নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সীমিত জ্ঞান কারো উপকারে আসলে শান্তি পাই

মায়মুনা আহমেদ

আমার সীমিত জ্ঞান কারো উপকারে আসলে শান্তি পাই...

মায়মুনা আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নতুন ডায়েরি (পর্ব ৬)

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:৪২



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

হায় রে ব্যস্ততা!!! ডায়েরিটা হাতে নেয়ার সময়ই এখন হয় না। মদিনা থেকে আসার পর জার্নির ধকল আর শীত, এই দুইয়ে মিলে ট্যাপাট্যাপিকে কাহিল করে দিয়েছিল খুব। আবার লিখতে পারবো? সে আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। গতকাল হঠাৎ বেড়াতে বের হয়ে খুবই আকষ্মিকভাবে এলাকার কাছেই এক মসজিদে জামাতে সালাত আদায় করার সুযোগ পেলাম। আবেগগুলো আর ধরে রাখতে পারছি না। Now, I'm here to fill my diary with the breathings of my heart...

২৮ অক্টোবর ২০২২ ছিল জুমআ'বার। মক্কায় আমাদের একটা জুমআর সালাত পাওয়ার কথা। তাই আজকের দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইহরাম ছাড়া মাতাফের গ্রাউন্ড ফ্লোরে যেতে দেয় না। মাতাফের দ্বিতীয় তলায় নফল তাওয়াফ আদায় করতে হয়। আগে যেমন যখন ইচ্ছে তখন কা'বা দেখা যেত, ধরা যেত, এখন সেই সুযোগ নেই। ব্যাপারটা যে বাইতুল্লাহ যিয়ারতকারীদের জন্য কতোটা কষ্টকর! একে তো আমার সাথে দুইটা ছোট বাচ্চা থাকায় তৃপ্তি নিয়ে ইবাদাত করতে পারছি না, তার উপর এসব রেস্ট্রিকশন!

যে যাই ভাবুক আর বলুক, মাতাফের গ্রাউন্ডে বা অন্তত সামনের কাতারে জুমআর সালাত পড়তে চাই। ট্যাপাট্যাপির বাবাকে ইহরামের সাদা পোশাক পড়িয়ে ১১ঃ০০ টার মধ্যে মসজিদে পৌছালাম। মাতাফের ফার্স্ট ফ্লোরে পৌছেছি। গ্রাউন্ড ফ্লোরে নামার সব সিড়ি বন্ধ হয়ে গেছে। সবার মধ্যে খুব ব্যস্ততা। যতটা সম্ভব সামনে এগিয়ে সালাত আদায় করার চেষ্টা সবার। জায়গা খোজাখুজির মধ্যেই আযান হয়ে গেল। খুতবা শুরু হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি একটা পছন্দসই জায়গা খুঁজে বসলাম। যেখানে বসেছি, পিলারের ফাঁক দিয়ে অন্তত কা'বা দেখতে পাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ এ-ই অনেক!

ট্যাপা তার বাবার কাছে আর ট্যাপি আমার কাছে। খুতবা শুনতে বসেছি সবাই। এখনো খুতবা শুরু হয় নি। আমার পাশে বসা ভিনদেশি বোনের সাথে ট্যাপি খুব খাতির জুড়ে দিয়েছে। এটা ধরে, ঐটা ধরে। ওরা দুইজন ও খুব মজা পাচ্ছে। কোলে নিচ্ছে, আদর করছে। কিছুক্ষণ পর ওদের একজন সাত পুতির তসবিহ দেখিয়ে কি যেন বলতে চাচ্ছে। জানতে চাচ্ছে। আমি তো ভাষা বুঝি না, ইশারাও বুঝি না। ওরাও ইংরেজি জানে না। মাথায় কুট কুট করে না? কি জানতে চাচ্ছে, ভাষা বুঝি না বলে কোনো উপকার করতে পারছি না। একটু পর ওরা মোবাইলে ট্রান্সলেট করে দেখালো। জানতে চাচ্ছিল, এজেন্সি থেকে সাত পুতির যে তসবিহ দিয়েছে, সেটা কি কাজে লাগে? যাক গুগল ট্রান্সলেটর এর কল্যাণে ওদেরকে সাহায্য করতে পারলাম, আলহামদুলিল্লাহ।

খুতবা শুরু হয়েছে। আজকের জুমআর খতিব শায়খ বন্দর বালীলাহ। ৬ ডিসেম্বর ২০১৮ এর ফজরের সালাতে যারা উনার পিছনে সালাত আদায় করেছে, জানি না তাদের মনে কি তোলপাড় হয়েছিল। আমরা যে কতশতবার ঐ রেকর্ডিং শুনেছি, তিলাওয়াত করেছি হিসেব নেই। আমাদের দুই বোনের শুধু একটাই দোয়া, আল্লাহ যেন হুজুরকে নেক হায়াত দেন এবং হেদায়েতের পথে অটল রাখেন।

খুতবা শেষে সালাত আদায় করলাম। সালাম ফিরিয়ে দেখি ট্যাপি পাশে নেই। একই কাতারে একটু দূরে আরেকটা বাবুকে দেখে সেখানে চলে গেছে। ওইখানের মুসল্লিরা ওর মা-বাবাকে খুজছে। সেই সুযোগে আমার ট্যাপি ওই বাবুটার ফিডার কামরাচ্ছে!

