নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

poet-writer and editor. founder of a development organisation, a promotional agency, printers & publications. co-founder of an IT, Web Solutions Service and WEB Training Institute. Obtained masters in english literature & language...

মাহমুদ টোকন

poet-novelist-editor & development researcher.

মাহমুদ টোকন › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রতিদিন তোমায় দেখি...। মাহমুদ টোকন

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩০


ছবি: মাহমুদ টোকন/ বাংলা একাডেমি একুশে বইমেলা
........................................................
আমরা কাদা ছেনে, জল সেচে বড় হবার সময় থেকেই কবিতার সাথে পরিচয়। গ্রামে তখন সকল ক্ষেত্রেই একরকম কবিতার ব্যবহার। স্কুলের বার্ষিক উৎসব, রাজনীতি কি সামাজিক অনুষ্ঠানের বক্তৃতায়, পালাগানে, পার্বন উপলক্ষ্যে এবং সর্বোপরী প্রেমে, কোথায় নেই কবিতা! প্রায় সবার মুখে মুখে কবিতা তখন। ’ওই ক্ষেপেছে পাগলি মায়ের দামাল ছেলে কামাল ভাই’, ’আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে’ কিংবা ’সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো বেলা গেল ওই, কোথা গেল হাঁসগুলি চই চই চই’ এরকম অজস্র কবিতা আমাদের পকেটে। তখন বিনোদন বলতে তো কেবল বই এবং খেলাধুলা। আমার কৈশোরে আশির দশকে আমাদের ইউনিয়নে প্রথমে টেলিভিশন আসে আমাদের বাড়িতে। সে এক রোমাঞ্চকর দিন। টেলিভিশন নয় এক্কবারে যাদুর বাকসো। ওই শুরু। এরপর সাদাকালো থেকে রঙীন। বিটিভি থেকে প্রাইভেট চ্যানেল। ডিসের আধিপত্য নিয়ে ভিনদেশী কিংবা ফিরিঙ্গি চ্যানেল। সে-ই-বৈদ্যুতিন মিডিয়া-বিনোদন গ্রাস করল বইপড়া, খেলা-ধূলাও। এমনকি মানুষে মানুষে আড্ডা, সম্মিলনও বাদ পড়ল না। এ মাধ্যমের বহুমূখিতাও বেড়েছে। গ্রাস কখনো কখনো সূর্যকে পর্যন্ত গিলে ফেলে। তেমনি এ মাধ্যমটি গিলে ফেলেছে মানুষকে ব্যাপকভাবে। মানুষের ভাবনার সময়টুকু আজ বড় রকমভাবে এ সকল মাধ্যমের আগ্রাসনে। ছোট ছেলেমেয়রাও পথে হাঁটতে কানে একটি ফোন লাগিয়ে কিংবা হেডফোনে। সেখানে গানবাদ্যি, এফএম এমনকি টেলিভিশন চ্যানেল। পথ চলতে কত কী-না দেখা যায়। কত ভাবনার উদ্র্যেক হয় মনে। সে সকল থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আধূনিক মানুষ। সে ভাবতে চায় না, দেখতে চায় না। জ্ঞান চায় না। চায় শুধু নিজের আনন্দ, পরিতৃপ্তি। কিন্তু তা কি আদৌ হয়? জ্ঞানহীন মানুষ কি নির্মল আনন্দ পায়? একা একা কি বাঁচা যায়, আনন্দ উপভোগ করা যায়? যায় না। সমবেতভাবেই আনন্দের উদ্ভাবন। সমবেতভাবেই উদযাপন। যাহোক, বৈদ্যুতিন মাধ্যমের একচ্ছত্র আধিপত্যে এখন গ্রামেও বই হারাচ্ছে। বুকে বই নিয়ে মায়েরা এখন আর দুপুরে রাতে ঘুমুতে যায় না। ছেলেমেয়েদের হাতেও বই ম্যাগাজিনের বদলে রিমোট কন্ট্রোল, আধুনিক সেলফোন!

