪:৪০
মাহফুজশান্ত বলেছেন: নিচের হাদিছ থেকে এ সম্পর্কে ইংগিত পাবেন-
Translation of Sahih Muslim
Chapter 4 : HE WHO LEAVES BEHIND PROPERTY, THAT IS FOR THE HEIRS
Book 11, Number 3946:
Abn Huraira (Allah be pleased with him) reported Allah's Apostle (may peace be upon him) having said this: By Him in Whose Hand is the life of Muhammad, there is no believer on the earth with whom I am not the nearest among all the people. He who amongst you (dies) and leaves a debt, I am there to pay it, and he who amongst you (dies) leaving behind children I am there to look after them. And he who amongst You leaves behind property, that is for the inheritor whoever he is.
Book 11, Number 3947:
Hammam b. Munabbih reported: This is what Abu Huraira (Allah be pleased with him) narratted to us from Allah's Messenger (may peace he upon him). And he narrated many ahadith, and one was this: Allali's Messenger (may peace be upon him said: I am, according to the Book of Allah, the Exalted and Majestic, nearest to the believers of all the human beings. So whoever amongst you dies in debt or leaves behind destitute children, you should call me (for help)), for I am his guardian. And who amongst you leaves property, his inheritor is entitled to get it, whoever he is.
৮| ২৯ শে মে, ২০১২ বিকাল ৪:৫৪
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন:
নাহ কিছুই বুঝলাম না।
যে হাদিস দুটি দিলেন তাতে রাসুল(স.) বলেছেন কেউ ঋণ বা নাবালক সন্তান রেখে মারা গেলে সেই দ্বায়িত্ব তিনি নেবেন। তার অর্থ কি ইসলামী রাস্ট্র? তাহলে ইসলামী রাস্ট্রের অনুপস্থিতিতে কী হবে?
আমারতো মনে হয় সম্পদ যেভাবে যে অনুপাতে উত্তরাধীকারীর মধ্যে বন্টিত হয় ঋণও সেভাবেই বন্টিত হওয়া উচিত। ইসলামী রাস্ট্র যদি সকল ঋণের দ্বায়িত্ব নেয় তাহলেতো গন হারে ঋণ খেলাপী হওয়া শুরু হবে।
আরো একটা বিষয় আছে - বৃদ্ধ পিতা মাতার ভরণ পোষণ চিকিৎসার খরচ কে দেবে? কোন অনুপাতে দেবে?
২৯ শে মে, ২০১২ বিকাল ৫:১১
মাহফুজশান্ত বলেছেন: ভাই আমি তো ইসলামি রাষ্ট্রের আইনের কথাই বলছি।
যে দেশে ইসলামি রাষ্ট্রই নাই, সেখানে ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে অসহায়ের উপর জলুম করা কি ঠিক হচ্ছে?
ইসলামি রাষ্ট্রে অভাবগ্রস্ত মানুষকেই কর্যে হাসানা দেয়া হয়। তাই মানুষটি মরে গেলে সেই দায়ভার রাষ্ট্রই বহন করে। বড় লোককে হুদাই ঋণ দিয়ে আরও বড়লোক বানানোর অপশন এখানে নেই।
বৃদ্ধ হোক বা জোয়ান হোক, পিতা মাতার ভরণ পোষণ ও চিকিৎসার খরচ সামর্থ অনুসারে সন্তান-সন্ততিরাই দেবে। আর যার আর্থিক সহায়তা দেবার ক্ষমতা কম সে তার সাধ্যমত দেবে এবং প্রাণঢেলে সেবা ও সঙ্গ দেবে। এ বয়সে তো এটারই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পড়ে।
৯| ২৯ শে মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৩
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: "ইসলামি রাষ্ট্রে অভাবগ্রস্ত মানুষকেই কর্যে হাসানা দেয়া হয়। বড় লোককে হুদাই ঋণ দিয়ে আরও বড়লোক বানানোর অপশন এখানে নেই।"
মানুষতো শুধুমাত্র রাস্ট্র থেকেই ঋণ করে না - বেসরকারী খাত থেকেও করে। ইসলামী রাস্ট্র কি সেই ঋণও পরিশোধ করবে? এটা কি মানুষকে ইচ্ছেমত ঋণ গ্রহন এবং পরিশোধ না করার ব্যাপারে উৎসাহিত করবে না?
আর আপনি যে হাদীস দিলেন সেখানে ঋণের সাথে সাথে নাবালক সন্তানের দ্বায়িত্বও রাসুল(স.) নিয়েছেন। তার মানে কি নাবালক সন্তানের দ্বায়িত্বও ইসলামী রাস্ট্রের? তাহলেতো আর উত্তরাধীকারের প্রয়োজনই থাকে না - বরং মৃত ব্যাক্তির সকল সম্পদও রাস্ট্রের কাছে চলে যাওয়া উচিত।
দ্বায়িত্ব এবং অধিকারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা কি জরুরী নয়??
আর একটা বিষয় - আমাদের মুল আলোচনা হচ্ছে দাদার অবর্তমানে পিতার মৃত্যুতে নাতির উত্তরাধীকার। যদি এই উত্তরাধীকার দিতে হয় তাহলে তা কখন বন্টন করা হবে? নাবালক নাতির জন্য পিতার মৃত্যুর সাথে সাথেই তাৎক্ষনিকভাবে সম্পদের প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু দাদা জিবিত থাকলে সেই সময়তো উত্তরাধীকার বন্টন সম্ভব নয়, উত্তরাধীকার বন্টিত হয় শুধুমাত্র ব্যাক্তির মৃত্যুর পরে - কারণ তিনি আরো বহু দিন বাঁচতে পারেন, তার সম্পদ কম বেশী হতে পারে, তার সন্তান সংখ্যাও বাড়তে পারে। তাহলে উত্তরাধীকারে অংশ দেয়ার মাধ্যমে এই নাবালক নাতীদের তাৎক্ষনিক প্রয়োজন পুরোন করা কিভাবে সম্ভব?
আর উত্তরাধীকারে প্রপ্ত অংশ দ্বারা যে এই অসহায় এতিমদের ভরণপোষণ হয়ে যাবে তারই বা নিশ্চয়তা কোথায়? আমরা মনেহয় ধরেই নিচ্ছি যে দাদার বিপুল সম্পদ থাকবে - যদি দাদা দরিদ্র হয় এবং তার বহু সন্তান(ধরুন দশের উপরে) থাকে তাহলেতো দেখা যাবে আনুপাতিক হারে যা পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে এতিমের ভরণপোষণই হচ্ছে না। তখন কী হবে?
আমার মনে হয় শেষ পর্যন্ত এধরনের এতিমদের জন্য দাদার পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিক ও প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পদ বরাদ্দ দেয়া ছাড়া আর কোন যৌক্তিক এবং সার্বজনীন সমাধান সম্ভব নয়। তা'ছাড়া এই এতিমদেরকে দাদার ঋণ ও বৃদ্ধকালীন ভরণ-পোষণের দ্বায় থেকেও অব্যাহতি দেয়া প্রয়োজন। আর যেখানে দ্বায়মুক্তি সেখানে প্রাপ্তিতো কিছু কমই হবে - এটাই স্বাভাবিক।
২৯ শে মে, ২০১২ রাত ১০:১৮
মাহফুজশান্ত বলেছেন: মানুষ তো শুধুমাত্র রাস্ট্র থেকেই ঋণ করে না - বেসরকারী খাত থেকেও করে। ইসলামী রাস্ট্র কি সেই ঋণও পরিশোধ করবে? এটা কি মানুষকে ইচ্ছেমত ঋণ গ্রহন এবং পরিশোধ না করার ব্যাপারে উৎসাহিত করবে না?
ইসলামি রাষ্ট্রে বিলাসিতার জন্য ঋণ প্রদান ও গ্রহণ করার অপশন নেই। আপনি সম্ভবত ব্যবসা- বাণিজ্যে পুজি বিনিয়গের স্বার্থে ব্যক্তিগত লেনদেনের বিষয়ের কথা বলছেন। এক্ষেত্রেও যাদের মধ্যে লেনদেন হবে, আল-কোরআনে তাদের মধ্যে লিখিত ডকুমেন্ট করে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই ডকুমেন্টে সকল শর্ত স্পষ্টভাবে সাক্ষীর উপস্থিতিতে উল্লেখ থাকতে হবে। যিনি যতটুকু বিনিয়গে সক্ষম তার চেয়ে অতিরিক্ত গ্রহণযো্গ্য বিবেচিত হবে না। এ অবস্থায় কারো মৃত্যু হলে ডকুমেন্ট না থাকায় কেউ দায়বদ্ধ থাকবে না। এক কথায় সকল দাবি ত্যাগ করতে হবে। ডকুমেন্ট বিহীন কোন লেনদেন করে থাকলে তার দায় জীবিত পার্টনারকেই বহন করতে হবে। এমনকি মৃত ব্যক্তি পক্ষের লোকজনও কোন ক্লেইম করতে পারবে না।
হাদিছের এই অংশটি আরেকবার ভাল করে দেখুন. প্লিজ-
So whoever amongst you dies in debt or leaves behind destitute children, you should call me (for help)), for I am his guardian. And who amongst you leaves property, his inheritor is entitled to get it, whoever he is.
সুতরাং সব নাবালক সন্তানের দায়িত্ব নেবার কথা যে এখানে বলা হয়নি- এবার পরিষ্কার হয়েছে তো?
সুতরাং যাদের property অর্থাৎ সম্পদ রয়েছে এবং তাদের মধ্যে যারা বংশধর রেখে মারা যাবে, তাদের উত্তরাধিকারীর কাছে সেই সম্পদ সুষ্ঠুভাবে বন্টনের নির্দেশই আল-কোরআনে দেয়া হয়েছে। সম্পহীনদের জন্য এই নির্দেম নয়। কারো পারিবারিক সম্পদে রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করবে না। তবে এক্ষেত্রে কোনরূপ মনোমালিন্য হলে তা মিটানোর জন্য প্রয়োজনে রাষ্ট্র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেই পারে।
উপরে দেয়া সূরা আন নিসার ২ থেকে ১০ নং আয়াত পর্যন্ত কষ্ট করে আরেকবার দেখে নিন। বিশেষ করে নিচের আয়াতটি নজর দিন-
(০৪:০৬) অর্থ- আর এতিমদের প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখবে, যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের বয়সে পৌঁছে। যদি তাদের মধ্যে বুদ্ধি-বিবেচনার উন্মেষ আঁচ করতে পার, তবে তাদের সম্পদ তাদের হাতে অর্পন করতে পার। এতিমের মাল প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করো না বা তারা বড় হয়ে যাবে মনে করে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলো না। যারা স্বচ্ছল তারা অবশ্যই এতিমের মাল খরচ করা থেকে বিরত থাকবে। আর যে অভাবগ্রস্ত সে সঙ্গত পরিমাণ খেতে পারে। যখন তাদের হাতে তাদের সম্পদ প্রত্যার্পণ কর, তখন সাক্ষী রাখবে। অবশ্য আল্লাহই হিসাব নেয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট।
সুতরাং সম্পত্তি থাক বা না থাক, কিংবা থাকলে বন্টন করা হোক বা না হোক, অভিভাবককে সাধ্যমত এতিমের দেকভাল করতেই হবে। প্রয়োজনে নিজে যেমন থাকবে এতিমদেরও তেমনি রাখবে। এটি আল-কোরআনের নির্দেশ এবং ইমানদারের ইমানী দায়িত্ব। আর অভিভাবক অর্থাৎ দাদা বা তার অবর্তমানে অন্য যেই হোক না কেন (০৪:০৬) আয়াতের সর্ত পুরোন করার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে হবে। অভিভাবক সম্পদশালী হলে এতিমের অংশ থেকে কিছুই নেয়া যাবে না। বরং তারা উপযুক্ত হলে তাদের হাতে তাদের অংশ অর্পণ করতে হবে। দাদার মৃত্যুর পরও এতিম উপযুক্ত না হলে যারা থাকবেন তারা দাদার মতই দায়িত্ব পালন করে যাবেন। আর অভিভাবক অভাবগ্রস্ত হলে সংগত পরিমানে এতিমের সম্পত্তি থেকে খরচ করতে পারেন। এরপরও সংগত কারনে অপারগ হলে- মহান আল্লাহ সব জানেন। তিনি কাউকে তার সাধ্যের বাহিরে শাস্তি দেবেন না। তবে ইচ্ছাকৃত অবহেলা করলে সবার জন্যই তা অপরাধ বটে। সঠিক ধর্মীয় চেতনা, সৎ উদ্দেশ্য ও মানবিকতা থাকলে এবং এতিম সম্পর্কে আল-কোরআনের নির্দেশ মানতে চাইলে- বহু দিন বাঁচা বা কম দিন বাঁচা, অঢেল সম্পদ থাকা বা না থাকা, অনেক সন্তান পয়দা দেয়া বা না দেয়া- এসব কোন বাহানাই এই মহৎ কর্ম থেকে একজন প্রকৃত ইমানদারকে আটকে রাখতে পারবে না।
ধন্যবাদ-
১০| ৩০ শে মে, ২০১২ সকাল ১১:১৪
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: এতিমের প্রতি কর্তব্য বা এতিমের সম্পদ সংক্রান্ত বক্তব্যের সাথেতো আমার কোনই বিরোধ নাই। আর আমরা এ'খানে এতিমের সম্পদ সংরক্ষন নিয়েও আলোচনা করছি না - আমাদের আলোচনার বিষয় হচ্ছে দাদার আগে পিতা মারা গেলে এতিম নাতি দাদার সম্পদের উত্তরাধীকারী হবে কি না।
যদি উত্তরাধীকারী হয় তাহলেই তা এতিমের সম্পদ হবে এবং তখনই তা সংরক্ষন বিষয়ক বিধান প্রযোজ্য হবে। কিন্তু যদি উত্তরাধীকারী নাই হয় তাহলেতো এইসব বিধানের কিছুই প্রযোজ্য নয়। আর এতিম সন্তানতো শুধুমাত্র দাদার উত্তরাধীকারের সম্পদই পায় না বরং তার পিতার রেখে যাওয়া সম্পদওতো সেই পায়। কাজেই এতিমের সম্পদ সংরক্ষন বা এতিমের প্রতি দ্বায়িত্ব পালনের নির্দেশের সাথে দাদার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হওয়া কিভাবে সম্পর্কিত হয়?
আপনি আমার গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্নটির উত্তর দিলেন না - দাদার সম্পদের উত্তরাধীকার কখন বন্টন করা হবে? পিতার মৃত্যুর সাথে সাথে এতিম নাতি পিতার রেখে যাওয়া সম্পদের উত্তরাধীকারী হবে আর জিবিত দাদা বা দাদার অবর্তমানে চাচা বা অন্যকেউ হবে তার অভিভাবক। অভিভাবক হিসেবে এতিমের প্রতি দ্বায়িত্ব পালন এবং সে পুর্ণবয়ষ্ক হলে তার সম্পদ তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে - এ'পর্যন্ত পরিষ্কার এবং এ'ব্যাপারে প্রতিষ্ঠিত শরিয়তও একমত। আপনি নতুন যে প্রশ্নটি তুলেছেন সেটি হচ্ছে দাদার সম্পদে এতিম নাতি উত্তরাধীকারী হবে। আপনার এই আলোচনার ভিত্তিতে সেটি কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না।
আপনি দাদার ঋণ এবং বৃদ্ধকালীন ভরণপোষনের দ্বায় সংক্রান্ত বিষয়েও পরিষ্কার ধারণা দিতে পারছেন না। আপনি যে হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়েছেন তার ভিত্তিতে উত্তরাধীকারবিহীন সম্পদ বা অভিভাবকহীন এতিমের বিষয়ে রাস্ট্রের ভুমিকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কোন ব্যাক্তির কোনধরনের উত্তরাধীকারী না থাকলে তার সকল ঋণ ও বৃদ্ধকালিন ভরণপোষণ এর দ্বায়িত্ব যেমন রাস্ট্রের তেমনি তার রেখে যাওয়া সম্পদও রাস্ট্রের। একই ভাবে অভিভাবকহীন এতিমের ভরণপোষনের দ্বায়িত্বও রাস্ট্রের।
কিন্তু উত্তরাধীকারী থাকলে তারা সম্পদের উপর যেমন অধিকার পাবে তেমনি সকল দ্বায়ও তাদেরকেই নিতে হবে। এ'জন্যই পুত্রবিহীন শুধুমাত্র কন্যা সন্তানের পিতার সম্পদে তার ভাইদের উত্তরাধীকারী করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভাইকে সম্পদে যেমন অধিকার দেয়া হয়েছে তেমনি বৃদ্ধকালীন দেখাশুনার দ্বায়ও তাদেরকেই দেয়া হয়েছে। কন্যাকে পুত্রের অর্ধেক সম্পদ দেয়ারও অন্যতম যৌক্তিকতা হচ্ছে বৃদ্ধ পিতার দ্বায় বা দেখাশুনার দ্বায়িত্ব থেকে কন্যাকে অব্যাহতি দেয়া - এই দ্বায়িত্ব শুধুমাত্র পুত্রের। পুত্ররা যদি এই দ্বায়িত্ব পালন না করে তাহলে ইসলামী আদালত তাদের কাছ থেকে উত্তরাধীকারের অংশের অনুপাতে খরচের টাকা আদায় করতে পারে।
এ'ভাবেই উত্তরাধীকার আইনে দ্বায় ও অধিকারের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এবং এর ভিত্তিতে বলা যায় পিতার মৃত্যুতে এতিম নাতির পক্ষে দাদার বৃদ্ধকালীন ভরণপোষণ বা অন্যকোন দ্বায় দায়িত্ব গ্রহণ করা সম্ভব নয় এবং তাকে উত্তরাধীকারও দেয়া হয়নি। বরং তার তাৎক্ষনিক প্রয়োজন পুরোনের জন্য দাদা বা দাদার অক্ষমতায় চাচাদেরকে অভিভাবকের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অভিভাবক হিসেবে তারা এতিমের পিতার রেখে যাওয়া সম্পদ(পিতার মৃত্যুর সাথে সাথেই এতিম সন্তান যার মালিক হয়েছে) সংরক্ষণ করবেন এবং এতিমদের ভরণপোষনের ব্যাবস্থা করবেন। আর দাদার উত্তরাধীকার বন্টিত হবে দাদার মৃত্যুর পর তখন যে সন্তানরা জীবিত আছেন তাদের মধ্যে। মৃত ব্যাক্তির পক্ষে কোন সম্পদের মালিক হওয়া কিভাবে সম্ভব?
আমার মনে হয় এই সমস্যার উৎস উত্তরাধীকার আইন নয় বরং সম্পদের ব্যাপারে আমাদের দৃস্টিভঙ্গি। একজন মানুষ সম্পদের মালিকানা কখন কিভাবে পায়? এবং পিতা ও পুত্রের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক কি?
একজন মানুষ সম্পদের মালিকানা পেতে পারে প্রধানত দুই উপায়ে - ১. নিজের উপার্জন এবং ২. উত্তরাধীকার। এর মধ্যে উত্তরাধীকারে প্রাপ্ত সম্পদের মালিক হতে হলে পিতার মৃত্যুর শর্ত পুরোন হতে হবে। কারণ মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তার মোট সম্পদ বা উত্তরাধীকারীর সংখ্যা নির্দিস্ট হয় না।
পিতা পুত্রের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক সময়ের প্রেক্ষিতে চারটি পর্যায়ে ভাগ করা যায় - ১. সন্তানের জন্ম থেকে পুর্ণ বয়ষ্ক হওয়া পর্যন্ত পিতার দ্বায়িত্ব সন্তানের ভরন পোষনের ব্যাবস্থা করা। ২. বৃদ্ধকালীন সময়ে সন্তানের দ্বায়িত্ব পিতার ভরণ পোষণ করা। ৩. পিতার মৃত্যুর পরে সন্তানের অধিকার উত্তরাধীকারী হিসেবে পিতার সম্পদের মালিকানা পাওয়া। - এই তিনটি পরিষ্কার। সমস্যা হয়েছে চতুর্থটি নিয়ে - পুর্ণবয়ষ্ক সন্তান ও কর্মক্ষম পিতার মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক কি? এ'খানে ইসলামের বিধান হচ্ছে এই অবস্থায় উভয়ে স্বাধীন ব্যাক্তি হিসেবে যার যার উপার্জিত সম্পদের মালিক এবং যার যার পরিবারের ব্যাপারে দ্বায়িত্বশীল। পুর্ণ বয়ষ্ক সন্তানের পরিবারের ভরণ পোষনের দ্বায় যেমন পিতার নয় তেমনি জীবিত পিতার সম্পদের মালিকানাও সন্তানের নয়।
ইসলামী অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হচ্ছে অনিশ্চিত সম্পদের উপর অধিকার স্বীকৃত না হওয়া। যেমন নদীর মাছ ধরার আগে বিক্রি করা, জাহাজের পণ্য খালাসের আগে বিক্রি করা ( খাতুন গঞ্জের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাবসা যা দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধির প্রধান করাণ ) বা জমির ফসল ঘরে তোলার আগে বিক্রি করা অবৈধ। কারণ এ'গুলির কোনটিই নিশ্চিত নয় বা এগুলির উপর ব্যাক্তির দখল প্রতিষ্ঠিত নয়। একই ভাবে জীবিত পিতার সম্পদে সন্তানের মালিকানাও অনিশ্চিত বিধায় বৈধ নয়। পিতা তার সম্পদ যেকোন সময় খরচ করতে পারেন বা তার সন্তান সংখ্যাও বাড়তে পারে।
আমাদের আসল সমস্যাটা হচ্ছে ইসলামের পারিবারিক ব্যাবস্থার অন্যতম বড় একটা নীতি আমরা উপেক্ষা করছি। দেখুন কোরআনে বলা হয়েছে -
"যারা বিবাহে সামর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন।"
অর্থাৎ স্ত্রী সন্তানের দ্বায়িত্ব গ্রহনে সামর্থ না হলে বিয়ে করা যাবে না। আর এই অর্থনৈতিক সামর্থ হতে হবে সম্পদের মালিকার ভিত্তিতে। জীবিত পিতার সম্পদে পুত্রের মালিকানা নিশ্চিত নয় - সুতরাং পিতার সম্পদের ভিত্তিতে বিয়ে করা বৈধ নয়। বরং নিজের উপার্যনের ভিত্তিতেই বৈবাহিক সম্পর্ক করতে হবে। এই নীতি লঙ্ঘন করে যখন বাপের হোটেলে খেয়ে বাপের টাকার গরমে উচ্চবিত্তের পরিবারের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক করা হয় এবং নিজের উপার্জত কোন সম্পদ না রেখে মারা যায় তখনই দেখা যায় তার সন্তানরা সম্পদহীন কিন্তু উচ্চবিত্তের জীবনে অভ্যস্ত। যদি আমরা ইসলামের পরিবার গঠনের এই প্রাথমিক নীতিটা কঠোরভাবে বাস্তবায়িত করি তাহলে এ'ধরনের সমস্যার উদ্ভবই হবে না।
এই দিকটি চিন্তা করে আমরতো মনে হচ্ছে জীবিত দাদার সম্পদে এতিম নাতির উত্তরাধীকার কিছুতেই থাকা উচিত নয়। এবং এই বিষয়টি পুর্ণবয়ষ্ক পুত্রকে বিয়ের সময়ই পরিষ্কার করে বলে দেয়া উচিত - "দেখ বাবা তুমি যে বিয়ের মাধ্যমে স্ত্রী ও সন্তানের দ্বায়িত্ব নিতে যাচ্ছ তা কিন্তু একান্তই তোমার ব্যাক্তিগত দ্বায়। আমার মৃত্যুর আগে তুমি উত্তরাধীকারী হিসেবে আমার কোন সম্পদের মালিক হবে না। তাই তুমি আমার আগে মারা গেলে তোমার সন্তানরা কিন্তু আমার থেকে উত্তরাধীকার হিসেবে কিছুই পাবে না। সুতরাং তুমি তোমার স্ত্রী সন্তানকে কোন মানের জীবনে অভ্যস্ত করবে সেটা একান্তই তোমার নিজের সম্পদের ভিত্তিতে হতে হবে। আর যদি তা না পার তাহলে বিয়ে করাই বৈধ হবে না।"
এটাই ইসলামের পারিবারিক অর্থনৈতিক নীতিমালা। পিতার উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে প্রত্যেক পুর্ণবয়ষ্ক পুত্রকে স্বনির্ভর করার জন্য এর কোন বিকল্প নাই। গ্রামীন পর্যায়ে এখনও এই নীতির একটা প্রয়োগ দেখা যায়। কৃষক পরিবারের সন্তান বড় হলে তাকে এক খন্ড জমি দিয়ে এবং ব্যাবসায়ী পরিবারের সন্তান বড় হলে তাকে কিছু পুঁজি দিয়ে আলাদা করে দেয়া হয়। তার পর তারা নিজেদের সামর্থ অনুসারে বিয়ে করে। ফলে তারা মারা গেলেও তাদের সন্তানরা নি:স্ব বা অসহায় হয় না।
এই কমেন্টটা অনেক বড় হয়ে গেল। তবে বিষয়টা নিয়ে গত কয়েক দিনের অনুসন্ধান ও চিন্তাভাবনা পুর্ণাঙ্গরুপে বর্ণনা করতে গিয়ে ভিন্ন উপায়ও ছিল না। আশা করি আপনি আমার বক্তব্য ধৈর্য সহকারে বিবেচনা করে দেখবেন এবং বুঝতে পারবেন ইসলামী শরিয়তে কেন দাদার সম্পদে এতিম নাতির উত্তরাধীকার রাখা হয় নি।
৩০ শে মে, ২০১২ দুপুর ১:০৬
মাহফুজশান্ত বলেছেন: মহান আল্লাহতায়ালা যেন আপনার ধৈর্য ও চেষ্টার উত্তম প্রতিদান দেন-
এটাই ইসলামের পারিবারিক অর্থনৈতিক নীতিমালা। পিতার উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে প্রত্যেক পুর্ণবয়ষ্ক পুত্রকে স্বনির্ভর করার জন্য এর কোন বিকল্প নাই। গ্রামীন পর্যায়ে এখনও এই নীতির একটা প্রয়োগ দেখা যায়। কৃষক পরিবারের সন্তান বড় হলে তাকে এক খন্ড জমি দিয়ে এবং ব্যাবসায়ী পরিবারের সন্তান বড় হলে তাকে কিছু পুঁজি দিয়ে আলাদা করে দেয়া হয়। তার পর তারা নিজেদের সামর্থ অনুসারে বিয়ে করে। ফলে তারা মারা গেলেও তাদের সন্তানরা নি:স্ব বা অসহায় হয় না।
আমি আপনার এই বিরাট মন্তব্যের অধিকাংশ বক্তব্যের সাথে একমত। শুধু জীবিত দাদার সম্পদে এতিম নাতির উত্তরাধীকার কিছুতেই থাকা উচিত নয়- এ ধরনের বক্তব্য ছাড়া।
সে কারনেই শেষের দিককার বক্তব্য নিয়ে আগে বলতে চাই। আপনি ঠিক বলেছেন- কৃষক পরিবারের সন্তান বড় হলে তাকে এক খন্ড জমি দিয়ে এবং ব্যাবসায়ী পরিবারের সন্তান বড় হলে তাকে কিছু পুঁজি দিয়ে আলাদা করে দেয়া হয়। তার পর তারা নিজেদের সামর্থ অনুসারে বিয়ে করে। কিন্তু এই এক খন্ড জামি বা পুজি কি লিখিতভাবে দেয়া হয়? যদি না দেয়া হয় এবং আপনার কথা মতে ইসলামি আইনে পিতার মৃত্যুর আগে যেহেতু লিখে দেবার বিধান নেই, সেক্ষেত্রে তো পিতার মৃত্যুর পর বন্টনের আগে আপন পুত্রেরও সেই জমি বা পুজির উপর আইনত কোন অধিকার থাকার কথা নয়। পুত্র জীবিত থাকলে সম্পত্তির অংশ পেতে পারে। কিন্তু কোন কারনে পিতার আগে পুত্রের মৃত্যু হলে তার পরিবার ও এতিম সন্তানদের কি দশা হবে? যে দাদার কোন সম্পদ নেই আমাদের আলোচনা তাদের সম্পর্কে নয়। বর্তমান আইন অনুসারে দাদার অঢেল সম্পদ থাকা সত্বেও তার অবর্তমানে চাচদের করুণা ছাড়া আপন মৃত ভাইয়ের এতিম সন্তানদের টিকে থাকার আর কোন পথই নেই। আমি বলতে চাচ্ছি, এতে করে অধিকার থেকে বঞ্চিত করে অসহায় এতিমদের আরও অসহায় বানাবার পথ খুলে দেয়া হলো না কি? কারন তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আইনের কাছে যাবার পথই তো বন্ধ করে দেয়া হলো। পিতা বেঁচে থাকতে যারা একখন্ড জমির উপরে বাস করত। পিতার মৃত্যুর সাথে সাথে তাদের পায়ের তলা থেকে সেই জমিটুকু কেড়ে নেবার আইন কতটা মানবিক হতে পারে? আমি দুঃখিত! মানতে পারছি না।
সম্পদের মালিকানা ও পিতা পুত্রের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক এর বিষয়ে আপনি যা বলেছেন তা স্বাভাবিক অবস্থার সাথে সম্পৃক্ত। আমরা যা নিয়ে আলোচনা করছি সেটি একটু ভিন্ন পরিস্থিতি বলেই আল্লাহতায়ালা আলাদাভাবে বিধান বাতলে দিয়েছেন।
আপনি আমার গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্নটির উত্তর দিলেন না - দাদার সম্পদের উত্তরাধীকার কখন বন্টন করা হবে?
