![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাড়ী আখাউড়া। আখাউড়া রেলওয়ে হাইস্কুল থেকে পাস করে সোজা ঢাকায় চলে আসি। কিছুদিন সিটি কলেজে ছিলাম। ছিলাম জগন্নাথেও। তারপর টোকিওতে কাটিয়েছি সাড়ে ছয়টি বছর। দেশে ফিরে এসে চাকুরি আর সংসার নিয়ে আছি। দুটো ছেলে, মাহি আর রাহি। একজনের সাড়ে ছয় আর আরেকজনে সদ্য চার পেরিয়েছে। ওদের নামদুটো জুড়ে দিয়েই আমার নিকের জন্ম। বেশিরভাগ সময়কাটে সন্তানের সান্নিধ্য। ঘরকুনো মানুষ আমি। লেখালেখিতে হাতেখড়ি এই সা ইন বল্গে এসেই। কেউ বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিল ফিরিয়ে দেয়ার মত উদ্ধত্য আমার নেই। সবারই বন্ধু হতে চাই।
সিদ্ধান্তটি মাকে বাবা গতরাতেই জানিয়ে দিয়েছিলেন।
সকালবেলা মার মুখে তা শুনে সাবেরা খুব কান্নাকাটি করল কিন্তু সাব্বির রাগে ফুসতে থাকল।
শহরের যে পাড়াটিতে গত ১৮টি বছর চারজনের এই পরিবারটি কাটিয়েছে সেই পাড়াটি তাদেরকে ছাড়তে হচ্ছে কয়টি বখাটে ছেলের দৌড়াত্বে। অথচ ছেলেগুলোর পরিবার এই পাড়াটিতে আস্তানা গেড়েছে গত কয়বছর হয়। বখাটে ছেলেগুলোর মধ্যে একটি ছেলে সাবেরাকে পছন্দ করতে শুরু করলে সমস্যার শুরু হয় তখন থেকেই।
ছেলেটিকে শাসিয়ে কোন লাভ হয়নি বরন্চ সাব্বিরকে এদের হাতে হেনস্থা হতে হয়, আর ওর বাবা যখন ব্যপারটিতে অবহিত হন তখন এদের অসভ্যতা চরমে পৌচেছে। বিভিন্ন মাত্রায় অভিনব সব কায়দায় ওরা উত্যত্ত করতে থাকে পরিবারটিকে, বিশেষত পরিবারটির মেয়েটিকে। শেষমেষ সাবেরা স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দেয়।
ওদের নিরীহ গোছের বাবাটি এ অসহনীয় অবস্থা থেকে পরিত্রানের পাবার আশায় পাড়ার নেতৃস্থানীয় কয়জনের দারস্থ হলেও আশাহত হতে হয় তাকে। তাই গত কয়টা দিনে নিজের আর স্ত্রীর সাথে বোঝাপড়া করে পাড়া ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।
"মা কয়টা রাস্তার ছেলের জন্য আমরা আমাদের ঘর ছাড়তে যাব কেন?"
ওদের মা স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন না ব্যপারটি নিয়ে ছেলের সাথে কথা বলতে। ওদের বাবা মা দুজনেই এসেছেন বনেদি পরিবার থেকে। ঐতিহ্যগত পারিবারিক শিক্ষাদীক্ষা আর নিয়মকানুনের ছিটেফোটা এখনও রয়ে গেছে টানাটানির এই সংসারে। একই কারনে বাবার সামনে দাড়িয়ে তার বিরুদ্ধে কিছু বলার সুযোগটি ও নেই সাব্বিরের।
খুব অসহায় বোধ করে সাব্বির তার কেবলই মনে হতে কোনভাবে যদি ছেলেগুলো চরম শিক্ষা দেওয়া যেত। এরজন্য নিজের জীবনের ঝুকি নিতেও প্রস্তুত সে ।
পারিপার্শিক অবস্থার বাস্তবতায় যুক্তি বিবেচনার কাজ করতে থাকলে দুপুরদিকে একসময় রাগ থিতিয়ে আসে ওর।
সাবেরা আর সাব্বির দুজনেই মানসিকভাবে প্রস্তুত হয় ছোটকালের থেকে চেনা খুব আপন এই পাড়াটিকে ছেড়ে দেয়ার জন্য।
