নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আধার রাত্রি ভোরের অনেক বাকী স্বপ্ন দেখার সুযোগ এখন তাই

চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা

মাহিরাহি

বাড়ী আখাউড়া। আখাউড়া রেলওয়ে হাইস্কুল থেকে পাস করে সোজা ঢাকায় চলে আসি। কিছুদিন সিটি কলেজে ছিলাম। ছিলাম জগন্নাথেও। তারপর টোকিওতে কাটিয়েছি সাড়ে ছয়টি বছর। দেশে ফিরে এসে চাকুরি আর সংসার নিয়ে আছি। দুটো ছেলে, মাহি আর রাহি। একজনের সাড়ে ছয় আর আরেকজনে সদ্য চার পেরিয়েছে। ওদের নামদুটো জুড়ে দিয়েই আমার নিকের জন্ম। বেশিরভাগ সময়কাটে সন্তানের সান্নিধ্য। ঘরকুনো মানুষ আমি। লেখালেখিতে হাতেখড়ি এই সা ইন বল্গে এসেই। কেউ বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিল ফিরিয়ে দেয়ার মত উদ্ধত্য আমার নেই। সবারই বন্ধু হতে চাই।

মাহিরাহি › বিস্তারিত পোস্টঃ

থেমিসের মূর্তি অপসারণ - একটি ছোট গল্প

২৮ শে মে, ২০১৭ রাত ৮:২০

গুলশানের এক অভিজাত রেস্তোরায় বেশ কয়জন শিক্ষিত তরুণের জম্পেশ আড্ডা জমেছে মূর্তি অপসারণ নিয়ে। মজাদার খাবার চিবোতে চিবোতে সবাই মেতে উঠেছেন আড্ডায়। অধিকাংশ তরুণ ক্ষুব্দ মূর্তি অপসারণে, যারা এটিকে মনে করছেন প্রগতিশীলদের জন্য একটি আঘাত হিসাবে। ব্যতিক্রম তরুণদের একজন হাসিব।

বস্তুি উচ্ছেদের ঘটনায় অনেক গরিব মানুষ তার বসবাসের মৌলিক অধিকারটি হারায়। রাষ্ট্রের কি দায়বদ্ধতা আছে গরিব মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণের। বস্তুিতে আগুন লাগলে অনেকে সন্দিহান হন এটি পরিকল্পিত বলে। বস্তুি উচ্ছেদে বসবাসের মৌলিক অধিকারটি হারানো গরিব মানুষদের পক্ষে আমাদের দেশে কখনো কোন মিছিলে নেমেছিলেন কি প্রগতিশীলরা - হাসিব মন্তব্য করে।

স্বম:স্বরে প্রতিবাদ করে উঠে বেশ কয়জন। পুরোপুরিই অপ্রাসংগিক - একজন প্রতিবাদ করে বলে।

হজরত আলী এবং তার মেয়ে যখন একসাথে ট্রেনে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল বিচার না পেয়ে, তখন কি থেমিসের মূর্তির প্রতি যে মমত্ব প্রকাশ করা হয়েছিল, সেই একই মমত্ব প্রকাশ করা হয়েছিল কি নির্যাতিত ছোট্ট মেয়েটির জন্য। মূর্তি অপসারণের সাথে হজরত আলী বিচার না পাওয়াটা কতটা প্রাসংগিক - হাসিব আবার মন্তব্য করে।

অপ্রাসংগিক ব্যপারগুলো টেনে এনে তুই শুধু শুধুই মূর্তি অপসারণটাকে ডিফেন্ড করতে চাইছিস - আরেকজন বলে উঠে।

আমাদের আরেক বন্ধু সবুজের বর্তমান অবস্থার ব্যপারে কারো কাছে কোন তথ্য আছে কি! শুধায় আরেক তরুন জাহিদ।

জেল থেকে বেরিয়ে আবার কুকর্মে মনোনিবেশন করেছে - একজন হাসতে হাসতে উত্তর দেয়। তার মামা একজন নামকরা বুদ্ধিজীবি, কানেকশন অনেক গভীরে, জেলে আটকে রাখা কোনভাবেই সম্ভবপর ছিল না।
হাসিব মৃদু হেসে বলে, সেই প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবি মামার কি কোন বক্তব্য এসেছে কি মূর্তি অপসারণ নিয়ে!