আমি স্পষ্ট করে বলেছি- পোষ্টটি আরেকবার পড়ে দেখুন। বিশেষ করে প্রথম থেকে ২য় প্যারাটি পর্যন্ত।
এতিমের সম্পদ সংরক্ষন বা এতিমের প্রতি দ্বায়িত্ব পালনের নির্দেশের সাথে দাদার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হওয়া কিভাবে সম্পর্কিত হয়?
এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আগে আপনকে সিদ্ধান্তে আসতে হবে যে, আপনি এতিম পৌত্র, পৌত্রি ও নাতি, নাতনিদের দাদার বশধর মনে করেন কিনা। আমি মনে করি। কেন করি সে সম্পর্কে স্পষ্ট তুলে ধরেছি।
ধন্যবাদ-
১১| ৩০ শে মে, ২০১২ দুপুর ১:৩৮
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: "কিন্তু এই এক খন্ড জামি বা পুজি কি লিখিতভাবে দেয়া হয়?"
যদি না দেয়া হয় তাহলে সেখানে পরিবর্তন করা উচিত এবং লিখে দেয়ার আইন করা উচিত। কিন্তু নিজে স্বাবলম্বী না হয়ে পিতার সম্পদের ভরসায় বিয়ে করা কিভাবে বৈধ হয়? এই অবৈধ কাজের প্রতিকৃয়ায় সৃস্ট অন্যান্য সমস্যার জন্য ইসলামী আইনকে দ্বায়ি করা কতটুকু যৌক্তিক?
"অন্যান্য জীবিত ভাইদের সাথে আনুপাতিক হারে মৃত ভাইয়ের নামেও বরাদ্দ রাখতে হবে।" মৃত ব্যাক্তির নামে সম্পদ বরাদ্দ দেয়া কিভাবে সম্ভব? সেই সম্পদের দখল, বন্টন ইত্যাদি কিভাবে হবে?
আপনি বংশীয় ধারার ব্যাপারে যে দৃস্টিভঙ্গি প্রকাশ করছেন সেটা কতটুকু ইসলাম সম্মত ভেবে দেখুন। ইসলাম বংশীয় কৌলিন্য সমর্থন করে কি? পুর্ণবয়ষ্ক সন্তান যদি নিজে উপার্যন না করে পিতার সম্পদের উপর নির্ভরশীল থেকে উচ্চবিত্তের জীবন যাপন করে - সেটা কি ইসলাম সমর্থন করে?
আমি তা মনে করি না। বরং পুর্ণবয়ষ্ক প্রত্যেক ব্যাক্তিকে নিজে উপার্জন করে স্বাবলম্বি হতে হবে এবং যা সে উপার্যন করবে তার ভিত্তিতেই তাকে চলতে হবে। পিতার কী আছে বা ভাইদের কার কী আছে সেই ভরসায় পরনির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকা, বিয়ে করা, সন্তানের পিতা হওয়া - কখনই সমর্থনযোগ্য নয়। আপনি যদি আইন করে দাদার সম্পদে এতিম নাতির অংশ নির্দিস্ট করেন তাহলে এই বংশভিত্তিক চিন্তা-চেতনা ও পরনির্ভরশীল মানষিকতা উৎসাহিত হবে। আর এটা নিশিদ্ধ হলে প্রত্যেক পুর্ণবয়ষ্ক মানুষকে বিয়ে করার আগে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে। এখন আপনি বিবেচনা করে দেখুন ইসলামের মত সার্বজনীন কল্যানকর ধর্মের কোনটিকে উৎসাহিত করা উচিত?
এর সাথে সাথে ইসলাম কিন্তু এতিমদের অভিভাবকহীন অসহায় করে ছেড়ে দেয়ার সুযোগ রাখেনি। দাদা এবং দাদার অক্ষমতায় চাচাকে অভিভাবকত্ব ও ভরণপোষনের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এটা কিন্তু দয়া বা করুনার বিষয় নয় বরং আইনগত দ্বায়িত্ব। কেউ যদি এই দ্বায়িত্ব পালন না করে তাহলে ইসলামী আদালত দাদা বা চাচার কাছ থেকে এই খরচ আদায় করতে পারে। আর যদি কোন অভিভাবক না থাকে অথবা অভিভাবক যদি দারিদ্রের কারণে অক্ষম হয় তাহলে ইসলামী রাস্ট্র এই দ্বায়িত্ব নেবে - এটা আইনি বাধ্যবাধকতা, দয়া বা করুণার কিছু নয়।
১২| ৩০ শে মে, ২০১২ দুপুর ২:২০
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: আর একটা টেকনিক্যাল সমস্যা মনে পড়ল - ইসলামের উত্তরাধীকার আইনে পিতাকে জীবিত রেখে কেউ মারা গেলে এবং পুত্র সন্তান না থাকলে তার সম্পদে জীবিত পিতার জন্য অংশ থাকে। যদি আপনি মৃত সন্তানকে সম্পদের অংশ দিতে চান তাহলে নিশ্চয়ই বেছে বেছে শুধুমাত্র যে সন্তান ছেলে রেখে মারা গেছে তাকেই দিতে পারবেন না বরং সবাইকেই সমানভাবে দিতে হবে।
এখন যে সন্তানের সম্পদে পিতার অংশ আছে তার সম্পদ বন্টন কিভাবে হবে? যখন সন্তান মারা যায় তখন পিতা(দাদা) জীবিত, কাজেই তাকে অংশ দিতে হবে আবার যখন পিতা(দাদা) মারা যাবেন তখন তার সম্পদে মৃত সন্তানকে অংশ দিতে হবে, আবার মৃত সন্তানের সম্পদ বন্টনের সময় পিতা জীবিত ছিলেন কাজেই তাকে অংশ দিতে হবে . . . এ'ভাবে একটা অসীম চক্র তৈরী হবে।
সুতরাং ইসলামের উত্তরাধিকার আইন বলবত রেখে মৃত ব্যাক্তির নামে সম্পদ বরাদ্দ দেয়া কখনই যৌক্তিক নয়। সম্ভবত পৃথিবীর কোন দেশের কোন আইনেই মৃত ব্যাক্তির নামে সম্পদ বরাদ্দ দেয়ার বিধান নাই।
৩০ শে মে, ২০১২ বিকাল ৩:১৫
মাহফুজশান্ত বলেছেন: আমার মনে হচ্ছে- আপনি সম্ভবত আমার পোষ্টটি পুরোটা ধৈর্য সহ না দেখেই মন্তব্য করছেন। অথবা আংশিকভাবে দেখার কারনে মূল বিষযটি হয়ত আপনার দৃষ্টিতে ধরা পড়ছে না।
ইসলাম বংশীয় কৌলিন্য- (Nobility of birth ; aristocracy ; gentility ; high birth ; noble descent) সমর্থন করে- আমি এইরূপ বেফাশ কথা কোথাও বলেছি নাকি!!? হয়ত আপনি ভুল বুঝেছেন। আবারও পরিষ্কার করে বলছি- ইসলাম বংশীয় আভিযাত্য প্রদর্শন করাকে কখনই সমর্থন করেনা। তাই আমিও এর ঘোর বিরোধী। কিন্তু তাই বলে ভাববেন না যে, আমি আমার বা অন্য কারো বংশধরদের অস্বীকার করার নিতিকে মেনে নেব।
আমি জানতে চেয়েছি- আপনি এতিম পৌত্র, পৌত্রি ও নাতি, নাতনিদের দাদার বশধর মনে করেন কিনা। বংশধর হিসেবে স্বীকার করা আর বংশীয় কৌলিন্য প্রদর্শন করা এককথা নয়।
"কিন্তু এই এক খন্ড জামি বা পুজি কি লিখিতভাবে দেয়া হয়?"
যদি না দেয়া হয় তাহলে সেখানে পরিবর্তন করা উচিত এবং লিখে দেয়ার আইন করা উচিত।
কে করবে? ইসলামি আইনের হর্তাকর্তারা যদি এটি বুঝতেন, তাহলে তো আপনার সাথে আমার এত কথার প্রয়োজনই হত না।
কিন্তু নিজে স্বাবলম্বী না হয়ে পিতার সম্পদের ভরসায় বিয়ে করা কিভাবে বৈধ হয়? এই অবৈধ কাজের প্রতিকৃয়ায় সৃস্ট অন্যান্য সমস্যার জন্য ইসলামী আইনকে দ্বায়ি করা কতটুকু যৌক্তিক?
স্বাবলম্বি বা সামর্থবান হওয়া বলতে আপনি কি বুঝেন সেটাই বড় কথা। যেহেতু আপনার/ আপনাদের কথা অনুসারে ইসলামি আইনে পিতার মৃত্যুর আগে আইনত সম্পদ বন্টন সম্ভব নয়- ভেজালটা মূলত সেখানেই। তাই পিতার আদেশ ও ইচ্ছায় তার নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যবসা বানিজ্য ও জমিজমা দেখাশুনা করার পরও এবং সম্পদ অর্জনে অবদান রাখা সত্বেও পিতার মৃত্যুর আগে আইনত পুত্ররা কখনই সামর্থবান হবার যোগ্য হতে পারছে না। ফলে পিতার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বিয়ে না করে রোজা রেখেই রাত-দিন এক করে দেবার পরামর্শ দেয়া ছাড়া আর কি বলার আছে!!? একই কারনে এতিমদেরও তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবার প্রশ্ন আসছে।
পিতার কী আছে বা ভাইদের কার কী আছে সেই ভরসায় পরনির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকা, বিয়ে করা, সন্তানের পিতা হওয়া - কখনই সমর্থনযোগ্য নয়।
আমিও এমনই মনে করি বলেই বাল্য বিবাহের ঘোর বিরোধীতা করি। আপনি করেন কিনা জাননা!
আপনি যদি আইন করে দাদার সম্পদে এতিম নাতির অংশ নির্দিস্ট করেন তাহলে এই বংশভিত্তিক চিন্তা-চেতনা ও পরনির্ভরশীল মানষিকতা উৎসাহিত হবে। আর এটা নিশিদ্ধ হলে প্রত্যেক পুর্ণবয়ষ্ক মানুষকে বিয়ে করার আগে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে।
আমি এমনটি মনে করি না। যারা আত্মনির্ভরশীল হতে চায়, আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায় তারা সৎ পথে থেকে যে কোন উপায়েই তা অর্জন করতে পারবে। আর যারা চায়না, তারা দিন রাত টাকার গদিতে বসে থেকেও পারেনা। পৃথিবীতে এ ধরনের অনেক উদাহরণ আছে। তবে আত্মনির্ভরশীল হওয়া মানেই অঢেল সম্পদের মালিক হওয়া নয়।
........
(এর সাথে সাথে ইসলাম কিন্তু এতিমদের অভিভাবকহীন অসহায় করে ছেড়ে দেয়ার সুযোগ রাখেনি। দাদা এবং দাদার অক্ষমতায় চাচাকে অভিভাবকত্ব ও ভরণপোষনের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এটা কিন্তু দয়া বা করুনার বিষয় নয় বরং আইনগত দ্বায়িত্ব। কেউ যদি এই দ্বায়িত্ব পালন না করে তাহলে ইসলামী আদালত দাদা বা চাচার কাছ থেকে এই খরচ আদায় করতে পারে। আর যদি কোন অভিভাবক না থাকে অথবা অভিভাবক যদি দারিদ্রের কারণে অক্ষম হয় তাহলে ইসলামী রাস্ট্র এই দ্বায়িত্ব নেবে - এটা আইনি বাধ্যবাধকতা, দয়া বা করুণার কিছু নয়।)
....,...
যে ইসলামি আইন এতিমদের তাদের আপন দাদার বংশধর হিসিবে সম্পত্তি পাবার অধিকার ও স্বীকৃতি দেয় না- সেই আইনের কাছে এতিমদের প্রতি অবজ্ঞাকারী দাদা বা চাচার করুণা ভিক্ষা করা ছাড়া ভাল কিছু আশা করা বৃথা। আদালতে গিয়ে অধিকার আদায়ের জন্য স্পষ্ট আইন থাকা চাই। তাছাড়া অন্যের উপরে নির্ভরশীল থেকে যে দুর্বল মানুষগুলোর নুন আনতে পান্তা ফুরায়, ঘোলাটে ইসলামি আইনের উপরে ভর করে আদালতে গিয়ে তারা কি কিছু পাবার আশা করতে পারে। সুতরাং অধিকার আদায়ের জন্য আল-কোরআনে নির্দেশিত আইনকে নিঃস্বার্থ অন্তরে জেনে ও মেনে শিকড়কে আগে শক্ত করা চাই।
ধন্যবাদ-
১৩| ৩০ শে মে, ২০১২ দুপুর ২:২১
প্রকৃতির প্রতিফলন বলেছেন: আপনার ফেসবুক আইডি টা পেতে পারি?
[email protected]
৩০ শে মে, ২০১২ বিকাল ৩:১৭
মাহফুজশান্ত বলেছেন: আমি ফেসবুক ইউজ করি না।
যা বলার এখানেই বলতে পারেন।
১৪| ৩০ শে মে, ২০১২ বিকাল ৩:৪৩
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: "যে ইসলামি আইন এতিমদের তাদের আপন দাদার বংশধর হিসিবে সম্পত্তি পাবার অধিকার ও স্বীকৃতি দেয় না- সেই আইনের কাছে এতিমদের প্রতি অবজ্ঞাকারী দাদা বা চাচার করুণা ভিক্ষা করা ছাড়া ভাল কিছু আশা করা বৃথা। আদালতে গিয়ে অধিকার আদায়ের জন্য স্পষ্ট আইন থাকা চাই। তাছাড়া অন্যের উপরে নির্ভরশীল থেকে যে দুর্বল মানুষগুলোর নুন আনতে পান্তা ফুরায়, ঘোলাটে ইসলামি আইনের উপরে ভর করে আদালতে গিয়ে তারা কি কিছু পাবার আশা করতে পারে। সুতরাং অধিকার আদায়ের জন্য আল-কোরআনে নির্দেশিত আইনকে নিঃস্বার্থ অন্তরে জেনে ও মেনে শিকড়কে আগে শক্ত করা চাই।"
আগে যা কিছু বল্লেন এই বক্তব্যের মাধ্যমে কি তার পুরোটাই ঘোলাটে হয়ে গেল না? ইসলামের আইন বলতে কি আপনি কেবলমাত্র উত্তরাধীকার আইনকেই বোঝেন? উত্তরাধীকার আইনে দাদার সম্পত্তিতে এতিম নাতীর অংশ নাই বলেই কি তাকে দয়ার উপর ছেড়ে দেয়া হল? তাহলে তো জনগনের একটা বড় অংশকেই ইসলামী রাস্ট্রের দয়ার উপর ছেড়ে দিতে হয় - কারণ উত্তরাধীকার ছাড়াই সকল দরিদ্র অসহায় মানুষের দ্বায়িত্ব রাস্ট্রের উপর দেয়া হয়েছে।
ইসলামী আইনকে যদি ঘোলাটে বলেন তাহলে তো এর পুরোটাই বদলে ফেলা উচিত। আমি যে টেকনিক্যাল সমস্যার উল্লেখ করলাম তারও জবাব প্রয়োজন। এবং তার একমাত্র উপায় মৃত সন্তানের সম্পদে জীবিত পিতার অংশ বাতিল করা - আপনি কি কোরআনের স্পস্ট নির্দেশের বাইরে গিয়ে সেটা করতে রাজি আছেন।
বংশ পরিচয় রক্ষার জন্য উত্তরাধীকারে সম্পদের অংশ থাকাই কি একমাত্র শর্ত? - পিতার অবর্তমানে দাদাকে অভিভাবক নির্ধারনের মাধ্যমেই কি বংশ পরিচয় রক্ষা করা হয়নি? রাস্ট্র বা প্রতিবেশীকেতো অভিভাবক করা হয়নি।
আর যদি মনে করেন এই বিধানটি কোরআনের মৌল চেতনার বিরোধী এবং ইসলামের প্রাথমিক সময়ে প্রতিষ্ঠিত ছিল না তাহলে প্রমান করুন কবে কাদের দ্বারা এটি সংযোজিত হল আর ইসলামের প্রাথমিক যুগে বিধানটি কেমন ছিল। সেটা প্রমান করতে পারলে নিশ্চয়ই বিবেচনা করা যাবে। কিন্তু ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেয়ার মত কোরআনের পরিষ্কার নির্দেশ অমান্য করে নিজে সামর্থবান/সাবলম্বি না হয়ে বিয়ে করার মাধ্যমে যে সমস্যা তৈরী করা হল তার সমাধানের জন্য ইসলামের প্রতিষ্ঠিত আইন পরিবর্তন কিভাবে সমর্থনযোগ্য হয়?
৩০ শে মে, ২০১২ বিকাল ৫:১১
মাহফুজশান্ত বলেছেন: মৃত সন্তানের সম্পদে জীবিত পিতার অংশ বাতিল করা - আপনি কি কোরআনের স্পস্ট নির্দেশের বাইরে গিয়ে সেটা করতে রাজি আছেন।
না আমি আল-কোরআনের বিধানের বাহিরে কোন কিছুই করতে রাজি নই। আবার আল-কোরআনে যা স্পষ্ট করে বলা নেই সেরূপ কোন আইনও মানতে রাজি নই। আর প্রকৃত ইসলামের আইন বলতে আমি আল-কোরআন ভিত্তিক আইনকেই বুঝি। এর বাহিরে ইসলামের মধ্যে যা কিছু তা ঘোলাটে ইসলামের অন্তর্ভূক্ত। তাই সেই ঘোলা অংশকে সাদা করে নিলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
দরিদ্র অসহায় মানুষই শুধু নয়, বড়লোকদের দায়িত্বও ইসলামি রাষ্ট্রের উপরে ন্যাস্ত। হয়ত এক্ষেত্রে দায়িত্বের ধরনটা কিছুটা ভিন্ন।
তবে দুঃস্থ, নিঃস্ব নাবালকের সম্পূর্ণ দেকভালের দায়িত্ব রাষ্ট্রের এবং এর সাথে সকল দরিদ্র বা বড়লোক মানুষের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্বকে এক করে দেখা ঠিক নয়।
আর যদি মনে করেন এই বিধানটি কোরআনের মৌল চেতনার বিরোধী এবং ইসলামের প্রাথমিক সময়ে প্রতিষ্ঠিত ছিল না তাহলে প্রমান করুন কবে কাদের দ্বারা এটি সংযোজিত হল আর ইসলামের প্রাথমিক যুগে বিধানটি কেমন ছিল।
কোরআনের মৌল চেতনা প্রমেনের জন্য আমার আপনার হাতের কাছে বর্তমান আল-কোরআনই যথেষ্ট। আল-কোরআনের কোন বক্তব্য কি এতিমদের তাদের দাদার বংশধর হিসেবে গ্রহণ করে নেয়াকে এবং মৃত পিতার সম্পত্তির অংশ বুঝিয়ে দিতে নিষেধ করে?
১৫| ৩০ শে মে, ২০১২ বিকাল ৪:৩৯
ডজ বলেছেন: ধন্যবাদ, মাহফুজ ভাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে অনেক দিন ভেবেছি। ভাবাটা ছিলো শুধুই নিজস্ব পদ্ধতিতে। আচ্ছা, এর উত্তর কি এমন হতে পারে-
ইসলাম পারিবারিক বন্ধনকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছে। তাই, এই বন্ধনকে অটুট রাখতেই কৌশল করে ইসলাম এরকম একটি আইন দিয়ে দিয়েছে এতিমদের ব্যাপারে? যাতে করে এতিমদেরকে আত্মীয়রা নিজের সন্তান হিসেবেই মনে করে। আর নিজের সন্তানদের সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়ার সময় এতিম ভাতিজা/ভাতিজীদেরও তারা যাতে একই পরিমাণ সম্পদ বন্টন করে দেয়, সে ব্যাপারটিই ইসলাম এখানে উৎসাহিত করেছে কি?
আরেকটা ব্যাপার, এতিমদের সম্পদের চেয়েও বেশি দরকার অভিভাবকত্ব। বাবা যেভাবে সন্তানদের দিক-নির্দেশনা বা গাইড করেন, তিনি মারা যাবার পর এতিমদের সে ব্যাপারটা আরো বেশি দরকার হয়ে পড়ে। কারণ, সেসময় তারা থাকে অসহায়। এরকম সময়ে তাদের সম্পত্তির চেয়ে দরকার অভিভাবকত্ব। এখন, চাচা-ফুফুরা কেন ভাই-এর ছেলে-মেয়েদের দেখা-শোনা করবেন? হাজার হলেও তো তারা তো তাদের ঔরসে জন্ম হয়নি। আর, তারা যেহেতু নবী-রাসূল বা সালফে-সালেহীন নন, তাদের কাছ থেকে এরকমটা আশা করাও যায়না।
সেহেতু, ইসলাম এরকম ব্যবস্থা করে দিয়েছে কি, যাতে তারা এতিমদের দেখ-ভালোর খরচ তাদের বাবার সম্পত্তি হতে ব্যয় করতে পারেন? আর সেই সাথে এটা যাতে বলতে না পারেন যে, তোমরা আমাদের অনুগ্রহে বড় হয়েছ। ইসলাম তাদের এরকম বলার পথ চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছে এতিমদের সঠিক অভিভাবকত্বের বিনিময় হিসেবে তাদের বাবার সম্পত্তি আত্মীয়দের দিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। ব্যাপারটা এরকম হতে পারে কি?
৩০ শে মে, ২০১২ রাত ১০:১৬
মাহফুজশান্ত বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই-
নিজের সন্তানদের সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়ার সময় এতিম ভাতিজা/ভাতিজীদেরও তারা যাতে একই পরিমাণ সম্পদ বন্টন করে দেয়, সে ব্যাপারটিই ইসলাম এখানে উৎসাহিত করেছে কি?
শুধু উৎসাহিত করলে অনকে সময় কাজ হয় না। তাই এতিমদের সম্পত্তি ঠিকমত বুঝিয়ে দেবার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। তাই ইসলামি আইনও সেটাই হওয়া উচিত।
সেহেতু, ইসলাম এরকম ব্যবস্থা করে দিয়েছে কি, যাতে তারা এতিমদের দেখ-ভালোর খরচ তাদের বাবার সম্পত্তি হতে ব্যয় করতে পারেন? আর সেই সাথে এটা যাতে বলতে না পারেন যে, তোমরা আমাদের অনুগ্রহে বড় হয়েছ। ইসলাম তাদের এরকম বলার পথ চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছে এতিমদের সঠিক অভিভাবকত্বের বিনিময় হিসেবে তাদের বাবার সম্পত্তি আত্মীয়দের দিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। ব্যাপারটা এরকম হতে পারে কি?
মৃত ব্যক্তির সম্পদ থাকলে তা থেকে উত্তরাধিকারী হিসেবে যে যতটুকু পাবার তাকে সেটাই দিতে হবে এবং এ ব্যাপারে তো আমার কোন দ্বিমত নেই। এক্ষেত্রে এতিমের অভিভাবক হিসেবে দাদা/ভাই তাদের অংশ পেতেই পারেন। আমার এই আলোচনাটি মূলত মৃত ব্যক্তির এতিম সন্তানেরা তার দাদার সম্পদ বন্টনের সময় (দাদার বংশধর হিসেবে) তাদের মৃত পিতার অংশটি পাবার অধিকার রাখে কিনা তা নেয়ে। অনুগ্রহ করে পোষ্টটি ভাল করে সম্পূর্ণ আরেকবার পড়লে আলোচনায় সুবিধে হবে।
ধন্যবাদ-
১৬| ৩০ শে মে, ২০১২ বিকাল ৫:৩৫
আমি লিখতে চাই না বলেছেন: কমেন্ট করতে এসে দেখি একেক জন মহা বক্তিতা দিয়ে রাখছে। আমার আর কিছু বলার নাই। একটা কথাই বলতে চাই মাহফুজশান্ত সাহেবের ইসলামী পোস্ট গুলো আমার বেশ ভালোই লাগে।
৩০ শে মে, ২০১২ রাত ১০:০২
মাহফুজশান্ত বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
তবে কেন ভাল লাগে তা বললে আরও ভাল হত। কোন বিষয় ভাল না লাগলেও বলবেন।
১৭| ৩০ শে মে, ২০১২ বিকাল ৫:৫২
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: "আল-কোরআনের কোন বক্তব্য কি এতিমদের তাদের দাদার বংশধর হিসেবে গ্রহণ করে নেয়াকে এবং মৃত পিতার সম্পত্তির অংশ বুঝিয়ে দিতে নিষেধ করে?"