নতুন জায়গায় এসেই কিছু নিয়ম নির্ধারন করে দেন ওদের বাবা ওদের জন্য, বিশেষ করে সাবেরার জন্য। শুধু ঘরের বাইরে নয়, বারান্দায়ও যাওয়া যাবেনা ওর আর স্কুলে যেতে হবে বোরখা পরে। বিকেলবেলায় জানালার পর্দার ফাক দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে সাবেরা, মাঝে মাঝে খুব মন খারাপ করে ওর। নিজেকে আশা যোগায়, সব ঠিক হয়ে যাবে একসময়, শৈশবের দিনগুলোর মত সে ঘুরে বেড়াবে পাড়ার অলিতে গলিতে। যদিও সাবেরা জেনে গেছে যতই দিন যাবে পরাধীনতার শেকল আষ্টেপৃষ্ঠে চেপে ধরতে থাকবে ওকে। একসময় মাটিচাপা দিতে হবে বড় হয়ে পুরোপুরি স্বাধীন হওয়ার মিথ্যে স্বপ্নটিকে।
তারপরও নির্ঝন্ঝাট জীবন যাপনে মধ্যে হাফ ছেড়ে বাচে ছোট্ট এই পরিবারটি। কিন্তু বড় অঘটনটি ঘটে তখনি।
একদিন বিকেল বেলায় সাব্বির যখন তার কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত আর মা ব্যস্ত বিকেল বেলার মজার একটা খাবার তৈরিতে, তখনই সাবেরার আর্তচিতকারে দুজনেই ছুটে আসে। সাবেরা তখনও বিস্ফোরিত চোখে পর্দার ফাক দিয়ে বাইরের ভয়ংকর কিছু একটার দিকে তাকিয়ে আছে। সাব্বির পর্দার ফাক দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে উল্টোদিকের একটি ফ্লাটের বারান্দায় চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে দাড়িয়ে আছে একটি ছেলে। ভাল করে তাকাতেই চিনতে পারে ছেলেটিকে, সেই বখাটে ছেলেটি যার জন্য তাদেরকে তাদের দীর্ঘ সময়ের বাসস্থানটিকে ছাড়তে হয়েছে। মনে হচ্ছিল ছেলেটি যেন ওদের ফ্লাটের দিকেই তাকিয়ে আছে।
মা তড়িঘড়ি করে পর্দা ভালমত টেনে দেন, আর দুভাইবোনকে ধমক দিয়ে নিয়ে বসান ভেতরের দিকের একটি কামড়ায়। সাবেরা তখনও ভয়ে কাপছে
"মা বল এখন আমার কোথায় পালাব?"
রাগে ফুসতে ফুসতে একসময় চেচিয়ে উঠে সাব্বির।
"চেচামেচি না করে দরজা ঠিকভাবে লাগানো আছে কিনা একবার দেখে আয়"
মার কথা শুনে চমকে তাকায় সাব্বির মায়ের মুখের দিকে, বুক মোচড় দিয়ে উঠে। মা ভয় পাননি ত, মাকে এর আগে কখনো এমন বিচলিত হতে দেখেনি সাব্বির।
সন্ধার দিকে ওদের বাবা যখন অফিস থেকে ফিরলেন, তখনও কামড়াটি থেকে কেউ নড়েনি, সাব্বির উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল। শুনে বাবা কিছুই বললেন না, গম্ভীর হলেন শুধু।
পরের দিন অফিসে গেলেন না ওদের বাবা, শুয়ে বসে কাটালেন দুপুর অব্দি। মা বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছেন রান্না ঘরে। সাবেরা মাথা নিচু করে বসে আছে ড্রয়িংরুমে পেতে রাখা সোফার এককোনায়, ভাবখানা সকল অপরাধের অপরাধী যেন সে নিজেই। প্রত্যেকটা জানালা লাগানো, পর্দাগুলানও টেনেটুনে দেওয়া হয়েছে ঠিকমত।
বাসায় এক অসহনীয় পরিবেশ।
পাথর এই সময় কাটানোর জন্য একসময় সাব্বির পুরানো সব খবরের কাগজ জড়ো করল।
এবং সেটিই সুত্রপাত ঘটিয়েছিল ছোট্ট এই পরিবারটির জীবনে চমতকার একটি নাটকীয় অধ্যায়ের।
এর কিছুটা সময় পর দৃশ্যপট একেবারে পাল্টে গেল। হঠাত করেই, সাব্বির উঠে গিয়ে নাটকীয় ভংগিতে জানালা খুলে পর্দাগুলান সরিয়ে দিল। দৌড়ে মার কাছে গিয়ে আব্দার জানাল আজকের দুপুরবেলার মেন্যুতে তার পছন্দের একটি খাবার যেন থাকে। তারপর নিজে আরাম করে গিয়ে বসল বারান্দায় পেতে রাখা একটি দোলনা চেয়ারে। খুব কম সময়ে ঘরের দম বন্ধ করা পরিবেশটা হালকা হতে থাকল। তা যেন স্পর্ষ করল ছোট্ট পরিবারের সবাইক। বাবা সাব্বিরের পাশে এসে দাড়ান। মা মেয়ে একটু দুর থেকে দাড়িয়ে দেখে বাপ ছেলে কি যেন বলাবলি করছে। ওদের বাবা হঠাত করেই আগের মত স্বাভাবিক আচরনে ফিরে এসেছে বলে মনে হ্য়। কেননা একটু আগেই ওদের বাবা সাব্বির কাছে থেকে জেনে গেছেন পাড়ার ঐ বদ ছেলেটি এখন কোন এক খুনোখুনির মামলার পলাতক আসামী। খবরের পাতা উল্টাতে উল্টাতে খবরটি নজরে আসে সাব্বিরের।