থেমিসের মূর্তি একটি প্রতীক হিসাবে কাজ করছে, গনতন্ত্রের প্রতীক, স্বাধীন চিন্তার প্রতীক, স্বাধীনভাবে বেচে থাকার প্রতীক হিসাবে। একজন যুক্তি প্রদর্শন করে।
হাসিব হাসতে হাসতে বলে, সেভিয়েত রাশিয়ায় লেনিনের মূর্তি, মৃতদেহ সবকিছুই ছিল শক্তিশালী প্রতীক। সেভিয়েত রাশিয়া ভেংগে গেলে, ভেংগে ফেলা হয় লেনিনের মূর্তিও। ইউক্রেনের কিয়েভে লেনিনের মূর্তি ভেংগে টয়লেট বসায় জনগন। জনগনের মতে এই একই লেনিন ছিল শোষনের প্রতিক, আরো একশটির বেশি লেনিনের মূর্তি ভাংগা হয়। সবাই মূর্তিকে কাজে লাগায় নিজের ফায়দা হাসিলের জন্য।

তারপরও আমাদের মত প্রগতিশীলদের কাছে মূর্তির অপসারণ একটি আঘাতের মতই - একজন মন্তব্য করে।
তোর বাবার মাসিক আয় কত? জাহিদ শুধায়।
এক কোটি টাকার কম না, মৃদু হেসে জবাব দেয় সেইজন।
তোর বাবার কাপড়ের কারখানা যে মেয়েগুলো কাজ করে তাদের মাসিক বেতন ১০ হাজার টাকারও কম। যে সব মেয়েদের হজরত আলীর মেয়ের মত কোন নিরাপত্তা নেই এবং নির্যাতিত হলেও বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তোদের মাথা ব্যথা নেই সেসব মেয়েদের নিয়ে, তোদের মাথাব্যথা মূর্তি নিয়ে, আর মাথাব্যথা তোদের মত বিত্তশালী মেয়েদের স্বাধীনতা নিয়ে। আর বিত্তশালী মেয়েদের স্বাধীনতা হল স্বল্প বসনে চলাফেরা করা আর রাত জেগে বয়ফ্রেন্ডদের সাথে পার্টি করা। হাসিব কিছুটা রেগে গিয়েই বলে।

মূর্তি বসানোর সময় জনগনের মতামত নেয়া হয়েছিল কি, কতটাকা খরচ হয়েছিল মূর্তিটির বসানোর জন্য।

ওয়েটার আসে বিল নিয়ে।

কত টাকার বিল গুনতে হল।

৫০০০ টাকার বেশি।

কয়েক ঘন্টার বক বকানি যোগ ৫০০০ টাকা। ফলাফল শুন্য।

ঠিক এই কয়টি ঘন্টাই একটি শিশু হয়ত লেগুনায় কিংবা কোন কারখানায় নিয়োজিত আছে কঠোর শিশুশ্রমে।

আমাদের এই জেনারেশনের সবারই যখন উচিত ঐ শিশুগুলোর মত কঠোর পরিশ্রম করা, তখন আমরা বেহুদা সময় নষ্ট করছি। আমাদের নেতৃত্বে যারা আছেন তাদের উচিত আমাদেরকে নেতৃত্ব দেয়া কঠোর পরিশ্রমে যেন আগামীতে একটি সুন্দর দেশ গড়তে পাড়ি। সেখানটাই তারা আমাদের উতসাহিত করছেন, স্বাধীনভাবে জীবন যাপনের নামে আমোদ ফূর্তিতে গা ভাসিয়ে দেয়ার জন্য।

এই জম্পেশ আড্ডায় আমিও তোদের সাথী, এই সময় এবং অর্থ নষ্ট করায়, হাসিব নরম সুরে বলে।

আমরা মধ্যবিত্তের লোকজন তোদের মত উচ্চবিত্তদের সাথে সাথে চলাফেরা করি, স্বপ্ন দেখি জাকজমকপূর্ণভাবে জীবন যাপনের, মাঝে মাঝে মূর্তি নিয়ে ফূর্তি করার মতই নিজেদেরকে তোদের একটি অংশ ভেবে আমোদিত হই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হয় উচ্চবিত্তদের কষা ছকে, আমরা কাজ করি গুটি হিসাবে। বাকী জীবন আমরা ধুকতে ধুকতে মরি সংসারের ঘানি টানতে টানতে।

ইতিমধ্যে হাসিব ওয়েটারকে দিয়ে কতগুলো পলিথিনের ব্যাগ আনিয়ে নেয়। ধরিয়ে দেয় প্র‌ত্যেকের হাতে।