এই প্রশ্নটি গুরুত্বপুর্ণ - নিষেধ নাই এই যুক্তিতে মুবাহ বা ঐচ্ছিক আইন করা যায় যা ইতিমধ্যেই করা হয়েছে। দাদা চাইলে জীবিত অবস্থায় তার এতিম নাতি/নাতনিকে যত খুশি সম্পদ লিখে দিয়ে যেতে পারেন - আর মৃত্যুর পর দিতে চাইলে ৩০% পর্যন্ত ওসিয়ত করে যেতে পারেন। এ'জন্য নতুন আইনের প্রয়োজন নাই।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে 'মৃত পিতার সম্পত্তির অংশ' এই ধারনায়।মৃত পিতার মালিকানায় যে সম্পদ ছিল তার পুরোটাতো এতিম সন্তানরা পাবেই - প্রশ্ন হচ্ছে মৃত পিতা তার জীবিত পিতা(অর্থাৎ এতিম নাতির দাদার) সম্পদের কোন অংশের মালিক ছিলেন কি না?
আপনিই বলুন - পিতা জীবিত থাকতে সন্তান পিতার সম্পদের কোন অংশের মালিক কি না? যদি মালিক হয় তাহলে সেই মালিকানা কবে থেকে কার্যকর ধরা হবে - সন্তানের জন্ম থেকে, না পুর্ণবয়ষ্ক হওয়া থেকে? আর সন্তান যদি সম্পদের মালিক হয় তাহলে পিতা সেই সম্পদ ভোগ করবেন কিভাবে? যে কোন সম্পদের মালিক পুর্ণবয়ষ্ক এবং মানষিক ভাবে সুস্থ হলেতো তার সম্পদ যত দ্রুত সম্ভব তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। তা'ছাড়া মৃত ব্যাক্তির নামে সম্পদ বরাদ্দ দিতে গেলে যে টেকনিক্যাল সমস্যার উদ্ভব হবে তার সমাধানই বা কিভাবে করবেন?
আসলে শুধু ইসলাম নয় বরং বিশ্বের সকল আইনেই সন্তান পিতার সম্পদের মালিক হয় শুধুমাত্র পিতার মৃত্যুর পর - এবং এটাই যৌক্তিক। সুতরাং আপনি যেভাবে ভাবছেন ইসলামী আইন এতিম নাতিকে "মৃত পিতার সম্পত্তির অংশ" থেকে বঞ্চিত করছে বিষয়টা তেমন নয়। যে সম্পদের উপর মালিকানাই প্রতিষ্ঠিত হয়নি তা থেকে বঞ্চিত করার প্রশ্নই ওঠে না।
আমি আগেও বলেছি - এই সমস্যার উৎস এখানে নয়। বরং কোরআন ঘোষিত পরিষ্কার নির্দেশ 'সামর্থবান না হয়ে বিয়ে কর না' এই নীতির লংঘনের কারণেই এ'গুলোর উদ্ভব হয়েছে। তাই রোগ নিরাময়ের উত্তম উপায় হিসেবে রোগের কারণ দুর করতে হবে - প্রতিষ্ঠিত আইনের পরিবর্তন করতে গেলে নতুন জটিলতা তৈরী ছাড়া কোন সমাধান পাওয়া সম্ভব নয়।
৩০ শে মে, ২০১২ রাত ৯:৫৮
মাহফুজশান্ত বলেছেন: আমার প্রশ্ন ছিল-
"আল-কোরআনের কোন বক্তব্য কি এতিমদের তাদের দাদার বংশধর হিসেবে গ্রহণ করে নেয়াকে এবং মৃত পিতার সম্পত্তির অংশ বুঝিয়ে দিতে নিষেধ করে?"
আমার এই প্রশ্নের দুটি অংশ আছে-
১/ আল-কোরআনের কোন বক্তব্য কি এতিমদের তাদের দাদার বংশধর হিসেবে গ্রহণ করে নেয়াকে নিষেধ করে?
২/ আল-কোরআনের কোন বক্তব্য কি এতিমদের তাদের দাদার বংশধর হিসেবে মৃত পিতার সম্পত্তির অংশ বুঝিয়ে দিতে নিষেধ করে?
১ম অংশের জবাব আগে দিন।
আপনি যেভাবে ভাবছেন ইসলামী আইন এতিম নাতিকে "মৃত পিতার সম্পত্তির অংশ" থেকে বঞ্চিত করছে বিষয়টা তেমন নয়। যে সম্পদের উপর মালিকানাই প্রতিষ্ঠিত হয়নি তা থেকে বঞ্চিত করার প্রশ্নই ওঠে না।
(এখানে মৃত পিতার নিজের সম্পত্তি নিয়ে কথা হচ্ছে না। মৃত পিতার পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে কথা হচ্ছে)
ইসলামী আইন অবশ্যই এতিম নাতিকে "মৃত পিতার (পৈত্রিক) সম্পত্তির অংশ" থেকে বঞ্চিত করছে। অন্য ভাইদেরও তো মালিকানা প্রতিষ্ঠিত ছিল না। বন্টনের সময় তারা তো ঠিকই তাদের অংশ পাচ্ছেন। বাধ সাধল খালি মৃত ভাই! দাদার বংশধর এবং মৃত বাবার প্রতিনিধি হিসেবে তার এতিম সন্তানরা কেন সেই ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে?
না, এতিমদের তাদের দাদার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার প্রশ্নই আসে না। (০৪:১১) নং আয়াতের শুরুতেই সেই স্পষ্ট ইংগিত আছে-
(০৪:১১) নং আয়াতের প্রথমাংশে ব্যবহৃত "আওলাদ"- (أَوْلاَدِ - genitive masculine plural noun ) শব্দটির অর্থ সন্তান-সন্ততি/ বংশধর। সম্পত্তি বন্টন সংক্রান্ত মৌলিক বিধান দেবার শুরুতেই এমন একটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যার মাধ্যমে বংশের সকল সদস্যকে সুদৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। রক্ত সম্পর্ক ছিন্ন তো নয়ই, বরং সন্তান-সন্ততিদের মাঝে সুসম্পর্কের অবিচ্ছিন্ন ভিত রচনা করার জন্যই মূলত এরূপ শব্দ চয়ন করা হয়েছে। এটি মূলত পুরুষতুল্য বা পুংলিঙ্গবাচক ও বহুবচন অর্থাৎ এর মাধ্যমে বিশেষভাবে পুত্র সন্তানদের (পুত্র বা পৌত্র বা নাতি ইত্যাদি) বর্তমান থাকার বিষয়টি নির্দেশিত হয়। এই নির্দেশটি যদি শুধুমাত্র যার যার পুত্র সন্তানের জন্যই সীমাবদ্ধ থাকত তাহলে এখানে "আবনা-উ" শব্দটি ব্যবহার করা হত। কিন্তু ক্ষুদ্র গন্ডি পেরিয়ে বংশের অধস্তন হিসেবে সকল পুত্র সন্তান-সন্ততিদের একীভুত করার লক্ষ্যেই এখানে "আওলাদ" শব্দটি সঠিক মাত্রা পেয়েছে। তবে পুত্র- সন্তানদের সাথে নারীতুল্য বা স্ত্রী-লিঙ্গবাচক কন্যা- সন্তান (কন্যা বা পৌত্রী বা নাতনী ইত্যাদি) বর্তমান থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু এককভাবে শুধুমাত্র কন্যা- সন্তানদের বর্তমান থাকার ক্ষেত্রে এই শব্দটি প্রযোজ্য নয়। এরপর আলাদাভাবে "নিসাআন (4:11:11) - nisāan- (only) women - accusative feminine plural indefinite noun - শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নারীদের অংশ নির্ধারনের বিষয়েও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং "আওলাদ/ সন্তান-সন্ততি/ বংশধর" শব্দটি এখানে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এর মাধ্যমে এই ইংগিতই দেয়া হয়েছে যে, মৃত্যু কখনই রক্তসম্পর্কীত নিকটাত্মীয়তার বন্ধনকে ছিন্ন করে দেয়না। সে কারনেই মৃত ব্যক্তির পুত্র ও কন্যারা শুধুমাত্র তাদের মৃত পিতার সম্পদের নয়, বরং এতিম পৌত্র, পৌত্রী, নাতি ও নাতনীরাও তাদের মৃত বাবা ও মায়ের সূত্রে দাদার/ নানার (কাছ খেকে বাবা/ মায়ের অংশ হিসেবে প্রাপ্ত পৈত্রিক) সম্পদের অংশ পাবার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।
মহান আল্লাহতায়ালা ঘোষিত এই নির্দেশকে অমান্য করলেই অসহায়রা আরও অসহায় হবেন। বঞ্চিতরা বঞ্চিতই থেকে যাবেন। শুধু সম্পদ প্রাপ্তিই এখানে বড় কথা নয়। এই অধিকার একটি মানসিক শান্তনা ও স্বীকৃতিও বটে। অঢেল সম্পত্তি থাকা সত্বেও যে পরিবারের এতিম সদস্যরা পদে পদে অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যে আইনের কারনে অন্য ভাইয়ের সন্তানেরা দাদার ভিটার অংশিদার হতে পারছেন বা দাবি করতে পারছেন। সেই একই আইনের কারনে এতিম সন্তানেরা দাদার একটুকরো ভিটার অংশিদার হওয়া তো দূরে থাক, দাবি করার কোন এখতিয়ারও তাদের নেই। টাকা দিয়ে হয়ত এই রকম হাজার টুকরো ভিটা কেনা সম্ভব হবে। কিন্তু তাতে কি সেই একটুকরো ভিটার সমান হতে পারবে? আমার কথাগুলো আবেগময় মনে হলেও এটি চরম সত্য এবং দুঃখজনকও বটে। যারা ভুক্তভোগী- এর মর্ম তারাই বুঝবে।
১৮| ৩১ শে মে, ২০১২ সকাল ১১:৩৬
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: দেখুন আবেগ দিয়ে কিন্তু জীবন চলে না। আপনি যে দৃস্টিভঙ্গি নিয়ে কথাগুলো বলছেন তাতেই কিছু ত্রুটি আছে। দাদার ভিটায় স্থান পাওয়ার যে আবেগ তার সাথে বংশীয় কৌলিন্যের যথেস্ট যোগ আছে। দাদা সম্পদশালী ছিলেন বলেই নাতিকে বংশের মান অনুযায়ী সম্পদশালী হতেই হবে - এটা ইসলামের নীতি নয়।
আচ্ছা আপনাকে একটা প্রশ্ন করি - মানুষের অর্থনৈতিক জীবন মান কিসের ভিত্তিতে নির্ধারিত হওয়া উচিত? নিশ্চয়ই তার নিজের যোগ্যতার ভিত্তিতে। কোন রাজার ছেলে যদি রিকশা ওয়ালা হওয়ার যোগ্য হয় তাহলে তাকে রিকশা ওয়ালার জীবনই মেনে নিতে হবে এবং তার সন্তানরাও রিকশা ওয়ালার সন্তান হিসেবেই পরিচিত হবে - আবার কোন ফকিরের ছেলে যদি রাজা হওয়ার যোগ্য হয় তাহলে তাকে রাজা হওয়ার সুযোগ দিতে হবে এবং তার ছেলেরা রাজার ছেলে হিসেবেই পরিচিত হবে - এই নীতি আপনি মানেন কী না?
একই ভাবে পুর্ণবয়ষ্ক সন্তানের সম্পদে পিতার কোন মালিকানা নাই এবং পুর্নবয়ষ্ক সন্তানেরও পিতার উপর নির্ভরশীল হওয়ার বা প্রচলিত কথায় বিনা মুল্যে বাপের হোটেলে খাওয়ার কোন অধিকার নাই। বরং পুর্ণবয়ষ্ক প্রত্যেক মানুষের আয় ব্যায় সম্পদ সবকিছুর হিসেবই আলাদা। এবং প্রত্যেকের সন্তানরাও তাই পাবে যা তাদের পিতা তাদের জন্য রেখে যাবে। ইসলামের এই মুল নীতি আপনি মানেন কী না?
পিতার উপরে সন্তানের অধিকার শুধুমাত্র পুর্ণবয়ষ্ক হওয়া পর্যন্ত ভরণপোষণ পাওয়া। উত্তরাধিকারের জন্য বিপুল সম্পদ রেখে যাওয়ার জন্য কোন পিতাই বাধ্য নন। ইসলাম যদি এতিম নাতির ভরণ পোষনের ব্যাবস্থা না করত তাহলে সেই সন্তানকে অধিকার বঞ্চিত করা হত - এ'জন্যই ইসলামী আইন দাদাকে এবং দাদার অক্ষমতায় চাচাদের এবং তাদেরও অক্ষমতায় রাস্ট্রকে অভিভাবক নির্ধারণ করেছে যাতে পিতার মৃত্যুর কারণে সন্তান ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়।
উত্তরাধীকারে সম্পদ পাওয়া কোন মৌলিক অধিকার নয় বরং পিতার ঐচ্ছিক অনুদান। পিতা চাইলে তার জীবদ্দশায় সকল সম্পদ খরচ করে যেতে পারেন। যদি তিনি তা না করে সন্তানের জন্য কিছু রেখে যান তখন সেটা বাড়তি পাওনা হিসেবে সন্তানের অধিকারে যায়। সেই সম্পদের ভরসায় বা সেই সম্পদের উপর নির্ভরশীল হয়ে জীবনযাপন করা কখনই যৌক্তিক নয়। এতে বরং এক পর্যায়ে বৃদ্ধ পিতার জীবিত থাকার চেয়ে মরে যাওয়া সন্তানের জন্য কাংক্ষিত হয়ে ওঠে এবং এমন ঘটনাও বিরল নয় যে সন্তানরা সম্পদের দখল পাওয়ার জন্য বৃদ্ধ পিতাকে হত্যা পর্যন্ত করে। এ'থেকে মুক্তির একমাত্র পথ - নিজে উপার্জন করে স্বাবলম্বি হওয়াকেই বেঁচে থাকার স্বাভাবিক পথ হিসেবে মেনে নেয়া।
আমরা স্বাধারনত এটা মানতে পারি না। এবং মানতে পারিনা বলেই অনেক কিছুকে অস্বাভাবিক মনে হয়। আপনি দাদার সম্পদে নাতির অধিকার নিয়ে যখন ভাবছেন তখন একটা বিষেশ অবস্থায় দেখছেন কিছু নাতি তাদের পিতাদের আগে মৃত্যুর কারণে সম্পদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আপাত দৃস্টিতে খন্ডিত ভাবে শুধু এই দিকটি দেখলে কিছুটা অসংগতি মনে হতেই পারে। যেমন কণ্যা সন্তানকে পুত্রের অর্ধেক অংশ দেয়া দেখে অনেকেরই খটকা লাগে। কিন্তু সামগ্রিক ব্যাবস্থাপনা দেখলে বুঝা যায় যে এটাই স্বাভাবিক।
একই ভাবে যদি আপনি সামগ্রিক চিন্তা করেন তাহলে দেখবেন দাদার সম্পদে কোন নাতিরই সরাসরি কোন অংশ নাই। মাঝে আছে পিতা। পিতা সম্পদের অংশ পাওয়ার পর নাতির জন্য যে তা অক্ষত রেখে যাবেই তার কোন নিশ্চয়তা কি আছে? পিতা তার পুরো জীবনে খরচ করার পর যদি কিছু রেখে যায় কেবলমাত্র তখনই সেখানে নাতির অধিকার জন্মায়। আপনার মনে হচ্ছে পিতার মৃত্যুই নাতিদের কম পাওয়ার মুল কারণ - কিন্তু আমি দেখছি মুল কারণ হচ্ছে পিতার ইসলামী নীতি লংঘন করে সামর্থবান না হয়েই বিয়ে করা।
তার পরও আপনি যদি দাদার সম্পদে এতিম নাতির অংশ উত্তরাধীকার আইনের সংশোধনের মাধ্যমে দিতেই চান তাহলেও সেটা টেকনিক্যালি সম্ভব নয়। কারণ আপনি মৃত ব্যাক্তির নামে কোন সম্পদ বরাদ্দ দিতে পারবেন না। আর সরাসরি যদি নাতিদেরকে দাদার বংশধর হিসেবে গ্রহন করেন তাহলে ব্যাপক বৈষম্য তৈরী হবে। ধরুন কোন ব্যাক্তির ৫ ছেলে, তার মধ্যে একজন ৪ ছেলে রেখে মারা গেল। এখন যদি আপনি ঐ চার ছেলেকে দাদার বংশধর হিসেবে সরাসরি ওয়ারিসের অন্তর্ভুক্ত করতে চান তাহলে মোট সম্পদ ৮ ভাগ করে জীবিত ৮ জনকেই দিতে হবে। তাহলে যে ৪ ছেলে বেঁচে আছে তারাও যা পাবে যে মারা গেছে তার প্রত্যেক ছেলে তাই পাবে(মোট চার ভাগ) - এট কি যৌক্তিক?
অথবা যদি আপনি মৃত ছেলের নামে সম্পদ বরাদ্দ দিতে চান তাহলে ছেলের সম্পদে জীবিত পিতার অংশ বাদ দিতে হবে - তা না হলে অসীম চক্র তৈরী হবে যা আগেই ব্যাখ্যা করেছি। আপনি কি কোরআনে পরিষ্কারভাবে ঘোষিত এই অংশ বাদ দিতে পারবেন?
আশা করি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। অবশ্ব মানা না মানা ভিন্ন বিষয়। দুনিয়ার সবাইকে যে সব বিষয়ে একমত হতেই হবে এমন বাধ্যবাধকতা সয়ং আল্লাহও আরোপ করেন নি। তবে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই বিষয়টি উপস্থাপনের জন্য। ফলে বিষয়গুলি নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা /অনুসন্ধান করা হল - এবং ইসলামী নীতিমালার মধ্যেই সমস্যার মুল কারণ ও তার সমাধানও পাওয়া গেল। আমার জন্য এটাই বড় প্রাপ্তি।
এই কমেন্টটাও বেশ দীর্ঘ হয়ে গেল - আশা করি আপনার মুল্যবান সময় ব্যায়ের অপরাধ ক্ষমা করবেন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সত্য সঠিক বিষয় বুঝার তৌফিক দিন। আমীন।
ধন্যবাদ।
৩১ শে মে, ২০১২ বিকাল ৪:৫৭
মাহফুজশান্ত বলেছেন: ভাই আপনি অনেক কথা বলেছেন। আপনার কিছু কিছু কথায় আমি বিস্মিত না হয়ে পারছিনা।
অতিমাত্রায় আবেগ নিশ্চয় ভাল নয়। নিয়ন্ত্রিত আবেগ ও বিবেকের সংমিশ্রণে মানুষ প্রেম-ভালবাসা ভরা সত্য, ন্যায় ও শান্তির সমাজ গড়ে তোলে। প্রকৃত শান্তি ও ন্যায় বিচারের জন্য বিবেক ও আবেগ দুটোরই প্রয়োজন। আর বিবেকহীন কিংবা আবেগহীন মানুষের হৃদয় তো পাথর সম। আর এই টাইপের আবেগহীন অন্ধ মানুষগুলো আল্লাহর বিধানকে না বুঝেই মানুষকে বুক পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে পাথর ছুঁড়ে পিষে মারতে কুন্ঠিত হয়না। কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক- তাদের আবেগহীন অন্তরে তার কোন মূল্য নেই। এই ধরনের আবেগহীন ও সর্বদা ভ্রু-কুঞ্চিত করে রাখা মানুষের সঙ্গ আমি এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করি। আল্লাহতায়ালা যেন তাদের ছায়া থেকেও আমাকে হেফাজত করেন।
আপনি অযথাই যেসব বেদ বাক্য আমাকে শোনালেন- তা আমার কোন কাজেই আসবে না। আমি আল-কোরআনে বিশ্বাসী। যদি আমার বিশ্বাস সম্পর্কে আপনার সন্দেহ থাকে, তাহলে সেটা একান্তই আপনার ব্যাপার।
একই ভাবে যদি আপনি সামগ্রিক চিন্তা করেন তাহলে দেখবেন দাদার সম্পদে কোন নাতিরই সরাসরি কোন অংশ নাই। মাঝে আছে পিতা। পিতা সম্পদের অংশ পাওয়ার পর নাতির জন্য যে তা অক্ষত রেখে যাবেই তার কোন নিশ্চয়তা কি আছে? পিতা তার পুরো জীবনে খরচ করার পর যদি কিছু রেখে যায় কেবলমাত্র তখনই সেখানে নাতির অধিকার জন্মায়। আপনার মনে হচ্ছে পিতার মৃত্যুই নাতিদের কম পাওয়ার মুল কারণ - কিন্তু আমি দেখছি মুল কারণ হচ্ছে পিতার ইসলামী নীতি লংঘন করে সামর্থবান না হয়েই বিয়ে করা।
হায়! আমি এতিমের ন্যায্য অধিকার আদায়ের কথা বলছি- আর আপনি আমার ঘারে বংশীয় কোলিন্য আর সম্পদের প্রতি আকাংখার দোষ চাপিয়ে আমার বক্তব্যকে ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করছেন। আমার বক্তব্যের সাথে এসবের কোন সম্পর্কই নেই। এগুলো সৌদি শেখদের শুনাতে পারলে ভাল হত। মহান আল্লাহতায়ালা সর্বজ্ঞ, তিনি আমার মনের খবর ভাল জানেন।
আপনি বার বার সামর্থবান সামর্থবান- এই গান গেয়েই চলেছেন। ধরুন একজন দিন আনে দিন খায় মানুষ প্রতিদিন যা আয় করেন তাতে তার পরিবারের খাওয়া পড়ার সংস্থান হয়ে যায়। আমাদের দেশে এ ধরনের মানুষের অভাব নেই। আপনার ধারনা ভিন্ন হলে অন্য কথা। কিন্তু এটাই সত্য। সেই মানুষগুলো নিশ্চয় বিয়ে করার অধিকার রাখে। এ ধরনের মানুষের সন্তান সংখ্যাও আল্লাহ দিলে অনেক বিত্তবানদের চাইতে কম নয়। ধরি এই মানুষটির নাম 'আবদুল্লাহ'। তার আরও কয়েকজন ভাই আছেন। অন্য ভাইদের কেউ হয়ত তার চেয়ে বেশি সামর্থ রখেন। এই ভাইদের পিতার যদি কোন সম্পদ না থকে তারপরও কিন্তু তার দেকভালের দায়িত্ব সাধ্যমত সবারই। যেহেতু তিনি সম্পদশালী নন, এই অযুহাতে কেউ কিন্তু তার দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। বরং সম্পদশালী পিতা অপেক্ষা তার জন্য সার্বক্ষণিক দেকভালের প্রয়োজন হবে। একমাত্র আবেগহীন ও স্বার্থপর সন্তানই হয়ত এই দায়িত্ব থেকে গা বাঁচিয়ে চলতে পারে। পিতা জীবিত অবস্থায় একজন সম্পদশালী ভাই 'মিজান' হঠাৎ তার ৩ সন্তান ও স্ত্রী রেখে মারা গেলেন। অন্যান্য ভাইদের সামর্থ কম থাকায় পিতার প্রায় সব খরচই তিনিই মেটাতেন। এতে তার কোন আক্ষেপ ছিল না। বরং নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করতেন। যেহেতু তিনি সম্পদের অধিকারী তাই তার পিতার প্রায় সব খরচ বহন করার কারনে কি পিতা তার মৃত পুত্রের সম্পত্তির অংশ কম পাবেন? নিশ্চয় তিনি তার ১/৬ অংশ পেয়ে যাবেন। অন্যান্য ভাইদের তুলনায় মিজান বেশি দেকভাল ও খরচ করেছেন- এই অযুহাতে পিতার অংশ নিশ্চয় কমে যাবেনা। কারন পিতাকে দেখাশুনা করার বিষয়টি মিজানের দয়া নয়, বরং আল-কোরআনের নির্দেশ ও তার কর্তব্য। এরূপ অনেক ঘটনাই সমাজে ঘটছে।
আবার পিতার যদি সম্পদ বা জমা জমি থাকে তারপরও পিতার প্রতি পুত্রের দায়িত্ব কমে যাবে না। তবে পিতার নিজের সম্পদ থাকায় হয়ত অনেক ক্ষেত্রে তিনি পুত্রদের সহায়তা করতে পারবেন। এই সম্পদশালী পিতার আগে আবদুল্লাহ মৃত্যুবরণ করলে সভাবতই তার সন্তানেরা অসহায় হয়ে যাবে। এখন এই অসহায় অবস্থার জন্য কে দায়ি হবে। তাদের পিতা, নাকি তকদির? কোন আবেগহীন মানুষ হয়ত বলে বসতে পারে- ঐ ব্যাটা আবদুল্লাহ, যার বিয়া করনের সামর্থ নাই, খালি খাইছে আর সন্তান পয়দা কইরা মরছে। কিন্তু তাদের হয়ত জানা নেই যে, প্রকৃত ইসলামি রাষ্ট্রে এই কথা বলার এখতিয়ার নাই। কারন বিয়ে করার মত সামর্থ থাকলেও কারো হাতে গচ্ছিত সম্পদ নাও থাকত পারে। ঠিক তেমনি অনেক সম্পদ অর্জনের পরও যৌন কর্ম করার সামর্থ না থাকলেও বিয়ে করা ঠিক হবে কি? তার মানে সম্পদের সামর্থই সব নয়।
মৃত পুত্রের সন্তান এবং দাদার বংশধর হিসেবে তাদের সাধ্যমতম দেকভাল করার দায়িত্বটাও আল-কোরআনের নির্দেশ। এটিও আল্লাহর একটি পরীক্ষা। সুতরাং তাদের দেকভাল করার অযুহাতে বংশধর হিসেবে মৃত পিতার পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে তাদের হক ক্ষুণ্য হবার কোন কারন থাকতে পারেনা। এরূপ চিন্তা সেই আবেগহীন মগজেই আসতে পারে, যারা এতিমদের প্রতি মহান আল্লাহ কর্তৃক অর্পিত এই মহৎ কর্মকে দয়া ও সম্পদের হিসেবের বাহিরে রাখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। অথচ এতিমদের পাশ কাটিয়ে তাদের হিসেব কড়ায় গন্ডায় আদায় করে নিতে যারা বদ্ধ পরিকর। হায়রে! তাদের আবেগহীন দৃষ্টিতে এটাই মানবতা ও ছকে বাধা মহৎ কর্মের লক্ষণ?
ধরুন কোন ব্যাক্তির (আজিজুল) ৫ ছেলে, তার মধ্যে একজন (আবদুল্লাহ) ৪ ছেলে রেখে মারা গেল। এখন যদি আপনি ঐ চার ছেলেকে দাদার বংশধর হিসেবে সরাসরি ওয়ারিসের অন্তর্ভুক্ত করতে চান তাহলে মোট সম্পদ ৮ ভাগ করে জীবিত ৮ জনকেই দিতে হবে। তাহলে যে ৪ ছেলে বেঁচে আছে তারাও যা পাবে যে মারা গেছে তার প্রত্যেক ছেলে তাই পাবে(মোট চার ভাগ) - এট কি যৌক্তিক?