মাতাফে নামার খুব ইচ্ছা কিন্তু মাথার উপর প্রচন্ড রোদের তাপ। বাবা-মা রুমে অপেক্ষা করবে। দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। কি আর করার! খাবার কিনতে সাফওয়া টাওয়ারে গেলাম। আজকে এরাবিয়ান খাবার ট্রাই করবো। অর্ডার করে অপেক্ষা করছি। ট্যাপা চিলি চিকেন দেখিয়ে বারবার জিজ্ঞেস করছে এটা কি? এটা কি? লাল টকটকে রঙ দেখে ঝালের ভয়ে কেনার সাহস করছি না। পাকিস্তানি দোকানি ছোট প্যাকেট করে ট্যাপাকে গিফট করলো, আদর করে দিলো, আলহামদুলিল্লাহ।

রুমে ফিরে খাওয়া দাওয়া করে আবার সালাতে যাওয়ার প্রস্তুতি। আসরের সালাতের পর ক্লক টাওয়ারে টুকটাক কেনাকাটা করলাম। বাচ্চার বাবা ব্যাগগুলো রাখতে রুমে গেল। আর আমি দুই মেয়েকে নিয়ে মসজিদ আল হারামের ছাদে উঠলাম। এরই মধ্যে মাগরিবের আযান। তাড়াতাড়ি সালাতের জায়গা খুঁজে বাচ্চাদের নিয়ে বসলাম। কার্পেটে জায়গা নেই, সাথে জায়নামাজ নেই, খালি ফ্লোরে বসেও আমরা তিনজন খুব খুশি আলহামদুলিল্লাহ। আমার ট্যাপা খালি ফ্লোরে শুয়ে ফিডার খায়। আবার কখনো পাশে বসা এরাবিয়ান বাচ্চাদের সাথে খাতির জমানোর চেষ্টা করে, চকলেট, ওয়েফারের আদান-প্রদান করে। মাগরিবের সালাতের পর ট্যাপাট্যাপির বাবার সাথে যোগাযোগ হয়েছে। ছাদেই আছে, সামনে পুরুষদের কাতারে। কিছুক্ষণ পর এসে ট্যাপাকে নিয়ে গেল।

আর ট্যাপি, এখানেও বান্ধবী বানিয়েছে। ভিনদেশি বয়ষ্ক মহিলার সাথে তার কি যে খাতির! বয়সে হয়তো তিনি আমার নানির বয়সী। তাতে কি! আল্লাহুমা বারিক! মাগরিবের সালাতের পর খেলা করে তিনি বিশ্রামের জন্য শুয়েছেন, ওমনি ট্যাপির চিৎকার করে কান্না। ওর দিকে পিঠ দিয়ে তিনি কেন শুয়েছেন? আবার উঠে পাশ ফিরে শোয়ার পর ট্যাপির শান্তি! এশার সালাতের আগে ভদ্রমহিলা আমাকে ডেকে দেখাচ্ছেন, তার পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা, ফুলে গেছে, আমি যেন একটু পা টিপে দেই। কি অদ্ভুত আবদার তাই না!? আমি ব্যাথা কমার দোয়া পড়ে পায়ে মালিশ করে দিলাম। মক্কা-মদিনা, দুনিয়ার এই দুইটা জায়গায় গেলেই বোধহয় শুধু এই উপলব্ধি হয় যে, সমস্ত মুসলমান একটি কওম, একটি দেহ। ভাষা, জাতি, মাযহাবের কোনো ভেদাভেদ আমাদের মধ্যে নেই।

এশার সালাতের পর রুমে ফিরে এলাম। সময় বড্ড তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছে।

ছবি- নেট

জাজাকুমুল্লাহ খাইরান

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৪

বিটপি বলেছেন: উমরায় গিয়েছেন ট্যাপা ট্যাপি সহ?

২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: বোন আসসালামু আলাইকুম।
আপনি ধার্মিক মানুষ। নামাজ রোজা করেন। আমার জন্য একটু খাস দিলে দোয়া করবেন। বড় বেকায়দায় আছি।

৩| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১:১৩

পন্নি নদীর পুত্র বলেছেন: আপনি মদীনার কোথায় থাকেন্?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.