![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এ জায়গাটা আমার বেশি প্রিয়- www.mahfuzmanik.com
গত ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বচনের আগে ১৩ ডিসেম্বর ইশতিহার ঘোষণা করে আওয়ামীলীগ। ইশতিহারে শিক্ষা বিষয়টি আসে গুরুত্ব সহকারে। ইশতিহারে শিক্ষার প্রথম দু/তিনটি লাইন-মানব সম্পদ উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষা,বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হবে । এ লক্ষ্যে যুগোপযোগী নতুন শিক্ষা নীতি প্রনয়ন করা হবে।
ইশতিহারের ওয়াদা অনুযায়ী ক্ষমতা গ্রহন করেই শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের কাজে হাত দেয় আওয়ামীলীগ । জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী কে সভাপতি ১৮ সদস্যের শিক্ষানীতি বাস্তবায়নকমিটি গঠিত হয়। কমিটির প্রথম সভা হয় ৩ মে ২০০৯ ; ১৯৭৪ সালের ড· কদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন এবং ; ১৯৯৭ সালের শামসুল হক শিক্ষা কমিটির প্রতিবেদন এর আলোকে এ কমিটি একটি শিক্ষানীতি প্রনয়ন করে। ২ সেপ্টেম্বরত্ম কাজ শেষ হয়। ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে কামটি খসড়া শিক্ষাণীতি জমা দেয়। সেটি এখন শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে http://www.moedu.gov.bd দেয়া আছে। ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত মতামত দেয়া যাবে।
এ শিক্ষানীতির প্রধান দিক হলো কাঠামোর পরিবর্তন। উচ্চ মাধ্যমিককে বাদ দিয়ে, প্রাথমিক,মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা এ তিন স্তরে শিক্ষাকে সাজানো হয়। অবশ্য এর বাইরে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার এখানে রয়েছে। সেটা প্রাথমিক শিক্ষার পুর্বের স্তর। প্রাথমিক শিক্ষা প্রথম শ্রেনী হতে অষ্টম পর্যন্ত, মাধ্যমিক শিক্ষা নবম,দশম,একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণী। এর পরের স্তর উচ্চ শিক্ষা।
এবারের শিক্ষানীতির আলোকে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে আমার এ সামনের প্রয়াস। খসড়া শিক্ষানীতির ২৯টি অধ্যায়ের মধ্যে দ্বিতীয় অধ্যায়টি প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে। শিক্ষানীতির মোট ৯৬ টি পৃষ্ঠার মধ্যে ৯-১৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা।
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাটি ড· কদরত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন এ ও ছিল। সেখানে এর বাস্তসায়নের জন্য শিশু ভবন ও শিশু উদ্যান নির্মানের কথা বলা হয়েছে। শিশু ভবন জন্ম থেকে ৩ বছর পর্যন্ত শিশুদের জন্য এবং শিশু উদ্যান ৩ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত শিশুদের জন্য।
এবারের শিক্ষানীতিতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাটি দেখানো হয়েছে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার মানসিক ও দৈহিক প্রস্তুতি হিসেবে। যেখানে ৫+ বয়সী শিশুরা ভর্তি হবে। থাকবে আকর্ষণীয় উপকরণ আর শিশুর মনের বিকাশের যাবতীয় ব্যবস্থা। সাথে সাথে স্ব ধর্মের ধর্মীয় উপসনালয়ে ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়টিও এসেছে।
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা শহরে চালু করা যত সহজ হবে গ্রামের ক্ষেত্রে ততটা সহজ হবেনা। শহওে বিদ্যমান প্রাইভেট স্কুর গুলোতে প্রথম শ্রেণীর পুর্বেই তিনটি শ্রেণী রয়েছে। প্লে, নার্সারী,কেজি ইত্যাদি নামে রয়েছে। এখানে আড়াই থেকে ৩ বছর বয়সী শিশরা স্কুলে যায়।
শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষাকে বলা হয়েছে সকল শিক্ষার ভিত্তি। জাতীয় জীবনে এর গুরুত্ব অত্যধিক। এটি হবে সার্বজনীন বাধ্যতামুলক এবং অবৈতনিক। এ স্তরের দায়িত্ব সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের। সংবিধানের ১৭ নং ধারাটি প্রনিধানযোগ্য-
রাষ্ট্র
ক) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধরিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক বালিকা কে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য,
