নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এম আলম তারেক

এম আলম তারেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বরিশালের আমড়াঃ আমাগো গাছের আমড়া

০৭ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:২৩

সঞ্জয় দাদা রাস্তার পাশ থেকে কাঠিতে লাগানো ফুলের পাপড়ির মত ছড়িয়ে থাকা দুটি লবন মাখানো আমড়া কিনে একটা আমার হাতে দিয়ে বলল- ভাই খান, বরিশালের আমড়া, বরিশালের আমড়া না’কি জগৎ বিখ্যাত?



আমি আমড়া হাতে সঞ্জয় দাদার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হাঁটছি আর আমড়া খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি, এমন সময় আমার পিছন থেকে দুই পাশ দিয়ে ৮-৯ বছর বয়সী একটা ছেলে ও একটা মেয়ে সামনে এসে বলল, ভাই দেন, ভাই দেন না……………….



আমি ওদের না দেখার ভান করে আমড়া খাওয়া শুরু করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আর ওরা আমার সামনে থেকে পিছু হেঁটে আমার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্ট করছে আর বলছে, ভাই দেন না- আমগো বাড়ি বরিশাল, মেলা দিন দেশে যাবার পারি না-এড্যা মনে হয় আমাগো ঘরের পিছনকার গাছের আমড়া, আমগো এক কোয়া দেন না ভাই। দেন--------



আমি ওদের উপর বিরক্ত হয়ে রাস্তার একপাশে দাড়িয়ে গিয়ে, ওদের দুজনের দিকে রাগান্বিতভাবে তাকিয়ে বললাম- কে বলছে এটা তোদের গাছের আমড়া? তোরা গাছ থেকে পেড়ে নিয়ে এসে আমড়াওয়ালেরে দিছস, না। তোদের গাছে আমড়া আছে, তাহলে আমার কাছে চাচ্ছিস কেন? তোরাতো বাড়ী গেলেই খেতে পারবি।



আমি ওদের সাথে কথা বলতে বলতে আঁটি বাদে আমড়া আশেপাশে খেয়ে ফেলেছি, আঁটির উপর দাত বসাবো এমন সময় মেয়েটি বলল- ভাই খায়া শেষ করতাছেন-আঁঠিডাই দেন, দেন না।



অবশেষে বিরক্ত হয়ে আমড়ার মধ্যে সবচেয়ে স্বাদের অংশ আটি দিয়ে দেওয়ার জন্য হাতে নিতেই মেয়েটি আমার হাত থেকে আঁটিটি কেড়ে নিয়ে তৎক্ষণাত ছোট্ট সুন্দর সুন্দর ঝঁক ঝঁকে দাতের নিচে বসিয়ে দু’ভাগ করে একভাগ মুখের ভিতর রেখে দিয়ে অন্যভাগ ছেলেটির দিকে বাড়িয়ে দিলে ছেলেটিও সাথে সাথেই মুখের ভিতর নিয়ে কামড়াতে লাগল।



ছেলেটি আমড়া কামড়াতে কামড়াতে বলল, হয়- এড্যা আমাগো গাছের আমড়া।



ছেলেটির আমড়া কামড়ানো দেখে আর আমাগো গাছের আমড়া এই কথাটি আবার শুনে আমার মনের মধ্যে ওদের প্রতি আগ্রহ জন্মালে, আমি জিজ্ঞাসা করলাম-কিরে তোরা বার বার বলছিস এটা আমাদের গাছের আমড়া, কেন?



আমার কথার জবাব না দিয়ে ওরা দু’জন আমড়া আঁটির শেষ স্বাদ চুষে নেওয়ার চেষ্টা করছে, আর আমি ওদের ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। ভালভাবে দেখে যতটুকু বুঝলাম ওরা দুই ভাই-বোন আর ওরা বেশ ভাল কোন পরিবারের ছেলে-মেয়ে, হয়তো কোন না কোন কারনে ওদের বর্তমান সময় ফিকে হয়ে গেছে তাই আমড়া খেতে মন চাচেছ বলে নানা রকম কথা বলে আমার মন গলানোর চেষ্টা করেছে।



আমি আবারও জিজ্ঞাস করলাম, কিরে বললিনা কেমন করে এটা তোদের গাছের আমড়া?



আমার প্রশ্নের জবাবে মেয়েটি বলল,



-হয় ভাই আমাগো গাছের আমড়াগুলানের প্যাডে একখান কইরা কাইল্যা দাগ থাহে, ওই বেড্যার সবগুলান আমড়াই দেখছি যতগুলানের চোঁচা ফালাইছে সবগুলাই মনে হয়ছে আমাগো গাছের আমড়া। আবার নাও হইতে হারে আমরা তো আর তিন বছর ধইরা দেশে যাই ন্যা, আমার শয়তান চাচা আছে, ব্যাডায় কি আমড়া গাছটা কাইটাই ফালায়ছেনি?



-আমার বাবারে শয়তানি কইরা জেলেত পাঠায় দিয়্যা, আমাগো বাড়ী-ঘর নিয়া ন্যাছে, আমাগো ঘরগুলান নাকি হ্যার জায়গাত আছিল? আমাগো থাহনের কোন জায়গা নাইক্যা দেইহা আমার মায় আমাগো নিয়া ঢাকায় আইয়া মানুষের বাসাত কাম কইরা খাওয়াইতো। একদিন মায় কাম করতে যাওনের সুম গাড়ীর লগে গুতা খাইছিল, হেইথিকা মায়ও আর কাম করবার পারে না-চলবারও পারে না। আমরাও আর হেই কবেত থিকা দেশে যাইবার পারি না, দেশের আমড়াগাছগুলানের আমড়াগুলাও খাইবার পারি ন্যা।



-তয় মায় কইছে যে, মায় ভালা হইলে আমাগো নিয়্যা দেশে যাইবো, দেশে আমার মামাগো গাছে থিকা আমড়া আইন্যা আমড়া দিয়া আচাড় বানায়া রাখবো বাবায় নাকি তেলেত চুবানো আমড়ার আচারের ঝোল দিয়া খিচুরী খাইতে মজা পায়?



মেয়েটির কথা শুনে কিছুটা হতাশ হয়ে বললাম, চল আমড়া কিনে দেই আমড়া খাবি।



পাশে থেকে ছেলেটি তার হাতের একটি ব্যাগ উচিয়ে বলল, চল যাইগ্যা-আমাড়া খাওন লাগবো না মায়েরে রুডি’ডা খাওয়াই আসি মায়ের মনে হয় পেটেত কিছু নাইক্যা। মায়ের মনে হয় খিদা লাগছে।



মেয়েটি বলল, চল যাইগ্যা----



বলতেই দুজন দৌড়াতে লাগল >>>>>>>>>>>>>>>>>



এম আলম তারেক

০৭-০৮-২০১৪

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.