আমরা বগলে বইখাতা চেপে ষ্পঞ্জের স্যান্ডেল পা’য়ে দিয়ে মাইল হেঁটে তবে স্কুল। তখনও স্কুলব্যাগ পৌঁছেনি গ্রামে। বক্স টিফিন, পেন্সিল-রাবার-ইরেজার আমাদের স্বপ্নেও নেই। নবম দশম শ্রেণীতে বড়রা পেতো একটি কালো-লাল রঙের চায়নিজ জ্যামিতি বক্স। সে সময় হাইস্কুলের শুরুর দিকে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে আমাকে দীর্ঘদিন বিছানায় থাকতে হয়েছে। ভুল হলো অন্যের খেসারত দিলাম আমি। ভুলের মাশুল স্থায়ীভাবে ছাপ রেখে গেলো শরীরে। আজও তা বহন করছি, আনন্দ-বেদনার মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করছি। যাহোক সে বিছানাদিনে তেমন কোনো বিনোদন ছিলো না। একমাত্র বই ছিল তখন সঙ্গী। সে সময় বড়দি, সেজদা এদের সকল পাঠ্যবই আমার পড়া হয়ে যায়। পাঠ্য বইয়ের সকল গল্প, সকল প্রবন্ধ এমনকি উদাহরণের প্রশ্নগুলো পর্যন্ত। তখনই যোগাযোগ ঘটে শরৎচন্দ্র, নিমাই ভট্টাচার্য, ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় এঁদের লেখার সঙ্গে। মনে আছে, বিমল মিত্রের বিশাল উপন্যাস ’কড়ি দিয়ে কিনলাম’ বিছানায় শুয়ে শুয়েই শেষ করি। এর দু’একটি চরিত্র আজও মনে জ্বলজ্বল করে।

এরকম একদিনে আমাদের বাড়িতে শহর থেকে এক অতিথী এলেন। আমার এক কাকার বন্ধু। তিনি পড়াশুনা করা। সম্ভবতঃ নিষিদ্ধ পার্টি করতেন। তখনও নিষিদ্ধ পার্টি বলতে বিপ্লবী বাম। এখনকার মতো ধর্মীয় মৌলবাদ কিংবা সন্ত্রাসবাদ নয়। তো সেই অতিথীর হাতে প্রথম দেখি- শামসুর রাহমানের কাব্যগ্রন্থ ’রৌদ্র করোটিতে’। পড়তে পাইনি যদিও তবে ওই সময়েই ক্লাসের বইতে এই কবিরই কেমন একটি অদ্ভূত কবিতা ’এই নিয়েছে ওই নিলো যা, কান নিয়েছে চিলে’ পড়ে ফেলি। স্যাটায়ার তখনও বুঝি না। তবুও খেলা-ধুলার মধ্যেই হঠাৎ হঠাৎ বলে উঠি- ’কান নিয়েছে চিলে’! তারপর চিকিৎসার জন্য ঢাকা। পরবর্তীতে নবম শ্রেণীতে পড়ি গতানুগতিক ধারার বাইরের এক আশ্চর্য কবিতা- ’স্বাধীনতা তুমি’। লেখক সেই শামসুর রাহমান। কবিতাটিতে সে-কি উপমা, অদ্ভূত মাধূর্যময়! আমাদের জীবনের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলো উঠে এলো কবিতায়। স্বাধীনতাকে বলা হলো- রোদেলা দুপুরে, মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার। স্বাধীনতাকে তুলনা করা হলো, পিতার জায়নামাজের উদার যমীন হিসেবে। এ সকল উপমা একবারে আমাদের জীবনের সাথে সম্পৃক্ত। ওই জায়নামাজের পিতা যে আমার পিতা। কবিতার গ্রাম্যপুকুরে যে আমিও সাঁতার কেটেছি! কবি তাই স্বভাবতই প্রিয়তম হয়ে ওঠেন।

মূলতঃ ’স্বাধীনতা তুমি’ 'তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা' কবিতাদুটি কবি শামসুর রাহমানকে আমার কাছে পরিচিত করে তোলে। স্বাধীনতা নিয়ে সেই তারুণ্যে যে সব কবিতা লিখেছিলাম তাতে রাহমান ভাইয়ের কবিতার ছাপ ষ্পষ্ট। তারপর আস্তে আস্তে তার ’আসাদের শার্ট’, ’রৌদ্র করোটিতে’, ’উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বদেশ’, ’ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা/এবার আমি গোলাপ নেবো’, আরও কতও কবিতা পড়লাম তার। এরপর তার সান্নিধ্যও পেয়েছি। ভালোবাসা পেয়েছি। সে অন্যগল্প। কবি হিসেবে নয় মানুষ হিসেবেও শামসুর রাহমান হৃদয় দখল করেন।