আমি (আবদুল্রাহর) ৪ ছেলেকে সরাসরি ওয়ারিসের অন্তর্ভুক্ত করার কথা কোথাও বলিনি। আমি বলেছি মৃত পুত্র আবদুল্লাহর যেহেতু সন্তান আছে এবং যারা তাদের দাদার বংশদর, তাই যখনই দাদার সম্পত্তি বন্টন করা হোক না কেন সেই সময় যে সম্পদ থাকবে তা ঐ ব্যক্তির (আজিজুল) ৪ জন জীবিত ও একজন মৃত সন্তানের নামে সমান ভাগ করতে হবে। ৫ ছেলের প্রত্যেকের নামে যদি ৪৮ শতক করে জমি পড়ে, তাহলে মৃত ভাইয়ের নামের এই ৪৮ শতক জমি থেকে স্ত্রী ও মা থাকলে তাদের অংশ দিতে হবে এবং তার ৪ জন এতিম ছেলের (সাবালক হলে) প্রত্যেককে সমান অংশ দিতে হবে। এই সহজ বিষয়টি এত কঠিন ভাববার কোন কারনই থাকতে পারেনা।
ভয় পাবার কোন কারন নেই! আপনি অসীম চক্র তৈরী হবার যে অযুহাত দেখিয়েছেন তা কখনই অসীম হবে না। আবেগ মিশ্রিত ভালবাসা ভরা বিবেকী অন্তরে ভাবতে শিখুন, তাহলে বিষয়টি ন্যায় সঙ্গত, সসীম ও সরলই মনে হবে। তাছাড়া এখন তো কম্পিউটারের যুগ। মগজ দিয়ে এই যন্তটিকে কাজে লাগালে দেখবেন আরও সহজ হয়ে যাবে। তবে শুধুমাত্র আবেহীন কম্পিউটারের হতে ছেড়ে দিলে কখনই ন্যায় বিচার মিলবেনা।
আপনার প্রাপ্তি ও শান্তি যেমনই বা যতটুকুই হোক না কেন- তার জন্য মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
এতিমের প্রতিনিধি এবং জীবনসাথী হিসেবে তাদের অধিকার না মেলা পর্যন্ত আমার শান্তি নেই। একালে মিলবে কিনা জানিনা। পরকালে মহান স্রষ্টার সাথেই বোঝাপরা করতে চাই। আমার এই দাবি অযৌক্তিক, অন্যায় ও আল-কোরআন বিরোধী কিনা- তা সেই মহান সত্বার কাছেই শুনতে চাই। ভুল হয়ে গেলে ক্ষমা চাইব। ক্ষমার অযোগ্য হলে স্রষ্টার দেয়া শাস্তি মাথা পেতে নিতে আমি প্রস্তুত।
ধন্যবাদ-
১৯| ৩১ শে মে, ২০১২ বিকাল ৪:০৪
যাযাবরমন বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
সবগুলো মন্তব্য পড়ে আবার লিখবো।
৩১ শে মে, ২০১২ বিকাল ৫:২৫
মাহফুজশান্ত বলেছেন: ধন্যবাদ ও শুভকামনা।
অপেক্ষায় রইলাম--------
২০| ৩১ শে মে, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৬
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: আপনি আমাকে আবেগহীন বা এতিমের প্রতি কঠোর হিসেবে যেভাবে বর্ণনা করলেন সেটা আমার জন্য কস্টকর। আমি কখনই বলিনি এতিমের প্রতি দ্বায়িত্ব পালন করা যাবে না বা এতিমকে অবহেলা করতে হবে। আমি যা বলেছি যদি আপনি আবেগ আর বংশ পরম্পরায় সম্পদশালী থাকার আকাংক্ষা দুরে রেখে বাস্তবতার নিরিখে বিবেচনা করেন তাহলে এর যৌক্তিকতা অনুধাবন করতে পারবেন - ইনশাআল্লাহ।
আমরা উভয়েই এতিম সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানের চিন্তা করছি - পার্থক্য হচ্ছে আপনি চাচ্ছেন উত্তরাধীকার আইনে পরিবর্তনের মাধ্যমে এটা করতে আর আমি চাচ্ছি ইসলামের পারিবারিক অর্থনৈতিক নীতিমালার পুর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের মাধ্যমে। আমার বক্তব্য হচ্ছে উত্তরাধীকার আইনের পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্যার স্থায়ী ও সঠিক সমাধান সম্ভব নয় যেটা সম্ভব কোরআনের পরিষ্কার নির্দেশ 'সামর্থবান না হয়ে বিয়ে কর না' এই নির্দেশের বাস্তবায়নের মাধ্যমে।
দেখুন, দাদা ও চাচারা যদি হৃদয়বান ও ইমানদার হয় তাহলে কিন্তু এটা কোন সমস্যাই থাকে না। তারা বর্তমান আইনের মধ্যে থেকেই এতিমদের জন্য যত প্রয়োজন তত সম্পদ লিখে দিতে পারে। সমস্যা হচ্ছে দাদা চাচারা যদি হৃদয়বান না হয়। সেক্ষেত্রে উত্তরাধীকার আইনে আপনি যাই রাখুন কোন কাজ হবে না - বর্তমানে উত্তরাধিকার আইনে বোনদের যে অংশ দেয়া হয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা তা পায় না। কারণ ভাইরা বাবার সম্পদের উপর এতটাই নির্ভরশীল থাকে যে বোনদের অংশ দিতে গেলে নিজেদের সংসারই চলে না। কিন্তু আপনি যদি ইসলামের নির্দেশ অনুসারে পিতার সম্পদে নির্ভরশীল থাকা অবৈধ ঘোষণা করেন এবং বিয়ের আগেই স্ত্রী সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের মালিক হওয়া বাধ্যতামুলক করেন তাহলে আর এই সমস্যা থাকে না। সম্পদশালী পিতা যদি বিয়ের আগেই সন্তানকে তার বংশের মর্যাদা অনুসারে সামর্থবান বানানোর জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ লিখে দেয় তাহলে সেই সন্তান মারা গেলেও তার সন্তানরা বিপদে পরবে না।
এ'জন্য বিবাহ রেজিস্ট্রিতে পরিবর্তন আনা যেতে পারে। সেখানে পাত্রের মালিকানাধীন সম্পদের হিসেব উল্লেখ করা বাধ্যতামুলক করা হবে। এবং পাত্রের নিজের মালিকানায় ( পিতা থেকে পাওয়া এবং নিজের উপার্জিত ) যে সম্পদ থাকবে তার ভিত্তিতেই তাকে পাত্রীর পছন্দনীয় হতে হবে।
আরো একটা দিক লক্ষ করুন - যখন কোন লোক এতিম সন্তান রেখে মারা যায় তখন সেই এতিম সন্তানদের তাৎক্ষনিক সাহায্যের প্রয়োজন হয়। দাদা চাচারা যদি ইমানদার ও হৃদয়বান হয় তাহলেতো সমস্যা নাই - কিন্তু তারা যদি তা না হয় তাহলে উত্তরাধীকারে এতিমদের জন্য সম্পদের অংশ থাকলেও তা তাদেরকে তাৎক্ষনিক ভাবে দেয়া হবে না। কারণ দাদা জীবিত থাকতে তো তার সম্পদ বন্টন সম্ভব নয়? অথচ আমার বক্তব্য অনুসারে যদি পুত্রের বিয়ের আগেই সম্পদের বিষয়টা ফয়সালা হয়ে যায় তাহলে দাদা চাচারা হৃদয়বান হোক আর নাই হোক এতিম সন্তানরা তাৎক্ষনিকভাবে পিতার সম্পদের মালিকানা পেয়ে যাবে।
এক কথায় আপনার সমাধান হচ্ছে কোরআনের অস্পস্ট ইঙ্গিত নির্ভর ও ঘটনার পরবর্তীতে কার্যকর(পোস্ট এ্যাকটিভ) আর আমার সমাধান হচ্ছে কোরআনের পরিষ্কার নির্দেশ নির্ভর ঘটনার পুর্বে কার্যকর ( প্রি-এ্যাকটিভ )। আপনার সমাধানটি বাস্তবায়িত না হওয়ার যথেস্ট সম্ভবনা আছে কারণ আমাদের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখি উত্তরাধীকার আইনে থাকলেও তার অনেককিছু বাস্তবায়ন হয় না - আমার সমাধান বাস্তবায়িত না হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই - কারন সম্পদ হস্তান্তরের কঠীন কাজটি পিতার বিয়ে করার আগেই সম্পাদন করে নেয়া হবে।
আপনি মৃত ব্যাক্তির নামে সম্পদ বরাদ্দেরমত অস্বাভাবিক পদ্ধতির প্রস্তাব করছেন এবং আমি যে টেকনিক্যাল সমস্যার উল্লেখ করলাম তার সাধানও দিতে পারেন নি। যে উদাহরণ উল্লেখ করেছেন সেখানে মৃত পিতা শুধুই পুত্র রেখে মারা গেছে, যদি শুধু কন্যা রেখে মারা যায় বা কিছুই না রেখে মারা যায় যাতে কোরআনের স্পস্ট নির্দেশ অনুসারে মৃত সন্তানের সম্পদে জীবিত পিতার অংশ নির্দিস্ট, তখন কি হবে - সেই সমাধানের জন্য আপনাকে নির্বোধ জটিল যন্ত্র কম্পিউটারের দারস্থ হতে হয়েছে। অথচ আমার সমাধানে সেরকম জটিলতার কিছুই নাই।
যাই হোক, শেষ বিচারের দিন আমরা উভয়েই নিশ্চিত ভাবে জানতে পারব কার সমাধানটি অধিকতর সহজ ও আল্লাহর নিকট গ্রহনযোগ্য ছিল।
পরিশেষে শুধু একটি প্রশ্ন করতে চাই - পিতার সম্পদে নির্ভরশীল থেকে বিয়ে করাকে আপনি বৈধ মনে করেন কি না?
০১ লা জুন, ২০১২ রাত ১:০৩
মাহফুজশান্ত বলেছেন: একই কথা বার বার বলতে চাই না।
তাই শেষ থেকে শুরু করছি-
পরিশেষে শুধু একটি প্রশ্ন করতে চাই - পিতার সম্পদে নির্ভরশীল থেকে বিয়ে করাকে আপনি বৈধ মনে করেন কি না?
আপনি অনেক বারই আল-কোরআনের রেফারেন্স টেনে বিয়ে করার সামর্থের কথা বলেছেন। অপেক্ষা করলাম, কিন্তু অবাক হলাম! একটি বারও সূরা ও আয়াত সংখ্যা উল্লেখ করলেন না। এই আয়াতের ঠিক আগের আয়াতে কি বলা আছে সেটাও দেখবার প্রয়োজন অনুভব করলেন না। করবেনই বা কেন- পূর্বসূরিরা যেভাবে মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে- তা তো বেদ বাক্য সম।
..................
এবার দেখুন-
সূরা আন-নূর (মদীনায় অবতীর্ণ)
(২৪:৩২) অর্থ- তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত, তাদের বিয়ে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। যদিও তারা মুখাপেক্ষী/ গরীব হয়, আল্লাহ তাদেরকে লাভবান/ ধনী/ সমৃদ্ধ/ মানোন্নয়ন/ উর্বর/ সচ্ছল করে দেবেন তাঁর মাহাত্ম্য/ উদারতা/ অকৃপণ দান দ্বারা।আল্লাহ উদার/সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ।
(২৪:৩৩) অর্থ- তারা যেন পবিত্র থাকে/ পরহেজ করে যারা বিয়ে করতে পারছে না/ বিয়ের ব্যাপারে সংকল্পবদ্ধ হতে পারছেনা/ ইচ্ছা করতে পারছে না (বিবাহে সামর্থ নয়?), যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাদেরকে লাভবান/ ধনী/ সমৃদ্ধ/ মানোন্নয়ন/ উর্বর/ সচ্ছল করে দেবেন তাঁর মাহাত্ম্য/ উদারতা/ অকৃপণ দান দ্বারা।
...................
(২৪:৩৩) নং আয়াতে যদি শুধুমাত্র আর্থিক সামর্থ অর্জনই মুখ্য বিষয় হত, তাহলে এর ঠিক পূর্বের আয়াতে মুখাপেক্ষি/ গরীব হওয়া সত্বেও তাদের বিয়ে দেবার কথা স্বয়ং আল্লাহতায়ালা বলতেন না। শুধু বলেনই নাই, বিয়ে দিলে/ করলে তিনি নিজের মাহাত্ম্য দ্বারা সেই মুখাপেক্ষী/ গরীবদের অভাব দূর করে সচ্ছলতা দান করার অঙ্গিকারও করেছেন। পরিবারের যে সব পুরুষ ও নারীদের বিয়ের উপযুক্ত হয়েছে, তাদেরকে বিয়ে দেবার জন্য তাদের অভিভাবকের উপরে আল্লাহর পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাই আপনার বা আমার কাছে পছন্দ না হলেও- পিতা বা অভিভাবকের উপরে নির্ভরশীল থাকা অবস্থায় বিয়ে দেয়া যাবেই না, এমনটি ভাবাও আল-কোরআন বিরুদ্ধ। কারন আল্লাহতায়ালা নানা রকম স্বভাব-চরিত্রের মানুষের মধ্যে কাকে যে কিভাবে সৃষ্টি করেছেন, তা তিনিই ভাল জানেন। অনেক সময় দেখা গেছে যে, বিয়ের আগে যারা বাউন্ডুলে ছিল, বিয়ের পরে তারা বেশ সংসারী হয়ে উঠেছেন। এর ব্যতিক্রম থাকলেও তাদের সংখ্যা কমই।
অনেক সময় দেখা যায় আর্থিক সামর্থ থাকা সত্বেও নানা কারনে অনেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। খুতখুতে স্বভাবের কারনে পছন্দ মত মেয়েই খুজে পান না। অনেকে পারিবারিক কারন দেখিয়ে ঝামেলা মুক্ত থাকতে চান। আবার একটা বয়সের পরে অনেকে আতঙ্কে ভোগেন। আবার যৌন প্রতিবন্ধিত্বও একটা কারন হতে পারেন। এ সময়ে তারা যেন অশ্লীল কর্মে জড়িয়ে না যান, তাই তাদেরকে পবিত্র থাকতে বলা হয়েছে যতক্ষণ না আল্লাহতায়ালা তাঁর মাহাত্ম্য/ উদারতা দ্বারা এসব সমস্যার সমাধান করে দেন। সুতরাং আল্লাহতায়ালার ইচ্ছাও একটা বড় বিষয়। এভাবেও আল্লাহতায়ালার তার বান্দাকে পরীক্ষা করেন।
মহান আল্লাহতায়ালা যেন আমদেরকে তাঁর প্রদর্শিত সরল ও সঠিক পথে চলার বুঝ ও শক্তি দেন-
ধন্যবাদ-
২১| ০১ লা জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫৭
যাযাবরমন বলেছেন: জনাব কাঙ্গাল মুরশিদ , আপনি বলেছেন:
পুর্ণবয়ষ্ক সন্তানের সম্পদে পিতার কোন মালিকানা নাই এবং পুর্নবয়ষ্ক সন্তানেরও পিতার উপর নির্ভরশীল হওয়ার বা প্রচলিত কথায় বিনা মুল্যে বাপের হোটেলে খাওয়ার কোন অধিকার নাই। বরং পুর্ণবয়ষ্ক প্রত্যেক মানুষের আয় ব্যায় সম্পদ সবকিছুর হিসেবই আলাদা। এবং প্রত্যেকের সন্তানরাও তাই পাবে যা তাদের পিতা তাদের জন্য রেখে যাবে। ইসলামের এই মুল নীতি আপনি মানেন কী না?
আপনি কি পাগল? না ছাগল? ইসলাম হচ্ছে সেই ধর্ম যেখানে ৪০ ঘর প্রতিবেশির খোজ রাখা ধর্মিয় কর্তব্য; সেখানে আপনি বলছেন অক্ষম পুর্নবয়ষ্ক সন্তানেরও বিনা মুল্যে বাপের হোটেলে খাওয়ার কোন অধিকার নাই! কিছুখন পর বলবেন "বাপেরও ছেলের হোটেলে খাওয়ার অধিকার নাই।
আপনি আরও লিখেছেন:
উত্তরাধীকারে সম্পদ পাওয়া কোন মৌলিক অধিকার নয় বরং পিতার ঐচ্ছিক অনুদান।
একদমই ভুল। বরং উত্তরাধীকারে সম্পদ পাওয়া কোরআনে বর্ননা করা ১টি মৌলিক অধিকার। আপনাকে বুঝতে হবে যে দান করা আর ব্যায় করা এক নয়। আপনি প্রয়োজনে ব্যায় করবেন, তাই বলে আপনার সম্পত্তির ১/৩ এর বেশি দান করতে হলে আপনার উপর যারা নির্ভরশীল তাদের অনুমতি নেয়া ইসলামে বাধ্যতামুলক।
৩য়ত: আপনি শুধু শুধু বিতর্ক করছেন, ইসলামী আইন বলেন আর দেশি আইন বলেন সব মতেই সন্তানের অবর্তমানে নাতী/নাতনী দাদা/নানার সম্পত্তির উত্তরাধীকারি।
ক=দাদা, খ= বাবা, গ,ঘ=নাতী/নাতনী হলে, এবং ক-এর আগে খ মারা গেলে আইন অনুযায়ী ক মারা গেলে, খ উত্তরাধীকার সূত্রে ক-এর থেকে যা পেতো, ক মারা যাওয়ার পর গ/ঘ ক-এর ঐ একই পরিমান সম্পত্তির উত্তরাধীকারি হবে।
এখানে বিতর্কের কিছুই নাই।
০২ রা জুন, ২০১২ রাত ১২:৫৯
মাহফুজশান্ত বলেছেন: ভাই যাযাবরমন,
কষ্ট করে আবারও মন্তব্য করায় আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
কা. মুরশিদ ভাই আলোচনায় না এলে তো এত বিষয় খোলাসা হত না। যদিও তিনি বিভিন্ন প্রসঙ্গ এনেছেন, হয়ত আমাকে বাজিয়ে দেখতে চেয়েছেন। কিন্তু তারপরও তার ধৈর্য্য ও চেষ্টার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তিনি যে ঐ আবেগহীনদের মত নন, তা প্রমাণ হয়ে গেছে। সবাই তো হুবহু এক রকম নয়। তারপরও তিনি আমাদেরই ভাই।
আপনি হয়ত একটু এক্সাইটেট হয়েই তাকে পাগল, ছাগল বলে ফেলেছেন। এটা তো আমার এলাকা। তাই আপনার হয়ে মুরশিদ ভাইয়ের কাছে আমিই ক্ষমা চেয়ে নিলাম।
ধন্যবাদ-
২২| ০১ লা জুন, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৬
যাযাবরমন বলেছেন: না বুঝে থাকলে ১ টা প্রশ্নের জবাব দিন।
"ক" জমিদার।
"খ" কয়ের একমাত্র সন্তান, ছেলে।
"খ" বিয়ে করল, তার এক ছেলে হল, "গ"।
দুর্ঘটনায় "খ" মারা গেলো। এরপর "গ"কে তার দাদা "ক" প্রতিপালন আরম্ভ করল।
২ বছর পর যখন "গ" এর বয়স ১৭ তখন আরেক দুর্ঘটনায় "ক" মারা গেলো।
এখন "ক" -এর জমিদারীর মালিক কে হবে?
০২ রা জুন, ২০১২ রাত ১২:৪৩
মাহফুজশান্ত বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
প্রশ্নটি যদি এ রকম হয়-
"ক" এর ২ জন সন্তান খ-১ ও খ-২ থাকলে এবং খ-১ মারা গেলে কি হবে?
খ-২ এর বর্তমানে খ-১ এর ছেলে "গ" তার দাদার বংশধর হিসেবে কি কিছুই পাবার অধিকার রাখেনা?
খ-২ জীবিত। তাই খ-১ মৃত বিধায় তার পৈত্রিক সম্পত্তির অংশটি দাদার বংশধর হিসেবে (যখনই সম্পদ বন্টন করা হোক না কেন) "গ" কে দেয়ার ব্যাপারে আল-কোরআনে আদৌ কোন নিষেধাজ্ঞা আছে কি?
মৃত খ-১ এর রেখে যাওয়া বা ত্যাগ করে যাওয়া সম্পদ বলতে যে শুধুমাত্র তার নিজস্ব অর্জিত সম্পদই হতে হবে- আল-কোরআনে তো এমন কোন ইংগিত নেই। পৈত্রিক সম্পত্তির অংশটিও তো তার রেখে যাওয়া সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ করে তার সন্তান থাকলে দাদার ভবিষ্যত বংশধর হিসেবে তারাও নিশ্চয় তাদের পিতার পৈত্রিক সম্পত্তির অংশি (যখনই বন্টন করা হোক না কেন) পাবার অধিকার রাখে।
যেখানে আল-কোরআনে আল্লাহতায়ালা স্পষ্ট হুশিয়ার করে দিয়ে বলছেন-
(০৪:১০) অর্থ- যারা এতিমদের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং সত্ত্বরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।
সুতরাং দাদার সম্পত্তি যখনই বন্টন করা হোক না কেন, সে সময় আন্দাজের উপরে ভর করে দাদার ভবিষ্যত বংশধর হিসেবে এতিমদেরকে তাদের মৃত পিতার অংশটি থেকে বঞ্চিত করা কি আগুন নিয়ে খেলা করার সামিল নয়?
আবারও ধন্যবাদ-
২৩| ০২ রা জুন, ২০১২ দুপুর ১২:৫২
শিকদার বলেছেন: পিপিলিকার পাখা গজায় মরিবারই তরে, এদেরও একই অবস্থা।
নারী নীতির সময় যেমন হয়েছে এবং দেখেছেনই তো বিবাহ আইন করা নিয়ে কেমন রিভার্স নিয়েছে। এই রকমই হবে।
বাতেল বেশিদিন টিকে না।
০২ রা জুন, ২০১২ বিকাল ৩:১০
মাহফুজশান্ত বলেছেন: ভাই, কাদের কি অবস্থা, কাকে বললেন, কেন বললেন?
একটু খুলে বললে জবাব দেতে পারতাম।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ-
২৪| ০২ রা জুন, ২০১২ দুপুর ২:৫০
মেলবোর্ন বলেছেন: আলোচনা সবসময়ই ভালকিছু বের করে নিয়ে আসে শুধু দরকার সদিচ্ছা আর আল্লাহর নেয়ামত। এমিভাবে আমরা সবাই যদি ইসলাম কে বোঝার চেস্টা করি তবে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আমাদের কে সঠিক পথ দেখাবেন যেমন টি তিনি বলেছেন
সুরা বাকারা আয়াত ২
ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ
এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য,
এবং সুরা ফাতিহা আয়াত ৬-৭: اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ
আমাদেরকে সরল পথ দেখাও,
صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ
সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।
০২ রা জুন, ২০১২ বিকাল ৩:১৩
মাহফুজশান্ত বলেছেন: আলোচনা সবসময়ই ভালকিছু বের করে নিয়ে আসে। শুধু দরকার সদিচ্ছা আর আল্লাহর নেয়ামত/রহমত-
সহমত ও ধন্যবাদ-
২৫| ০২ রা জুন, ২০১২ বিকাল ৪:১৮
বিভ্রান্ত_পথিক বলেছেন: আমি সব সময়ই আপনার লেখার অপেক্ষায় থাকি।অতি গুরুতপুর্ন বিষয় নিয়ে লেখার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
তবে একটা লেখা নিয়ে যখন আলোচনা সমালোচনা হয় তখন লেখার বিশয়টা আরও বিশুদ্ধ হয় কিছু ভুলত্রুতি অথবা পাঠকের মনে কোন প্রশ্ন থাকলে তা দূর হয়ে যায়।
সে হিসাবে কাঙ্গাল মুরশিদ ভাইকেও ধন্যবাদ জানাই ওনার জ্ঞানগর্ভ সমালোচনার জন্য।
পরিশেষে যাযাবরমন ভাইয়ের ৪২ নং মন্তব্বের জন্য ধন্যবাদ কারন এতে সহজেই সমস্যা হয়ে যায়।
হে আল্লাহ্ আমাদের ক্ষমা করুন এবং সঠিক পথে পরিচালিত করুন।আমীন।
০২ রা জুন, ২০১২ রাত ৯:২২
মাহফুজশান্ত বলেছেন: পড়ার ও মন্তব্যের জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ-
২৬| ০৩ রা জুন, ২০১২ দুপুর ১:৫৫
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: আপনি আমার কাছ থেকে কোরআনের আয়াত নম্বর চাইলেন - রীতিমত আহত বোধ করলাম। আপনার কি ধারণা আমি নিজে থেকে একটা কিছু কোরআনের নামে চালিয়ে দিয়েছি? আপনার কি মনে হয় আমি আগের আয়াতটি পড়ি নি?
আপনি নির্দেশগুলি মিলিয়ে দেখুন - ১. তোমাদের সন্তানদের বিয়ে দাও ২. সামর্থ না থাকলে বিয়ে কর না। ৩. স্বাধীন নারীকে বিয়ের সামর্থ না থাকলে মুসলিম ক্রিতদাসী বিয়ে কর। এই নির্দেশগুলি একত্রে দেখে আপনার কিভাবে মনে হল যে পিতার সম্পদে নির্ভরশীল থেকে বিয়ে করার অনুমতি দেয়া হয়েছে? যদি তাই হত তাহলে ২ ও ৩ নং নির্দেশের কী প্রয়োজন ছিল?
