নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এম আলম তারেক

এম আলম তারেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওএসডি গোল্ডেন জিপিএ-৫

১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ৩:৪১



ফারুক প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে বারান্দায় বসে দৈনিক পত্রিকা পড়ে, যদিও সে অফিসে বসে পত্রিকার অনলাইন ভার্সন থেকে অনেক খবরই মুখস্ত করে ফেলে কিন্তু প্রিন্ট ভার্সন না পড়া পর্যন্ত তার কাছে খবরগুলো বিশ্বাসযোগ্য হয় না। আজও অফিস থেকে ফিরে সে পত্রিকা হাতে নিয়ে বসেছে কিন্তু তার পত্রিকা পড়তে বেশী ভাল লাগছে না তাই শুধু পত্রিকা ধরে নিয়ে ওলট-পালট করছে, কিন্তু কোন খবর পড়বে? কোন খবরই তার কাছে ভাল লাগছে না। বিকেলে অফিস থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ আগে পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে সর্বশেষ খবরের বিভাগে “কলাবাগানে জীপের ধাক্কায় ফেরিওয়ালা নিহত” শিরোনামটি দেখেছিল কিন্তু তারাহুড়ো করে অফিস থেকে বের হওয়ার জন্য পুরোপুরি আর দেখতে পারেনি। বাসায় ফেরার সময় ল্যাব এইডের সামনে প্রচন্ড ট্রাফিক জ্যামে পড়লে তার বাসা শুক্রাবাদ বলে জ্যামে বসে এসির ঠান্ডা হাওয়া খাওয়ার চিন্তা না করে অফিসের গাড়ী থেকে নেমে হাঁটতে থাকে।



কিছুদূর এগোতেই দেখে সামনে বেশ মানুষের ভীড় জমেছে, ভিড় ঠেলে ফারুকও মানব জটলা উৎপত্তির কারণ দেখার চেষ্টা করে কিন্তু সে সহজে পারে না। এমন সময় তার খবরের শিরোনামটির কথা মনে পড়ায় আর আগোনোর চেষ্টা না করে পিছু হটে কারণ সে মৃত মানুষ দেখলে দু-তিন দিন ঘুমাতে পারে না। যদি খবরটি এই ঘটনার হয় তবে তো আর কথাই নেই জীপ গাড়ী যেহেতু চাপা দিয়েছে সেহেতু মৃত দেহের অবস্থা খুব একটা ভালো হবার কথা নয়। তাই সে মানব জটলার বাইরের দিকে থেকেই একজনকে জিজ্ঞাসা করে, এখানে কি হয়েছে? খবরে দেখলাম জীপের ধাক্কায় ফেরিওয়ালা নিহত, এ ঘটনাই কি সেটা? লোকটি জানায়, হ্যাঁ ফেরিওয়ালার ঘটনাই তবে লোকটি আসলে ফেরিওয়ালা ছিলনা, সে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ওএসডি সরকারী কর্মকর্তা ছিল। ওএসডি ছিল বলে অনেক সময় হাতে তাই সে পরিচয় গোপন করে বিকেলের দিকে ফেরী করে বই বিক্রি করতঃ আর তাতে যে টাকা আয় হত সব টাকাই একটি এতিম খানায় দিয়ে দিত।



লোকটার কথা শুনে আরও জানার আগ্রহ দেখা দিলে সে ভীড় ঠেলে সামনে গিয়ে দেখে একটা মাঝ বয়সি ছেলে বসে আছে আর তার পাশ দিয়ে রক্তেরে ঝোপ ঝোপ দাগ। ফারুক ছেলেটাকে নিরব দৃষ্টিতে দেখলেও ফেরিওয়ালা অথবা সেই কর্মকর্তা ও ছেলেটিকে নিয়ে কোন ভাবনাই মিলাতে পারছে না। এমন সময় কেউ একজন পাশ থেকে হঠাৎ বলে উঠল মানুষটি ছেলেটা অসহায় বলে এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পাওয়ায় গত দুই বছর অনেক আর্থিক সাহায্য দিয়েছে। আজ এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে ছেলেটি গোল্ডেন জিপিএ ৫ পাওয়ার খবর দেওয়ার জন্য রেজাল্ট বের হওয়ার পরে এখানে আসার কথা ছিল কিন্তু এসে একজন ফেরিওয়ালা জীপের ধাক্কায় মারা গেছে শুনতে পায়, তার পকেটে প্রথম আলো বিজ্ঞাপন বুথের একটি রশিদ ও একটি ছবি পাওয়া গেছে। ছবিটি নিয়ে সবাই দেখছে তাই সেও ছবিটি হাতে নেয় এবং হাতে নিয়েই দেখে তারই ছবি। তারপর থেকেই ছেলেটি বারবার মানুষটির কথা বলছে আর অজ্ঞান হয়ে পড়ছে।

…………..



পরের দিন সকালে ফারুক অফিসের গাড়ীতে বসেই জানালা দিয়ে হকারের কাছ থেকে একটি প্রথম আলো কিনল, জানালা বন্ধ করে প্রথম পাতার একটা খবর পরে খবরের বাকী অংশ পড়ার জন্য দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় যাওয়ার সময় তৃতীয় পৃষ্ঠায় একটি বিজ্ঞাপন চোখে পড়ল “হারুন গোল্ডেন জিপিএ ৫ পাওয়ায় শুভেচ্ছা, ভবিষ্যতের জন্য শুভ কামনা রইল- শুভেচছান্তে, জনাব আকবর হোসেন”।



বিজ্ঞাপনের ছবির দিকে তাকিয়ে দেখল ছবিটি গতকালের সেই ছেলেটির। বিজ্ঞাপনটি দেখে চোখ সড়িয়ে নিতে নিতে পত্রিকার দ্বিতীয় পাতায় চোখে পড়ল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সরকারী কর্মকর্তা আকবর হোসেন গতকাল কলাবাগানে জীপের ধাক্কায় নিহত-ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন……..।



যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন।



ফারুক খবরটি পড়ে পত্রিকাটি হাত থেকে দু’পায়ের উপর রেখে গাড়ীর সিটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে চিন্তা করতে লাগল, বীর মুক্তিযোদ্ধা সরকারী কর্মকর্তা বেঁচে থাকতে ওএসডি আর মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন। বাহ! কী অদ্ভূত আমাদের এই স্বাধীন দেশ-এই অদ্ভূত দেশে অসহায় হারুন কি পারবে আর কোন ডিগ্রী ভালভাবে অর্জন করতে যেখানে বীরমুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন আর পাশে নাই? তবে কি, হারুনের গোল্ডেন জিপিএ-৫ দু’টি আজ থেকে থেকে ওএসডি।



এম আলম তারেক

১৩-০৮-২০১৪

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.