চল রাস্তায় নেমে জন্জাল অপসারনে লেগে পড়ি। আমাদের দেশটা দিনকে দিন জন্জালে পরিণত হচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর গুলশানের একটি রাস্তায় একটি অদ্ভুদ দৃশ্যের অবতারণা হয়।

কতগুলো তরুনকে দেখা যায় রাস্তার আশেপাশের আবর্জনা পরিস্কার করতে।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মে, ২০১৭ রাত ৮:৩০

দ্যা ফয়েজ ভাই বলেছেন: আপনার কথার সাথে একমত।আমরা ন্যায়বিচার না খুঁজে তার জন্য প্রতিবাদ না করে আমরা ন্যায়বিচারের প্রতীক নিয়ে লাফালাফি করছি।
হাসিবের মত কয়েকজন সত্যই প্রয়োজন।

২৯ শে মে, ২০১৭ সকাল ৭:৫০

মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

২| ২৮ শে মে, ২০১৭ রাত ৯:১৭

এস,এম,মনিরুজ্জামান মিন্টু বলেছেন: আমার মনে হয় বিষয়টা ইগো জনিত। যেহেতু মুর্তি অপসারনের দাবীটা প্রথম হেফাজতের মুখ দিয়ে বেড়িয়েছে। তাই তথাকথিত প্রগতিশীলরা ইগো সমস্যায় ভুগীতেছে।

বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ জনগনের কথা বিবেচনা না করে, যারা ঐ জড় বস্তটা সর্বোচ্চ আদালতের সামনে স্থাপন করে দেশ জুড়ে এমন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, আইনের আওতায় এনে তাদের সাস্তির ব্যবস্থা করা উচিৎ।

এই পবিত্র রমজান মাসে মুর্তিওয়ালা ঐ লোকটাকে আল্লাহ জ্ঞান দান করুন। উনি যেন যেখানে সেখানে এরকম মুর্তি প্রসব না করেন।

ঐসব মুর্তির টাকা বাংলাদেশের অন্যান্য উন্নয়নমুলক কাজে ব্যায় হোক। দেশের অনেক জায়গায় এখনো যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক খারাপ। এমন এমন এলাকা আছে সামান্য একটা বক্স কার্লভার্টের জন্য চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এইসব জরুরী সমস্যাগুলো সমাধান না করে মুর্তির নামে এমন অর্থ অপচয় করা আমাদের মানায় না। বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্যকে তুলে ধরার জন্য বর্তমানে যে ভাস্কর্যগুলো বিদ্যমান আছে তাহাই যথেষ্ট। ঐগুলোকে ভালোভাবে রক্ষণাব্ক্ষেণ করা হোক।

২৯ শে মে, ২০১৭ সকাল ৭:৫১

মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

৩| ২৮ শে মে, ২০১৭ রাত ৯:৫৪

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: াল্লাগছে লেখা

২৯ শে মে, ২০১৭ সকাল ৭:৫০

মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

৪| ২৯ শে মে, ২০১৭ রাত ১:২২

মনস্বিনী বলেছেন: লেখাটি ভাল লাগল।

৫| ২৯ শে মে, ২০১৭ ভোর ৪:২২

ধ্রুবক আলো বলেছেন: মূর্তি বসানোর সময় জনগনের মতামত নেয়া হয়েছিল কি, কতটাকা খরচ হয়েছিল মূর্তিটির বসানোর জন্য।

এই ঘটনার জন্য এই ইস্যু পাতা হয়েছে আর আমরা জনগণ স্রোতে গা ভাসিয়ে চিৎকার করে বেড়াই। কাজের কাজ কোনোটাই করি না।

লেখা ভালো লাগছে। +++

২৯ শে মে, ২০১৭ সকাল ৭:৫১

মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

৬| ২৯ শে মে, ২০১৭ সকাল ১১:১০

বিদ্রোহী সিপাহী বলেছেন: জনগণের মতামত বাংলায় কোনদিন প্রাধান্য পাবে বলে মনে হয় না।
লেখা ভাল লাগল ভাই।

২৯ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৫

মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

৭| ০৫ ই জুন, ২০১৭ রাত ৮:০৪

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: ধন্যবাদ খুব সুন্দর করে লিখেছেন ।
শুভেচ্ছা রইল ।

০৮ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৭

মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.