সন্তানদের বিয়ে সংক্রান্ত এই নির্দেশগুলি স্বাধারণভাবে ধনী গরিব সবার উপরে প্রযোজ্য। যখন এই নির্দেশ একজন গরিব ব্যাক্তিকে দেয়া হয় তখন তার অর্থ হয় পুত্রকে একটা কাজের ব্যাবস্থা করে তারপর তার আয়ের সামর্থ অনুসারে বিয়ে দাও, আল্লাহ সেই পরিশ্রমে বরকত দেবেন। তা না হলে যার নিজেরই নুন আনতে পান্তা ফুরায় সে ছেলে বিয়ে দিয়ে ছেলের বৌকে খাওয়াবে কি আর নাতি/নাতনিদেরইবা খাওয়াবে কি? একই ভাবে এই নির্দেশ যখন ধনীকে দেয়া হয় তখনও তার অর্থ হয় পুত্রকে সম্পদশালী বানিয়ে তারপর বিয়ে দাও। যাতে সে তার সংসারের ব্যাপারে স্বাবলম্বী হতে পারে। তা না হলে একটি আদেশ মানা হলেও অন্যটি অমান্য করা হবে।
এই প্রাকটিসটা আগের দিনে দেখা যেত - যা আমি আগেও উল্লেখ করেছি। তখনকার দিনে লেখা-পড়ার তেমন প্রচলন ছিল না বলে মুখে মুখে যাকে যা দেয়া হত সেটা তারই হয়ে যেত। তাই কৃষক পরিবারের সন্তান বিয়ের আগেই এক খন্ড জমি পেত, ব্যাবসায়ী পরিবারের সন্তান পেত কিছু পুঁজি। ফলে তারা কোরআনের নির্দেশ মেনে সামর্থবান হয়েই বিয়ে করত। বর্তমানে দলিল-দস্তাবেজের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় আমাদের এই কাজটাই দলীলের মাধ্যমে করতে হবে। তাহলেই আর সমস্যা তৈরীও হবে না, কৃত্রিম সমাধানের জন্য কোরআনের শাব্দিক অর্থের ইঙ্গিত নিয়েও গবেষণা করতে হবে না।
আপনার প্রস্তাবনার আরো একটি দুর্বল দিক দেখছি - পিতার সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রে পুত্রদের সাথে নাতিদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আপনার একমাত্র দলিল 'আওলাদ' শব্দের অর্থ। ইসলামী উত্তরাধীকার আইনে এই শব্দের অর্থ নেয়া হয়েছে জীবিত পুত্রগন - আর আপনি বলছেন এর অর্থ বংশধর। যদি এর অর্থ বংশধর হয় তাহলে শুধুমাত্র মৃত পুত্রের সন্তানরাই এর অন্তর্ভুক্ত কিভাবে হবে - জীবিত পুত্রের সন্তানরা কী দোষ করল? এমনকি যদি কোন পুত্রের নাতি (অর্থাৎ সম্পদ রেখে মারা যাওয়া ব্যাক্তির পুতি বা চতুর্থ প্রজন্ম) থাকে তাহলে সেও তো ঐ ব্যাক্তির বংশধর। তাহলে আপনার বক্তব্য অনুসারে কোন ব্যাক্তির মৃত্যুর পর তার বংশধরদের মধ্যে সম্পদ বন্টনের নির্দেশ থাকলে সকল পুত্র, কন্যা, নাতি, নাতনি, পুতি, পুতনি সহ সবাইকেই হিসেবে আনতে হবে এবং নির্দেশ অনুসারে সকল পুরুষ সদস্যকে নারী সদস্যদের দ্বিগুন হারে অংশ দিতে হবে। কে পুত্র, কে নাতি বা কে পুতি তার মধ্যে পার্থক্য কিভাবে করবেন? বংশধরতো সবাই।
আপনার আরো একটি স্ববিরোধীতা দেখুন: "আল্লাহতায়ালা তাঁর মাহাত্ম্য/ উদারতা দ্বারা এসব সমস্যার সমাধান করে দেন।" অর্থাৎ আল্লাহর উপর ভরসা করে নিজে স্বাবলম্বী না হয়েও বাপের উপর নির্ভরশীল থেকে বিয়ে করা আপনি বৈধ মানছেন - অথচ সেই আল্লাহর ভরসায় এতিমদের ছেড়ে দিতে রাজি নন। জোর করে কোরআনের শাব্দিক অর্থের ভুল ইঙ্গীতের ভিত্তিতে হলেও দাদার সম্পদে তাদের অংশ দিতেই হবে। এই স-বিরোধীতার উৎস কি? আপনি সমস্যার কারণ দুর না করে সমস্যা হওয়ার পর জোর করে তার সমাধানের চেস্টা কেন করছেন? আমার আশংকা এর উৎস হচ্ছে নিজে পরিশ্রম না করে বংশানুক্রমে সম্পদশালী থাকার অনৈতিক আকাংক্ষা - অথচ দুনিয়ার নিয়ম হচ্ছে 'এক পুরুষে করে ধন, এক পুরুষে খায়, আর এক পুরুষ এসে দেখে খাওয়ার কিছু নাই' অথবা 'সকাল বেলা আমীর রে ভাই, ফকির সন্ধা বেলা'। অর্থাৎ অর্থনৈতিক উত্থান-পতন একটি অবধারিত স্বাবাবিক ব্যাপার। একে স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে পিতৃপুরুষের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার চেস্টা করাই উত্তম। এটাই ছিল ইসলামের অন্যতম মৌলিক চেতনা যার অনুসরণের মাধ্যমে পাশ্চত্য সমাজ অর্থনৈতিক ভাবে প্রচুর উন্নতি করেছে। এটাই নির্মম পরিহাস যে আমাদের অধিকংশ উত্তম নীতিমালা অনুধাবনের মাধ্যমে অন্যরা উন্নতি করছে অথচ আমরা সেইসব সুমহান নীতিমালা ভুলে গিয়ে সমস্যা তৈরী করি আর কোরআনের শাব্দিক অর্থের মধ্যে ইঙ্গিত খোঁজার জন্য গবেষণা করি!!
@যাযাবর মন: আপনি আবার জমিদারীর হিসেব নিয়ে আসলেন। আগে বলুন বংশানুক্রমিক জমিদারী বা রাজতন্ত্র ইসলামে বৈধ কি না?
আমি আগেও বলেছি হৃদয়বান ইমানদার দাদা চাচাদের নিয়ে আমাদের কোন সমস্যা নাই। তারা প্রয়োজনীয় সম্পদ(এমনকি অংশ হিসেবে প্রাপ্য সম্পদের চেয়ে বেশী প্রয়োজন হলেও) এতিমদের নামে লিখে দিতেই পারেন এবং হাজার বছর ধরে তার তা করছেনও। আমাদের সমস্যা হচ্ছে হৃদয়হীন দাদা - চাচাদের নিয়ে। যারা এতিমের প্রতি দ্বায়িত্ব হিসেবে ভরণ পোষণ দিতেই রাজি নয় - আপনি কিভাবে আশা করেন যে উত্তরাধীকার আইনে অংশ দিলেই তা তারা ঠিকমত দিয়ে দেবে? আমিতো বরং আশংকা করি উত্তরাধীকারে অংশ থাকলে সেই অংশ না দেয়ার জন্য ঐ পাষন্ড চাচারা দুর্বল এতিমদের ভাতিজা হিসেবে পরিচয়ই দেবে না। পরিচয় দিলেও তাৎক্ষনিক ভাবে কোন সাহায্য করবে না বরং বলবে 'তোমাদেরতো উত্তরাধীকারে অংশ আছেই, দাদা মরুক তার পর এসে অংশ নিয়ে যেও'। এমনকি স্বার্থের দ্বন্দের করণে ঐ এতিমদের প্রাণ বিপন্ন হওয়াও বিচিত্র নয়। একটা প্রবাদ আছে 'হরিনের মাংশই তার প্রানের বড় শত্রু'। এ'জন্যই আল্লাহ এই সমস্যার সমাধান উত্তরাধীকার আইনের মাধ্যমে করেন নি। আর এ'জন্যই আপনি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম দিকে এই সমস্যার কোন উল্লেখও পাবেন না। প্রথমদিকের উন্নত ইমানদার মুসলমানগন ইসলামের পারিবারিক অর্থনৈতিক নীতিমালা অনুসরণ করতেন বলেই এই সমস্যার উদ্ভব হয় নি। অন্যথায় কিছু হাদীস অবশ্বই পাওয়া যেত।
তাই আমার আশংকা হচ্ছে আপনারা এতিমের উপকার করতে গিয়ে তাদেরকে আরো বিপদেই ফেলে দিচ্ছেন। যে সমস্যার সমাধান ইসলাম দিয়ে গেছে হাজার বছর আগে শুধুমাত্র বুঝতে না পারার কারনে সেই সমস্যার নিজেদেরমত সমাধান করতে গেলে তাতে জটিলতা বৃদ্ধি পওয়াই স্বাভাবিক - কারণ ইসলাম তারাই ভাল বুঝতেন যারা রাসুল(স.) এর সান্নিদ্ধে থেকে প্রত্যক্ষভাবে শিখেছিলেন। আজকে হাজার বছর পরে তাদের চেয়ে ভাল ইসলামী চেতনা উদ্ভাবন করা কিভাবে সম্ভব?
তার পরও আপনা প্রচেস্টাকে আমি সমর্থন করি। কারণ গবেষনার ফল যদি ভুল হয় তার জন্য এক সওয়াব আর সঠিক হলে দ্বিগুন। সুতরাং কিছু না করার চেয়ে চিন্তা গবেষণা চালিয়ে যাওয়া উত্তম।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তার দ্বীনের চেতনা সঠিক ভাবে অনুধাবনের তওফিক দিন - আমীন।
০৪ ঠা জুন, ২০১২ রাত ১২:৪২
মাহফুজশান্ত বলেছেন: আবারও আসার জন্য স্বাগতম-
সূরা ও আয়াত নম্বর উল্লেখ না করে আল-কোরআনের কোন বক্তব্য কোড করা উচিত নয়। এটি থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। কেননা যে মহান স্রষ্টার বাণী উল্লেখ করা হচ্ছে তা স্পষ্ট করে বলাই বিশ্বাসী মানুষের কাজ। তাই আমি বলেছি, (আপনি অনেক বারই আল-কোরআনের রেফারেন্স টেনে বিয়ে করার সামর্থের কথা বলেছেন। অপেক্ষা করলাম, কিন্তু অবাক হলাম! একটি বারও সূরা ও আয়াত সংখ্যা উল্লেখ করলেন না।) যাদের বই বা লেখায় আল-কোরআনের সূরা ও আয়াত সংখ্যা স্পষ্ট করে উল্লেখ থাকে না, তিনি যত বড় জ্ঞানী বা বুজুর্গ ব্যক্তি হোক না কেন, আমি তাদের বক্তব্যের ব্যাপারে সাবধান থাকি। একজন মুসলিম হিসেবে অপর একজন মুসলিম ভাইয়ের প্রতি এটি একটি পরামর্শ বা সাবধানতা অবলম্বনের উপদেশও বলতে পারেন। আমার মনে হয় এ ব্যাপারে আমাদের সবারই সতর্ক হওয়া চাই।
আবার ভাল করে দেখুন-
...........................
সূরা আন-নূর (মদীনায় অবতীর্ণ)
(২৪:৩২) অর্থ- তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত, তাদের বিয়ে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। যদিও তারা মুখাপেক্ষী/ গরীব হয়, আল্লাহ তাদেরকে লাভবান/ ধনী/ সমৃদ্ধ/ মানোন্নয়ন/ উর্বর/ সচ্ছল করে দেবেন তাঁর মাহাত্ম্য/ উদারতা/ অকৃপণ দান দ্বারা।আল্লাহ উদার/সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ।
(২৪:৩৩) অর্থ- তারা যেন পবিত্র থাকে/ পরহেজ করে যারা বিয়ে করতে পারছে না/ বিয়ের ব্যাপারে সংকল্পবদ্ধ হতে পারছেনা/ ইচ্ছা করতে পারছে না (বিবাহে সামর্থ নয়?), যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাদেরকে লাভবান/ ধনী/ সমৃদ্ধ/ মানোন্নয়ন/ উর্বর/ সচ্ছল করে দেবেন তাঁর মাহাত্ম্য/ উদারতা/ অকৃপণ দান দ্বারা।
........................
২. সামর্থ না থাকলে বিয়ে কর না-
(২৪:৩২) বা (২৪:৩৩) নং আয়াতে এরূপ কোন স্পষ্ট নির্দেশই নেই।
অনুগ্রহ করে নিচের অনুবাদগুলোর প্রতি লক্ষ্য করুন-
024.033
PICKTHAL: And let those who cannot find a match keep chaste till Allah give them independence by His grace. And such of your slaves as seek a writing (of emancipation), write it for them if ye are aware of aught of good in them, and bestow upon them of the wealth of Allah which He hath bestowed upon you. Force not your slave-girls to whoredom that ye may seek enjoyment of the life of the world, if they would preserve their chastity. And if one force them, then (unto them), after their compulsion, lo! Allah will be Forgiving, Merciful.
SHAKIR: And let those who do not find the means to marry keep chaste until Allah makes them free from want out of His grace. And (as for) those who ask for a writing from among those whom your right hands possess, give them the writing if you know any good in them, and give them of the wealth of Allah which He has given you; and do not compel your slave girls to prostitution, when they desire to keep chaste, in order to seek the frail good of this world's life; and whoever compels them, then surely after their compulsion Allah is Forgiving, Merciful.
Sahih International: But let them who find not (the means for) marriage abstain (from sexual relations) until Allah enriches them from His bounty. And those who seek a contract [for eventual emancipation] from among whom your right hands possess - then make a contract with them if you know there is within them goodness and give them from the wealth of Allah which He has given you. And do not compel your slave girls to prostitution, if they desire chastity, to seek [thereby] the temporary interests of worldly life. And if someone should compel them, then indeed, Allah is [to them], after their compulsion, Forgiving and Merciful.
আর ডা জহুরুল হকের অনুবাদে তো বলা হয়েছে- "আর যারা বিবাহের পাত্রপাত্রী খোঁজে পায় না"
এই অনুবাদগুলো থেকেও বোঝা যায় যে, আর্থিকভাবে সামর্থবান না হলে যে বিয়ে দেয়া/ করা যাবেই না, এখানে এমন কোন স্পষ্ট বক্তব্য দেয়া হয় নাই। অভাব দূর করে দেয়া/ সামর্থবান করে দেয়া/ মানোন্নয়ন/ উর্বর/ লাভবান করে দেবার কথা বলতে এখানে শুধুমাত্র আর্থিক অভাব দূর করার কথাই বোঝানো হয়নি। মানুষের আরও অনেক কিছুরই অভাব থাকতে পারে। যেমন- ইচ্ছার অভাব, সিদ্ধান্ত নেবার মত মনোবলের অভাব, যৌন কর্মে সক্ষমতার অভাব ইত্যাদি এবং যা মহান আল্লাহর ইচ্ছা ও সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভরশীল বটে।
কেউ মুখাপেক্ষী/ গরীব হলে অর্থাৎ আর্থিকভাবে সচ্ছল/ সামর্থবান না হলে যে তাকে বিয়ে দেয়া যাবেই না (২৪:৩৩) নং আয়াতে এরূপ কোন ইংগিতই নেই। বরং (২৪:৩২) নং আয়াতের বক্তব্য অনুসারে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, বিয়ের বয়স হলে এবং বুদ্ধি বিবেচনার উন্মেষ ঘটলেই কেউ মুখাপেক্ষী/ গরীব হওয়া সত্বেও অর্থাৎ তার আর্থিক সামর্থ/ সচ্ছলতা না থাকা সত্বেও তাকে বিয়ে দেবার জন্য অভিভাবকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখানে তো নয়ই, আর্থিক সঙ্গতি না থাকলে বিয়ে দেয়া যাবেই না, অন্য কোন আয়াতেই এ ধরনের কথা বলা হয় নাই। বরং এক্ষেত্রে সামর্থ অনুসারে পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের ইংগিত দেয়া হয়েছে। যদি শুধুমাত্র আর্থিক অসচ্ছলতা বিয়ে করার পথে কোন বাধা হত তাহলে তো দরিদ্র সমাজে বিয়ে করা/ দেয়া একটা বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়াত। আপনার বা আমার মনে খটকা থাকলেও এবং আল্লাহতায়ালার ইচ্ছায় আমরা যথেষ্ট সচ্ছল হওয়ার পরই বিয়ে করার সামর্থ লাভ করলেও- মুখাপেক্ষী বা গরীব হওয়া সত্বেও কেন বিয়ে দেবার/ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে মহান আল্লাহতায়লাই তার প্রকৃত কারন জানেন। আমি যতটুকু বুঝি সেই অনুসারে আপনার ৩৮ নং মন্তব্যের জবাবে সম্ভব্য কয়েকটি কারন তুলে ধরেছি। আমি এভাবে বিশ্বাস করি বলেই আল্লাহতায়ালার এই স্পষ্ট নির্দেশকে অস্বীকার করার সাহস আমার নেই। স্পষ্ট করে তুলে ধরার পরও আপনি যদি মানতে না চান, সেটা আপনার বিবেচনা।
"আল্লাহতায়ালা তাঁর মাহাত্ম্য/ উদারতা দ্বারা এসব সমস্যার সমাধান করে দেন।" অর্থাৎ আল্লাহর উপর ভরসা করে নিজে স্বাবলম্বী না হয়েও বাপের উপর নির্ভরশীল থেকে বিয়ে করা আপনি বৈধ মানছেন - অথচ সেই আল্লাহর ভরসায় এতিমদের ছেড়ে দিতে রাজি নন।
ভাই, স্বয়ং আল্লাহতায়ালা যে বিষয়ে সমাধান দেবার জন্য স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন, তা আপনি না মানলে তো করার কিছু নাই। সেটা আপনার অভিরুচি। তবে মেনে নেয়াই বুদ্ধিমান ও বিশ্বাসীর পরিচয় বহন করে। এতিমদের ছেড়ে দেয়া বা না দেয়া নিযে আমার মোটেই মাথা ব্যথা নেই। স্বয়ং আল্লাহতায়ালাই তো স্পষ্ট বলেছেন-
সূরা আন নিসা (মদীনায় অবতীর্ণ)
(০৪:০২) অর্থ- এতিমদেরকে তাদের সম্পদ বুঝিয়ে দাও। খারাপ মালামালের সাথে ভালো মালামালের অদল-বদল করো না। আর তাদের ধন-সম্পদ নিজেদের ধন-সম্পদের সাথে সংমিশ্রিত করে তা গ্রাস করো না। নিশ্চয় এটা বড়ই মন্দ কাজ।
(০৪:০৫) অর্থ- আর যে সম্পদকে আল্লাহ তোমাদের জীবন-যাত্রার অবলম্বন করেছেন, তা অর্বাচীনদের হাতে তুলে দিও না। বরং তা থেকে তাদেরকে খাওয়াও, পরাও এবং তাদেরকে সান্তনার বানী শোনাও।
(০৪:০৬) অর্থ- আর এতিমদের প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখবে, যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের বয়সে পৌঁছে। যদি তাদের মধ্যে বুদ্ধি-বিবেচনার উন্মেষ আঁচ করতে পার, তবে তাদের সম্পদ তাদের হাতে অর্পন করতে পার। এতিমের মাল প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করো না বা তারা বড় হয়ে যাবে মনে করে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলো না। যারা স্বচ্ছল তারা অবশ্যই এতিমের মাল খরচ করা থেকে বিরত থাকবে। আর যে অভাবগ্রস্ত সে সঙ্গত পরিমাণ খেতে পারে। যখন তাদের হাতে তাদের সম্পদ প্রত্যার্পণ কর, তখন সাক্ষী রাখবে। অবশ্য আল্লাহই হিসাব নেয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট।
(০৪:০৮) অর্থ- সম্পতি বন্টনের সময় যখন আত্নীয়-স্বজন, এতিম ও অভাবগ্রস্ত মানুষ উপস্থিত হয়, তখন তা থেকে তাদের কিছু খাইয়ে দাও এবং তাদের সাথে কিছু সদালাপ করো।
(০৪:০৯) অর্থ- আর তাদের তেমনি ভয় করা উচিত, যদি তারা নিজেদের পেছনে অসহায় সন্তান-সন্ততি ছেড়ে গেলে তাদের জন্যে যেমন আশঙ্কা করত; সুতরাং তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং সংগত কথা বলে।
(০৪:১০) অর্থ- যারা এতিমদের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং সত্ত্বরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।
এতিম সম্পর্কে এত স্পষ্ট নির্দেশ দেখার ও জানার পরও যদি তাদেরকে নিয়ে স্বার্থের দন্দ শুরু হয় এবং বিশ্বাসী হওয়া সত্বেও কেউ তাদেরকে আল্লাহর রস্তে ছেড়ে দিতে চান, তাদের প্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করেন, ব্যবসার ফাঁদ পেতে বসেন- তাহলে তো তারা সেই মহান স্রষ্টার নির্দেশকেই অমান্য করছেন। এতিমের দুর্বলতার সুযোগে যে তাদের প্রতি অন্যায়-অবিচার ও ঠকানোর চেষ্টা করা হতে পারে তা আল্লাহতায়ালা জানেন। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তাদের প্রতি যেন কোনরূপ অবহেলা না করা হয় সেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাই কার ব্যপারে কতটা গুরুত্ব দিতে হবে এবং কাদেরকে তাদের নিজেদের ভরসায় ছেড়ে দেয়াই লাভজনক, তা যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিই ভাল জানেন। সুতরাং এর ব্যতিক্রম করা বা ভাবা বিশ্বাসীদের জন্য শোভা পায় না। তাই বয়ঃপ্রাপ্ত পাত্র-পাত্রী রাজি থাকলে আর্থিকভাবে অসচ্ছল থাকা সত্বেও আমি তাদের বিয়ের পক্ষেই আছি। প্রয়োজনে বিয়ের পর তাদের আয়ের সংস্থান করার বিষয়ে সাধ্যমত সাহায্য করতে আমার কোন আপত্তি নেই। আর এতিমদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের ব্যাপারে আমি তাদের পাশেই থাকতে চাই।
আপনার প্রস্তাবনার আরো একটি দুর্বল দিক দেখছি - পিতার সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রে পুত্রদের সাথে নাতিদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আপনার একমাত্র দলিল 'আওলাদ' শব্দের অর্থ। ইসলামী উত্তরাধীকার আইনে এই শব্দের অর্থ নেয়া হয়েছে জীবিত পুত্রগন - আর আপনি বলছেন এর অর্থ বংশধর। যদি এর অর্থ বংশধর হয় তাহলে শুধুমাত্র মৃত পুত্রের সন্তানরাই এর অন্তর্ভুক্ত কিভাবে হবে - জীবিত পুত্রের সন্তানরা কী দোষ করল?
বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক। কারন জীবিত পুত্র নিজেই উত্তরাধিকারী হিসেবে যে পৈত্রিক সম্পত্তি পাবেন তা তার মৃত্যুর পর তার সন্তানদের কাছেই তো যাবে। কিন্তু মৃত পুত্রের সন্তানদের তো সেই সুযোগ থাকছে না। ফলে তারা চিরতরে বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে। তাই (০৪: ০৯, ০১০) নং আয়াতের বক্তব্য অনুসারে আমি মৃত পুত্রের সুত্রে দাদার বংশধর হিসেবে এতিম পোত্র-পৌত্রিদেরকে তাদের মৃত পিতার অংশের পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে ( তা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন) বঞ্চিত করাকে সমীচিন মনে করি না। আল্লাহতায়ালার নির্দেশও তাই। কাজেই গরপরতাভাবে জীবিত ও মৃত সব পুত্রের বংশধরদের এক পাল্লায় মাপবার কোন সুযোগ এখানে নেই এবং আমিও তা কখনই বলিনি। আমারই বোঝানোর ব্যর্থতার করানের হয়ত আপনি বুঝতে ভুল করেছেন।
অর্থনৈতিক উত্থান-পতন একটি অবধারিত স্বাবাবিক ব্যাপার। একে স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে পিতৃপুরুষের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার চেস্টা করাই উত্তম।
১০০% সহমত। তার মানে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পথে পিতৃপুরুষের উপর যে কিছুটা নির্ভর করা যেতে পারে, সে ব্যাপারে তো আপনি একমত। মানুষ একে অপরের সাহায্য সহযোগীতা নিয়ে উন্নতি করবে এবং ধীরে ধীরে নির্ভরতা কমিয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার চেষ্টা করবে- এটাই তো স্বাভাবিক। তাই কোন পিতা তার আপন বাউন্ডুলে পুত্রকে সুপথে আনার জন্য যদি সংসারী করে তোলার লক্ষ্যে তার উপর নির্ভর করে বিয়ে দেয়া দোষের মনে না করেন এবং এর মধ্যেই তার ভালাই দেখেন- তাহলে কারো কিছু বলার নেই। আর এভাবে সমাজে যে অনকে মানুষ সুপথে এসেছেন এবং পরবর্তীতে যথেষ্ট আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ইসলামের অন্যতম মৌলিক চেতনাকে যারা আল-কোরআনের মৌল শিক্ষা থেকে আলাদা চোখে দেখে- তারা যতই চেচামেচি করুক না কেন কোন লাভ হবে না। যতই ভ্রু-কুচকে তাকাক না কেন, মহান আল্লাহতায়ালা সেই অহংকারীদেরকে অবিশ্বাসীদের চেয়েও নিম্নতর স্থানে নিয়ে যাবেন।
এতিমদের নুতন করে বিপদে পরার কিছু নেই। আবেগহীন ও বিবেকশুন্য মানুষের দ্বারা অনেক আগেই সেই কণ্টকাকীর্ণ পথ তৈরি করা হয়ে গেছে। এখন অপেক্ষা শুধু সেই পথের কাটাগুলো পরিষ্কার করে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার। আজ না হোক, একদিন ঠিকই মহান আল্লাহতায়ালা অন্য কারো মাধ্যমে হলেও তাঁর এই বিধান বাস্তবায়ন করে দেখাবেন।
মহান স্রষ্টা যেন বিশ্বাসীদেরকে তাঁর কিতাবের প্রতিটি শব্দ ও বাক্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ করার ও সেই অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করার তৌফিক দান করেন- আমিন।
ধন্যবাদ-
২৭| ০৪ ঠা জুন, ২০১২ দুপুর ১২:০১
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: ভাই এত বড় উত্তর দিলেন অথচ কোরআনের দুই দুটি আয়াতে যে বিয়ের শর্ত হিসেবে সামর্থবান হওয়ার পরিষ্কার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে কিছুই বল্লেন না।
" আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বাধীন মুসলমান নারীকে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না, সে তোমাদের অধিকারভুক্ত মুসলিম ক্রীতদাসীদেরকে বিয়ে করবে। (৪:২৫)"
"যারা বিবাহে সামর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন। (২৪:৩৩)"
এখানে কোন সামর্থের কথা বলা হয়েছে? শারিরিক সামর্থ আছে কিন্তু আর্থিক সামর্থ নাই এই অবস্থা ছাড়া সংযম অবলম্বনের প্রশ্ন আসে কি? অথবা স্বাধীন নারীর পরিবর্তে ক্রীতদাসী বিয়ের ব্যাপারে? এখানেও শারিরিক সামর্থের কোন তারতম্য কি হয়?