ছেলেটি এখন পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
মা মেয়ে একটু দুর থেকে দাড়িয়ে দেখে বাপ ছেলে কি যেন বলাবলি করছে।
ছেলেটি এখন পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কাকতালীয়ভাবেই ঠাই নিয়েছে উল্টো দিকের ফ্লাটে।
সাব্বির তাকায় উল্টো দিকের ফ্লাটে ওর ঠোটের কোনে হাসি ঝলক দিয়ে উঠে, ওখানে লুকিয়ে থাকা যে ভয়ংকর ছেলেটি তাদের এই ছোট্ট পরিবারটিতে এতদিন অশান্তি আর দু:খ বয়ে নিয়ে এসেছিল সে এখন খাচায় আটকে পড়া ইদুরের মত। সাব্বির জানে ছেলেটি এখন দুর্বল এবং বড়ই অসহায়, কেননা আইন, সমাজ আর আশেপাশের মানুষগুলো এখন অবস্থান নিয়েছে তার বিরুদ্ধে।
২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ৯:৫৪
মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ প্রচেত্য মন্তব্যের জন্য। সব দুবৃত্তদের শেষ পরিনতি শেষ পর্যন্ত করুনই হয়ে থাকে।
৩| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ৯:৫৫
সিহাব চৌধুরী বলেছেন: ৫ । এইসব রাস্তার কুকুরদের এরকম হয় । কুকুরটির পরিনতি এবং পরিবারটির স্বস্তি শুনে ভাল লাগল ।
৪| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ১০:২৫
এক পশলা বৃষ্টি বলেছেন: এটি কি সত্য ঘটনা?
ভাল লেগেছে ।
৫
৫| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ১০:৩০
মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ এক পশলা বৃষ্টি, এটি একটি গল্প
৬| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ১০:৩১
মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ এক পশলা বৃষ্টি, এটি একটি গল্প
৭| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ১০:৩৮
এক পশলা বৃষ্টি বলেছেন: ওহ আচ্ছা
গল্প ভাল হয়েছে ।
৮| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ১০:৪৭
এরশাদ বাদশা বলেছেন: আপনি গল্প নাম দিলেও আসলে এটিই চরম বাস্তব। আমাদের সমাজে হামেশাই এরকম ঘটছে। গল্পকারে এ বাস্তব সত্য তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ মাহিরাহি।
৫
৯| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ২:৩০
উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: ভাল লেগেছে।
১০| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ৭:৪৯
বিবেক সত্যি বলেছেন: সুন্দর ছোটগল্প
৫
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ৯:৪০
প্রচেত্য বলেছেন: আমরা আসলেই অসহায় কিছু কিছু এই দুবৃত্তদের কাছে, অনেক সময় সাহসী হয়েও কাপুরুষের মত আচরণ করতে বাধ্য হয়, সবটাই যে বাধা
শেষে কি হল বদমায়েশ ছেলেটির
জানা আছে ?