আজও অসংখ্য তরুণ-তরুণী শামসুর রহমানের ’স্বাধীনতা তুমি’ এবং ’তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’র আদলে স্বাধীনতা বিষয়ক কবিতা লেখে। আমাদের তারুণ্যে প্রবল জনপ্রিয়তার তুঙ্গে তার সেই বিখ্যাত কবিতা- ’আমি তাঁরায় তাঁরায় রটিয়ে দেব, তুমি আমার!’ আরও জনপ্রিয়তর হয়ে ওঠে ব্যান্ডসঙ্গীত তারকা জেমস এর কন্ঠে গান হয়ে এলে। প্রতিদিন কোন না কোন সময় রুনা লায়লা গাওয়া অসম্ভব সুন্দর দেশের গান ’প্রতিদিন তোমায় দেখি সূর্যরাগে, প্রতিদিন তোমার কথা হৃদয়ে জাগে/ ও আমার দেশ, ও আমার বাংলাদেশ’ শোনা যায় রেডিও কিংবা টেলিভিশনে। মিষ্টি ওই গানটির মতো আমিও প্রতিদিন শামসুর রাহমানকে দেখি, তার সৃষ্টি দেখি... উপলব্দি করি শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়।

এভাবেই ধীরে ধীরে তার কবিতা, তার বই এবং শামসুর রাহমান স্বয়ং আমার আরও আপনজন হয়ে ওঠেন। একদিন রাহমান ভাইয়ের সাথে ফোনে কথা বলি। প্রথমে উনি আমার নাম জানলেন, তারপর এমনভাবে কথা বলছেন যেন আমি তার অতি চেনা প্রিয়জন। এরপর ফোন, আলাপ। সম্পর্ক। দূর থেকে। বিখ্যাত কিংবা জনপ্রিয় লোকজনের কাছ থেকে দূরে থাকাই আমার পছন্দ। আজো অনেকের কাছ থেকে দূরে থাকি যদিও তারা খুবই প্রিয়জন। সম্পর্কের ক্ষেত্রে কাছে-দূরে বলতে কিছু নেই। প্রিয়জন তো ভেতরেই থাকেন। আত্মায় বাস করেন।

জেনারেল এরশাদের শাসনামলে শিল্পে সাহিত্যে দেশে বেশ রমরমা অবস্থা। তাকে ঘিরে কতো কবি-লেখক। সুন্দরী নায়িকা-গায়িকা-নৃত্যপটিয়সী। কেউ কেউ নিজের স্ত্রী, ভগ্নি এমনকি আত্মজাকে তার হাতে সঁপে দিয়ে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছিলেন। এমনকি এরশাদ সাহেব নিজেও বেশ কবি হয়ে উঠলেন। একথা সত্যি যে এরশাদ সাহেব সাহিত্যের অনেকক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার ও তার চারপাশ ঘিওে থাকা লোভী মানুষদের জন্য কোন উদ্যোগই সফল হয়নি। ধীরে ধীরে খুলে পড়ছিল তাদের সাপের খোলশ, এরশাদ সাহেব মতোই। দেশ ও সমাজের ক্রান্তিকালে, দুঃসময়ে শিল্পি-সাহিত্যিকেরাই মূল ভূমিকা পালন করেন উত্তোরণের। সে কারণে সবাইকে তিনি মোহে আবদ্ধ করতে পারেননি। সে সময়টা তাই আমাদের জীবনে বেশ উজ্জ্বল। ’৮০ থেকে ’৯০ বেশ গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল দেশের। এরশাদের বিরুদ্ধে তখন কি দূর্দান্ত সম্মিলন মানুষের! কবি-লেখক শিল্প-সাহিত্যের মানুষের। আমার দেখা সে সময়টাই ছিল বাংলাদেশের রাজনীতির শেষ উজ্জ্বল সময়। অধিকাংশ মানুষ তখন এক কাতারে এসেছিলো। এমন কি পরষ্পর মুখ না দেখা দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া হয়ে উঠলেন কাছের মানুষ।

