নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সীমিত জ্ঞান কারো উপকারে আসলে শান্তি পাই

মায়মুনা আহমেদ

আমার সীমিত জ্ঞান কারো উপকারে আসলে শান্তি পাই...

মায়মুনা আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

উমরাহ টিপসঃঃ ৫ম পর্ব (শেষ পর্ব)- Perform properly/সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করুন

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৪২



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

মক্কায় আসার পর উমরাহ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছেন। যে কয়দিন মক্কায় অবস্থান করবেন সে কয়দিন বেশি বেশি তাওয়াফ করতে চেষ্টা করুন। তাওয়াফ এমন একটি ইবাদাত যা শুধুমাত্র কা'বা ঘরকে কেন্দ্র করে করা হয়, আর কোথাও এই ইবাদাতের সুযোগ পাবেন না।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় তাওয়াফ করুন। সে সময় হাতিমে প্রবেশের চেষ্টা করুন। হাতিমে প্রচন্ড ভিড় থাকে, তাই বলে হাতিমে যাওয়া এড়িয়ে যাবেন না। ধৈর্য ধরুন, আল্লাহর সাহায্য চান। কোন অবস্থাতেই তাড়াহুড়ো করা ভালো না। হাতিমের গেট খোলা থাকলে, সবাই ঢোকার সুযোগ পায়। হাতিমের ভিতর গিয়ে দুই রাকাআত নামাজ পড়ুন। হাতিম একসময় কা'বা শরীফেরই অংশ ছিল।

পুরুষদের ক্ষেত্রে, ইহরাম অবস্থায় হাজরে আসওয়াদ ও কা'বা শরীফের গেট ধরার চেষ্টা না করাই ভালো। অন্যান্য সময় চেষ্টা করুন। নামাজের আগে লাইন করে দেয়। তখনও চেষ্টা করে দেখতে পারেন। হাজরে আসওয়াদে চুমু খাওয়া সুন্নত, ওয়াজিব নয়। যা-ই করবেন, তাতে যেন বাড়াবাড়ি বা সওয়াবের চেয়ে উল্টো গুনাহের ভাগীদার না হয়ে যান, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।

রাতে এবং সকালে নাস্তা করার পর লম্বা সময় ঘুমের জন্য পাবেন। বিকেলে হেরেম শরীফ ও তার আশেপাশে হাটুন, চারপাশ ঘুরে দেখুন। রেগুলার জামাতে নামাজ পড়ুন। জানাজার নামাজে অংশ নিন। যে কয়দিন থাকবেন, জমজমের পানি পান করবেন। হোটেলের রুমে আনার জন্য ছোট বোতল ব্যবহার করুন, ১ বা ২ লিটার বোতল নিয়ে গেলে মদিনায় মসজিদে allow করে না। দেশে নিয়ে আসার জন্য এয়ারপোর্ট থেকে ৭.৫ রিয়েলে কিনে নিতে হয়।

এরপর মদিনায় যখন যাবেন। শুরুর দিন থেকেই রিয়াজুল জান্নাত ও রওজা শরীফ জিয়ারত করার চেষ্টা করবেন। নেট দেখে রিয়াজুল জান্নাতের ম্যাপ মুখস্থ /ডাউনলোড/প্রিন্ট করে নিন। বাস্তবে মিলিয়ে দেখুন। দোয়া করুন, বেশি বেশি দোয়া করুন।

হেরেমের ভলিন্টিয়ারদের কথা মেনে চলুন। রীতিনীতি না মানার যে practice আমরা প্রাত্যহিক জীবনে করি, তা বর্জন করা উচিত। আজানের পর মক্কায় সামনের দিকে নামাজের জায়গা পাওয়া যায় না কিন্তু মদিনায় ঠিক উল্টো। তাই জামাতে গিয়ে অনেক মানুষ দেখে পিছনের কাতারেই বসে পড়বেন না। সামনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। মহিলাদের নামাজের জামাতে, অনেকেই কাতার সোজা করা বা খালি না রাখা সম্পর্কে জানে না। প্রয়োজনে নিজেই ভলিন্টিয়ারিং করুন।

সবসময়ই লিখছি, তাড়াহুড়ো করবেন না। আপনি যদি স্থির থাকেন, তাহলে সব কাজ সহজ ও সুন্দর হবে। হয়তো আশেপাশের সবাইকে দেখছেন খুব হুলস্থূল করতে। অস্থির হবেন না। বিশ্বাস রাখুন সেই একক স্বত্তার উপর যিনি সবকিছুর নিয়ন্ত্রক! আপনার জন্য যা নির্ধারিত, তা আপনার ই ছিলো-আছে-থাকবে।

কেউ নামাজে বসার জায়গা চাইলে তাকে ফিরিয়ে দিবেন না। হয়তো নামজের জন্য একটু কম জায়গা পাবেন কিন্তু এই কাজে তৃপ্তি অনেক।

