নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রামকানাই পন্ডিত

রামকানাই পন্ডিত

বিনম্র-সাদাসিধা

রামকানাই পন্ডিত

বিনম্র-সাদাসিধা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমারে কবর দিও কর্ণফুলির বাঁকে

১৯ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:৪৯

১৪৯২ সালের ১২ই অক্টোবর। ইতালীয় নাবিক কলম্বাস দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রা শেষে পা রাখলেন এক নতুন বেলাভুমিতে। আমেরিগো ভেসপুসির ভুল সংশোধনের আগে পর্যন্ত কালো কুচকুচে অধিবাসির এই দ্বীপটাকে ইউরোপের শ্বেতাঙ্গরা ইন্ডিয়া বলেই জানলেন। দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রার ক্লান্তি নিয়ে কলম্বাস যখন সমুদ্রের তীরবর্তি জায়গায় নামেন তখন ক্লান্ত, বিধ্বস্ত সেই ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গদের জন্য খাবার আর সুপেয় পানির বন্দোবস্ত করেছিলেন কালো আদিবাসিরা যার প্রতিদান (!) স্বরুপ কলম্বাস সদ্য আবিষ্কৃত দ্বীপটি থেকে ফিরে যাবার সময় কয়েকজন কালো আদিবাসিকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিলেন স্পেনের রাণীর উপহার হিসেবে।



এরপর ইউরোপ থেকে দলে দলে শ্বেতাঙ্গরা ভর করতে থাকে আমেরিকার বুকে। আমেরিকার এইসব আদিবাসিদের গায়ের রিং ছিল লালচে কালো, তারা পাহাড় পর্বতে বসবাস করত আর মোষ চড়িয়ে /শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। শ্বেতাঙ্গরা এই লাল অসভ্য আদিবাসিদের নাম দিলেন, রেড ইন্ডিয়ান । সহজ সরল এই রেড ইন্ডিয়ানদের ইউরোপের শ্বেতাঙ্গ বণিক সম্প্রদায়ের মত তাদের কুট বুদ্ধি ছিল না। সরল মনেই তারা শ্বেতাঙ্গদের ব্যবসা করতে দেয় তাদের ভূমিতে যার ফলশ্রুতিতে পঙ্গ পালের মত ইউরোপীয়রা সেখানে আসতে থাকে দ্রুত আর শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে।

রেড ইন্ডিয়ানরা যখন উপলব্ধি করল যে শ্বেতাঙ্গরা ধীরে ধীরে তাদের দেশটাকে গ্রাস করছে, নিজ দেশেই তাদের ভীনদেশি বানিয়ে ফেলছে, ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। এই অল্প সময়ে শ্বেতাঙ্গরা যেমন ব্যবসা বাণিজ্যে অনেক সম্পদশালি হয়ে উঠে, অপরদিকে ইউরোপীয় প্রযুক্তির কল্যাণে তাদের ভান্ডারে যুক্ত হতে থাকে নতুন নতুন অস্ত্র আর যুদ্ধ বিদ্যা । আমারিকার বিভিন্ন জায়গায় রেড ইন্ডিয়ানদের সাথে যুদ্ধ চলে, কিন্তু তীর ধনুক আর বল্লম নিয়ে কামান, বন্দুকের সাথে তারা পেরে উঠতে পারল না তারা। বসতিস্হাপন, জবরদখল, হত্যা আর লুন্ঠনের মাধ্যমে শুরু হল একটি জাতির নির্মম, সুপরিকল্পিত ধ্বংসজজ্ঞ যারা নিজ ভুমিতে পরাধীন, নিজ দেশে পরবাশি । কোনঠাসা আদিবাসিদের ক্রমেই শ্বেতাঙ্গরা ঠেলে দিতে লাগল একেবারে পশ্চিমের দিকে, উৎখাত করা হলো উর্বর ভুমি থেকে, এরপর ধীরে ধীর এই অনুর্বর ভুমি গুলো থেকেও তাদের সরিয়ে কলোনাইজেশনের মত করে ঘেরি বানিয়ে আদিবাসি আশ্রয়স্থল বানানো হলো যেখান থেকে বের হলেই তাদের গুলি করে হত্যা করা হত। এরপর কৃত্রিম উপায়ে তৈরী করা হয় মহাদূর্বিক্ষ আর নীরবে চালানো হয় ইতিহাসে নির্মম হত্যাজজ্ঞ। মৃত ইন্ডিয়ানরায় একমাত্র ভাল ইন্ডিয়ান, অনেক শ্বেতাঙ্গর নির্মম বিশ্বাস ছিল এটায় ।

নিজেদের অস্তিত্ত্ব রক্ষার সকল চেষ্টায় ব্যর্থ হয় ইন্ডিয়ানদের। শাউনি, নাভাহোদা, চেইনি,আপাচি সহ হাজার হাজার গোত্রের মানুষ কখন যুদ্ধে, কখনও নীরবে বিলীন হতে থাকে যার আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘটে হাটুভাঙ্গা নামক এক পার্বত্য খড়িতে যেখানে গুলি করে হত্যা করা হয় শেষ বিদ্রোহী রেড ইন্ডিয়ানদের যার সুন্দর বর্ণনা রয়েছে লেখন ডি ব্রাঊনের “Bury My Heart at Wonded Knee / আমারে কবর দিও হাটুভাঙ্গার বাঁকে” নামক বইতে।

১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে শান্তি চুক্তি হয় পাহাড়ি আদিবাসিদের সাথে। যেখানে আদিবাসিদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা সহ পার্বত্য অধিবাসিদের অনেক দাবি মেনে নেওয়া হয়। কিন্তু তারপর কেটে গেছে এতগুলো বছর ,কিন্তু শান্তি চুক্তির কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে তা কতৃপক্ষের সুবিবেচনার দাবি রাখে। মারমা, চাকমা, মুরং, কুকি সহ অনেক আদিবাসিই হয়ত একদিন সমতল ভুমির মানুষের আগ্রাসনে বিলুপ্ত হয়ে হয়ে যাবে আমেরিকার শাউনি, নাভাহোদা, চেইনি,আপাচি গোত্রের মত আর এই নিরুপায় জনপদের অনেকেই হয়ত একদিন কামনা করবে “আমারে কবর দিও কর্ণফুলির বাঁকে”।

আদিবাসিদের ধ্বংস নয়, তাদের সাথে সহঅবস্থান-ই শান্তির একমাত্র পথ ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.