স্বৈরাচার হঠানোর পর থেকে বাংলাদেশে রাজনীতির বিশেষ গুণগত উত্তোরণ প্রত্যাশিত ছিলো সকল মানুষের। কিন্তু সেটি হয়নি বরং নীচে নেমেছে। এখনও ক্রমশঃ নামছে। ছাত্রাবস্থায় সে সময় আমরা কয়েকবন্ধু মিলে একুশের বইমেলায় ষ্টল দিলাম। ফোনে রাহমান ভাইকে জানালাম। উনি বলেছিলেন আসবেন। এসেও ছিলেন। অপ্রত্যশিতভাবে খবর না দিয়ে। সঙ্গে জোহরা ভাবী এবং মারিয়াম মান্নান (আবৃত্তিকার)। শীতের এক ম্লান বিকেলে, সরাসরি আমাদের স্টলে। আমার স্টলটি তখন কী উজ্জ্বল! শামসুর রাহমানের আলোয় ঝলকে উঠল আমাদের চারপাশ। সেই প্রথম কবিকে দেখা, সরাসরি প্রথম স্বাক্ষাৎ পাশাপাশি বসে। অনেকক্ষণ ছিলেন। চা খেলেন। আলাপ করলেন সাহিত্য নিয়ে, আমার কবিতা নিয়ে। তখন কেবলি আমার দু’চারটি কবিতা মুদ্রীত হয়েছে। কুষ্টিয়া থেকে একটি লিটলম্যাগে রাহমান ভাইয়ের এবং আমার কবিতা ছাপা হয়েছিলো সে সময়। একসঙ্গে। সেটি আমার প্রথম লেখা, উনি পড়েছেন। কবিতাটি মুখস্থ বল্লেন। সে ঘটনা মুগ্ধ করেছিলো আমাকে দারুনভাবে। উনি লিটলম্যাগের কপিটি আমার জন্য এনেছিলেন যেটি সম্পাদক আমাকে পাঠায়নি। ওই বইমেলায় আমি একটি ডায়রি রাখতাম সঙ্গে। একটি ছোট রিপোর্টার ব্যাগ। ছোট ছোট রিপোর্ট করি দু’একটি কাগজে, লিখি। তখন বইমেলা এতো রমরমা, উজ্জ্বল! ছফা ভাই (প্রথিতযশা লেখক আহমদ ছফা), তছলিমা নাসরিন, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, সৈয়দ হক, হুমায়ুন আজাদ এঁরা প্রায় প্রতিদিন মেলায় থাকতেন। কোলকাতা থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার এঁরাও আসতেন। তখনও হুমায়ুন আহমেদের রমরমা বাজার শুরু হয়নি। মিলন কেবল রগরগে কাহিনী লিখছেন। নব্বইয়ের দশকেই বইমেলায় প্রকাশিত হয় তসলিমার সেই বিখ্যাত তৃতীয় শ্রেণীর উপন্যাস- লজ্জা। যাকে অনেকে বলেছেন, অপন্যাস। বিশেষকের আহমদ ছফা এবং হুমায়ুন আজাদ দুজনেই এ বিষয়ে একমত ছিলেন। সেই অপন্যাস নিয়ে বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গে বিরাট আলোচনা। রাজনীতি। সে-কি আদিখ্যেতা! যাহোক মেলা থেকে যাবার বেলায় রাহমান ভাই আমার ডায়রিটি টেনে নিয়ে লিখলেন-

’কোন দূর্ঘটনা মানুষকে সামান্য সময়ের জন্য দমিয়ে দিতে পারে, কোন কোন ক্ষেত্রে মানুষকে ক্ষত-বিক্ষতও করতে পারে কিন্তু মানুষকে পরাজিত করতে পারে না। তোমাকেও পারেনি, পারবে না। এখানেই মানুষের মহিমা।’


আমি তখন শৈশবের একটি ক্ষত নিয়েও উদ্দাম। রাহমান ভাই মুখে কিছুই বললেন না। অনেককিছু দিয়ে গেলেন ওইটুকু লেখার মাধ্যমে। তার সে লেখাটি হারিয়ে গেছে। ডায়রিটিও। কিন্তু আজও মার্কস, সক্রেটিস, কাহলিল জিব্রান, বোদলেয়ারের মতো শামসুর রাহমানের লেখাটুকুও আমার দুঃসময়ে সাহসের তাবিজ হিসেবে রাখি। খুব গভীরে, গোপনে যখন কান্নার দিন এসে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সককিছু, তখনও!

এরপরে কবির শ্যামলীর বাসায় গিয়েছি অল্প কয়েকবার, খুব সন্তর্পণে। বলে, না বলে। একা। কখনও যেনো কারো অসুুবিধা বা বিরক্তির কারন না হই আমি সে চেষ্টা করি সকল সময়। সবার ক্ষেত্রে। রাহমান ভাইয়ের বেলায়ও সেটি বজায় রেখেছি, সেজন্য সম্পর্ক অটুট থেকেছে। অতিঘনিষ্ঠতা অধিকাংশ সময় সম্পর্ক নষ্ট করে। আর বিখ্যাত মানুষের খুব কাছে বেশী না যাওয়াই ভালো। আমি সেটি মেনে চলি।

