নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এম আলম তারেক

এম আলম তারেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোপন বিয়ে (পর্ব-১)

১৩ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৩৫

আহসানের আজ মন ভাল নেই কারন আজ তাঁর স্ত্রী’র গ্রামের বাড়ী থেকে বড় ভাই এসেছে বলে স্বামী-স্ত্রী একসাথে ঘুমাতে পারবেনা। আজ সে স্ত্রী’র নরম আলিঙ্গন থেকে বঞ্চিত, তাঁকে খুজতে হচেছ বন্ধুর ম্যাসের ছারপোঁকা সমৃদ্ধ শক্ত বিছানা, তাও যদি ভাগ্যে মেলে কারন ছোট বেলার বন্ধু আনোয়ার যে ম্যাসে থাকে সেখানে একটি কক্ষে প্র্রায় পাঁচ-ছয় জন ইঁদুরের বাচ্চার মত গাদাগাদি করে কোনরকমে ঢাকায় থাকি অবস্থা। বন্ধু আনোয়ার অবশ্য তাঁর ছোট বেলার বন্ধু আহসানকে অসম্ভব খাতির যত্নে ঘুমাতে দেন, নিজে কাগজ দিয়ে বালিশ বানিয়ে ঘুমালেও আহসানকে তার নিজের কভারবিহীন তেলচিটচিটে বালিশটি উপহার দেন রাতভর ঘুমানোর জন্য। আনোয়ারের ম্যাসে আহসান যখন কোন দৈবিক কারনে রাত্রি যাপন করার উদ্দেশ্যে ঘুমায় তখন বন্ধুর ঘুমানোর দৃশ্য আনোয়ারকে বিমোহিত করে, এই ভেবে যে আহসান যত কষ্টেই ঘুমাতে যায় তার ঘুমানো দেখলে মনে হয় বাংলার কোন সম্রাট তার শয়ন কক্ষে দুপুরের আহারের পরে বিশ্রাম নিচ্ছে।



আহসান মন ভারি করে আনোয়ারের ম্যাসের উদ্দেশ্যে হাটতে লাগল, রাস্তা পার হয়ে গলির ভিতরে দুইশ কদম এগিয়েই পেয়ে গেল আনোয়ারের ম্যাস।প্রথম দরজা পার হয়ে ম্যাসের সামনে গিয়েই কলিং বেল চাপার প্রস্তুতি নিতে যাবে এমন সময় কে যেন পিছন থেকে বলে উঠল ম্যাসে কেউ নেই, সবাই বাইরে তালা লাগানো দেখতে পাচেছন না। ততক্ষণে আহসানের দেহের ভিতর এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে, কারন আনোয়ারর মোবইল সন্ধ্যা থেকেই বন্ধ পাচ্ছে আর পিছনের কন্ঠস্বর শুনেতে শুনতেই তাঁর চিরচেনা সেই চাইনিজ তালার দিকে চোখ পড়ল, যেন তালাটি তাঁর দিকে তাকিয়ে বলছে বন্ধু বিদায় হও, রাস্তার পাঁশে কোন যাত্রী ছাউনি অথবা মসজিদের বারান্দায় আশ্রয় নেও, আজ তোমাকে ঢুকতে দেওয়া হবে না, ঘরের ভিতরের ছাড়পোকাগুলো তোমার জন্য হাঁহাকার করলেও আমি আজ তোমাকে ছাড়পোকাদের অতিথি হতে দেব না। আজ আমি ছাড়পোকা নামের ক্ষুদ্র ও নষ্ট গৃহপালিত রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছি, আজ ওরা কারও রক্তের হোলি খেলায় মাততে পারবে না। যদিও আমার ক্ষমতা সীমিত কারন শাসকদলের কেউ একজন এলেই আমার ক্ষমতা শেষ, চাবি নামের কোন হরতাল বিরোধী যন্ত্র এলেই আর আমার এজেন্ডা বাস্তবায়ন হতে দেবে না, আমাকেই তখন তোমাকে স্বাগতম জানাতে হবে রক্তচোষা গৃহরাজনীতিকদের রক্ত পিপাষা মিটাতে, আমি শুধু দরজার কড়ার সাথে ঝুলতে থাকবো আর দেখতে থাকবে কিভাবে ওরা তোমার শরীরের রক্ত দিয়ে নৈশেভোজের আয়োজন সমপন্ন করছে।



বন্ধুর বাসায় শেষ আশ্রয়টুকু হারিয়ে আহসান অজানার উদ্দেশ্যে হাটবে বলে পিছনে ফিরে চলতে শুরু করবে বলে পা তুলেতেই চোখে পড়ল সস্তা লিপিস্টিকে ঠোঁট রাঙানো অর্ধেক পুরাতন আটসাট সালোয়ার-কামিজ পড়া দুটি মেয়ে। মেয়ে দুটির দিকে চোখ পড়তেই একজন বলে উঠল ভাই আপনার বন্ধুরা সবাই মিলে বেড়াতে গেছে সেই সিলেট, আজ আর আসবে না। আপনি ইচ্ছা করলে আমাদের সাথে থাকতে পারেন, মাসের শেষ লোকজন নেই বড় অভাবে আছি, মাজায় মজায় সারা রাত কাটিয়ে দিব, আপনি খুশি হয়ে যা দিবেন তাতেই আমরা খুশি থাকব।



