নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আধার রাত্রি ভোরের অনেক বাকী স্বপ্ন দেখার সুযোগ এখন তাই

চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা

মাহিরাহি

বাড়ী আখাউড়া। আখাউড়া রেলওয়ে হাইস্কুল থেকে পাস করে সোজা ঢাকায় চলে আসি। কিছুদিন সিটি কলেজে ছিলাম। ছিলাম জগন্নাথেও। তারপর টোকিওতে কাটিয়েছি সাড়ে ছয়টি বছর। দেশে ফিরে এসে চাকুরি আর সংসার নিয়ে আছি। দুটো ছেলে, মাহি আর রাহি। একজনের সাড়ে ছয় আর আরেকজনে সদ্য চার পেরিয়েছে। ওদের নামদুটো জুড়ে দিয়েই আমার নিকের জন্ম। বেশিরভাগ সময়কাটে সন্তানের সান্নিধ্য। ঘরকুনো মানুষ আমি। লেখালেখিতে হাতেখড়ি এই সা ইন বল্গে এসেই। কেউ বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিল ফিরিয়ে দেয়ার মত উদ্ধত্য আমার নেই। সবারই বন্ধু হতে চাই।

মাহিরাহি › বিস্তারিত পোস্টঃ

এলিয়েনের গল্প

০৪ ঠা জুন, ২০২০ রাত ১০:০৩

আবিদ কল্পনাও করতে পারেনি যে পৃথিবীকে এরকম বিকট চেহারায় পাবে। ওরা যখন পৃথিবী ছেড়েছিল তখন পৃথিবী ছিল সবুজ শ্যামল। হয়তবা ওরা যে জায়গায় ল্যন্ড করেছে কেবলমাত্র ওই জায়গাটিই ওরকম। মরুভুমির চাইতেও বিবর্ণ আর প্রানহীন।
তোমার ধারনা আছে কত বছর আগে আমরা পৃথিবী ছেড়েছিলাম। সহকারি জামিলের দিকে তাকিয়ে আবিদ জিজ্ঞেস করল।
"১০০ বছর হবে।" ষ্পেস মিশনে ওরা সব মিলিয়ে ১০ জন সামিল হয়েছিল। মিশনটি ছিল অনেক মিলিয়ন মাইল দুরের একটি গ্রহে যেখানে ওরা আশা করেছিল জীবনের সন্ধান পাবে। ওদেরকে আশাহত হতে হয়নি। জীবনের সন্ধান না পেলেও একজাতীয় আঠালো উদ্ভিদের সন্ধান পেয়েছে ওরা।

ওদেরকে পথপ্রদর্শন করে নিয়ে যাওয়া হল একটি কক্ষে, দেখতে অনেকটা প্রিজন সেলের মত। বেশ কয় ঘন্টা পর একজনকে কাছে পেয়ে বাইরে ঘুরে বেরোনের ইচ্ছে প্রকাশ করল আবিদ।
উত্তর এল নিষেধ আছে।
"কেন?"
"আপনারা আমাদের বন্দি।"
"মানে। প্রায় চিতকার করে উঠল আবিদ।"

পরের দিন আদালতের মত একটা জায়গায় ধরে নিয়ে আসা হল ওদেরকে। বিচারকের চেয়ারে বুড়োমত একজন লোক বসে আছে।
ওদেরকে হতবাক করে দিয়ে জুরিদের সামনে বিচার কাজ শুরু হল। আমরা ত মিশন সফলভাবে সেরেই ফিরে এসেছি, আমাদের অপরাধ, ক্ষিপ্ত আবিদ চেচিয়ে বলল। ওদেরকে পাঠিয়েছিল বিশ্ব মহাকাশ সংস্থা। যারা কাজ করে পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলো অনুমোদিত ফরমুলা অনুসারে।

তোমরা গ্রহটি আক্রমন করে কেবল ক্ষান্ত হওনি ধংস করেছ সামনে যা পেয়েছ তাই। বিচারকের কথা শুনে চক্ষু ছানাবড়া হওয়ার জোগাড় আবিদের।
গোটা ১০ বছর দিনরাত পরিশ্রম করে পৃথিবীর মানুষের বসবাসযোগ্য একটি ক্ষুদ্র কলোনি গড়তে গিয়ে ওদের জান বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল, আর এব্যাটা কিসব আবোল তাবোল বকছে। আমাদের গ্রহটার সাথে তোমরা ভাল আচরন করনি।
এবার সবকিছু স্পষ্ট হতে শুরু করল আবিদের কাছে। তোমরা তাহলে মানুষ নও এলিয়েন। আমাদের গ্রহের সর্বত্রই আমাদের উপস্থিতি ছিল।
আমাদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল যে আমরা সহজেই অন্য কিছুতে রুপান্তরিত হতে পারি আর একটি বৈশিষ্ট্য হল যে তোমাদের চাইতে দ্রুত সবকিছুই আমরা সহজেই শিখে নেই। অন্যভাবে বললে শুধুমাত্র একটি আদলে নয় অনেকগুলো আদলে আমরা আমাদের প্রকাশ ঘটিয়ে থাকি। তাই কলোনি গড়তে গিয়ে তোমরা যা কিছু নষ্ট করেছ পাহাড়, উদ্ভিদ কিংবা মাটি, তার সাথে সাথে আমাদেরও বিনাশ ঘটেছে। তোমাদের অলক্ষ্যেই তোমাদের কাছ থেকে সবধরনের জ্ঞান জড়ো করা শুরু করি আমরা। তোমাদের মতই স্পেসশীপ গড়ে তুলে পাড়ি জমাই তোমাদের গ্রহে, পৌছে যাই পৃথিবীতে।

"তারপর কি হল? পৃথিবীর মানুষগুলো, শহরগুলো আর সবকিছুর?" উত্তেজিত হয়ে পড়ে আবিদ।
তারপর ক্রোধে দুঃখে ফেটে পড়ে আবিদ, চিৎকার করে বলতে থাকে, তোমরা ওদের কি করেছ?

