নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সীমিত জ্ঞান কারো উপকারে আসলে শান্তি পাই

মায়মুনা আহমেদ

আমার সীমিত জ্ঞান কারো উপকারে আসলে শান্তি পাই...

মায়মুনা আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নতুন ডায়েরি (পর্ব ৫)

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০৪



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

২৬ অক্টোবর ২০২২

তায়েফ থেকে ইহরাম করে এসেছি। মক্কায় ফিরে বাচ্চাদের দিকে মনযোগ দিলাম। এতো লম্বা সফরে বড়রাই তো কাহিল হয়ে যায়। বাচ্চাদের বিশ্রাম শেষে, মাগরিবের ওয়াক্তে হেরেমে গেলাম। বাবা-মা আগেই হেরেমে চলে গেছে। আমি আর বাচ্চার বাবা ধীরে সুস্থে , বাচ্চাদের যা যা লাগে সব নিয়ে রিল্যাক্স মুডে হেরেমে গেলাম। তাড়াহুড়া করলে হয় স্ন্যাকস নিতে ভুলে যাই, নয়তো তাদের খেলনা রুমে থেকে যায়।

রুম থেকে বের হতেই মাগরিবের আজান হয়ে গেল। যতটা সম্ভব এগিয়ে গিয়ে হেরেমের আঙিনায় সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষে ফাহাদ গেইট দিয়ে ভিতরে গিয়ে দেখি মাতাফে নামার সব সিড়ি বন্ধ করে রাখা। কখন সিড়ির ব্যারিকেড খুলবে আল্লাহ জানেন। মাতাফে মানুষের প্রচন্ড ভীড়। আজকে ব্যারিকেড খুলবে তো!? এতো মানুষ মাতাফে! আর কাউকে যেতে দিবে তো!?

এশার ওয়াক্ত হতে প্রায় একঘন্টা বাকি। ইহরাম করে এসেছি যখন, যতো কষ্টই হোক উমরাহ আদায় করতে হবে। বাচ্চার বাবা মাতাফে নামার জন্য ছটফট করছে। কোথাও মানুষের জটলা দেখলেই তাড়াতাড়ি হেটে দেখে ব্যারিকেড খুলে দিলো কিনা। তাকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম। আল্লাহর সাহায্য চেয়ে তাওয়াফ শুরু করি, ইনশাআল্লাহ আল্লাহর সাহায্য নেমে আসবে।

৩য় কি ৪র্থ চক্করের সময় এশার আজান দিলো। সালাত আদায় করে আবার তাওয়াফ শুরু করে দেখি সিড়ির ব্যারিকেড সরিয়ে দিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। মাতাফে নেমে গেলাম। কা'বার সামনে দাঁড়িয়ে রবের প্রতি আবেগ কি আর বাধ মানে! আমাদের কোলে বাচ্চা কিন্তু মনের অস্থিরতা তো কোনো নিষেধ শুনতে চায় না। দোয়া কবুলের জায়গাগুলোতে দোয়া করার কেমন এক পাগলামি মাথায় ভর করলো। আমার কোলে যে আটমাসের বাচ্চা। ভীড়ে চাপা খেলে যে সে চ্যাপ্টা হয়ে যাবে। আমার সেসব বোধবুদ্ধি হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। হুশ হলো কা'বার গেটের কাছে পৌঁছাতে যখন দ্বিতীয়বারের মতো পুলিশের চোখ ফাকি দিয়ে ঢুকতে গেলাম তখন। পুলিশ এসে দিলো এক বকা। বকা খেয়ে ধীরে ধীরে সরে এলাম কা'বা থেকে। আমার এবার এই অতৃপ্তি নিয়েই দেশে ফিরতে হবে। নিজেকে শান্তনা দিচ্ছিলাম। যা পেয়েছি, এই কম কিসে! বাচ্চারা আরেকটু বড় হলে আবার আসবো ইনশাআল্লাহ। আর আমার রব তো সব জায়গায়, সব অবস্থায় আমার কথা শোনেন। তিনিই আমার জন্য যথেষ্ট।

তাওয়াফের সাত চক্কর পুরা করে ওয়াজিবুত তাওয়াফ আদায় করবো। পছন্দসই জায়গা খুঁজে সালাতে দাড়ালাম। ভিনদেশি এক ভদ্রমহিলার পাশে সালাতে দাড়িয়েছি। তিনি তসবিহ/কোরআন পড়ছিলেন। ২য় রাকাআতে আমি বসতেই ট্যাপিকে ক্যারিয়ার থেকে বের করে নিজের কোলে তুলে নিলেন। এটা, ঐটা খেলতে দিয়ে ওর কান্না থামালেন। আমি তো মহাখুশি। সালাম ফিরিয়ে কারো দিকে না তাকিয়ে মোনাজাত করা শুরু করলাম। বিদায় নেয়ার সময় মোসাফাহার জন্য হাত বাড়াতেই, কি যে আন্তরিকতা, কতো যে দোয়া! আলহামদুলিল্লাহ! বাইতুল্লায় যে মানুষগুলো আমাকে সাহায্য করার জন্য এভাবে আমার ৮ মাসের ট্যাপিকে আদর-স্নেহ-যত্ন করেছে, আল্লাহ তাদেরকে উত্তম জাযা দান করুক। চেহারাগুলো আমার চোখে ভাসে। জীবনে আর হয়তো কখনো দেখা হবে না। আল্লাহ আপনাদের ভালো রাখুক।

