![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
poet-novelist-editor & development researcher.
অক্টোবর মাস 'ব্রেস্ট ক্যান্সার মাস'। বিষয়টি আজ আর অজানা,অচেনা নয়। অনেকেই যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। কিন্তু, তবু এখনো এমন অনেকেই আছেন,এ ব্যাপারে একটা ঢাকঢাক গুড়গুড় মনোভাব পোষণ করেন। আর এটি নিয়ে লুকোচুরিরো কিছু নেই। অন্য দশটি রোগের মতো এটিও একটি রোগ তবে জটিল রোগ। নেট খুলে, একটু পড়াশুনো করলেই যদিও জানা যায়, তবু বলে রাখি, ব্রেস্ট ক্যান্সার মানে কিন্তু একটা রোগ নয়। মোটের উপর তিনটি টাইপ, তারপরেও অনেকগুলো সাব টাইপ আছে। তাই, গোটা ব্যাপারটা ডাক্তারের ওপর ছেড়ে দেওয়াই ভালো।
স্তন ক্যান্সার কী
স্তন ক্যান্সার একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই এ রোগ হতে পারে, তবে মহিলাদের মধ্যেই এর প্রবণতা বেশি দেখা যায়। স্তন ক্যান্সার বর্তমানে পশ্চিমাবিশ্বসহ বেশিরভাগ অঞ্চলের নারীদের মধ্যে রীতিমতো আতঙ্কের নাম। তবে আশার কথা হলো সঠিক সময়ে এর নির্ণয় করা গেলে সহজেই এর চিকিৎসা করতে পারি।
নিজে চেক করুন এবং কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
প্রথমেই সেই পুরনো কথা, প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর। তাই আগে থেকেই সতর্ক হোন। প্রতি মাসে নিজের শরীরটা একবার ভালো করে পরীক্ষা করুন। কোন অস্বাভাবিক মাংসপিন্ড,(ব্যথাহীন বা ব্যথাযুক্ত যাই হোক না কেন), কোন স্থান অস্বাভাবিক লাল হয়ে থাকলে, বৃন্তটি ইনভার্টেড হয়ে গেলে, বা স্তনের চামড়াটি কমলালেবুর খোসার মতো ছিদ্রযুক্ত দেখালে, অথবা, স্তনবৃন্ত থেকে কোন রস নির্গত হলে, সময় নষ্ট না করে,আগে কোন ব্রেস্ট থেরাপিস্ট কে দেখান। কার কবে,হয়েছিল,সে কি করেছিল,সেটা দিয়ে কিন্তু অন্য আর এক জনের রোগ বিচার করা যায় না। প্রতিটি ব্রেস্ট ক্যান্সার চরিত্রগত ভাবে আলাদা হতে পারে।
পুরুষেরাও আক্রান্ত হতে পারে
শুধু মহিলারাই নন,এই রোগের শিকার কিন্তু পুরুষেরাও হন। নিজের চোখে দেখেছি।কোন পুরুষ আক্রান্ত হলে,তার বিপদ বেশিই থাকে।
কাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে
• পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি
• ৬০ বছর বয়সের বেশি মহিলাদের
• একটি স্তনে ক্যান্সার হলে অপরটিও আক্রান্ত হতে পারে
• মা, বোন অথবা মেয়ের স্তন ক্যান্সার থাকলে
• জীনগত (Genes) কারণে
• রশ্মির বিচ্ছুরণ থেকে (Radiation Exposure)
• অস্বাভাবিক মোটা হলে
• অল্প বয়সে মাসিক হলে
• বেশি বয়সে মেনোপজ হলে (Menopause)
• বেশি বয়সে প্রথম বাচ্চা নিলে
• মহিলারা যারা হরমোন থেরাপী নেন
• মদ পান করলে ইত্যাদি
কী করতে হবে
সন্দেহ হলে,ডাক্তার এফ এন এ সি ' মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের কথা বলতে পারেন। বেশি বুঝে,অনেকেই ভাবেন,সূঁচ ফোটালেই রোগ দ্রুত ছড়াবে। নিজেরা একটু কম বুঝলে,ডাক্তারের পক্ষে কাজ টা সুবিধার হয়।
তারপর,ধরুন রোগ ধরা পড়লো। রোগের ব্যাপ্তি অনুসারে,ডাক্তার নির্দেশ দেবেন,লাম্পেক্টমি(শুধু রোগগ্রস্ত মাংসপিন্ডটি ও তার চারপাশের কিছু টিস্যু বাদ),অথবা,মাস্টেক্টমি(পুরো ব্রেস্ট ও চেস্ট মাসল সহ,বগলের লিম্ফ নোডস বাদ) করাতে। ডাক্তার তাঁর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কেমোথেরাপি চালু করবেন। অবশ্যই কেটে ফেলা টিস্যুটির আবার বায়োপসি হবে।
অনেকেই খরচের ভয়ে,বা ডাক্তার টাকা খাচ্ছেন ভেবে,এই টেস্টটি এড়িয়ে যান। এটি কেন করা জরুরী, সে বিষয়ে কিছু বলা দরকার। ব্রেস্ট ক্যান্সার মোটের উপর তিন প্রকার।(বলে রাখা ভালো, এই 'প্রকার'টি নির্ধারণ চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।)
১.হরমোন পজিটিভ ব্রেস্ট ক্যান্সার
২.হার 2 পজিটিভ ব্রেস্ট ক্যান্সার
৩.ট্রিপল নেগেটিভ ব্রেস্ট ক্যান্সার
