নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এম আলম তারেক

এম আলম তারেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফরমালিনযুক্ত পুলিশ

২২ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:০৭



কনস্টেবল আনোয়ার অফিসে এসেই শুনতে পেল তাকে ডিএমপি কমিশনার সাহেব তলব করেছে, সকাল ০৯.৩০ টায় হাজির হতে হবে। পুলিশে চাকরি করলেও VIP ব্যক্তির অফিসে নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত হওয়ায় তাকে একটানা ২৪ ঘন্টা, একটানা ৩৬ ঘন্টা অথবা পরবর্তী পার্টি না আসা পর্যন্ত দায়িত্ত্বে নিয়োজিত থাকবে এমন উদ্ভট ও অমানবিক ডিউটি করতে হয় না, তবে এজন্য তাকে শুধু প্রতিদিন পরিপাটি পোশাকে হাজির হতে হয়।



ডিএমপি কমিশনানেরর তলব শুনতেই বুকের পাজরে একটি কেরসিন কুপির ধপ করে নিভে যাওয়ার মত শব্দ প্রতিধ্বনিত হওয়ার মত অবস্থা হবে ডিএমপির প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের কিন্তু আনোয়ারের তা হয় না। কারন এর আগেও বেশ কয়েকবার কমিশনারের তলবানায় হাজির হয়ে সাফল্য দেখিয়েছে।



তলবানার মর্যাদা অনুযায়ী আনোয়ার যথাসময়ে হাজির কমিশনার সাহেবের কক্ষের সম্মুখে, স্যার ব্যস্ত আছে একটু দাড়ান, আপনাকে ডাকা হবে বলতে বলতে তার সামনে দিয়ে বেড়িয়ে গেল কমিশনারের স্টাফ অফিসার সাহেব।



ঠিক ত্রিশ মিনিটের কঠিন অপেক্ষার পর ১০.০০ টায় ডাক পড়তেই আনোয়ার কমিশনার সাহেবের কক্ষে প্রবেশ করে ধুরুম শব্দে অভাবনীয় একটি স্যালুট মেরে-

-স্যার, আনোয়ার স্যার।

-কেমন আছেন, ছেলে-মেয়ে কেমন আছে, রোজা রেখেছেন।

-ভাল স্যার, ভাল স্যার, জি স্যার।

-আপনাকে একটি দায়িত্ব দেওয়া হবে। আশাকরি সঠিক ভাবে পালন করবেন।

-জি স্যার, চেষ্টা করব স্যার।



-মাননীয় স্বরাষ্ট মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশ দশজন ভিক্ষুক নির্বাচন করে ধরে নিয়ে আসতে হবে, মন্ত্রী মহোদয় আগামীকাল ভিক্ষুকদের সাথে সেহরী খাবেন। তবে শর্ত আছে ঠিক ধরে নয় আপনি পোশাক পড়ে দুই ঘন্টা করে কাওরানবাজার, ফার্মগেট ও গাবতলী দাড়িয়ে থাকবেন আর আপনার কাছে যে ভিক্ষা চাইবে তাকেই ধরে গাড়ীতে তুলবেন, আপনার পাশেই ‍‌"অপারেশন সেহরী'র জন্য ভিক্ষুক নির্বাচন" এর গাড়ী দাড়িয়ে থাকবে।

-জি স্যার।

-তবে আপনাকে নির্বাচিত করা হয়েছে এজন্য যে আমার আত্মবিশ্বাস আছে আপনি এমন কাউকে ধরবেন যে আপনার কাছে ভিক্ষা চায়নি। কারন আপনাকে আমি কষ্টি পাথরে অনেক আগেই যাচা্ই করেছি। অন্য কাউকে দিলে যাকে তাকে এমনকি তার আত্মীয়-স্বজনকে ধরে নিয়ে আসবে ভিক্ষুক সাজিয়ে। কারন মাননীয় স্বরাষ্ট মন্ত্রী'র সাথে সেহরী বলে কথা।