আপনি কোরআনের একটা নির্দেশ মানছেন আর অন্যটা অমান্য করছেন -তাহলে কি আপনার জন্য এই আয়াত প্রযোজ্য: "তুমি কি ওদের দেখনি, যারা কিতাবের কিছু অংশ প্রাপ্ত হয়েছে, (অথচ) তারা পথভ্রষ্টতা খরিদ করে এবং কামনা করে, যাতে তোমরাও আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত হয়ে যাও। (৪:৪৪)"
এখানে আসলে একটা ভারসাম্য তৈরী করা হয়েছে যেটা আজকের সমাজ থেকে হারিয়ে গেছে। অধিকাংশ মানুষ কোরআনের শিক্ষাকে আংশিকভাবে দেখে এবং নিজের পছন্দের অংশ বেছে নেয় যা থেকে তৈরী হয় বিভ্রান্তি। যদি শুধুমাত্র আপনার উল্লেখিত আয়াত কোরআনে থাকত তাহলে তার অর্থ হত "বয়:প্রাপ্তির সাথে সাথে আর্থিক অবস্থা নির্বিশেষে সকল মানুষকে বিয়ে দিতেই হবে আর বিয়ে দেয়ার সাথে সাথে আল্লাহ তাদেরকে সম্পদশালী করে দেবেন।" অথচ বাস্তবে দেখুন বিবাহিত মানুষের মধ্যে গরীবের সংখ্যা মোটেই কম নয়। আবার যদি আমার উল্লেখিত আয়াতগুলিই কোরআনে থাকত তাহলে তার অর্থ হত ' বিপুল সম্পদের মালিক না হয়ে কিছুতেই বিয়ে করা যাবে না, তাতে বয়স যাই হোক'। কিন্তু আমরা জানি অনেক মানুষ সারা জীবনেও বিপুল সম্পদের মালিক হতে পারে না।
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন এই দুটি ভিন্ন আদেশ একই কোরআনের মধ্যে দেয়ার মাধ্যমে একটা মধ্যম পন্থা অবলম্বনের ব্যাবস্থা করেছেন। আর সেটাই হচ্ছে নিজে কর্মক্ষম হও, স্বাবলম্বী হও, কাজ শুরু কর এবং তারপর বিয়ে কর। আর বিয়ে করার মাধ্যমে যে প্রয়োজন বাড়বে আল্লাহ তার ব্যাবস্থা করে দেবেন - দেখুন যারা পরিশ্রমী, আন্তরিক ভাবে কাজ করে তাদের আয় অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়তে থাকে। এটাই বাস্তব - আর এটাই আল্লাহর প্রতিশ্রুত বরকত।
আপনি আবার এতিমের অধিকার সংক্রান্ত আয়াতগুলি উল্লেখ করলেন - অথচ ওগুলোতো কেউ অস্বীকার করেনি। দাদা চাচাদেরকেতো দ্বায়িত্ব দেয়াই হয়েছে এতিমের প্রয়োজনীয় জীবনউপকরণ সরবরাহ করার জন্য। আমাদের আলোচ্য বিষয় যে উত্তরাধীকার আইন তার সাথে এ'গুলোর কোন যোগাযোগ নাই। আমি যে আশংকার কথা উল্লেখ করলাম - 'উত্তরাধীকারে এতিম নাতির অধিকার থাকলে হৃদয়হীন বেইমান দাদা চাচার দ্বারা নিগৃহিত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়' - তার কোন উত্তর কিন্তু আপনি দিতে পারলেন না। অথচ আল্লাহর সুস্পস্ট নির্দেশ অনুসারে যদি বিয়ের আগেই সম্পদের ব্যাবস্থাপনা করে নেয়া হয় তাহলে এই আশংকার কোন কারণ থাকে না। আপনি এই বিষয়টি আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলেন এ'ভাবে - "তাই কার ব্যপারে কতটা গুরুত্ব দিতে হবে এবং কাদেরকে তাদের নিজেদের ভরসায় ছেড়ে দেয়াই লাভজনক, তা যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিই ভাল জানেন। সুতরাং এর ব্যতিক্রম করা বা ভাবা বিশ্বাসীদের জন্য শোভা পায় না।" অথচ যে সমাধান আল্লাহ নিজেই দিয়ে রেখেছেন তার প্রতি আপনার আগ্রহ নাই।
আমি দু:খের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি আপনি চোরের হাত কাটতে যতটা আগ্রহী চুরি বন্ধের ব্যাপারে ততটা নন। অথচ আমরা সবাই জানি 'প্রিভেনশন ইজ বেটার দেন কিউর'। আল্লাহ যেখানে ব্যাবস্থা করে রেখেছেন, হাজার বছর ধরে মুসলিম সমাজ যার অনুসরণ করেছে যাতে এতিম সংক্রন্ত সমস্যা তৈরীই না হয় - আপনি সেই সমাধানের দিকে যেতেই চাইছেন না। কারণটা বোধগম্য হচ্ছে না।
অবশ্ব এই বক্তব্য থেকে আপনার চিন্তা-ধারা বোঝা যাচ্ছে। আপনি বলেছেন: "বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক। কারন জীবিত পুত্র নিজেই উত্তরাধিকারী হিসেবে যে পৈত্রিক সম্পত্তি পাবেন তা তার মৃত্যুর পর তার সন্তানদের কাছেই তো যাবে।" তার মানে আপনি ধরেই নিচ্ছেন মানুষ পৈত্রিক সম্পদ খরচ না করে সন্তানের জন্য রেখে যাবেই। যদি তাই হয় তাহলে তো একবার কেউ কোন সম্পদ পেলে আর চৌদ্দপুরুষে তা খরচ হবে না, সবাই কেবল পিতার থেকে পাবে আর সন্তানের জন্য রেখে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা কি তাই বলে?
আসলে আাপনি এখানে 'আওলাদ' অর্থ বংশধর নিয়ে একটা গোজামিল দিয়েছেন - আল্লাহ এমনটি বলেন নি। যদি বলতেন তাহলে রাসুল(স.) এবং সাহাবী(রা.)গন সেটা বাস্তবায়িত করে উদাহরণ রেখে যেতেন। কারণ সেই সময়ে যুদ্ধের কারণে বৃদ্ধ পিতাকে জীবিত রেখে যুবক ছেলের এতিম সন্তান রেখে শহীদ হওয়ার ঘটনা বিরল হওয়ার কথা নয়। অথচ দেখুন পালিত পুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিয়ে করা যায় (এটা কিন্তু অধিকার, ফরজ, ওয়াজীব কিছুই নয়, শুধুমাত্র বৈধ) এটা প্রমানের জন্য রাসুল(স.)কে দিয়ে উদাহরণ সৃস্টি করা হয়েছিল। আর আপনি যেভাবে এতিমের 'অধিকারের' কথা বলছেন এত বড় একটা বিষয় শুধুমাত্র একটি শব্দের অর্থের মধ্যে ইঙ্গিত আকারে রাখা হবে - এটা কিভাবে সম্ভব? আপনি কি দাদার সম্পদে এতিম নাতীর অংশ সংক্রন্ত একটা উদারহণ দেখাতে পারবেন?
অথছ দেখুন আল্লাহ কি বলেন: "(০৪:০৮) অর্থ- সম্পতি বন্টনের সময় যখন আত্নীয়-স্বজন, এতিম ও অভাবগ্রস্ত মানুষ উপস্থিত হয়, তখন তা থেকে তাদের কিছু খাইয়ে দাও এবং তাদের সাথে কিছু সদালাপ করো।" যদি এতিমের অধিকার থাকত তাহলে কি এ'ভাবে বলা হত? - নাকি বলা হত 'এতিম নাতিদের দাদার সম্পদের ন্যায্য অধিকার দিয়ে দাও?'।
আসলে আপনাকে দোষ দিয়েও লাভ নাই। বংশানুক্রমিক জমিদারীর আকাংখা আমাদের সমাজে মহামারীরমত ছড়িয়ে পরেছে। রাজনীতি, ব্যাবসাতে তো বটেই এমনকি চাকরিতেও কেউ কোন অবস্থানে যেতে পারলেই তার পুত্র, পৌত্রগন সেটাকে কাজে লাগিয়ে স্বার্থ উদ্ধারকে নিজেদের অধিকার মনে করে। কেউ নিজের যোগ্যতায় কিছু করতেই আগ্রহী নয়। এই রোগ যে জাতির মধ্যে জেঁকে বসে, যে জাতির পুর্ণ বয়ষ্ক পুরুষেরা বাপের হোটেলে ফ্রি খাওয়াকে অধিকার ভাবে, বাপের টাকায় বিয়ে করাতে লজ্জাবোধ করে না - সেই জাতির অধ:পতন সয়ং আল্লাহও রোধ করেন না। তাদের মধ্যে এতিমসহ বহু সমস্যা প্রতিনিয়ত তৈরী হতেই থাকবে - মানবমস্তিষ্ক দিয়ে যার সমাধান পাওয়া সম্ভব নয়।
অথচ ইতিহাস পড়ে দেখুন - ইসলামের স্বর্ণযুগের মানুষেরা কতটা আত্মনির্ভরশীলতার সাথে জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। ইসলামের প্রথম দিকের সাহাবী(রা.)গন তাদের সন্তানদের জন্য সুশিক্ষা আর চারিত্রিক প্রশিক্ষণ ছাড়া বৈষয়িক সম্পদ কতটা রেখে যেতেন। আপনার কি মনে হয় তারা অর্থ উপার্যনে অক্ষম ছিলেন? অথবা তাদের বংশধরেরা উত্তরাধীকার হিসেবে সম্পদ না পেয়ে নিজেদের বঞ্চিত ভাবত, ইসলামী আইনকে বৈষম্যমুলক মনে করত?
আল্লাহ আমাদের তার দ্বীনের ব্যাপারে সঠিক বুঝ দিন - আমীন।
০৪ ঠা জুন, ২০১২ রাত ৮:০৩
মাহফুজশান্ত বলেছেন: ভাই এত বড় উত্তর দিলেন অথচ কোরআনের দুই দুটি আয়াতে যে বিয়ের শর্ত হিসেবে সামর্থবান হওয়ার পরিষ্কার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে কিছুই বল্লেন না।
জী ভাইরে, এত বড় উত্তর দেবার প্রেরণা আমি আপনার কাছ থেকেই পেয়েছি।
" আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বাধীন মুসলমান নারীকে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না, সে তোমাদের অধিকারভুক্ত মুসলিম ক্রীতদাসীদেরকে বিয়ে করবে। (৪:২৫)"
যদি বলা হত-
"আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বাধীন মুসলমান নারীকে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না, সে যেন সামর্থ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে না করে।" তাহলে আপনার মনমত বানানো এই বক্তব্যটি ২. সামর্থ না থাকলে বিয়ে কর না- মেনে নেয়ার প্রশ্ন আসত। কিন্তু তা না বলে বরং বিয়ে করার ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেয়া হল। মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া এই সহজ-সরল বাণীটি অনুধাবন করার চেষ্টা না করে আপনি অযথাই বক বক করছেন।
"যারা বিবাহে সামর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন। (২৪:৩৩)"
এবারও এই আয়াতের সাথে আগের আয়াতটি দেবার সাহস আপনার হলো না। (২৪:৩২) নং আয়াতে যেহেতু মুখাপেক্ষী/ গরীব হওয়া সত্বেও বিয়ে দেবার নির্দেশনা দেযা হয়েছে এবং তাদেরকে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে লাভবান/ উর্বর/ সচ্ছল করে দেবার অঙ্গীকার করা হয়েছে। সুতরাং তার পরের আয়াতেই শুধু আর্থিক অসচ্ছলতার অযুহাতে বিয়ে না করার নির্দেশ দেয়া হলে বিষয়টি কন্ট্রাডিক্টরি হয়ে যাচ্ছে না কি? মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের জন্য যে সার্বজনীন বিধান দিয়েছেন- একচোখা কট্টোর মানুষেরা তা নিজেদের ইচ্ছেমত ছকে ফেলে জটিল করে ছেড়েছে।
হায়! আপনাকে আর কি বলব!!? কথায় বলে- "এক বার না পারিলে দেখ শতবার"। তাই ৩৮ ও ৫০ নং মন্তব্যের জবাবগুলো আবারও দেখে নিতে পারেন। বলা যায়না, এবার হয়ত উপলব্ধিতে আসতে পারে।
এখানে কোন সামর্থের কথা বলা হয়েছে? শারিরিক সামর্থ আছে কিন্তু আর্থিক সামর্থ নাই এই অবস্থা ছাড়া সংযম অবলম্বনের প্রশ্ন আসে কি? অথবা স্বাধীন নারীর পরিবর্তে ক্রীতদাসী বিয়ের ব্যাপারে? এখানেও শারিরিক সামর্থের কোন তারতম্য কি হয়?
শারিরিক সামর্থ বলতে আপনি কি বোঝাত চাচ্ছেন? যদি তা যৌন ক্ষমতার বিষয় হয় তাহলে একখান কথা আছে। হয়ত আপনার জানা নেই যে, যৌন অক্ষম অর্থাৎ খোঁজা হওয়া সত্বেও মানুষ অশ্লীল কর্মে লিপ্ত হতে পারে এবং এটি সমাজের জন্য মারাত্মক ক্ষাতিকর। 'এইডস' নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে গেলে তার প্রমাণ পেয়ে যাবেন। বিকৃত যৌন কর্মের মাধ্যমে যৌন অক্ষম ব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত যে শুধু এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তাই নয়, তারা ইন্টেনশনালি সমাজে তা ছড়িয়েও দিচ্ছে। তাদের সংখ্যা দিন দিন এতই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে তা দেখলে আপনার চোখ কপালে উঠে যাবে। সুতরাং মহান স্রষ্টার বাণী কতটা যৌক্তিক তা অনুধাবন করতে পারলে সেই মহান সত্ত্বার সামনে নত হওয়া ছাড়া উপায় নেই।
আমি আগেই বলেছি, আর্থিক সচ্ছলতার উপর ভিত্তি করে পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিয়ে না করার কথা কোথাও বলা হয় নাই। আর যারা বিয়ের জন্য আর্থিক কিংবা মনমানসিকতা সম্পন্ন নিজের সম পর্যায়ের পাত্র-পাত্রী খুঁজে পাচ্ছেন না বা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন বা শারীরিকভাকে অক্ষম- তাদের জন্য পবিত্রতা বজায় রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কারন অশ্লীল কর্মে লিপ্ত হলে যে শক্ত শাস্তির নির্দেশ আছে ( ব্যভিচারের জন্য ১০০ বেত্রাঘাত, ধর্ষনের জন্য আরও কঠিন শাস্তি), বিয়ে না করার অযুহাতে তা থেকে নিষ্কৃতি মিলবে না। তাই এই ধরনের পরিস্থিতিতেও অশ্লীল কর্ম থেকে দূরে থাকার কথা বলে সাবধান করে দেয়া হয়েছে। কারন মহান আল্লাহতায়ালার বিধানে কোন ফাঁক রাখা হয়নি। সাবধান না করলে শাস্তি প্রয়োগের বিধান কার্যকর করা যুক্তিযুক্ত হতে পারে না, তা তিনি খুব ভাল করেই জানেন। একই কারনে বিয়ে করার ক্ষেত্রেও নেগেটিভ নির্দেশ দেন নাই। বরং আর্থিক সামর্থ অনুযায়ী পাত্র-পাত্রীকে বিয়ে করার নির্দেশনা দিয়েছেন। কারন বয়ঃপ্রাপ্ত হবার পর অনেকের পক্ষে যৌন আকাঙ্খা দমন করা কষ্টকর হতে পারে। এর ফলে তার দ্বারা অশ্লীল কর্মে জড়িয়ে পড়াও অস্বাভাবিক নয়। তাই এক্ষেত্রে পরিপূর্ণ আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করার আগে যদি বিয়ে করতে নিষেধ করা হত, তাহলে সবার জন্য একই শাস্তির বিধান দেয়া হত না। সুতরাং এই আয়াতে বিয়ে না করার ব্যাপারে কোন নির্দেশই দেয়া হয় নাই। কাজেই পবিত্র থাকার বিষয়টি তাদের বেলাতেই প্রযোজ্য হতে পারে, যারা আর্থিকভাবে সক্ষম হওয়া সত্বেও নিজেরাই বিয়ে করার ব্যাপারে মনের দিক থেকে উদাসীন ও খুঁতখুঁতে স্বভাবের কারনে পাত্র-পাত্রী খুঁজে পাচ্ছেন না কিংবা শারীরিকভাবে অক্ষম। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটছে বা তারা সক্ষম না হচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত অশ্লীল কর্মে লিপ্ত না হবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিয়ের পরও মানুষ অশ্লীল কর্মে লিপ্ত হতে পারে। তাই পবিত্র থাকার অর্থাৎ অশ্লীল কর্মে জড়িয়ে না পরার বিষয়টি কিন্তু বিবাহিতদের বেলাতেও প্রযোজ্য।
আপনি কোরআনের একটা নির্দেশ মানছেন আর অন্যটা অমান্য করছেন -তাহলে কি আপনার জন্য এই আয়াত প্রযোজ্য: "তুমি কি ওদের দেখনি, যারা কিতাবের কিছু অংশ প্রাপ্ত হয়েছে, (অথচ) তারা পথভ্রষ্টতা খরিদ করে এবং কামনা করে, যাতে তোমরাও আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত হয়ে যাও। (৪:৪৪)"
এর পরের আয়াতেই আল্লাহতায়ালা বলেন-
(০৪:৪৫) অর্থ- তোমাদের দুশমনদের আল্লাহতায়ালা ভাল করেই জনেন; অভিভাবক হিসেবে আল্লাহতায়ালাই যথেষ্ট, তেমনি সাহয্যকারী হিসেবেও আল্লাহতায়ালাই যথেষ্ট।
সুতরাং অভিভাবক ও সাহায্যকারী হিসেবে আমি মহান স্রষ্টাকেই যথেষ্ট জ্ঞান করি। তাঁর বাণীকেই সবার উপরে স্থান দেই। না বুঝে তাঁর বাণীকে টুইস্ট করতে যারা কুণ্ঠিত নয়, তাদের থেকে আমি দূরত্ব বজায় রাখি। তাই অন্য কারো মনগড়া কথা অনুসরণ করতে আমি অভ্যস্ত নই।
এখানে আসলে একটা ভারসাম্য তৈরী করা হয়েছে যেটা আজকের সমাজ থেকে হারিয়ে গেছে। অধিকাংশ মানুষ কোরআনের শিক্ষাকে আংশিকভাবে দেখে এবং নিজের পছন্দের অংশ বেছে নেয় যা থেকে তৈরী হয় বিভ্রান্তি। যদি শুধুমাত্র আপনার উল্লেখিত আয়াত কোরআনে থাকত তাহলে তার অর্থ হত "বয়:প্রাপ্তির সাথে সাথে আর্থিক অবস্থা নির্বিশেষে সকল মানুষকে বিয়ে দিতেই হবে আর বিয়ে দেয়ার সাথে সাথে আল্লাহ তাদেরকে সম্পদশালী করে দেবেন।" অথচ বাস্তবে দেখুন বিবাহিত মানুষের মধ্যে গরীবের সংখ্যা মোটেই কম নয়। আবার যদি আমার উল্লেখিত আয়াতগুলিই কোরআনে থাকত তাহলে তার অর্থ হত ' বিপুল সম্পদের মালিক না হয়ে কিছুতেই বিয়ে করা যাবে না, তাতে বয়স যাই হোক'। কিন্তু আমরা জানি অনেক মানুষ সারা জীবনেও বিপুল সম্পদের মালিক হতে পারে না।
বয়ঃপ্রাপ্তির সাথে সাথেই বিয়ে দিতেই হবে- এমন কথা বলা হয় নাই। বরং বিয়ে দেবার মত উপযুক্ত কারন ও অবস্থা থাকলে তাতে কোন বাধা নেই বলে বিয়ের ব্যাপার পজেটিভ মোটিভ ও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে মাত্র। সাথে সাথে বিয়ে করলে তাকে স্রষ্টার পক্ষ থেকে সচ্ছল/ লাভবান/ উর্বর/ সক্ষম করে দেবার কথা বলা হয়েছে। এই সক্ষমতা যে শুধু আর্থিকভাবেই হতে হবে এমন কথা বলা হয় নাই, বরং এর মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তিও একটা বড় পাওয়া হতে পারে। কাজেই মানসিক/ শারীরিক/ আর্থিক/ যোগ্য বংশধর প্রাপ্তি ইত্যাদি বিবিধ সাফল্যলাভের বিষয়টি এর সাথে জড়িতে। সম্পদের মালিক হওয়াকেই যারা জীবনের বড় প্রাপ্তি মনে করেন, এরূপ সংকীর্ণ চিন্তা তাদেরই সাজে।
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন এই দুটি ভিন্ন আদেশ একই কোরআনের মধ্যে দেয়ার মাধ্যমে একটা মধ্যম পন্থা অবলম্বনের ব্যাবস্থা করেছেন। আর সেটাই হচ্ছে নিজে কর্মক্ষম হও, স্বাবলম্বী হও, কাজ শুরু কর এবং তারপর বিয়ে কর। আর বিয়ে করার মাধ্যমে যে প্রয়োজন বাড়বে আল্লাহ তার ব্যাবস্থা করে দেবেন - দেখুন যারা পরিশ্রমী, আন্তরিক ভাবে কাজ করে তাদের আয় অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়তে থাকে। এটাই বাস্তব - আর এটাই আল্লাহর প্রতিশ্রুত বরকত।
ভাই, উপরে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরার পরও আপিন যদি কোন নুতন মতবাদ আল্লাহতায়ালার নামে বাড়িয়ে বলে চালিয়ে দিতে চান- সেই বিচারের ভার সেই মহান স্রষ্টার হাতেই অর্পণ করতে চাই।
আপনি আবার এতিমের অধিকার সংক্রান্ত আয়াতগুলি উল্লেখ করলেন - অথচ ওগুলোতো কেউ অস্বীকার করেনি। দাদা চাচাদেরকেতো দ্বায়িত্ব দেয়াই হয়েছে এতিমের প্রয়োজনীয় জীবনউপকরণ সরবরাহ করার জন্য। আমাদের আলোচ্য বিষয় যে উত্তরাধীকার আইন তার সাথে এ'গুলোর কোন যোগাযোগ নাই। আমি যে আশংকার কথা উল্লেখ করলাম - 'উত্তরাধীকারে এতিম নাতির অধিকার থাকলে হৃদয়হীন বেইমান দাদা চাচার দ্বারা নিগৃহিত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়' - তার কোন উত্তর কিন্তু আপনি দিতে পারলেন না। অথচ আল্লাহর সুস্পস্ট নির্দেশ অনুসারে যদি বিয়ের আগেই সম্পদের ব্যাবস্থাপনা করে নেয়া হয় তাহলে এই আশংকার কোন কারণ থাকে না। আপনি এই বিষয়টি আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলেন এ'ভাবে - "তাই কার ব্যপারে কতটা গুরুত্ব দিতে হবে এবং কাদেরকে তাদের নিজেদের ভরসায় ছেড়ে দেয়াই লাভজনক, তা যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিই ভাল জানেন। সুতরাং এর ব্যতিক্রম করা বা ভাবা বিশ্বাসীদের জন্য শোভা পায় না।" অথচ যে সমাধান আল্লাহ নিজেই দিয়ে রেখেছেন তার প্রতি আপনার আগ্রহ নাই।
এ সম্পর্কে একই কথা আর কত বার বলব! এতিমের অংশ বুঝিয়ে দিতে বললে যারা বংশীয় কৌলিন্য, সম্পদশালী হওয়ার লোভ- ইত্যাদি বিশেষণে বিশেষায়িত করতে অভ্যস্ত, তারা কিন্তু নিজেদের অংশ বুঝে নেয়ার ব্যাপারে সতের-আনা। তখন আর সম্পদ গুনে গুনে পকেটে ও ব্যাংকে ঢোকাতে কোন সরম লাগে না। খালি এতিমদের ন্যায্য অধিকার বুঝিয়ে দেবার কথা বললেই নাক সিটকানো শুরু হয়- তখন নন্দ ঘোষের উপরে যত দোষ চাপিয়ে দিয়েই খালাস।
আমি দু:খের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি আপনি চোরের হাত কাটতে যতটা আগ্রহী চুরি বন্ধের ব্যাপারে ততটা নন। অথচ আমরা সবাই জানি 'প্রিভেনশন ইজ বেটার দেন কিউর'। আল্লাহ যেখানে ব্যাবস্থা করে রেখেছেন, হাজার বছর ধরে মুসলিম সমাজ যার অনুসরণ করেছে যাতে এতিম সংক্রন্ত সমস্যা তৈরীই না হয় - আপনি সেই সমাধানের দিকে যেতেই চাইছেন না। কারণটা বোধগম্য হচ্ছে না।
আমি বা আপনি চোরের হাত কাটা বা না কাটার কে? এ ব্যাপারেও আমি ন্যায়ের সাথেই আছি। অযথা হাত কাটাকাটির দলে আমি নেই। তবে হাত কাটার মত উপযুক্ত কারন ও অবস্থা সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে চোরের হাত কাটাকে আমি অবশ্যই সাপোর্ট করি। এ ক্ষেত্রে বড় চোর-বাটপারদের ব্যাপারে ঢিলে নীতি আর পাতি চোরের উপরে কথায় কথায় হাত কাটার রীতি- এরূপ বৈষম্য ইসলামে নেই।
অবশ্ব এই বক্তব্য থেকে আপনার চিন্তা-ধারা বোঝা যাচ্ছে। আপনি বলেছেন: "বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক। কারন জীবিত পুত্র নিজেই উত্তরাধিকারী হিসেবে যে পৈত্রিক সম্পত্তি পাবেন তা তার মৃত্যুর পর তার সন্তানদের কাছেই তো যাবে।" তার মানে আপনি ধরেই নিচ্ছেন মানুষ পৈত্রিক সম্পদ খরচ না করে সন্তানের জন্য রেখে যাবেই। যদি তাই হয় তাহলে তো একবার কেউ কোন সম্পদ পেলে আর চৌদ্দপুরুষে তা খরচ হবে না, সবাই কেবল পিতার থেকে পাবে আর সন্তানের জন্য রেখে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা কি তাই বলে?
কোন পিতা তার সন্তানের জন্য সম্পদ রেখে যেতে পারবে কি পারবে না- সেই অগ্রীম চিন্তা পাগলের পক্ষেই করা সাজে। আপনি যেমনটি ভাবছেন, তার উল্টোটাও তো হতে পারে। কোন পিতা তার পৈত্রিক সম্পত্তি ঠিকমত কাজে লাগিয়ে সন্তানদের জন্য যথেষ্ট সচ্ছলতাও তো এনে দিতে পারেন। সুতরাং কে সম্পদ রাখতে বা বৃদ্ধি করতে পারবে, নাকি পারবে না- এরূপ মনগড়া আন্দাজের উপরে ভিত্তি করে উত্তরাধিরের বিধান দেয়া হয় নাই। সম্পদ থাকলে তা উত্তরাধিকারী ও বংশধরদের মাঝে বন্টন করে দেয়াই এই বিধানের মূল লক্ষ্য। তারপর যে যার সামর্থ অনুসারে তা ব্যাবহার করবে। যিনি যেমন কর্ম করবেন, তিনি তেমনি ফল পাবেন। এর বাহিরে অন্যকিছু চিন্তা করার কোন স্কোপ নেই এবং করাও ঠিক নয়।
আসলে আাপনি এখানে 'আওলাদ' অর্থ বংশধর নিয়ে একটা গোজামিল দিয়েছেন - আল্লাহ এমনটি বলেন নি। যদি বলতেন তাহলে রাসুল(স.) এবং সাহাবী(রা.)গন সেটা বাস্তবায়িত করে উদাহরণ রেখে যেতেন। কারণ সেই সময়ে যুদ্ধের কারণে বৃদ্ধ পিতাকে জীবিত রেখে যুবক ছেলের এতিম সন্তান রেখে শহীদ হওয়ার ঘটনা বিরল হওয়ার কথা নয়। অথচ দেখুন পালিত পুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিয়ে করা যায় (এটা কিন্তু অধিকার, ফরজ, ওয়াজীব কিছুই নয়, শুধুমাত্র বৈধ) এটা প্রমানের জন্য রাসুল(স.)কে দিয়ে উদাহরণ সৃস্টি করা হয়েছিল। আর আপনি যেভাবে এতিমের 'অধিকারের' কথা বলছেন এত বড় একটা বিষয় শুধুমাত্র একটি শব্দের অর্থের মধ্যে ইঙ্গিত আকারে রাখা হবে - এটা কিভাবে সম্ভব? আপনি কি দাদার সম্পদে এতিম নাতীর অংশ সংক্রন্ত একটা উদারহণ দেখাতে পারবেন?
