![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আকাশে মেঘ ভর করেছে, মনে হয় বৃষ্টি হবে তাই মমিন দ্রুতপায়ে হেঁটে বাসায় ফেরার চেষ্টা করে হাঁটছে-হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখ পড়ল বিআরটিসি একটি দ্বিতল বাসের দিকে, বাসের গায়ে বিজ্ঞাপনটি দেখে তাঁর চোখ আরও ভারী হল, পায়ের গতি কমে গেল। ইদনিং তাঁর পাঁ বেশ চলে একসময় সে দ্রুতপায়ে হাঁটতে গেলে মনে হতো কে যেন পিছন থেকে পা টেনে ধরছে, তাই সে সবসময় গোপালভার স্টাইলে মৃদু পাঁয়ে হাঁটতেই বেশী পচ্ছন্দ করত।
যখন সে আখির সাথে হাঁটতো তখন গোপালভার স্টাইলে হাঁটলেও কেন যানি সময় অতিমাত্রায় দানবীয় গতিতে শেষ হয়ে যেত, সময়কে তখন ঘড়ির কাটায় নয় আকাশের বিদ্যুতের চমকানিতে অনুভব করে আগামীকালের জন্য অপেক্ষায় থেকেই মনকে পুরনো ছোলার ডালের সাথে ভিজিঁয়ে শান্ত করে রাখত।
বিআরটিসি বাসের গাঁয়ে বিজ্ঞাপন দেখে তার আখির কথা মনে হলো, আখি “দুটি সন্তানের বেশী নয়, একটি হলে ভাল হয়” বিজ্ঞাপনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ীতে দেখিয়ে প্রতিদিন মমিনকে মনে করে দিত ভাল করে পড়ে নাও মনে রাখতে হবে- বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ীতে এটা দেওয়া হয়েছে আমাদের মত মূল্যবান দেশপ্রেমিক ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষতের জন্য সচেতন করার জন্য। মমিন বিষয়টাকে ভাল চোখে দেখত না কারন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের গাড়ীতে থাকা উচিত “সবার জন্য শিক্ষা চাই, শিক্ষার কোন বিকল্প নাই” ধরনের বিজ্ঞাপন। আবার মাঝে মাঝে ভাবত হয়তোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিজ্ঞ কর্মকর্তা মনে করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ীতে এটাই থাকা উচিত কারণ ছাত্র-ছাত্রীরা বাসের ভিতরে বসে মাথা বের করে ধনুক বাঁকা হয়ে বিজ্ঞাপন পড়বে না পড়বে অন্য বাসের লোকজন।
আখি’র সাথে অনেক দিন আগেই তার যোগাযোগ বিচিছন্ন হয়ে গেছে তার নেটওয়ার্কে এখন চার সন্তানের জননী মমতা ও চারটি সন্তানের একটি বিশালাকার পরিবার। যার বোঝা টানতে টানতে তার আর আখির কথা মনেই হয় না, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নাই আর রাতে ঘুমাতে যাবার আগে আনতে হবে লাগবে এমনসব সহোদর শব্দেই জীবন নামের রেলগাড়ী শুধু চলছে মধুর কোন শব্দ উৎপাদন করে না।আখি অবশ্য বেশ ভালই আছে-যতদূর জেনেছে আখি “একটি হলেই ভাল হয়” এই নীতিতে অটল থেকে তার জীবন থেকে সুঘ্রাণ নিচ্ছে প্রতিনিয়ত।
আখি’র সাথে যখন তার সম্পর্ক তৈরি হয় তখনই আখি বলেছিল তুমি তো ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র তোমাকে অবশ্যই প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারচোখ বিশিষ্ট বিজ্ঞ শিক্ষক হতে হবে, নয়তো আমি তোমাকে কখনই বিয়ে করতে পারব না কারণ আমি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ব্যতীত অন্য কাউকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে পারব না। আমার আজীবনের লালিত স্বপ্ন আমার স্বামী হবে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামাকরা শিক্ষক, যার সময় থাকবে অফুরন্ত ক্লাস নিয়ে এসেই আমাকে সময় দিতে পারবে অথবা ঘরে বসে বই পড়ে সময় কাটাবে অথবা লেখালেখি করবে আর আমি তাকে মনে ভরে দেখব, অসংখ্য মানুষ তার লেখা পড়ার জন্য মুখিয়ে থাকবে।
কিন্তু তা আর হয়নি আখিও অবশ্য তার মনের মতো ঘর গড়তে পারেনি, তার স্বামী তাকে সময় দিবে কি নিজেই অন্যের সময় ধার করে চলে। বিশাল ব্যবসায়ী সময় যে তার কম এই ভাবনা ভাবারই সময়ই নেই, আখির তার দিকে কি তাকাবে আখির দিকেই সে তাকাতে পারে না। আখির গালে টোল পড়া হাসিগুলো চার দেয়ালেই হয়তো বন্দি থাকে সে হাসি কারও আর উপভোগের জন্য নয় শুধুই আখির নিজের মনের মহাসাগর থেকেই জন্ম নেয়া।
আখির সাথে অতিমাত্রায় সম্পর্কে জড়িয়ে তার মেধাকে ব্যবহার করতে না পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান কোর্স শেষ করতে না পেরে স-সম্মানে বিদায় নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাইভেটে পরীক্ষা দিয়ে যন্ত্রণাদায়ক একটি স্নাতক সনদ নিয়ে গার্মেন্টসে চাকরী করেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে প্রতিদিন এই ভেবে যে দেশের অধিকাংশ মানুষই যেখানে নিরক্ষর সেখানে সে একটি ব্শ্বিবিদ্যালয় থেকে সনদবিহীন ফিরে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী পেয়েছে, এক জীবনে দুটি বিশ্ববিদ্যায়ের স্বাদ তাতেই বা কম কিসে?