-জি স্যার।

-বাইরে গাড়ী রেডি আছে বেরিয়ে পড়েন। অপারেশন শেষ করে ইফতারের পরে আমার সাথে দেখা করবেন। রাজারবাগে ভিক্ষুকদের রাখার ব্যবস্থা করা আছে ওদের ওখানে আরআই সাহেবেরে কাছে বুঝে দিয়ে তবেই আসবেন। পারলে ডাক্তার সাহেবের সাথেও কথা বলে আসবেন। একজন ডাক্তারও থাকবে তাদের শারীরিক কোন সমস্যা হয় কিনা তা নজর রাখার জন্য। কারন সেহরীর সময় দশজনের জায়গায় নয়জন হওয়া যাবে না। মাননীয় স্বরাষ্ট মন্ত্রী বলে কথা।

-জি স্যার।

-তুমি অপারেশনে সফল হলে তুমিও মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে সেহরী খেতে পারবে।

-জি স্যার।



আনোয়ার আবারও স্যালুট মেরে তরঘরি করে রুম থেকে বেরিয়ে পরতেই সামনে একটি গাড়ী দেখতে পেল। পাশে দাড়ানো একজন বলল, আনোয়ার ভাই আপনার জন্যই গাড়ী, উঠে পড়েন। আনোয়ার আর চিন্তা না করে গাড়ীতে উঠে পড়ল। গাড়ীতে উঠে বসতেই ড্রাইভার বলল-

-ভাই কোথায় যাবেন? গাবতলী, ফার্মগেট না কাওরানবাজার---

-গাবতলী চনেন, গাবতলী থেকেই শুরু করি।



ড্রাইভার গাড়ী স্ট্রাট দিয়ে বেড়িয়ে পড়ল, আনোয়ার সামনে বসে চিন্তা করছে যাই হোক মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে সেহরী খাওয়ার সুযোগতো পেয়েই গেছি কারন দশজন ভিক্ষুক ওতো গাবতলী'ই যথেষ্ট কাওরান বাজার আর ফার্মগেট আসতেই হবে না। যাক বাকী সময়টা বাসায় রেষ্ট করে কমিশনার সাহেবকে ইফতারের পরে রিপোটর্ট করা যাবে। এবার মন্ত্রী মহোদয়কে সেহরীর একফাঁকে বলে জাতিসংঘ মিশনে কোন একটা দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ২০ বছরের চাকরী জীবনে ডিপার্টমেন্টতো আমার কাছ থেকে অনেক কিছু নিয়েছে, আমি সৎ থাকতে গিয়ে কিছুই পাইনি অন্য ব্যাচম্যানেরা সবাই যেখানে বিলাসী জীবন যাপন করছে আমার সেখানে নিজের ছেলেকে নিজেরেই পড়াতে হয়। পাওয়ার মধ্যে মাঝে মাঝে বড় বড় অফিসারদের ডাক। অনেকবার ডাকে সারা দেওয়ার পাশাপাশি বলেছিলাম, স্যার আমার জন্য যদি জাতিসংঘের মিশনে একটা ব্যবস্থা করতেন তবে, স্যার একটু আর্থিক টানাটানি থেকে রেহাই পেতাম। অনেক অনুরোধ, অনেক চেষ্টাই করেছি তবুও কাজ হয়নি যদি এবার কিছু একটা হয়। কমিশনার স্যারকে ধন্যবাদ দেওয়াই প্রয়োজন আমাকে নির্বাচন করেছে বলে না হলে তো আর এমন সুযোগ আসতো না। মানুষটা সৎ মানুষের কদর বোঝে, বেচারা অনেক চেষ্ট করছে ডিএমপি'র পুলিশদেরকে সৎ ও সাহসী বানাতে কিন্তু তাতে গতি পাচেছ না কেন যে পাচেছ না তা আল্লাই জানে, যাক ওগুলো উপর মহলের ব্যাপার।



আনোয়ারের ভাবনাগুলো ভাবতে ভালই লাগছে, সুখের ভাবনা ভাবছে তাই কখন যে গাবতলীর কাছাকাছি এসে গেছে বুঝতেেই পারেনি। গাবতলী এসে গাড়ী থেকে নেমেই দাড়িয়ে পড়ল রাস্তায়, আনোয়ারের ডিউটি শুরু।