উত্তরাধিকার সম্পদ বন্টন সংক্রান্ত বিধান আসার পর এটি পরিপূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করে দেখানোর জন্য যে সময়ের প্রয়োজন- সেই সময়টুকু রাসূল (সাঃ) পান নাই। সে কারনেই ফারায়েজ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন এবং তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে যে কয়েকটি সহী হাদিছ পাওয়া যায় তার সাথে আল-কেরাআনের নির্দেশের সামঞ্জস্য বিধান করলে দেখা যায় যে, অন্য ভাইয়েরা জীবিত আছেন সেই অযুহাতে মৃত ভাইয়ের পৈত্রিক সম্পত্তির অংশ থেকে তার বংশধর ও উত্তরাধিকারীদের বঞ্চিত করার কোন প্রশ্নই আসে না।
অথছ দেখুন আল্লাহ কি বলেন: "(০৪:০৮) অর্থ- সম্পতি বন্টনের সময় যখন আত্নীয়-স্বজন, এতিম ও অভাবগ্রস্ত মানুষ উপস্থিত হয়, তখন তা থেকে তাদের কিছু খাইয়ে দাও এবং তাদের সাথে কিছু সদালাপ করো।" যদি এতিমের অধিকার থাকত তাহলে কি এ'ভাবে বলা হত? - নাকি বলা হত 'এতিম নাতিদের দাদার সম্পদের ন্যায্য অধিকার দিয়ে দাও?'।
জী, কিছু খাইয়ে দাও ও সদালাপ কর অর্থাৎ তাদের সাথে ভাল আচরণ করতে ও আপ্যায়ন করতে বলা হয়েছে। দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও অনেকে এমনটি করেন। সম্পত্তি বন্টনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত এরা সেই সমস্ত আত্নীয়-স্বজন, এতিম ও অভাবগ্রস্ত মানুষ, সেই সম্পত্তিতে যাদের কোন অংশিদারিত্ব নেই। আপন বংশধর ও উত্তরাধিকারীরা এই মানুষদের মধ্যে পড়েন না।
আসলে আপনাকে দোষ দিয়েও লাভ নাই। বংশানুক্রমিক জমিদারীর আকাংখা আমাদের সমাজে মহামারীরমত ছড়িয়ে পরেছে। রাজনীতি, ব্যাবসাতে তো বটেই এমনকি চাকরিতেও কেউ কোন অবস্থানে যেতে পারলেই তার পুত্র, পৌত্রগন সেটাকে কাজে লাগিয়ে স্বার্থ উদ্ধারকে নিজেদের অধিকার মনে করে। কেউ নিজের যোগ্যতায় কিছু করতেই আগ্রহী নয়। এই রোগ যে জাতির মধ্যে জেঁকে বসে, যে জাতির পুর্ণ বয়ষ্ক পুরুষেরা বাপের হোটেলে ফ্রি খাওয়াকে অধিকার ভাবে, বাপের টাকায় বিয়ে করাতে লজ্জাবোধ করে না - সেই জাতির অধ:পতন সয়ং আল্লাহও রোধ করেন না। তাদের মধ্যে এতিমসহ বহু সমস্যা প্রতিনিয়ত তৈরী হতেই থাকবে - মানবমস্তিষ্ক দিয়ে যার সমাধান পাওয়া সম্ভব নয়।
বংশানুক্রমিক জমিদারি, বাপের হোটেলে ফ্রি খাওয়া, বাপের টাকায় বিয়ে করা- এই কথাগুলো এখানে বলার কোন মানেই হয় না। আমি বংশানুক্রমিক জমিদারির স্বপ্ন দেখি না, কিন্তু তাই বলে কেউ এতিমের যৎসামান্য সম্পদ নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে আর আমি মুখ বুজে তার বিরুদ্ধে কিছুই বলব না, এরূপ নির্বোধ আমি নই। মানলাম আপনি বিয়ের সময় বাপের কাছ থেকে কোন সাহায্যই নেন নাই। কিন্তু বুকে হাত রেখে বলতে পারবেন কি, যে আপনি বয়ঃপ্রাপ্ত হবার পর একদিনের জন্যও বাপের হোটেলে খান নাই? আমি খেয়েছি, অনেকবার খেয়েছি, তাই বাবার সেই হোটেলে যাই খেয়ে থাকি না কেন- তা অস্বীকার করার মত অকৃতজ্ঞ এখনই আমি হই নাই।
অথচ ইতিহাস পড়ে দেখুন - ইসলামের স্বর্ণযুগের মানুষেরা কতটা আত্মনির্ভরশীলতার সাথে জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। ইসলামের প্রথম দিকের সাহাবী(রা.) গন তাদের সন্তানদের জন্য সুশিক্ষা আর চারিত্রিক প্রশিক্ষণ ছাড়া বৈষয়িক সম্পদ কতটা রেখে যেতেন। আপনার কি মনে হয় তারা অর্থ উপার্যনে অক্ষম ছিলেন? অথবা তাদের বংশধরেরা উত্তরাধীকার হিসেবে সম্পদ না পেয়ে নিজেদের বঞ্চিত ভাবত, ইসলামী আইনকে বৈষম্যমূলক মনে করত?
হাসালেন বটে! সাহাবা (রাঃ) গণ অর্থ উপার্যনে অক্ষম ছিলেন কিনা বা তাদের বংশধরেরা উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পদ না পেয়ে নিজেদের বঞ্চিত ভাবত কি ভাবত না সেই প্রসঙ্গ এখানে অবান্তর। আমি তো বৈষয়িক সম্পদ রেখে যাওয়ার পক্ষে বা বিপক্ষে একটা বাক্যও বলিনি। বরং আল্লাহতায়ালা যাদেরকে বৈধ বৈষয়িক সম্পদ দান করেছেন, আমি তাদের কথাই বলছি। স্বয়ং আল্লাহতায়ালা যেখানে সম্পদ বন্টন সংক্রান্ত উত্তরাধিকার নীতি প্রনয়ন করেছেন, সেখানে আপনি এর বিরোধী করছেন!? উল্টো আমাকে ঘুণেধরা ইসলামের ইতিহাসের হাইকোর্টও দেখাচ্ছেন। আল-কোরআন ছেড়ে অযথাই আপনি ইসলামের ইতিহাস নিয়ে টানাটানি শুরু করেছেন। আপনার এই আচরণের অর্থ বোধ সম্পন্ন মানুষ মাত্রই বুঝে নেবেন।
মহান স্রষ্টা যেন বিশ্বাসীদেরকে তাঁর কিতাবের প্রতিটি শব্দ ও বাক্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ করার ও সেই অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করার তৌফিক দান করেন- আমিন।
ধন্যবাদ-
২৮| ০৪ ঠা জুন, ২০১২ দুপুর ১:৩২
যাযাবরমন বলেছেন: জনাব কাঙ্গাল মুরশিদ , আপনি বলেছেন:
পুর্ণবয়ষ্ক সন্তানের সম্পদে পিতার কোন মালিকানা নাই এবং পুর্নবয়ষ্ক সন্তানেরও পিতার উপর নির্ভরশীল হওয়ার বা প্রচলিত কথায় বিনা মুল্যে বাপের হোটেলে খাওয়ার কোন অধিকার নাই। বরং পুর্ণবয়ষ্ক প্রত্যেক মানুষের আয় ব্যায় সম্পদ সবকিছুর হিসেবই আলাদা। এবং প্রত্যেকের সন্তানরাও তাই পাবে যা তাদের পিতা তাদের জন্য রেখে যাবে। ইসলামের এই মুল নীতি আপনি মানেন কী না?
ইসলাম হচ্ছে সেই ধর্ম যেখানে ৪০ ঘর প্রতিবেশির খোজ রাখা ধর্মিয় কর্তব্য; সেখানে আপনি বলছেন অক্ষম পুর্নবয়ষ্ক সন্তানেরও বিনা মুল্যে বাপের হোটেলে খাওয়ার কোন অধিকার নাই! কিছুখন পর বলবেন "বাপেরও ছেলের হোটেলে খাওয়ার অধিকার নাই।
আপনি আরও লিখেছেন:
উত্তরাধীকারে সম্পদ পাওয়া কোন মৌলিক অধিকার নয় বরং পিতার ঐচ্ছিক অনুদান।
একদমই ভুল। বরং উত্তরাধীকারে সম্পদ পাওয়া কোরআনে বর্ননা করা ১টি মৌলিক অধিকার। আপনাকে বুঝতে হবে যে দান করা আর ব্যায় করা এক নয়। আপনি প্রয়োজনে ব্যায় করবেন, তাই বলে আপনার সম্পত্তির ১/৩ এর বেশি দান করতে হলে আপনার উপর যারা নির্ভরশীল তাদের অনুমতি নেয়া ইসলামে বাধ্যতামুলক।
৩য়ত: আপনি শুধু শুধু বিতর্ক করছেন, ইসলামী আইন বলেন আর দেশি আইন বলেন সব মতেই সন্তানের অবর্তমানে নাতী/নাতনী দাদা/নানার সম্পত্তির উত্তরাধীকারি।
ক=দাদা, খ= বাবা, গ,ঘ=নাতী/নাতনী হলে, এবং ক-এর আগে খ মারা গেলে আইন অনুযায়ী ক মারা গেলে, খ উত্তরাধীকার সূত্রে ক-এর থেকে যা পেতো, ক মারা যাওয়ার পর গ/ঘ ক-এর ঐ একই পরিমান সম্পত্তির উত্তরাধীকারি হবে।
এখানে বিতর্কের কিছুই নাই।
২৯| ০৪ ঠা জুন, ২০১২ দুপুর ১:৪০
যাযাবরমন বলেছেন: ১- ওকে, মাহফুজশান্ত ভাই।
আামার মন্তব্য টা রিপোস্ট করলাম। াপনার যেহেতু আপত্তি আছে তখন ৪০ নং কমেন্ট টা মুছে দেন।
2- জনাব কাঙ্গাল মুরশিদ: জমিদারী আর রাজতন্ত্র এক জিনিষ না। জমিদারী টাকা দিয়ে কিনতে হত, উত্তরাধিকারিদের মধ্যে ভাগ হত। আর রাজতন্ত্ কিনতে পাওয়া যায় না, গায়ের জোড়ে দখল করতে হয়।
আপনি আসলে প্রশ্ন্ টা এড়িয়ে গেলেন।
০৪ ঠা জুন, ২০১২ রাত ৮:২২
মাহফুজশান্ত বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, মুছে ফেলার দরকার নাই।
৩০| ০৪ ঠা জুন, ২০১২ বিকাল ৫:৫৭
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: @যাযাবর মন: আপনি অধিকার আর ঐচ্ছিক বিষয়ের মধ্যে মনে হয় পার্থক্য করতে পারছেন না। অধিকার হচ্ছে সেই জিনিস যা আইনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। যে কোন সন্তানের অধিকার হচ্ছে জন্ম থেকে পুর্ণবয়ষ্ক হওয়া পর্যন্ত ভরণপোষণ পাওয়া। ইসলামে এই অধিকার আদায়ের জন্য চার স্তরের নিরাপত্তার ব্যাব্স্থা করা হয়েছে - ১. পিতা, ২. দাদা, ৩. চাচা/অন্যান্য আত্মীয়, ৪. রাস্ট্র।
কিন্তু উত্তরাধীকার হচ্ছে একটা বাড়তি সুযোগ যা অতি সামন্য সংখ্যক সম্পদশালী মানুষের সন্তান পেয়ে থাকে। পৃথিবীতে যেকোন সময় ৯০% মানুষ দরিদ্র হিসেবে জন্ম নেয় এবং কোন পৈত্রিক সম্পদ ছাড়াই জীবন শুরু করে।
যদি পিতা তার মৃত্যুর সময় কোন সম্পদ রেখে যান তাহলেই কেবল সন্তান তার উত্তরাধীকারী হয়। পিতা তার জীবিত সময়ে খরচ বা দান যেকোন উপায়ে তার সম্পদ ব্যাবহার করে যাওয়ার পুর্ণ অধিকার রাখেন। ১/৩ অংশের যে নিষেধাজ্ঞা আছে তা হচ্ছে 'ওসিয়ত' বা মৃত্যুর পরে কাউকে কিছু দিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে।
উত্তরাধীকারে সম্পদ পাওয়া যদি মৌলিক অধিকার হত তাহলে ইসলামী সমাজে নিশ্চয়ই প্রত্যেকের জন্য সেই নিশ্চয়তার ব্যাবস্থা করা হত। অথচ ইসলামের ইতিহাস পড়ে দেখুন - নবী(আ.)গন, বা সাহাবা(রা.) তাদের সন্তানদের জন্য কী সম্পদ রেখে গিয়েছিলেন? অথচ ওনারা কেউ অক্ষম ছিলেন না, বরং সমাজ ও রাস্ট্রের বড় বড় দ্বায়িত্বে ছিলেন। তাহলে কি তারা তাদের সন্তানদের 'হক' বা অধিকার নস্ট করে ছিলেন (নাউজুবিল্লাহ)।
আসলে আমাদের মাথায় বংশানুক্রমিক জমিদারীর বাসনা এমনভাবে গেড়ে বসেছে যে তার বাইরে কিছুই চিন্তা করতে পারি না। আমরা নিজেরা এই চেতনা থেকে বের হতে না পারলে আমাদের সমাজও কখনই বংশানুক্রমিক রাজনীতি, বংশানুক্রমিক ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেট এবং বাপ-চাচা-মামা-খালুর জোরে চাকরীজীবির কড়াল গ্রাস থেকে বের হতে পারবে না। আর শুধু আলোচ্য এতিম সংক্রান্ত সমস্যাই নয় বরং প্রতিনিয়ত আরো বহু সমস্যার উদ্ভব হবে - মানব মস্তিষ্কপ্রসুত জ্ঞান দিয়ে যার সমাধান কোনও দিনও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
০৪ ঠা জুন, ২০১২ রাত ৮:১১
মাহফুজশান্ত বলেছেন: হায়রে! এতিমের ন্যায্য অধিকারের কথা বলায় ভাই মুরশীদের কাছে বংশানুক্রমিক রাজনীতি, বংশানুক্রমিক ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেট এবং বাপ-চাচা-মামা-খালুর জোরে চাকরীজীবির কড়াল গ্রাস ইত্যাদি কত কথাই না শুনতে হলো।
এসব বলে লাভ হবে না। আজ না হোক, একদিন ঠিকই মহান আল্লাহতায়ালা অন্য কারো মাধ্যমে হলেও তাঁর এই বিধান বাস্তবায়ন করে দেখাবেন।
৩১| ০৫ ই জুন, ২০১২ সকাল ১১:১৯
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: "কোন পিতা তার সন্তানের জন্য সম্পদ রেখে যেতে পারবে কি পারবে না- সেই অগ্রীম চিন্তা পাগলের পক্ষেই করা সাজে। আপনি যেমনটি ভাবছেন, তার উল্টোটাও তো হতে পারে। কোন পিতা তার পৈত্রিক সম্পত্তি ঠিকমত কাজে লাগিয়ে সন্তানদের জন্য যথেষ্ট সচ্ছলতাও তো এনে দিতে পারেন। সুতরাং কে সম্পদ রাখতে বা বৃদ্ধি করতে পারবে, নাকি পারবে না- এরূপ মনগড়া আন্দাজের উপরে ভিত্তি করে উত্তরাধিরের বিধান দেয়া হয় নাই। সম্পদ থাকলে তা উত্তরাধিকারী ও বংশধরদের মাঝে বন্টন করে দেয়াই এই বিধানের মূল লক্ষ্য। তারপর যে যার সামর্থ অনুসারে তা ব্যাবহার করবে। যিনি যেমন কর্ম করবেন, তিনি তেমনি ফল পাবেন। এর বাহিরে অন্যকিছু চিন্তা করার কোন স্কোপ নেই এবং করাও ঠিক নয়"
ভাইরে, ঠিক এই কথাটাই আমি বার বার বলতে চেয়েছি - কিন্তু আপনি এতিমের প্রতি আবেগকে সামনে এনে এড়িয়ে গিয়েছেন। দাদা থেকে নাতি কোন অংশ পাবে কি না তার কোন নিশ্চয়তা নাই। সুতরাং পিতাকে বাদ দিয়ে সরাসরি নাতিকে অংশ দেয়ার কোন সুযোগও নাই - এটা করা হলেই বরং বৈষম্য করা হবে। - বরং আপনার কথা মতই 'যিনি যেমন কর্ম করবেন, তিনি তেমনি ফল পাবেন।' - যে পিতা দ্বায়িত্বহীনেরমত নিজে আয় উপার্জনের ব্যাবস্থা না করে বাপের টাকায় বিয়ে করবে তার সন্তানরা সেই কর্মের ফলই ভোগ করবে।
আপনি কি গোজামিলের বিষয়টা বুঝতে পারছেন না? আপনার একমাত্র দলিল 'আওলাদুন' শব্দের কয়টা অর্থ নিতে চান? যে কোন একটাই তো নিতে হবে - না কি? যদি হয় 'সন্তান' তাহলে নাতিকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন না, যদি বলেন 'বংশধর' তাহলে কাউকে বাদ দিতে পারবেন না। কারণ আপনি নিজেই বলেছেন পিতার মাধ্যমে নাতি বা নাতির মাধ্যমে পুতি কিছু পাবে কি পাবে না তার কোন নিশ্চয়তা নাই, আর উত্তরাধীকার আইন অনিশ্চয়তার ভিত্তিতে করাও হয়নি। অংশ যদি বংশধরের হয় তাহলে প্রত্যেক বংশধর সে নাতিই হোক আর পুতিই হোক সরাসরি দিয়ে দিতে হবে। অনিশ্চিত অবস্থায় পিতার হাতে রেখে দেয়া যাবে না। আপনি একই আয়াতের একই শব্দের অর্থ নিজের ইচ্ছেমত একবার 'সন্তান' এবং একবার 'বংশধর' নিতে পারেন না। এখানেই আমার আশংকা হয়েছে যে আপনি আসলে কোরআনের শিক্ষা অনুধাবনের চেস্টার চেয়ে যেকোন উপায়ে দাদার সম্পদে এতিম নাতির অংশ দেয়াকেই লক্ষ বানিয়েছেন কি না - আশা করি আমার আশংকা ভুল হবে।
"উত্তরাধিকার সম্পদ বন্টন সংক্রান্ত বিধান আসার পর এটি পরিপূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করে দেখানোর জন্য যে সময়ের প্রয়োজন- সেই সময়টুকু রাসূল (সাঃ) পান নাই। " - এইটা আর একটা খোড়া যুক্তি। আল্লাহ চাইলে উত্তরাধীকার আইন কি আর একটু আগে দিতে পারতেন না? আর একটা উদাহরণ সৃস্টির জন্য এমন কি সময় প্রয়োজন - ঐ সময় একজন সাহাবী(রা.) পিতার আগে সন্তান রেখে মৃত্যুবরণ করলে এবং তার উত্তরাধীকার বন্টনের বিষয়ে আল্লাহ কোরআনে বা রাসুল(স.) এর মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্ত দিলেইতো হয়ে যেত।
আপনার গবেষণার আর একটি ক্রটি ধরিয়ে দিচ্ছি। আপনি এতিমের প্রতি কর্তব্যের এবং আবেগের যথার্থ উপস্থাপনের পর তার সম্পুর্ণ দ্বায়ভার চাপিয়েছেন ইসলামী উত্তরাধীকার আইনের উপর। কিন্তু এ'ব্যাপারে আপনি কোন পরিসংখ্যান উল্লেখ করেন নি। আপনি যখন বিষয়টা নিয়ে গবেষণা করছেন তখন আপনাকে অনুরোধ করব আশে পাশের এতিমখানা গুলোতে একটু খোঁজ নেয়ার জন্য। যদি আপনি এই কস্টটুকু করেন তাহলে দেখবেন আপনার উল্লেখিত কারন অর্থাৎ ধনী দাদা চাচা থাকতেও শুধুমাত্র দাদার আগে পিতার মৃত্যুর কারণে এতিমখানায় আসা বাচ্চার সংখ্যা শতকরা ১ ভাগও হবে না। কারণ বড়লোকের নাতিরা তাদের আত্মিয়-স্বজন কার না কার কাছে আশ্রয় পেয়েই যায় - তাদেরকে এতিমখানার মানবেতর জীবন যাপন করতে হয় না। বাকি ৯৯ ভাগের ক্ষেত্রেই দেখবেন মুল কারণ তাদের দরিদ্র পিতাদের চাল-চুলোহীন অবস্থায় বিয়ে করা ( অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটা বউ ছেড়ে অন্য আর একটা বা এক সাথে একাধিক বিয়ে করা )। এবং কোন আয় উপার্জনের পথ বা সঞ্চয় না রেখেই মারা যাওয়া। অথচ কোরআনে পরিষ্কার ভাবে এ'ধরনের বিয়ে করতে নিষেধ করা হয়েছে, বরং সংযম সাধনা করতে বলা হয়েছে যতক্ষণ না আল্লাহ অভাব দুর করে দেন ততক্ষন পর্যন্ত।
আপনি যদি সত্যিই এতিম সমস্যার সমাধানের চিন্তায় গবেষণা করতেন তাহলে এর মুল কারণ আগে খুঁজতেন এবং তার সমাধান সেখানেই পেতেন যেখানে আল্লাহ প্রয়োজনে ক্রিতদাসী বিয়ে করতে হলেও সামর্থহীন অবস্থায় বা সামর্থের বাইরে বিয়ে করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু আপনার ঐ ৯৯% এর জন্য কোন চিন্তাই নাই - সকল দু:শ্চিন্তা কেবল ১%কে নিয়ে। কেন? এ'খানেও সেই আশংকাই এসে যায় - আপনি আসলেই এতিম সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানের জন্য গবেষণা করছেন নাকি যে কোন উপায়ে বড় লোকের নাতির জন্য দাদার সম্পদে অংশ দেয়ার চেস্টায় আছেন - আশা করি আমার আশংকা ভুল হবে।
সাবধান! সাবধান!! - ইসলামের নীতি বা কোরআনের অর্থ/শিক্ষা ব্যাখ্যা করার সময় নিজের ব্যাক্তিগত, বংশগত, শ্রেনীগত কোন দুনিয়াবী স্বার্থের সামান্যতম প্রভাবও যদি থাকে তাহলে তা একটি মারাত্মক অপরাধ। আশা করি আল্লাহ আপনাকে এই অপরাধ থেকে মুক্ত রাখবেন - আমীন।
যাই হোক, একই বিষয়ে এত কথার (আপনার ভাষায় 'বক বক' ) আসলেই কোন অর্থ নাই। এর ফলে একই কথা বার বার বলা হচ্ছে - যা সময়ের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। আপনি আপনার গবেষণা উপস্থাপন করেছেন - আমি সাধ্যমত আমার বক্তব্য তুলে ধরার চেস্টা করেছি। আমি মনে করি এতিম নাতির দাদার সম্পদে অংশ থাকার বিষয় কোরআন এবং সহীহ হাদীস থেকে প্রমানিত নয়। বরং এই অংশ না থাকাই অধিকতর যৌক্তিক - এতে সামান্য কিছু (১% এরও কম) বড়লোকের নাতির ভাগে সম্পদ কম পড়লেও (তাদের ভরণ পোষনের সমস্যা কিন্তু হচ্ছে না ) তা বহু মানুষের জন্য শিক্ষনীয় হবে এবং তারা অপরিকল্পিত ভাবে নিজের যোগ্যতা, আয় উপার্জনের চেস্টা/ব্যাবস্থা ছাড়া বাপের/ভাইএর টাকায় বা চাল-চুলোহীন অবস্থায় সামর্থের বাইরে অধিকহারে বিয়ে করা থেকে বিরত থাকবে, কোরআনের নির্দেশ অনুসারে সংযম করবে - ফলে তা ৯৯% এতিম তৈরী হওয়া থেকে সমাজকে মুক্ত রাখতে সহায়ক হবে। এবং মানুষের মাঝে বংশানুক্রমিক সম্পদশালী থাকার অনৈতিক আকাংখা দুর করার ক্ষেত্রেও এর যথেস্ট ভুমিকা আছে।
এখন মানা না মানা আপনার ব্যাপার। এমনকি আমার বক্তব্য পছন্দ না হলে সবগুলো কমেন্ট মুছেও দিতে পারেন - আমি কিছুই মনে করব না। আর গবেষণার কল্যানের কথাতো আগেই বলেছি - ভুল হলে এক সওয়াব, সঠিক হলে দ্বিগুন। সুতরাং গবেষণা চালিয়ে যান, শুধু ঘরে বসে চিন্তা না করে প্রত্যক্ষভাবে এতিমদের খোঁজ নিয়ে দেখুন তাদের এতিমখানায় মানবেতর জীবন যাপনের জন্য কোনটি বড় কারণ। ১% এর সম্পদ কমে যাওয়া নিয়ে পেরেশান হওয়ার আগে ৯৯% এর সম্পদহীন মানবেতর জীবন নিয়ে চিন্তা করতে অভ্যস্ত হোন।
আল্লাহ আমাদের কবুল করুন - আমীন।
আমি এই আলোচনা এখানেই শেষ করতে চাচ্ছি। বরং আর একটা বিষয়ের প্রতি আপনার দৃস্টি আকর্ষণ করতে চাই। সামনে আসছে রমজান এবং রমজানের মাসেই মানুষ জাকাত আদায় করে থাকে। আপনি যেহেতু নিজেকে আহলে কোরআন হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন সেহেতু আপনার কাছ থেকে কোরআনের ভিত্তিতে জাকাতের বিধান বিষয়ক লেখা আশা করছি। যাকাতের তিনটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় - ১. কোন কোন সম্পদ ২. কতটুকু পরিমানে জমা থাকলে ৩. কত হারে যাকাত দিতে হবে - কোরআনের আলোকে ব্যাখ্যা করে একটা পোস্ট দিন।
০৫ ই জুন, ২০১২ রাত ৮:২৭
মাহফুজশান্ত বলেছেন: (ভাইরে, ঠিক এই কথাটাই আমি বার বার বলতে চেয়েছি - কিন্তু আপনি এতিমের প্রতি আবেগকে সামনে এনে এড়িয়ে গিয়েছেন। দাদা থেকে নাতি কোন অংশ পাবে কি না তার কোন নিশ্চয়তা নাই। সুতরাং (পিতাকে বাদ দিয়ে সরাসরি নাতিকে অংশ দেয়ার কোন সুযোগও নাই) - এটা করা হলেই বরং বৈষম্য করা হবে। - বরং আপনার কথা মতই 'যিনি যেমন কর্ম করবেন, তিনি তেমনি ফল পাবেন।' - যে পিতা দ্বায়িত্বহীনেরমত নিজে আয় উপার্জনের ব্যাবস্থা না করে বাপের টাকায় বিয়ে করবে তার সন্তানরা সেই কর্মের ফলই ভোগ করবে।
এতক্ষণ আলোচনার পর যদি আপনি বলেন যে, আমি পিতাকে বাদ দিয়ে সরাসরি নাতিকে অংশ দেয়ার কথা বলেছি- তাহলে আমি সত্যিই আশ্চর্য না হয়ে পারছিনা। পিতা জীবিত থাকলে নাতিকে সরাসরি দেয়ার কথা আমি কখনই বলি নাই। পিতার অবর্তমানে তার অংশটুকু থেকে নাতি, নাতনিকে দেবার কথা বলেছি। এ থেকেই প্রমান হচ্ছে আপনি আমার বক্তব্য না বুঝেই চোখ বন্ধ করে চেঁচাচ্ছেন। আমি এ ধরনের কথা বলি নাই। আবারও ভাল করে দেখে নিন।
আপনি কি গোজামিলের বিষয়টা বুঝতে পারছেন না? আপনার একমাত্র দলিল 'আওলাদুন' শব্দের কয়টা অর্থ নিতে চান? যে কোন একটাই তো নিতে হবে - না কি? যদি হয় 'সন্তান' তাহলে নাতিকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন না, যদি বলেন 'বংশধর' তাহলে কাউকে বাদ দিতে পারবেন না। কারণ আপনি নিজেই বলেছেন পিতার মাধ্যমে নাতি বা নাতির মাধ্যমে পুতি কিছু পাবে কি পাবে না তার কোন নিশ্চয়তা নাই, আর উত্তরাধীকার আইন অনিশ্চয়তার ভিত্তিতে করাও হয়নি। অংশ যদি বংশধরের হয় তাহলে প্রত্যেক বংশধর সে নাতিই হোক আর পুতিই হোক সরাসরি দিয়ে দিতে হবে। অনিশ্চিত অবস্থায় পিতার হাতে রেখে দেয়া যাবে না। আপনি একই আয়াতের একই শব্দের অর্থ নিজের ইচ্ছেমত একবার 'সন্তান' এবং একবার 'বংশধর' নিতে পারেন না। এখানেই আমার আশংকা হয়েছে যে আপনি আসলে কোরআনের শিক্ষা অনুধাবনের চেস্টার চেয়ে যেকোন উপায়ে দাদার সম্পদে এতিম নাতির অংশ দেয়াকেই লক্ষ বানিয়েছেন কি না - আশা করি আমার আশংকা ভুল হবে।
"উত্তরাধিকার সম্পদ বন্টন সংক্রান্ত বিধান আসার পর এটি পরিপূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করে দেখানোর জন্য যে সময়ের প্রয়োজন- সেই সময়টুকু রাসূল (সাঃ) পান নাই। " - এইটা আর একটা খোড়া যুক্তি। আল্লাহ চাইলে উত্তরাধীকার আইন কি আর একটু আগে দিতে পারতেন না? আর একটা উদাহরণ সৃস্টির জন্য এমন কি সময় প্রয়োজন - ঐ সময় একজন সাহাবী(রা.) পিতার আগে সন্তান রেখে মৃত্যুবরণ করলে এবং তার উত্তরাধীকার বন্টনের বিষয়ে আল্লাহ কোরআনে বা রাসুল(স.) এর মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্ত দিলেইতো হয়ে যেত।
আল-কোরআনের আলোকে নিচের হাদিছগুলোর মর্মার্থ একটু বোঝার চেষ্টা করবেন কি?