বাচ্চারা বেবি ক্যারিয়ারে থাকাতে এবার সায়ী করতে কষ্ট কম হলো। সায়ী শেষে বের হবো তখন হেরেমে বাবা-মা'র সাথে দেখা হয়ে গেল। সবাই একসাথে রুমে ফিরে, মাথা মুন্ডানো বা চুল ছাটার পর ইহরাম মুক্ত হলাম।

২৭ অক্টোবর ২০২২, আমাদের জেদ্দা জিয়ারা। জেদ্দা যাওয়ার পথে উম্মুল মু'মিনীল হযরত মায়মুনা রাঃ এর বাসস্থান ও কবর দেখলাম। হযরত মায়মুনা রাঃ ছিলেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ এর খালা। রাস্তার দুই পাশে নানান প্রজেক্ট দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম লোহিত সাগরের তীরে। সাগরের তীর ঘেঁষে বিনোদনের ব্যাপক আয়োজন! লোহিত সাগরের বেশ কিছু স্পট আছে। কোনো স্পট মাছ ধরার, কোনো স্পট স্কুবা ডাইভিং এর জন্য নির্দিষ্ট। কোনো স্পটে বাচ্চাদের খেলার ব্যবস্থা আবার কোনো স্পটে সাইক্লিং, হাটা বা ব্যায়ামের ব্যবস্থা আছে। একেকটা স্পটে নামতে অনেকটা পথ ড্রাইভ করে এসে পার্কিং এ গাড়ি পার্ক করতে হয়। ড্রাইভার সাহেব এক এক করে কয়েকটি স্পট দেখালেন। একেক স্পটে সাগরের সৌন্দর্য একেক রকম। আবহাওয়া তেমন গরম না হলেও মাথার উপর প্রচন্ড সূর্যের তেজ। সূর্যের তাপ আমাদের বড়দের কাছে তেমন খারাপ না লাগলেও, গাড়ি থেকে বের হলেই বাচ্চা দুটি গরমে লাল হয়ে যাচ্ছে। তবুও সাগর দেখে সবাই খুব আনন্দ পাচ্ছিলো। আলহামদুলিল্লাহ।


সাগর তীরের ভাসমান মসজিদ, মসজিদে রাহমাহ। নামাজের ওয়াক্ত ছাড়া মসজিদ বন্ধ থাকে। এবারও এই মসজিদে সালাতের ভাগ্য হলো না। সাগর দেখে মা হাওয়ার কবর যেখানে আছে সেই কবরস্থানে গেলাম। পুরুষদেরকেও ভিতরে যেতে দিচ্ছে না, মহিলা তো পরের কথা। বালাদ বা পুরানো শহরের ভিতর দিয়ে গিয়ে পৌছালাম জাফফালি মসজিদে। এই জাফফালি মসজিদে মসজিদ ভিত্তিক বিচারকাজ পরিচালিত হয় এবং বিচারের রায়ের পর এখানে আসামিকে তওবা পড়িয়ে মসজিদের আঙিনায় শাস্তি দেয়া হয়। মসজিদটা সুন্দর, মসজিদের ভিতরে-বাহিরে বেশ ভালোই জায়গা আছে, খোলামেলা, নিরিবিলি। লোহিত সাগরের পানি এনে একপাশে কৃত্রিম লেক বানানো। শহরের ভিতর হলেও কেন জানি এই মসজিদটায় আমার সবসময়ই ভালো লাগে। মসজিদের আঙিনায় হাটতে, দাঁড়িয়ে থাকতে, লেকের পানি দেখতে ভালোই লাগে। খুব একটা মানুষ চোখে পড়ে না। শান্ত পরিবেশ। ওহ! এবারের ঘটনা তো লিখতে ভুলে গিয়েছি। মসজিদে মহিলাদের সেকশনে ঢুকতে গিয়ে দেখি রোগাপটকা একটা বিড়াল। সালাতে আসা মুসল্লিদের তিনি খুব খাতির যত্ন করছেন, খোঁজ খবর রাখছেন। বিনা নোটিশে কারো গায়ে গা ঘষছেন তো কারো কোলে গিয়ে বসছেন। আমার ব্যাগের আশেপাশে খুব ঘুরঘুর করছে। সালাতে মনোযোগ দেয়াটাও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। আমার ব্যাগে আমার দুই বাচ্চার ফিডার, খাবার। বিড়াল ব্যাগে উঠবে, বিষয়টি আমার পছন্দ না। কেউ একজন খেয়াল করে বিড়ালটাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। হাফ ছেড়ে বাচলেও মায়া হচ্ছিল বিড়ালটার জন্য। বেচারা, এখানে বোধহয় খেতে পায় না। তাই বুঝি স্বাস্থ্যের এই অবস্থা!