খ) সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার
উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও সদিচ্ছা প্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য,
গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য,
কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করিবেন।
সংবিধানের এ ধারার আলোকে প্রাথমিক শিক্ষাকে এ শিক্ষানীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নেয়া হয়েছে। বিদ্যমান বিভিন্ন ধারার মধ্যে একটি সুসমন্বয়ের চেষ্টা করা হয়। শিক্ষানীতি প্রবর্তনের সময় বা এর পূর্বে একমুখী শিক্ষার যে তোড়জোড় শোনা গিয়েছিল, সে গর্জনের বর্ষণটা সেভাবে হয়নি। শিক্ষানীতিতে মাদরাসার কথা আসলে ও ইরেজী মাধ্যমের প্রতিষ্ঠানের কথা আসেনি।
২০১১-২০১২ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষায় ১০০ ভাগ শিক্ষার্থী ভর্তির কথা বলা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার স্তরকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত বাড়ানোর বিষয়টি যেমন আন্তর্জাতিক শিক্ষার সাথে মিল রয়েছে, তেমনি আবার্ প্রাথমিক শিক্ষার পর কেউ না পড়লে ও যাতে কিছু কওে খেতে সে ব্যবস্থা ও রয়েছে । এজন্যে প্রাথমিকের ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিষয়টি এসেছে।
শিক্ষক শিক্ষার্থীর একটি সুষম অনুপাতের কথা বলেছে।১ঃ৩০। ঝওে পড়া রোধে চমৎকার কিছূ সুপারিশ এ নীতিতে। শিক্ষার্থী উপবৃত্তি, দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা, স্কুল পরিবেশকে আনন্দদায়ক করে তোলা ইত্যাদি। অদিবাসী, প্রতিবন্ধী ও বনচিত শিশুদের কথা ও বাদ পড়েনি।
শিক্ষণ পদ্ধতি ও পরীক্ষা পদ্ধতিতে শিশু উপযোগী চিন্তা প্রতিফলিত হয়েছে। আমাদের শহরের শিশুরা যেখানে জন্মের পর থেকেই পরীক্ষার জ্বরে আক্রান্ত,সেখানে প্রথম শেণীতে ভর্তি পরীক্ষা বাতিল । এবং প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীতে বিদ্যমান কাঠামোগত পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিলের সুপারিশ শিশু বান্ধব শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করবে।
শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত যেগ্যতা চাওয়া হয়েছে এইচইসসি/মাধ্যমিক পাশ। শিক্ষানীতিতে উল্লেখিত শব্দ এইচইসসি দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে? যদি শব্দটি এসইসসি ধরি তাহলে তার সাথে যুক্ত মাধ্যমিক কথাটি বিদ্যমান শিক্ষা স্তর অনুযায়ী ঠিক আছে। তবে এ যোগ্যতা কিছুটা কম বলেই আমার কাছে মনে হয়। অবশ্য যদি এইচইসসি ধরি তার সাথের মাধ্যমিক কথাটি প্রস্তাবিত শিক্ষাস্তর অনুযায়ী ঠিক আছে।
এতে অনেকের বক্তব্য এ নীতি বাস্তবায়ন হলে প্রাথমিক শিক্ষকরা চাকরী হারাবেন তা ঠিক নয়। কারন তারা শুধু আগের মতই ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াবেন। ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।
প্রাথমিক শিক্ষার যা কিছু প্রয়োজন সব সুপারিশ এ নীতিতে রয়েছে। নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরীর সম্ভাব্য খরচ ও দেখানো হয়েছে। এখন বাকী এটি চুড়ান্ত করা আর বাস্তবায়ন। এক্ষেত্রে জনগন বা বিশিস্ট শিক্ষাবিদদের মতামতকে গ্রহন করে এটি চুড়ান্ত করা দরকার। বাস্তবায়নের রোডম্যাপ ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। এত লম্বা সময়ের কোন অবকাশ নেই। যত দ্রুত সম্ভব বাসতবায়নের কাজে হাত দেয়া উচিত। বিগত প্রতিবেদন গুলোর মত হিমাগারে এটি যাবেনা বলেই আমাদের বিশ্বাস।
প্রাথমিক শিক্ষা সরকারের চ্যালেন্জ। দেশের সার্বিক শিক্ষা এ সতরের উপরই নির্ভর করে। এ চ্যালেন্জকে গ্রহন করে সামনে পথের সফলতা আর ব্যর্থতা। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন এ শিক্ষার দ্বারাই বাস্তবায়ন হবে। এ শিক্ষানীতি সে পথেই নিয়ে যাবে বলে অমাদের বিশ্বাস।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:২১
এম এস জুলহাস বলেছেন: অনুর্বর মস্তিষ্কের ক'টা অবান্তর দাবী