আহসান মেয়ে দুটির কথা শুনে না শোনার ভান করে হাটা ধরল, অন্যজন পিছন থেকে ডেকে বলল- আপনার বন্ধুকে কিছুই জানাবো না, আমাদের বাড়ীওয়ালারও ভয় নেই, বাড়িওয়ালা সব জানে। ভাইজান আসেন আমাদেরে রুমে ন্যাশনাল ফ্যান ঘোরে-আর বাইরে গেলে মশা মাছি চারপাশে ঘুরবে।আসেন ভাইজান মন চাইলে দু’জনকেই খেতে পারেবেন। মেয়ে দুটির কথা শুনে আহসান মনে মনে ভাবতে লাগল ঢাকা শহরের এ কি অবস্থা? এত সুন্দর আলিসান বাড়ী অথচ ভাড়াটিয়ারা কিনা বেশ্যাখানার মত খদ্দের খুঁজে বেরাচেছ তাও নাকি আবার বাড়ী ওয়ালা জানে।তবে কি বাড়ীওয়ালা নিয়মিত কমিশন ভোগী না শুধু কমিশন ভোগী নয় মেয়ে দুটি বাড়ি ওয়ালার সম্পর্কে যে ভাবে বলছে তাতে মনে হয় সে কিছু না কিছু সময় মেয়ে দুটির নরম বুকে মাথা রেখে পার করে, আর তাতেই বাড়ীওয়ালা খারাপ হলেও মেয়ে দুটিকে কোমলভাবে আগলে রাখতে পিছুপাতো হয়না বরং আরও উৎসাহ বোধ করে। এতো দেখি বেশ্যাখানার চেয়েও খারাপ কারন বেশ্যাখানায় যারা দালাল বা গডফাদার টাইপের লোক থাকে তারা নাকি কখনও খারাপ মেয়েদের টাকার কমিশন ব্যতীত তাদের সাথে দেহ ভোগ করতে ইচ্ছুক থাকে না, তাতে নাকি তাদের মাতবরি খাটাতে সমস্যা হয়, এমনকি একসময় পুরো রাজত্ত্ব হারাতে হয়। এখানে অবশ্য বাড়ীওয়ালার হারানোর কোন ভয় নেই, কেননা ঢাকা শহরে বাড়ীওয়ালা একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী, তাদের কোন ভুল নেই- এক ভাড়া দুইবার চাইলেও তাদের কোন দোষ হয় না, আর ভাড়াটিয়ার ছেলে-মেয়ে হাসপাতালে থাকলেও সাত তারিখের ভাড়া আট তারিখ সকালে দিতে গেলে পরের মাসে বাড়ীর ছাড়ার নোটিশ হাতে ঘরে ফিরতে হয়।



আহসান মেয়ে দুটির কথা কানে না নিয়ে হাটতে থাকলে তার হঠাৎ মনে পড়ল আনোয়ার একদিন বলেছিল দোস্ত ম্যাসটা বুঝি তাড়াতাড়ি ছেরে দিতে হবে, বাড়ীওয়ালা আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে দুটি মেয়ে এনেছে, এরা নিয়মিত দেহ ব্যবসা করে, শুধু এরাই না মাঝে মাঝেই আরও দুই-চার জন বহিরাগত মেয়ে আসে তাদের সাথে থাকে পুরুষ মানুষ, সারারাত চলে আদিম উৎসব, সকাল বেলা অনেক সময় লেনদেন নিয়ে ঝামেলা হলে শোনা যায় তর্ক-বিতর্ক।



আহসান বড় রাস্তা পার হবে, এমন সময় মনে পড়ল বাসায় তো যাওয়া যাবে না, তবে কি মেয়ে দুটির বাংলালিংক দামের অফারটি লুফে নেব? বাসায় যে লোকটি এসেছে সে, তার স্ত্রী মলির বড় ভাই- বড় ভাই তো আর জানে না তার বোন ব্যাংকে চাকরির পাশাপাশি বেকার আহসানকে বিয়ে করে সবার অগোচরে সংসার করছে আর আহসানের বেকারত্ত্ব লাঘবের আশায় আছে। আহসান একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে পারলেই পারিবারিক ভাবে চতুর্থ থেকে ষষ্ঠবার কবুল শব্দটি বলতে পারে। এ আশা তাদের দীর্ঘ দুই বছর যাবৎ পূরণ হচেছ না মাঝে মাঝেই মলিদের গ্রাম থেকে কেউ বেড়াতে এলেই তাদের কেউ না জানা সংসারে পশ্চিমা লঘু চাপ দেখা দেয় কেননা আহসান আর ঘরে ফিরতে পারে না। আহসান হয়ে যায় ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় উদ্বাস্তু, তবুও সমস্যা হয় না। আজও হতো না যদি আনোয়ার ম্যাসে থাকত-

আহসানের ভাবনার দেয়াল ধীরে ধীরে আরও পুরু হচ্ছে, আজ কি করবে? রাস্তায় ঘুরলে লোকজন সন্দেহ করবে, এমনকি পুলিশ ৫৪ ধারার সফল বাস্তবায়ন করে থানায়ও নিয়ে যেতে পারে, তাতে আরও সমস্যা-



তবে কি মেয়ে দুটির ডাকে সাড়া দিয়ে মলি’র সাথে একরাতের জন্য বেঈমানী করবে, না তাও তো ঠিক হবে না, কেননা মলি তো তাকে অগাধ বিশ্বাস করে বলেই তার সাথে পরিবারের কাউকে না জানিয়েই সংসার করছে। তবে কি রাস্তায় রাত কাটাবে?????????????

[চলবে]



এম আলম তারেক

১৩-০৭-২০১৪

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.