মক্কায় ফেরা দরকার। আবার কখন যে আমি কা'বা ঘরে, মসজিদ আল হারামে যেতে পারবো! বাচ্চা নিয়ে গেলে কখনোই এতো জিয়ারা রাখা উচিত না। ইবাদাতের সময় কমে যায়।

জাজাকুমুল্লাহ খাইরান

ছবি - নেট

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১১:৫৫

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনার মক্কা ভ্রমণের বর্ণনা থেকে ওমরাহ পালন এবং সৌদি আরবের কয়েকটা জায়গা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আপনার বর্ণনার স্টাইলও ভালো লাগলো।

মসজিদ আল হারাম বলা হয় কাবা ঘরের চারপাশের মসজিদকে। হেরেম বলতে অন্য কিছু বুঝায়। এই হারাম এলাকা মসজিদ আল হারামের বাইরেও মক্কার বেশ কয়েক বর্গ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত।

এই মসজিদকে এবং চারপাশের নির্দিষ্ট কয়েক বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে হারাম বলার কারণ হল মক্কা শহরের এই হারাম এলাকায় কিছু হালাল কাজও সর্বাবস্থায় হারাম (ইহরাম ছাড়া অবস্থায়ও হারাম)। যেমন -

শিকারযোগ্য যে কোনো হালাল জানোয়ার হত্যা করা হারাম।
- শিকারযোগ্য প্রাণী হত্যার জন্য অস্ত্র সরবরাহ কিংবা ইশারা করে দেখিয়ে দেয়ার দ্বারা সাহায্য করাও হারাম।
- হারাম সীমানায় গাছ কাটা এমনকি তাজা ঘাস কাটা বা ছেঁড়াও হারাম।
- হারাম সীমানায় কোনো জিনিস পড়ে থাকলে সেটা ওঠানোও যাবে না। তবে ওই ব্যক্তি তা ওঠাতে পারবে; যে তার প্রকৃত মালিকের সন্ধান দিতে পারবে।

তবে কিছু ক্ষেত্রে এই নিয়মের ব্যতিক্রম আছে।

মুসলমান ছাড়া এই হারাম এলাকায় অন্য কোন ধর্মের মানুষের প্রবেশ নিষেধ ( কিছু ব্যতিক্রমী কারণ ছাড়া)।

হাদিসে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেন-

‘এই শহর অর্থাৎ মক্কা নগরী আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়া কেয়ামতের দিন পর্যন্ত হারাম। উহার গাছ কাটা, শিকারযোগ্য জানোয়ারকে বিতাড়ণ করা এবং তাজা ঘাস কাটা যাবে না; পড়ে থাকা দ্রব্য-সামগ্রীও ওঠানো যাবে না; কেবল ওই ব্যক্তি ছাড়া, যে উহার হারানো বস্তু সম্বন্ধে যথারীতি প্রচার ও ঘোষণা করতে প্রস্তুত থাকবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

মক্কা শহরের হারামের সীমানা মসজিদ আল হারাম থেকে -
মদিনার দিকে ৫ মাইল দূরে মসজিদে আইশা পর্যন্ত
ইয়েমেনের দিকে ৭ মাইল পর্যন্ত
ইরাকের দিকে ৭ মাইল পর্যন্ত
জিরানার দিকে ৯ মাইল পর্যন্ত
আরাফাহর দিকে আরাফার মসজিদে নিরমাহ পর্যন্ত (আরাফাহ হারামের বাইরে কিন্ত মিনা এবং মুজদালিফা হারামের ভিতরে)
জেদ্দার দিকে ১০ মাইল পর্যন্ত

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:৩২

মায়মুনা আহমেদ বলেছেন: জাজাকাল্লাহ খাইরান

২| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: ব্লগিং করলে গুনাহ হবে না তো বোন?

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৫৮

মায়মুনা আহমেদ বলেছেন: ফতোয়া দেয়া তো মুফতিদের কাজ, উনারাই ভালো বলতে পারবেন।

৩| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১০:২২

ডল১২৫৪ বলেছেন: Thank you very much for uploading class useful and quality content. Good luck material for you with likes and full races
Usd Buy Sell

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.