নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এম আলম তারেক

এম আলম তারেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডাঃ অনিক ও ছোট ভাই অনিক

১১ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:২২



ধানমন্ডির ৩২ নং থেকে বাসে উঠবো বলে দাড়িয়ে আছি-

বাসের চিন্তায় সময়ের দিকে তাকানোও হয়নি, অবশ্য মোবাইলে সময় থাকলেও দুটি মোবাইলই ব্যাগ নামক সিন্দুকে রেখেছিলাম কিছু যাত্রী নামধারী মোবাইল কিলারের জন্য, যখন পাবলিক বাসে উঠি তখন সবসময় মোবাইল দুটো হেফাজত করার জন্য ব্যাগেই রাখি।



যাই হোক মোবাইলের কথা আর না হয় নাই বলি, ২০০৩ সালের পর থেকে এ যন্ত্রটি সবসময় হাতেই থাকে, এমন অবস্থা যেন প্রাকৃতিক কাজ শেষ করে যদি পরিচ্ছন্নতা সম্পাদনের জন্য উপায় থাকত তবে মোবইল আর টেবিলে রাখা দরকার হত না।



হঠাৎ আজানের শব্দ শুনে, মনে হল সারাদিন রোজ ছিলাম, ইফতার করা দরকার। ইফতারের উদ্দেশ্যে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছিলাম একটা রাস্তার পাশে ইফতার সাজানো দোকানের দিকে, দ্রুত দোকানে এসে ২৫০ গ্রাম জিলাপি নিয়ে মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করব এমন সময় একজন আমার হাতটা ধরে ইশারায় মানিব্যাগ পকেটে রাখতে বলে। আমি কিছু না বুঝে মানিব্যাগ পিছনে নিলাম, সাথে সাথে সময় কম দেখে একটা জিলাপিতে কামড় দিয়ে রোজা’র ইতি টানার কাজটি শেষ করে দিলাম। জিলাপি কামড়াতে কামড়াতে আমার মানিব্যাগ পিছনে রাখার কর্মটি সম্পাদনের প্রেরণাদানকারী ভদ্রলোকের দিকে চেয়ে বলতে লাগলাম ভাই বুঝলাম না।।



ভদ্রলোক হিমু স্টাইলে হেসে বলল, আগে খেয়ে নেন----



আমার মনটা আরও খঁচ খঁচিয়ে উঠছিল, লোকটার উদ্দেশ্য কি? তবুও জিলাপি খাচ্ছিলাম, কারন আমার কাছে যা মিষ্টি লাগে তা খেতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় না। মিষ্টির প্রতি দুর্বলতা আমার ছোট বেলা থেকেই-----



আমি জিলাপি আর ভদ্রলোক ভাঁজা মুড়ি খাচেছ, আমি বার বার তাঁর দিকে তাকালেও সে হিমু স্টাইলে ভাবলেশহীনভাবে মুড়ি চিবাচেছ যেন মুড়ি নয়, তারঁ মায়ের হাতের আদরে বানানো মোয়া খাচ্ছে----



আমি মনে মনে ভাবছি মুড়ি খাওয়া হলে, হয়তোবা তাঁর আসল কর্ম করবে, এমনও হতে পারে বলবে ভাই বাসায় যাচেছন, ব্যাগটা বুঝি ভারি হয়ে গেছে, বাসে উঠতে কষ্ট হবে, ব্যাগটা না হয় রেখেই যান, আমি ব্যাগ বেঁচে আপনার জিলাপির দাম দিয়ে দেব, আর না রাখতে চাইলে বলবে ভাই, আজকের ইফতারটাই বোধহয় আপনার শেষ রিজিক, আল্লাহ শবে বরাতের রাতে আপনার জন্য ব্রাজিল-জার্মানী’র ম্যাচ দেখেতে দেখতে সেহরির ব্যবস্থা রাখে নাই। আরও দেখাতে পারে কোমড়ে বাঁধা জার্মানীর তৈরি নতুন স্টাইলের কোন যন্ত্র------



আমার ভাবা শেষ না হতেই, ভদ্র লোক বলল কেমন আছেন স্যার? আমি এবার ভাবনা নামে যন্রণার রাজ্য থেকে বেরিয়ে এসে কিছুটা স্বস্তি পেলাম, মনে মনে স্মৃতির পাতা উল্টাতে উল্টাতে স্মরণ করার চেষ্টা করছি লোকটা কি আমার ছাত্র? না, এ বয়সি লোক আমার ছাত্র হবে কেমন করে? তবে কি আমার পুরাতন কোন অফিসের সহকর্মী? না তাও নয়, তবে কে এই ভদ্র লোক?