শামসুর রাহমান কবি হিসাবে যতটা জনপ্রিয়, মানুষ হিসাবে তার থেকে অনেক বেশি। যারা তার সাথে একবার মিশেছেন অনায়াসে এটি স্বীকার করতে বাধ্য হবেন। তার বিনয়, অন্যকে আঘাত না করা, অশ্রদ্ধা না করার প্রবণতা তাকে দ্রুত মানুষের কাছে নিয়ে এসেছে। এরকম নিরহঙ্কারী গুণীজন বাংলাদেশের সাহিত্যে এখন নেই বললেই চলে। এখনকার অনেকেই দাম্ভীক, ভানসর্বস্ব এবং সাহসহীন। ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে কম লোকই নিজেকে সম্পৃক্ত রাখছে। কম বুদ্ধিজীবীরাই সাহস রাখছে সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলার। আজ প্রধানমন্ত্রী যদি মারাত্মক কোনো ভুল সিদ্ধাস্তও গ্রহণ করেন তাকে শুধরে দেয়া বা পরামর্শ দেয়ার একজন লোকও আমি দেখি না এখন। বিরোদীদলীয় নেত্রী মারত্মক ভুল করলেও তার পাশের কেউ তা শুধরে দেয়ার মতো সৎ সাহস রাখেন না। কেউ মুখের ওপর শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়াকে ’না’ বলার সৎসাহস রাখে না। শামসুর রাহমান সেখানেও অনন্য। অনিবার্য। এ সময়ে এ বিষয়টিও আমাকে বেশ কাতর করে। তার অনুপস্থিতি টের পাই খুউব।

কোনো প্রিয়জনের মৃত্যুমুখ দেখতে যাওয়া হয় না আমার। এমনকি কবরে ফুল দিতেও আমার যেতে ইচ্ছে করে না। ভালো লাগে না। আমার বাবার মৃতমুখ দেখার সময় আমি চোখ বুঁজে ছিলাম। ভাইয়ের ক্ষেত্রেও তাই। প্রিয়মানুষ আহমদ ছফার মৃতমুখ দেখতেও আমার যাওয়া হয়নি। প্রতি বছর তার কবরে ফুল দিতে অনেকের সঙ্গে আমারও যাওয়ার কথা হয়, এড়িয়ে যাই। অনেকে ভুল বোঝে, তবুও পারি না আমি। আর কারো স্মরণ সভায় কিছু বলা, যা নয় সে সকল সর্বনাম ব্যবহার করে বড় বড় কথা বলতেও অনীহা রয়েছে আমার। তাই এসকল বিষয়গুলো এড়িয়ে চলি। রাহমান ভাইকে নিয়ে আমার এটি দ্বিতীয়বার লেখা। পূর্বে একটি লেখা লিখেছিলাম কোন একটি কাগজে তার মৃত্যুর পর পর। সেটি একেবারেই আবেগআশ্রিত। সেটি এখন নিজেই অস্বীকার করি। যাহোক যারা প্রাণের মানুষ তারা প্রাণে থাকেন, তারা সদাজাগ্রত। তাদের তো মৃত্যু হয় না। তাদের মৃত বানানোর প্রয়োজন নেই। আর রাহমান ভাইয়ের প্রাণহীন মুখ দেখার ইচ্ছেও আমার হয়নি। খুউব ইচ্ছে হয়েছিল সেই পরম নির্ভরতার হাঁতটি ধরতে। কিন্তু এড়িয়ে গিয়েছি। শামসুর রাহমান জাগ্রত রয়েছেন প্রাণে।

প্রতিদিন এদেশের কম করে হলেও এক লাখ ছেলে-মেয়ে তাদের পাঠ্য বইয়ে তাকে পাঠ করে, অসংখ্য তরুণ-তরুণী তার কবিতার বই বুকে চেপে রাখে। তার কবিতার অনুকরণে লিখে ফেলে ’স্বাধীনতা তুমি’ কিংবা ’হে স্বাধীনতা’র মতো শব্দগুচ্ছ। কারো কারো কন্ঠে উচ্চারিত হন, সকাল বিকেলের আড্ডায়; অনুষ্ঠানে। অসাধারণ কিছু সঙ্গীতে। প্রভাব তার সর্বত্র এভাবে সমুজ্জ্বল। একজন সৃষ্টিশীল মানুষের জন্য এটি যথেষ্ট। কবির মৃত্যু হয় না। শব্দে, বজ্রে-বিদ্যুতে, মেঘে বাতাসে, প্রেরণায় কবি মূর্তমান। শামসুর রাহমান স্বয়ং আমার কাছে, গণমানুষের কাছে সেরকমই একজন ভালোবাসার কবি। তাকে সেলাম!

...................................
Mahmud Tokon
www.denbd.com
www.denbd.org

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৪

প্রামানিক বলেছেন: জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৩১

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: অনুগ্রহ করে পোস্টে অন্য সাইটের লিংক সংযুক্ত করা থেকে বিরত থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.