আখি’র পড়ালেখার অবস্থা একইরকম হলেও বাবার অঢেল সম্পদের জোড়ে তার আর পিছনে ফিরে তাকতে হয় নি, বিয়ে হয়েছে সংসার হয়েছে সময় তারও চলে গেছে কিন্তু আবার ফিরে এসেছে শুধুমাত্র মেয়ে হিসেবে জন্মানোর কারনে। আমাদের দেশের মেয়েদের যোগ্যতা বলতে বাবার প্রাচুর্য আর নিজের সৌন্দর্যই যথেষ্ট আর কোন কিছুর প্রয়োজন নেই।
বিআরটিসি বাসের বিজ্ঞাপনটি দেখতে দেখতে আর আখির কথা মনে করতে করতে তার পায়ের গতি কখন যে থেমে গেছে তা সে নিজেও জানে না। বাসটি তার চোখের আড়াল হতেই আবার সে হাটতে লাগল আরও দ্রুত গতিতে গতি যেন আগের থেকে দ্বিগুনেরও বেশী।
হাটতে হাটতে মমিনের মনে একটি প্রশ্ন জাগলো আজ যে গতি পায়ে হঠাৎ জন্ম নিলো এরকম গতি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে আখির সাথে সম্পর্কের পাশাপাশি পড়ালেখার মধ্যে জন্মাতো তবে কি এমন হতো?
সেদিন আখি তো আর বিয়ের কার্ডটি ধরিয়ে দিয়ে বলতে পারত না- বিয়েতে কি যেতে পারবে? না পারলে আসার দরকার নেই, বিয়ের অনুষ্ঠানে আমি কন্যার আসনে বসে থাকলেও শুধুমাত্র আমিই নন-গ্র্যাজুয়েট, আমার জন্যই অনুষ্ঠান তাই আমি থাকতে পারছি নয়তো আমিও থাকতে পারতাম না। আমার জন্য অনুষ্ঠান তাই আমি তোমাকে ব্যক্তিগতভাবে দাওয়াত দিলাম মন চাইলে এসো ওখানে কেউ তোমার সনদ দেখতে চাইবে না। তবে একটা কথা বলে যাচিছ আজ তোমার জন্য আমি আমার স্বপ্নকে মাটি চাপা দিয়ে অন্যের স্বপ্নের রাণী হতে যাচ্ছি-আমার স্বপ্নটা বাস্তবায়ন করা তোমার জন্য কি খুব কঠিন ছিল? স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা দূরের কথা তুমি আমার স্বপ্নের কাছাকাছিও যেতে পারলে না, শেষ পর্যন্ত আমি আমার বাবার কাছে তোমার নূন্যতম একটি পরিচয় দিয়ে যে একটা প্রস্তাবের বিপরীতে তোমাকে উপস্থাপন করব সে সুযোগও দিলে না। বেচেঁ থাক তবে পারলে এখনও অনেক সময় আছে আবার জেগে ওঠো।
সেদিন আখির কার্ডের সাথে আরও একটি কাগজ হাতে এসেছিল যাতে লেখা ছিল, আপনার আবেদন গতবারই বিশেষ বিবেচনা করা হয়েছিল, আমাদের বিশেষ বিশেষ বিবেচনা করার কোন সুযোগ নেই তাই আপনি আর এবারের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না।
মমিন মনে মনে নিজের কাছেই নিজেকে প্রশ্ন করল যে কাগজ দুটি সেদিন পেয়েছিলাম তার জন্য কি শুধু আমি একাই দায়ী? প্রথমবারের খারপ ফলাফলের পর আখি যদি নিজেকে আড়াল না করে আমাকে উৎসাহ দিত তবে তো আর আমি নিজের জীবন নিয়ে রাস্তায় পড়তাম না-হয়তো পড়ে আবার ঘুরে দাড়াতে পারতাম। আখির শুণ্যতা কি আমার জীবনের জেগে ওঠাকে গলাটিপে মেরে ধ্বংসকে স্বাগতম জানায় নি? আমি কি একাই সময় নষ্ট করে লেখাপড়া বাদ দিয়ে জীবন নষ্টের জন্য ভালবাসা নামক ধারাপাত মুখস্ত করেছি??? আখি কি আমার জীবনটা নষ্টের জন্য সামান্যতমও দায়ী নয়???
মমিন হাটতে হাটতে বাসার প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে, বাসার গেট খুলতে যাবে এমন সময় তারই করা প্রশ্নের উত্তর তার মনে জেগে উঠল- না আখি আমার এ জীবন নষ্টের নাটকে হয়তোবা সহ-অভিনেত্রী তবে সে দায়ী নয়, যার যার জীবন তার তার, নিজেকে নিজেই গড়ে তুলতে হয়-নিজের জীবনের সফলতার জন্য কাউকে বিশেষ ধন্যবাদ দেওয়া যায় তবে অভিষপ্ত জীবনের জন্য কাউকে দায়ী করা যায় না। কারণ প্রতিটি মানুষ বোঝে তার জীবন কিভাবে চালালে সুন্দর হবে কিভাবে চালালে অসুন্দর হবে।
আমার জন্য দায়ীঃ আমি----------------------------- অন্য কেউ নয়।
এম আলম তারেক
০৫-০৮-২০১৪
©somewhere in net ltd.