পাশ দিয়ে অনেক ভিক্ষুক যাচ্ছে কিন্তু কেউ আনোয়ারের কাছে ভিক্ষা চা্ইছে না, শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে, অনেকে আবার মজা করে পাশের জনকে বলছে সাইড দিয়ে যা, দেখস না মামায় দাড়াইয়া রইছে।



প্রায় এক ঘন্টা দাড়িয়ে থেকেও কোন ভিক্ষুক তার কাছে ভিক্ষা চায় এমন কাউকে পেল না অথচ তার পাশে দাড়ানো অনেক লোকের কাছে বেশ কয়েকজন ভিক্ষুক ভিক্ষা চেয়ে অনেকের কাছে পেয়েছে আবার অনেকের কাছে পায়নি। যখন কারও কাছে পায়না তখন আনোয়ারের মনে বেশ আশা জন্মে যে এবার হয়তো তার কাছে চাইবে। কিন্তু ভিক্ষা না চেয়ে তার সামনে দিয়ে মাথা উচু করে হেটেই যেতে থাকে---



দুই ঘন্টার ব্যর্থ অভিযান শেষ করে আনোয়ার ড্রাইভারকে বলল-

-চলেন, দেখি ফার্মগেট যাই।



আনোয়ার গাড়ীতে উঠে বসেই চিন্তা করতে লাগল ফার্মগেটে গেলে হয়তো পেয়ে যাবে দশজন না হোক পাঁচজনতো পাবে বাকী পাঁচজন কাওরান বাজারে গেলে পাওয়া যাবে। চিন্তা করতে করতে একটু হালকা চিন্তা মার্কা ঘুমে আচ্ছন্ন হতেই আবার জেগে উঠে দেখে ফার্মগেট চলে এসেছে, আবার গাড়ী থেকে নেমে ডিউটি শুরু করল।



ফার্মগেটেও একঘন্টা কেটে গেল কিন্তু তেমন কোন সাড়া পেল না। একজন ভিক্ষুক কথা বলল তবে তা বেশ কষ্টদায়ক, হঠাৎ সামনে এসে বলল-

-বস, ঈদ সামনে একঘন্টা হইল দেখতাছি দাড়ায়ে আছেন, হইছেনি ভাবী'র শাড়ী কেনোনের লেই কিছু?



চাতক পাখীর মত চেয়ে চেয়ে ফার্মগেটেও দুইঘন্টা কাটিয়ে হতাশ হয়ে কাওরান বাজার চলে গেল আনোয়ার। কাওরান বাজারের অবস্থা আরও খারাপ। সেখানে ভিক্ষুক সকলেই গাড়ীগুলোর দিকেই বেশী আগ্রহী, সবাই সিগন্যাল পড়ার সাথে সাথেই গাড়ীর দরজায় গিয়ে টোকা দেয় কখনওবা গাড়ীর ভিতর থেকে গ্লাস খুলে পাঁচ/দশ টাকা বাড়িয়ে দেয় তাতেই তাদের স্বস্তি আনোয়ারকে উদ্দেশ্য করে কেউ হাত বাড়ায় না, কেউ তো আর জানে না আনোয়ার দেশের মাননীয় স্বরাষ্ট মন্ত্রীর জন্য সেহরী পার্টির লোক খুজছে।



হঠাৎ মাঝ বয়সী একজন এসে আনোয়ারকে বলল-

-মামা, সারাদিন কিছু করতে পারি নাই, ইফতারীর আগে এখন সবাই বাসায় যাওয়ার জন্য বিশ্বকাপ ট্রফি ছুবে এমন নেশায় বাসে উঠতে চায়, একটু ট্র্যাকেল দিয়েন দেখি দেখি বড় দাইন মারা যায় কিনা, মারলে ফিফটি-ফিফটি।



এপাশ ও ওপাশ করে কোন নির্বাচিত ভিক্ষুক না পেয়ে হতাশ হয়ে দুই ঘন্টা অবস্থান করে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ীতে চরে বসে চিন্তা করতে লাগল কমিশনারের কোন কাজে এ পর্যন্ত ফেল করি নি, আজ কি জবাব দেব? বাসায় পৌছে ফ্রেশ হয়ে ইফতারের জন্য এখনও সময় বাকী আছে ভেবে আনোয়ার বাহিরে বের হল ছোট ছেলেটা সাথে নিয়ে একটু হেটে আসবে ভেবে-