মদিনায় কাজ কম। রেগুলার নামাজ, নফল ইবাদাত, রওজা জিয়ারত করে সময় কাটান। বিকেলে মসজিদ চত্বরে হাটবেন, কার্পেটে বসে চা খাবেন। ৮ নাম্বার গেট দিয়ে বের হলে, লোকাল মার্কেট পাবেন। ওখানে বেড়াতে পারেন, তবে কোনকিছু না কেনাই ভালো। জিনিসের মান তেমন ভালো না। হাতের ডানদিকে পার্কিং প্লেস আর তার পাশে একটা বাগান পাবেন। বিড়াল ভালোবাসলে ঐ বাগানে অবশ্যই যাবেন। এছাড়াও বাগানের একটা গুরুত্ব আছে।

মক্কা-মদিনায় একটা মজার বিষয় দেখবেন, ধরুন, জামাতে নামাজ পড়তে গিয়েছেন। গিয়ে দেখলেন যেখানে বসেছেন, আশেপাশে সবাই পাকিস্তানি অথবা মালয়েশিয়ান বা ইন্দোনেশিয়ান বা তুর্কিশ বা আফ্রিকান। যেন একখন্ড পাকিস্তান বা মালয়েশিয়া/ইন্দোনেশিয়া/তুর্কি বা আফ্রিকায় বসে আছেন। সবার ভিন্ন গঠন, ভিন্ন ভাষা কিন্তু নামাজের বা ইবাদাতের ভাষা সবার এক। মনে হবে, সবাই যেন এক জাতি, এক স্বত্তা!

যাদের পাশে বসবেন, তাদের সাথে কথা বলবেন। উর্দু/হিন্দি মোটামুটি জানলেই হলো, কথা চালিয়ে নেয়া যায় । কথা বললে সবাইকে আপন আপন লাগে। কথা না হোক, অন্তত সালাম দিবেন। দেশে আসার পর এই স্মৃতিগুলোকে জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ মনে হবে। আরেকটা কাজ করতে পারেন, উমরাহতে যাওয়ার সময় কিছু তজবী কিনে নিয়ে যাবেন। যার সাথে একটু বেশি কথা হবে তাকে গিফট করবেন। মানুষ অনেক ভালো আর হেরেমে বেশিরভাগ মানুষ খুব আন্তরিক। এক পাকিস্থানি হাজী তার হাতের চুড়ি খুলে আমাকে গিফট করেছিল। প্রথম রিয়াজুল জান্নাতে নিয়ে গিয়েছিল এক ভারতীয়, প্রত্যেক পয়েন্ট দেখিয়েছে, কোথায় কি করতে হবে শিখিয়েছে। মানুষগুলোর জন্য দোয়া অফুরান!

সাধ্যমতো সাদকাহ করুন। ভিখারীকে ভিক্ষা দেয়ার কথা বলছি না। প্রত্যেক ভালো কাজ, ভালো কথা, সাদকাহ-র অন্তর্ভুক্ত। যেমন ধরুন, জমজমের পানি খাবেন, আপনার পিছনেও একজন দাড়িয়ে আছে পানি নেয়ার জন্য, নিজের জন্য ভরা গ্লাসটি তার দিকে এগিয়ে দিন। খুব ছোট্ট, সাধারন কাজের মাধ্যমেও বড় পুরস্কার পাওয়া যায়। অথবা আপনার পাশে বসা বাচ্চাটি তার মা/বাবাকে খুব জ্বালাতন করছে, একটু দুষ্টুমি করলেন বা একটা চকলেট দিয়ে ঠান্ডা করে দিলেন- এটাও তো সাদকাহ!

মহিলাদের নামাজের জায়গায়, ছবি তোলা বা ভিডিও কল করার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষ পর্দার বিষয় ভুলে যায়! আরো দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, সোস্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করতে দ্বিধা বোধ করে না। নিজে এমন কাজ থেকে বিরত থাকবেন এবং সম্ভব হলে অন্যকে সতর্ক করবেন।

ওজুর জায়গায় লাইন মেইনটেইন করুন অথবা তুলনামূলক ফাকা জায়গা খুজে নিন। ওয়াশরুমে যেতে একদম নিচের ফ্লোরে চলে যান। সেখানে ভিড় তুলনামূলক কম থাকে।

নিজে যেমন সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করেন তেমন হেরেমের যত্রতত্র ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকুন। হেরেমের খাদেমরা সারাক্ষণ পরিষ্কার কাজে ব্যস্ত থাকে, তাই বলে অহেতুক নোংরা করা কখনোই উচিত নয়।

অন্যের ভুলক্রুটি গোপন করুন। সমালোচনা বা অপছন্দনীয় বিষয়গুলো প্রচার করবেন না। আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করুন। দেশে আসার পর ইবাদাতে আরো মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করুন। অন্যকে যাওয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করুন। দোয়া করুন, দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না।


জাজাকাল্লাহ খাইরান

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: খুবই দরকারী পোষ্ট।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:৪৪

মায়মুনা আহমেদ বলেছেন: জাজাকাল্লাহ খাইরান!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.