প্রতিটি টাইপের আবার অসংখ্য সাব টাইপ আছে। গবেষণাকাজ এখনো চলছে। আর এই টাইপের ওপর ভিত্তি করেই কোন ওষুধটি কোন রোগী পাবেন,সেটি ঠিক হয়। সুতরাং,একজন ডসিট্যাক্সেল,এপিরুবিসিন পেয়েছেন বলেই,পাশের বাড়ির ারেকজন সেই ওষুধটি কেন পেলেন না,বলে,ডাক্তার কে সন্দেহ করার আগে,ভরসা করতে শিখুন। জানুন,যে, আম আদমির তুলনায় একজন অঙ্কোলজিস্ট বিষয়টি অনেক ভাল বোঝেন।
প্রসঙ্গ কেমোথেরাপি
কেমোথেরাপি কী- ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে অ্যান্টি-ক্যান্সার (সাইটোটক্সিক) ড্রাগস বা ওষুধ ব্যবহার করা হয়। ৫০টিরও বেশি ধরনের কেমিওথেরাপি ওষুধ রয়েছে। এগুলোর কোনকোনটা ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল হিসেবে খেতে হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ওষুধগুলোকে স্যালাইনের সাথে বা অন্যকোনভাবে সরাসরি রক্তে দিয়ে দেয়া হয়। রক্তের সাথে মিশে এই ওষুধগুলো শরীরের যেখানে যেখানে ক্যান্সার কোষ রয়েছে সেখানে গিয়ে ক্যান্সার কোষগুলোকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে।
যদি অপারেট করার আগে কেমো শুরু হয়,তবে তাকে বলে,নন অ্যাডজুভ্যান্ট কেমোথেরাপি। এতে সাধারণত টিউমরটির আকার,কেমো দিয়ে ছোট করে নেওয়া হয়। আর,আগে অপারেট করে,তারপর যদি কেমো চালানো হয়,তাকে বলে,অ্যাডজুভ্যান্ট কেমোথেরাপি।
কেমোথেরাপির ফ্রিকোয়েন্সি(সময়সীমা)
রোগের বিস্তার, রোগীর শারীরিক অবস্থা,ইত্যাদি বহু বিষয়ের ওপর, নির্ভর করে ঠিক কতদিন পরপর কেমো দেওয়া হবে। তাই, একজন ১০ এমএল ওষুধ পেয়েছে বা,একুশদিন পরপর কেমো পেয়েছে বলে, আরেকজনের তা নাও হতে পারে। কিছুকিছু কেমোর কারণে দুই একদিন পর থেকেই শ্বেত রক্তকোষ কমতে থাকে,তার জন্য ডাক্তার কয়েকটি ইঞ্জেকশন নিতে বলতে পারেন। খরচের ভয়ে এগুলি এড়িয়ে না গেলেই ভাল।কারণ, শ্বেত রক্তকোষ কমে গিয়ে নিউট্রিপিনিয়া হলে,প্রাণ সংশয় হতে পারে।
পরামর্শ
টাইপ এর কথা কেন উল্লেখ করা হয়েছে? কেমো নিলেই চিকিৎসা শেষ নয়। দরকারে,রেডিয়েশন লাগতে পারে। তারপর,টাইপ অনুসারে,কিছু ওষুধ টানা বেশ কয়েক বছর খেতে হতে পারে। সবথেকে,গুরুত্বপূর্ণ কথাটি হল,রোগ সেরে গেলো,আর "চাষি গেলো ঘর,তো লাঙল তুলে ধর" বলে,উদ্বাহু হয়ে নাচতে লাগলাম,ব্যাপারটি তা নয়। দরকার সংযম। জীবন যাত্রায়,খাওয়া-দাওয়ায়। বেশি করে ফাইবার অর্থ্যাৎ আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ফলমূল, (কমলা,হলুদ,লাল রঙের)খেতে হবে। পরিমিত ব্যায়ামচর্চা, প্রাণায়াম করতে হবে। এবং সর্বোপরি, রেগুলার কিছু টেস্টস,ও অঙ্কোলজিস্ট এর কাছে ফলোআপ খুব খুব জরুরী। কারণ, রোগটি ফিরে আসার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।
মনে রাখবেন, ব্রেস্ট ক্যান্সার বা ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়। আমাদের চারপাশে বহু নামিদামি মানুষ, অচেনা অজানা মানুষ, ছোটবড় মানুষ কিন্তু ক্যান্সার নিয়ে দিব্যি সুস্থভাবে দাপিয়ে বেঁচে আছেন। সুতরাং, ভয় নয়,আত্মবিশ্বাস আর,সঠিক জ্ঞান নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করুন। তাবিজ কবচ,মাদুলি,হোমিওপ্যাথি,আয়ুর্বেদ করার আগে,একবার অঙ্কোলজিস্ট দেখান। এবং অবহেলা করে সময় নস্ট করবেন না। নিজে বেঁচে থাকুন। অন্যকেও বাঁচান।
..............................**
দীর্ঘদিন Science Weekly-এর চিফ রিপোর্টার থাকা কালে আমাকে বিজ্ঞান বিষয়ে প্রচুর লেখাপড়া করতে হয়েছে এবং লিখতে হয়েছে। দুদিন আগে এক বন্ধুর শেয়ারিং দেখে এই লেখাটি দায়বদ্ধতা থেকে লিখলাম যাতে কিছুটা হলেও কেউ কেউ উপকৃত হবেন। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞসহ অনেকেই লিখেছেন, আমি শুধু সচেতনতার জন্য বিষয়টি সহজ করে (কিছু অনুবাদ করেছি, বই পড়েছি, নেট থেকে তথ্য নিয়েছি) লিখেছি মাত্র।
...............................................
মাহমুদ টোকন
http://denbd.com/
©somewhere in net ltd.