বাহিরে বের হতেই আলতোভাবে একটি হাত সামনে চলে এলো-

-স্যার, কিছু দেন না, ইফতারি কিনা খামু।

আর একটু সামনে বাড়তেই আর একজন-

-ভাই, দশটা টাকা দেন নইলে ইফতারীর ব্যবস্থা করেন না, ভাই গো আমি খুব কষ্টে আছি।



আনোয়ার ভাবতে লাগল ৬ ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে মাননীয় স্বরাষ্ট মন্ত্রী'র সাথে সেহরী খাওয়ার জন্য ভিক্ষুক খুজে পেলাম না আর এখন একজনকে বিদায় করতেই আর একজন হাজির। এটা কেন হচ্ছে, তবে কি আমার গায়ে পুলিশের পোশাক ছিল বলে আমাকে কি কেউ মানুষ মনে করতো না? ভুল করেও কেউ তখন হাত পাতেনি বরং আরও উপহাস করেছে, কেউ তার অপকর্মের ভাগীদার হওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। ভিক্ষুকরাও কি বোঝে এরা কাউকে দেয় না শুধুই নেয়? তবে কি সব দোষ পোশাকের? এটা কি করে সম্ভব স্বাধীন দেশের একটা সুশৃঙ্খল বাহিনীর পোশাক পড়লে কি মানুষ থেকে বন্য প্রাণী হয়ে যায়, না কি লাইসেন্সধারী বৈধ অপরাধী হয়ে যায়? এটাতো পোশাকের দোষ নয় এটা আমার মতই কিছু পুলিশ নামধারীদের অপকর্মের ফল।

এই পোশাক পরে একটানা ৩৬ ঘন্টা ডিউটি, ব্যারাকে বিছানা বদল করে রেস্ট, ছুটিবিহীন একটানা কর্মস্থলে থাকা সবই করে পুলিশ, তবে কেন এর প্রতি মানুষের ভিন্ন দৃষ্টি। না এটা চলতে পারে না শুধুমাত্র গুটিকয়েক ফরমালিনযুক্ত পুলিশেরে জন্য আজ পুরো বাহিনীর এই অবস্থা। কমিশনার সাহেব ঢাকাবাসীকে ফরমালিনমুক্ত ফল উপহার দেওয়ার জন্য যে প্রচেষ্টা চালিয়েছে তেমন একটা উদ্যোগ নিয়ে যদি এই ফরমালিনযুক্ত পুলিশদের বাছাই করে আস্তাকুড়েঁ নিক্ষেপ করে তবেই মানুষ পুলিশকে সম্মান করবে, পুলিশের পোশাক তখন হবে সেবার প্রতীক,এই পোশাককে তখন কেউ ভয় পাবে না কেউ তার অপরাধের ভাগ দিতে চাইবে না পোশাকধারীদের।আর ঢাকার মানুষ থাকবে শান্তিতে।

ভাবতে ভাবতে কখন যেন ছোট ছেলেটার হাত ধরে বাসায় ফিরেছে আনোয়ার তা বুঝতেই পারে নি-------



হঠাৎ বউ এর ডাকে আনোয়োরের ঘুম ভেঙ্গে গেল, ওঠো সেহরীর সময় প্রায় শেষ, সেহরী খাবে। আনোয়ার ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসেই চিন্তা করল, স্বপ্নটা কি সত্যি পুলিশের পোশাক পড়লে সাধারণ মানুষ পুলিশকে ভিন গ্রহের মানুষ ভাবে?



কবে যে, মানুষ বন্ধু ভাববে???????????

সেই সময়ের অপেক্ষা ছাড়া আর তেমন কিছুই করা নেই------------------------



(কাল্পনিক)



এম আলম তারেক

২২-০৭-২০১৪

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:২৪

তূর্য হাসান বলেছেন: সেই সময়ের অপেক্ষা ছাড়া আর তেমন কিছুই করা নেই------------------------
লেখনি চমৎকার। ভালো থাকুন।

২| ২৩ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:২৯

এম আলম তারেক বলেছেন: তূর্য হাসান ভাই মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। দোয়া করি আপনিও ভালো থাকেবন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.