এমন সময়, ভদ্রলোক বলল স্যার আপনি আমাকে চিনতে পারেন নাই, আমি অনিকের বড় ভাই। অনিক নামটি শুনেই আমার মনে পড়ল, ২০০৫ সালে ঢাকা এসে প্রথম যখন টিউশনি নেই তখন অনিকই আমার প্রথম ছাত্র, পড়ে যতদূর জানি অনিক প্রথম বগুড়া মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হলেও পরে মাইগ্রেশনের সুযোগ নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যালে পড়ে। আমি আর অনিক ছিলাম দুজন বন্ধুর মত, আমরা প্রায়ই জিগাতলার একটি দোকানে জিলাপি খেতাম, জিলাপি অনিকের খুব পচ্ছন্দের ছিল।



অনিকের কথা স্মরণ আসায় ভদ্রলোকের চেহারার দিকে তাকানোর মত দৃষ্টি আমার আর ছিলনা, হঠাৎ দৃষ্টি ফেরাতেই দেখি, ভদ্রলোকের চোখে পানি-----



আমি জিজ্ঞাসা করলাম, অনিক এখন কোথায়? সাথে সাথে উত্তর আসল, স্যার’ অনিক আছে তবে আপনার ডাঃ অনিক নেই? আমি বললাম কেন? আবারও উত্তর স্যার’ অনিক ময়মনসিংহ মেডিক্যালেও পড়ে নি, হঠাৎ একটা মেয়ের টানে মেডিক্যাল ছেড়ে এসে ঢাকায় একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয় কম্পিউটার সায়েন্সে, আর সেখান থেকেই শুরু পতন, মেয়েটির জন্য তাও শেষ করতে পারেনি। মেয়েটি হঠাৎ তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়াতে আস্তে আস্তে অনিক ড্রাগ এ্যাডিক্টটেড হয়ে পড়ায় পড়ালেখা আর শেষ করতে পারেনি।



আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম তবে অনিক এখন কোথায়? এবার দীর্ঘশ্বাসভরা উত্তর আর কোথায়, স্যার? আমার এক বন্ধুর কম্পিউটারের দোকানে সেলস্ ম্যান------



এবার, দীর্ঘশ্বাসটি আরও দীর্ঘ করে বলল স্যার, আমি অনিকের নম্বর দিচিছ স্যার, পরে একসময় কথা বলে নিয়েন। তবে, আমি আমি একটা কথা বলব, স্যার’ শুধুমাত্র আপনাকে জানানোর জন্য অনিককে বলবেন, না। অনিকের দোকানের মালিক, আমার বন্ধু আর ঐ মেয়েটির স্বামী একজনই।



এবার, আমিও দীর্ঘশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন করলাম এটা কিভাবে সম্ভব? উত্তরে অনিকের ভাই বলল স্যার’ সম্ভব হয়েছে কারণ মেয়েটি ও অনিক একসময় আমার বন্ধুর কম্পিউটারের দোকানে প্রায়ই যেত--

সেই থেকে মেয়েটির সাথে আমার বন্ধুর পরিচয়, হয়তোবা মেয়েটি দেখেছে অনিকের চেয়ে আমার বন্ধুটি তার জন্য উত্তম, তাই এমনটি হয়েছে---- স্যার’ কথাটি যেন অনিক না জানে, এটা আমার অনুরোধ, জানলে হয়তোবা আবার সে ধানমন্ডি লেকের সবুজ ঘাস কে ব্যবহার করবে পুরাতন সেই নেশা নামক মরণঘাতকে আলিঙ্গন করতে----------------হয়তোবা এবার তার চেয়েওে বেশি করবে।



স্যার’ কখনই বলবেন, না। আপনি না বললে এই ইট পাথরের ফ্ল্যাট সমাজে অনিক জানবে না--------



আর বললে, আগে একবার আমরা হারেয়েছি ডাঃ অনিক কে এবার হারাব আমার ভাই অনিক কে-----



এম আলম তারেক

০৮ জুলাই ২০১৪

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.