দীর্ঘস্বাস ফেলল বুড়ো মানুষটি অর্থাৎ এলিয়েনটি।
জান, যখনই পৃথিবীর ফুল, পাখি, শিশু আর সুন্দর সব নৈসর্গের ব্যপারে আমরা জানতে পারলাম তখনই তোমাদের সুন্দর পৃথিবী দেখার ইচ্ছে জেগে উঠে, পাশাপাশি মানবিক গুনগুলিরও বিকাশ শুরু হয় আমাদের মাঝে।
মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, মায়ের কোলে শিশুর হাসি, বৃদ্ধদের প্রতি তোমাদের শ্রদ্ধা ইত্যাদি মানবিক গুনগুলো প্রচন্ড নাড়া দেয় আমাদের।
একসময় পৃথিবীর পথে যাত্রা শুর করি আমরা।

আমাদের স্পেসসীপ যখন পৃথিবী স্পর্শ করল তখন আমরা উন্মুখ হয়ে পড়লাম পৃথিবীর প্রথম সৌন্দর্য দেখার জন্য।
পৃথিবীর চেহারা দেখে চমকে উঠলাম, একি চেহারা পৃথিবীর, চারিদিকে ধংসযজ্ঞ, ফুল, পাখি, শিশু কোথাও কিছু নেই। কোথাও সবুজের সামান্য ছোয়াটুকুও নেই। সকাল, বিকাল কিংবা সন্ধায় পৃথিবীর একই চেহারা কেবল রাত্রিবেলায় বিষাদময় চাদ আকাশে ঝুলে থাকে।
কি ধরনের হতাশ আমরা হয়েছিলাম তা তোমাকে বুঝাতে পারব না।
যাহোক এই ধংসস্তুপের মাঝেই আবাস গড়ে তোলার পর পৃথিবীর কপালে কি ঘটেছিল তা জানার জন্য আমরা কাছে লেগে পড়লাম।
কিছুদিনের মধ্যে সবকিছু পরিস্কার হয়ে যায়। নানান অজুহাতে দেশে দেশে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছিল শেষে শুরু হয় হয়েছিল নিউক্লিয়ার ওয়ার। মাত্র কয়টা দিনেই পৃথিবী ধংস হয়ে গিয়েছিল।
তোমাদের পরষ্পরের প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ, মাত্রাতিরিক্ত লোভ লালসা সবকিছুই ধবংস করে দিয়েছিল।
আমি অবাক হয়েছি শিশুর, ফুল কিংবা প্রিয়জনের প্রতি তোমাদের ভালবাসা তোমাদের পৃথিবীকে বাচিয়ে রাখতে পারেনি। অথচ একটি শিশুর প্রতি ভালবাসাই যথেষ্ট ছিল পৃথিবীকে বাচিয়ে রাখার জন্য।
হঠাত করেই বুড়ো বিচারকটি পকেট থেকে কি জানি বার করে সবার সামনে মেলে ধরে।
ইলেক্ট্রিক এলবাম। ওটা আবিদের।
অন করতেই আবিদের তিন বছরের মেয়েটির ছবি ভেসে ওঠে।
বাবা তুমি ভাল কেমন আছ.........অডিও বেজে উঠে।
অনবরত চোখের জল পড়তে থাকে আবিদের চোখ বেয়ে।
একসময় বুড়ো বিচারকও চমকে উঠেন চোখে হাত দিয়ে, পানিতে তার চোখও ভিজে গেছে।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুন, ২০২০ রাত ১২:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: বাহ দারুন ভালোবাসাময়।
দারুন আবেগময়।
চাই না কোনো দিন নিউ ক্লিয়ার ওয়ার হোক।

০৫ ই জুন, ২০২০ সকাল ৯:৪২

মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

২| ০৫ ই জুন, ২০২০ রাত ১:১০

নতুন বলেছেন: আমি অবাক হয়েছি শিশুর, ফুল কিংবা প্রিয়জনের প্রতি তোমাদের ভালবাসা তোমাদের পৃথিবীকে বাচিয়ে রাখতে পারেনি। অথচ একটি শিশুর প্রতি ভালবাসাই যথেষ্ট ছিল পৃথিবীকে বাচিয়ে রাখার জন্য।

খুবই ভালো লাগলো কথাটি।

আসলেই ১ টি শিশুর প্রতি যেই ভালোবাসা থাকে সেটা দিয়েই পৃথিবিকে ভালো বানিয়ে ফেলা যায়।

০৫ ই জুন, ২০২০ সকাল ৯:৪২

মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

৩| ০৫ ই জুন, ২০২০ ভোর ৪:২৪

রুদ্র নাহিদ বলেছেন: মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু মানুষ নিজে।

০৫ ই জুন, ২০২০ সকাল ৯:৪৩

মাহিরাহি বলেছেন: ঠিক বলেছেন।

৪| ০৫ ই জুন, ২০২০ সকাল ৭:০৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অসাধারণ লেখা

০৫ ই জুন, ২০২০ সকাল ৯:৪২

মাহিরাহি বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.