'Laws of Inheritance (Al-Faraaid)' of Sahih Bukhari-
728: Narrated Huzail bin Shirahbil: Abu Musa was asked regarding (the inheritance of) a daughter, a son's daughter, and a sister. He said, "The daughter will take one-half and the sister will take one-half. If you go to Ibn Mas'ud, he will tell you the same." Ibn Mas'ud was asked and was told of Abu Musa's verdict. Ibn Mas'ud then said, "If I give the same verdict, I would stray and would not be of the rightly-guided. The verdict I will give in this case, will be the same as the Prophet did, i.e. one-half is for daughter, and one-sixth for the son's daughter, i.e. both shares make two-thirds of the total property; and the rest is for the sister." Afterwards we came to Abu Musa and informed him of Ibn Mas'ud's verdict, whereupon he said, "So, do not ask me for verdicts, as long as this learned man is among you."
733: Narrated Al-Aswad: Mu'adh bin Jabal gave this verdict for us in the lifetime of Allah's Apostle. One-half of the inheritance is to be given to the daughter and the other half to the sister. Sulaiman said: Mu'adh gave a verdict for us, but he did not mention that it was so in the lifetime of Allah's Apostle.
734: Narrated Huzail: 'Abdullah said, "The judgment I will give in this matter will be like the judgment of the Prophet, i.e. one-half is for the daughter and one-sixth for the son's daughter and the rest of the inheritance for the sister."
পুত্রের অবর্তমানে তার কন্যাকে অর্থাৎ পৌত্রিকে তার দাদার সম্পত্তি থেকে সাহাবিদের মধ্যে কেউ ১/৬ অংশ দিতে বলেছেন। আবার কেউ কিছুই দিতে বলেন নাই। হাদিছ বা ইসলামের ইতিহাস ঘেটে এর সমাধান পেতে হলে বিবেক দিয়ে আল-কোরআনের বাণী অনুধাবন করার চেষ্টা করতে হবে। সেই সময়েও ইবনে মাসুদ (রাঃ) এর মত সাহাবিও বংশধর হিসেবে পুত্রের অবর্তমানে তার কন্যা অর্থাৎ দাদার পৌত্রিকে তার সম্পত্তি থেকে অংশ দেয়ার পক্ষেই ছিলেন। সুতরাং পিতার অবর্তমানে দাদার সম্পত্তিতে তার বংশধর হিসেবে পৌত্র ও পৌত্রিরাও যে অংশ পাবার অধিকার রাখে তার প্রমাণ তো পাওয়া গেল। তাইনা? এরপর তো আর আমার মতের বিপক্ষে বলার কোন কারণ থাকতে পারেনা। তবে সেই অংশটা কতটুকু হবে তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করার এখনও অবকাশ আছে। আর এক্ষেত্রে আল-কোরআনের নির্দেশ মেনে নিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। অর্থাৎ পিতার অবর্তমানে তার পৈত্রিক সম্পত্তির অংশটি ছেলে, মেয়ে ও উত্তরাধিকারীদের মধ্যে আল-কোরআনের বন্টন নীতি অনুসারে ভাগ করে দেয়াই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।
এক্ষেত্রে আল-কোরআন ও হাদিছের নির্দেশনা অনুসারে সুষ্ঠুভাবে বন্টন করতে হলে পৈত্রিক সম্পত্তিকে (ধরি ৪৫,০০০ টাকা) প্রথমে তিন ভাগ করে তা থেকে ১ ভাগ (১৫,০০০ টাকা) মেয়েকে দিতে হবে। যেহেতু মৃত পুত্রের কোন ছেলে সন্তান নেই তাই পুত্রের নমের ২ ভাগ (৩০,০০০ টাকা) থেকে তার একমাত্র মেয়েকে (দাদার পৌত্রিকে) ১/২ অংশ (১৫,০০০ টাকা) দিতে হবে। যেহেতু মৃত পুত্রের পিতা-মাতা ও ছেলে সন্তান নেই, তাই তার অংশ থেকে ১/৬ অংশ অর্থাৎ ৩০,০০০ টাকার ১/৬ = ৫,০০০ টাকা আবার তার একমাত্র বোনকে দিতে হবে। এতে বোনের টাকার পরিমান দাঁড়াবে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত ১৫,০০০ + ভাইয়ের সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত ৫,০০০ টাকা= ২০,০০০ টাকা। অন্য কোন উত্তরাধিকারী না থাকায় বাকি অংশ (যদি থাকে) তা নিকটতম আত্মীয় হিসেবে বাবার বোন অর্থাৎ পুত্রের ফুফুকে দিতে হবে। এক্ষেত্রে যেহেতু পুত্রের ৩০,০০০ - (কন্যার ১৫,০০০ + বোনের ৫,০০০) = ১০,০০০ টাকা বাকি থাকছে, তাই এই টাকা নিকটতম আত্মীয় হিসেবে বর্তমান বাবার বোন অর্থাৎ পুত্রের ফুফুকে দিতে হবে। যদি মৃত পুত্রের এক ছেলে কিংবা ছেলে ও মেয়ে সন্তান উভয়েই থাকত তাহলে বোন পেত ১৫,০০০ টাকা এবং মৃত পুত্রের অংশের ৩০,০০০ টাকা ছেলে ও মেয়ের মাঝে নির্দিষ্ট অনুপাতে ভাগ করে দিতে হত।
নবী নন্দিনী হযরত ফাতিমা (রাঃ) আমাদের সকলেরই প্রিয় ও অনুসরণীয়।
এবার এই হাদিছগুলো ভাল করে লক্ষ্য করুন-
'Laws of Inheritance (Al-Faraaid)' of Sahih Bukhari-
718: Narrated 'Aisha: Fatima and Al 'Abbas came to Abu Bakr, seeking their share from the property of Allah's Apostle and at that time, they were asking for their land at Fadak and their share from Khaibar. Abu Bakr said to them, " I have heard from Allah's Apostle saying, 'Our property cannot be inherited, and whatever we leave is to be spent in charity, but the family of Muhammad may take their provisions from this property." Abu Bakr added, "By Allah, I will not leave the procedure I saw Allah's Apostle following during his lifetime concerning this property." Therefore Fatima left Abu Bakr and did not speak to him till she died.
720: Narrated Malik bin Aus: 'I went and entered upon 'Umar, his doorman, Yarfa came saying 'Uthman, 'Abdur-Rahman, Az-Zubair and Sa'd are asking your permission (to see you). May I admit them? 'Umar said, 'Yes.' So he admitted them Then he came again and said, 'May I admit 'Ali and 'Abbas?' He said, 'Yes.' 'Abbas said, 'O, chief of the believers! Judge between me and this man (Ali ). 'Umar said, 'I beseech you by Allah by Whose permission both the heaven and the earth exist, do you know that Allah's Apostle said, 'Our (the Apostles') property will not be inherited, and whatever we leave (after our death) is to be spent in charity?' And by that Allah's Apostle meant himself.' The group said, '(No doubt), he said so.' 'Umar then faced 'Ali and 'Abbas and said, 'Do you both know that Allah's Apostle said that?' They replied, '(No doubt), he said so.' 'Umar said, 'So let me talk to you about this matter. Allah favored His Apostle with something of this Fai' (i.e. booty won by the Muslims at war without fighting) which He did not give to anybody else; Allah said:-- 'And what Allah gave to His Apostle ( Fai' Booty) .........to do all things....(59.6) And so that property was only for Allah's Apostle . Yet, by Allah, he neither gathered that property for himself nor withheld it from you, but he gave its income to you, and distributed it among you till there remained the present property out of which the Prophet used to spend the yearly maintenance for his family, and whatever used to remain, he used to spend it where Allah's property is spent (i.e. in charity etc.). Allah's Apostle followed that throughout his life. Now I beseech you by Allah, do you know all that?' They said, 'Yes.' 'Umar then said to 'Ali and 'Abbas, 'I beseech you by Allah, do you know that?' Both of them said, 'Yes.' 'Umar added, 'And when the Prophet died, Abu Bakr said, ' I am the successor of Allah's Apostle, and took charge of that property and managed it in the same way as Allah's Apostle did. Then I took charge of this property for two years during which I managed it as Allah's Apostle and Abu Bakr did. Then you both ('Ali and 'Abbas) came to talk to me, bearing the same claim and presenting the same case. (O 'Abbas!) You came to me asking for your share from the property of your nephew, and this man (Ali) came to me, asking for the share of h is wife from the property of her father. I said, 'If you both wish, I will give that to you on that condition (i.e. that you would follow the way of the Prophet and Abu Bakr and as I (Umar) have done in man aging it).' Now both of you seek of me a verdict other than that? Lo! By Allah, by Whose permission both the heaven and the earth exist, I will not give any verdict other than that till the Hour is established. If you are unable to manage it, then return it to me, and I will be sufficient to manage it on your behalf.' "
তাহলে কি ধরে নিতে হবে যে, হযরত আলী (রাঃ), ফাতিমা (রাঃ) ও আব্বাস (রাঃ) এর ফারায়েজ সম্পর্কিত যথার্থ জ্ঞান ছিলনা!!?? নাকি হাদিছটি বিশ্বাসযোগ্য নয়? কাজেই শুধু হাদিছ বা ইতিহাস ঘাটলে সঠিক সমাধান মিলবে না। আল-কোরআনের দিকে বিশ্বীদেরকে ফিরে আসতেই হবে।
আপনার গবেষণার আর একটি ক্রটি ধরিয়ে দিচ্ছি। আপনি এতিমের প্রতি কর্তব্যের এবং আবেগের যথার্থ উপস্থাপনের পর তার সম্পুর্ণ দ্বায়ভার চাপিয়েছেন ইসলামী উত্তরাধীকার আইনের উপর। কিন্তু এ'ব্যাপারে আপনি কোন পরিসংখ্যান উল্লেখ করেন নি। আপনি যখন বিষয়টা নিয়ে গবেষণা করছেন তখন আপনাকে অনুরোধ করব আশে পাশের এতিমখানা গুলোতে একটু খোঁজ নেয়ার জন্য। যদি আপনি এই কস্টটুকু করেন তাহলে দেখবেন আপনার উল্লেখিত কারন অর্থাৎ ধনী দাদা চাচা থাকতেও শুধুমাত্র দাদার আগে পিতার মৃত্যুর কারণে এতিমখানায় আসা বাচ্চার সংখ্যা শতকরা ১ ভাগও হবে না। কারণ বড়লোকের নাতিরা তাদের আত্মিয়-স্বজন কার না কার কাছে আশ্রয় পেয়েই যায় - তাদেরকে এতিমখানার মানবেতর জীবন যাপন করতে হয় না। বাকি ৯৯ ভাগের ক্ষেত্রেই দেখবেন মুল কারণ তাদের দরিদ্র পিতাদের চাল-চুলোহীন অবস্থায় বিয়ে করা ( অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটা বউ ছেড়ে অন্য আর একটা বা এক সাথে একাধিক বিয়ে করা )। এবং কোন আয় উপার্জনের পথ বা সঞ্চয় না রেখেই মারা যাওয়া। অথচ কোরআনে পরিষ্কার ভাবে এ'ধরনের বিয়ে করতে নিষেধ করা হয়েছে, বরং সংযম সাধনা করতে বলা হয়েছে যতক্ষণ না আল্লাহ অভাব দুর করে দেন ততক্ষন পর্যন্ত।
পরিসংখ্যান পরিমাপ করে আইন বাস্তবায়ন করতে বসলে অনেক ক্ষেত্রেই ভুল সিদ্ধান্ত নেবার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। জানিনা বুঝবেন কিনা। তারপরও আপনার ত্রুটি অনুধাবনের জন্য এই হাদিছটি পেশ করলাম-
'Laws of Inheritance (Al-Faraaid)' of Sahih Bukhari-
737: Narrated Abu Huraira: Allah's Apostle said, "I am more closer to the believers than their ownselves, so whoever (among them) dies leaving some inheritance, his inheritance will be given to his 'Asaba, and whoever dies leaving a debt or dependants or destitute children, then I am their supporter."
যেহেতু আপনি আল-কোরআনের সহজ সরল বাণীকে মেনে নিতে পারছেন না, তাই আপনার কাছে এই হাদিছগুলোর কোন মূল্যই নেই। দরিদ্র পিতাদের বিয়ে করা যদি নিষেধ থাকত তাহলে এতিম ও গরীবের বন্ধু আমার প্রিয় দয়াল নবী ও রাসূল (সাঃ) ঋণগ্রস্ত মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধের এবং dependants or destitute children কে সহায়তা দেবার অঙ্গিকার করতেন না।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটা বউ ছেড়ে অন্য আর একটা বা এক সাথে একাধিক বিয়ে করা-
Click This Link
এরূপ পরিবেশের জন্যও মূলত আল-কোরআন বিমুখ চিন্তা-চেতনাই দায়ি। তাই আবারও আল-কোরআন মুখি হবার আহ্বান রইল।
আপনি যদি সত্যিই এতিম সমস্যার সমাধানের চিন্তায় গবেষণা করতেন তাহলে এর মুল কারণ আগে খুঁজতেন এবং তার সমাধান সেখানেই পেতেন যেখানে আল্লাহ প্রয়োজনে ক্রিতদাসী বিয়ে করতে হলেও সামর্থহীন অবস্থায় বা সামর্থের বাইরে বিয়ে করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু আপনার ঐ ৯৯% এর জন্য কোন চিন্তাই নাই - সকল দু:শ্চিন্তা কেবল ১%কে নিয়ে। কেন? এ'খানেও সেই আশংকাই এসে যায় - আপনি আসলেই এতিম সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানের জন্য গবেষণা করছেন নাকি যে কোন উপায়ে বড় লোকের নাতির জন্য দাদার সম্পদে অংশ দেয়ার চেস্টায় আছেন - আশা করি আমার আশংকা ভুল হবে।
ভাই, আপনি যে শুধু আন্দাজের উপরে কথা বলছেন তা আকলমন্দ ব্যক্তি মাত্রই বুঝে নেবেন। এই ৯৯% কে পথে বসানোর জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যে ঐ ১% অনেকাংশে দায়ি তা বোঝার ও স্বীকার করার মত সৎ সাহসও আপনার নেই। কারন আপনি জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে তদেরই পক্ষ নিয়েছেন যারা এতিমের রক্ত চুষে সম্পদ গড়তেও লজ্জিত নয়। মানুষ ভুল করতেই পারে। ভুল সুধরে নেয়াই মহত্বের পরিচয় বহন করে।
সাবধান! সাবধান!! - ইসলামের নীতি বা কোরআনের অর্থ/শিক্ষা ব্যাখ্যা করার সময় নিজের ব্যাক্তিগত, বংশগত, শ্রেনীগত কোন দুনিয়াবী স্বার্থের সামান্যতম প্রভাবও যদি থাকে তাহলে তা একটি মারাত্মক অপরাধ। আশা করি আল্লাহ আপনাকে এই অপরাধ থেকে মুক্ত রাখবেন - আমীন।
এখন মানা না মানা আপনার ব্যাপার। এমনকি আমার বক্তব্য পছন্দ না হলে সবগুলো কমেন্ট মুছেও দিতে পারেন - আমি কিছুই মনে করব না। আর গবেষণার কল্যানের কথাতো আগেই বলেছি - ভুল হলে এক সওয়াব, সঠিক হলে দ্বিগুন। সুতরাং গবেষণা চালিয়ে যান, শুধু ঘরে বসে চিন্তা না করে প্রত্যক্ষভাবে এতিমদের খোঁজ নিয়ে দেখুন তাদের এতিমখানায় মানবেতর জীবন যাপনের জন্য কোনটি বড় কারণ। ১% এর সম্পদ কমে যাওয়া নিয়ে পেরেশান হওয়ার আগে ৯৯% এর সম্পদহীন মানবেতর জীবন নিয়ে চিন্তা করতে অভ্যস্ত হোন।
না ভাই, এত কষ্ট করে এত বড় বড় দেয়া আপনার কোন কমেন্ট মুছার দরকার নাই। ছোয়াবের আশায় আমি গবেষণা করছি না। আমার এই আওয়াজ বঞ্চিত ও অসহায় এতিমের অধিকার দেয়ার মত সৎ কর্মের সাথে সম্পৃক্ত। শুধু ৯৯% সম্পদহীন মানব নয়, তাদের সাথে অসহায় এতিমের ন্যায্য অধিকার নিয়ে চিন্তা করি বলেই আজ তা অকপটে তুলে ধরেছি। মহান আল্রাহতায়ালার বিধানের সঠিক ও সার্বজনীন রূপ তুলে ধরা এবং সেই অনুযায়ী ফয়সালা করার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করাই আমার প্রধান লক্ষ্য। এটাই আমার বড় শান্তনা। ব্যাক্তিগত, বংশগত, শ্রেনীগত কোন দুনিয়াবী স্বার্থের প্রভাব বলয়ের মাঝে যে আপনি ঘুরপাক খাচ্ছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সাবধান! সাবধান!! যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তওবা করে আল-কোরআন বিরোধী এরূপ চিন্তা ও পথ থেকে সরে আসুন। মহান আল্লাতায়ালা যেন আপনাকে/ আপনাদের সেই তৌফিক দান করেন- আমীন।
আমি এই আলোচনা এখানেই শেষ করতে চাচ্ছি। বরং আর একটা বিষয়ের প্রতি আপনার দৃস্টি আকর্ষণ করতে চাই। সামনে আসছে রমজান এবং রমজানের মাসেই মানুষ জাকাত আদায় করে থাকে। আপনি যেহেতু নিজেকে আহলে কোরআন হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন সেহেতু আপনার কাছ থেকে কোরআনের ভিত্তিতে জাকাতের বিধান বিষয়ক লেখা আশা করছি। যাকাতের তিনটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় - ১. কোন কোন সম্পদ ২. কতটুকু পরিমানে জমা থাকলে ৩. কত হারে যাকাত দিতে হবে - কোরআনের আলোকে ব্যাখ্যা করে একটা পোস্ট দিন।
জী, আপনার অক্লান্ত পরিশ্রমের বদৌলতে যেন মহান আল্লাহতায়ালা আপানাকে আজ না হলেও কোন একদিন এতিমের ন্যায্য অধিকার সম্পর্কে সঠিক বুঝ দান করেন। আমি এখন এতিমের বিষয় নিয়ে ব্যস্ত। আগে ৯৯% এর মধ্যকার দুর্বল এতিমদের দাবি আদায়ের কাজটা কিছুটা হলেও এগিয়ে নেই। তারপর আপনার ১% সম্পদশালী মানুষদের নিয়ে ভাবা যাবে। তবে নিঃস্ব ও দুর্গতদের স্বার্থে জাকাতের বিধান সম্পর্কে নুতন করে আপনার যদি কিছু বলার থাকে, তা নিয়ে লিখে ফেলুন। সময়মত সাথে পাবেন।
ধন্যবাদ ও শুভকামনা-
৩২| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০০
মাথা নষ্ট সিপাহি বলেছেন: অনেক ক্যাচাল , তারপরও মন্তব্য করছি,
আল্লাহ তায়ালা নিজে অর্থনৈতিক ভাবে স্বয়ং সম্পুর্ন না হয়ে বিয়ে করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। আপনি কেন বাপের ধনের উপর ভরষা করে বিয়ে করলেন? আর বিয়ে করলেন বলেই তো ছেলে পুলে হল, আপনার সন্তানের ভবিষত নিশ্চিত করা আপনার দায়িত্ব , আপনার বুরা বাপের না।
সুতরং ক্যাচাল পাকায়েন না ।
তার পরও আল্লাহ এতিম নাতি পুতিদের জন্য ওসিয়ত এর বিধান রেখেছেন, সে অনুসারে দাদা তার সম্পত্তির একটা অংশ নাতি নাতনীদের দিতে পারেন( ওসিয়ত করতে পারেন)
আগে নিজে স্বয়ং সম্পুর্ন হন তার পর বিয়ে করেন। ঝামেলে হবে না, সম্পত্তি নিয়েও ক্যাাচা হবে না।
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:১৮
মাহফুজশান্ত বলেছেন: সন্তানের ভবিষত নিশ্চিত করা অবশ্যই বাপের দায়িত্ব। এখানে ভবিষ্যত নিশ্চিত করা সম্পর্কে কোন তর্ক হচ্ছে না।
আলহামদুলিল্লাহ, আমি এবং আমার সন্তানরা আমার বাবার সম্পদের উপরে মোটেই নির্ভরশীর নই। আল্লাহতায়ালা আমাকে যা দিয়েছেন, তাতেই আমি সন্তুষ্ট।
আমার বক্তব্য আমার অধিকার আদায়ের জন্য নয়। আমার প্রচেষ্টা সেইসব মৃত ভাই-বোনদের এতীম সন্তানদের জন্য যাদেরকে স্বয়ং আল্লাহ ঠকাতে নিষেধ করেছেন।
উত্তরাধিকার সম্পত্তি বন্টন করতে গিয়ে জ্যাতা সন্তানরা যদি তাদের বাপের সম্পত্তি পেতে পারে। তাহলে মরা ছেলের এতীম সন্তানরা কেন তার অংশটুকুর উত্তরাধীকার হওয়া থেকে বঞ্চিত হবে? মহান আল্লাহ তো তাঁর প্রেরিত গ্রন্থে এতীমদের হক রক্ষা করার নির্দেশই দিয়েছেন। অথচ আপনি এতীম নাতি নাতনীদেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে অলিখিত ও অপশনাল ওয়াসিয়তের উপর নির্ভরশীল রাখার পক্ষে কথা বলছেন!!?? অথচ ওসিয়ত করার বিধান যে নিকট আত্মীয়দের জন্য প্রযোজ নয়- তা কি আপনার জানা নেই? তাহলে কি এতীম নাতি নাতনীরা তাদের দাদা বা নানার নিকট আত্মীয় নয় বলে আপনি মনে করেন!?
সম্ভবত আপনি আমার লেখাটি এবং মন্তব্যের জবাবগুলো ভাল করে না দেখে ও বুঝেই মন্তব্য করেছেন।
ধন্যবাদ-
৩৩| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:০৬
মু জামান বলেছেন: (০৪:১১) নং আয়াতে "আওলাদ"- (أَوْلاَدِ - genitive masculine plural noun ) অর্থাৎ সন্তান-সন্ততি/ বংশধরদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং মৃত্যু হলেই যে মূল মালিকের সাথে তার বংশধরদের দূরত্ব সৃষ্টি করে দিয়ে তাদের হক থেকে- বিশেষ করে এতিমের হক থেকে তাদের বঞ্চিত করতে হবে, এমন কোন ইংগিতই আল-কোরআনে নেই। এটি মানুষের বানানো নীতি এবং যা অমানবিক।
সহমত
ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে মে, ২০১২ রাত ১২:২৫
আহমাদ জাদীদ বলেছেন: ইসলামে সবার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সঠিক-সুন্দর নিয়মকানুন আছে ঠিকই কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন করবে যারা, সেই মানুষই তো আজ নষ্ট হয়ে গেছে......হক মেরে খেতে চাওয়ার লোকের তো অভাব নাই......