অভিনব চিটিং

১৮ ই নভেম্বর, ২০০৯ সকাল ৮:৪১

তখন আমি নতুন জামাই! আমার শ্বশুর এবং শাশুড়ী তার মেয়েসহ আমাকে মার্কেটে নিয়ে গেলেন, উদ্দেশ্য একখানা আংটি বানাবেন আমার আঙ্গুলের মাপে। আমিতো লজ্জায় কাচুমাচু! কিছুতেই যাবো না, তাছাড়া পুরুষের অলঙ্কার ব্যবহার নাজায়েজ। তবু এটা নাকি রেওয়াজ....শাশুড়ী বলে হাতে না পড়ো ও পড়বে!....তাহলে আর আমার আঙ্গুলের মাপ কেন?...

যাইহোক তারা যা ভেবেছেন করেছেন। আংটিটা ১৫দিনপর নিতে হবে। যদিও স্বর্ণ ব্যবহার করার ইচ্ছে নেই তবু কেমন যেন লাগছিল...শ্বশুরবাড়ির কোনওকিছুতে মানুষ কেন এতো খুশি হয় জানি না।...অবশ্য গিফট পেলে কে না খুশি হয়?....

বাস্তবাতা হলো ১৫দিনের পরিবর্তে আজ তিনবছর...আংটি আমি পাইনি। আমার স্ত্রীও না। শুনেছি সম্প্রতি ওর বড়ভাই যে ১২বছরের মেয়েসহ বিধবাকে বিয়ে করেছে তাকে দেয়া হয়েছে জিনিসটা। সাথে ছিল পুরনো আমলের একটা হার।...সে ঈদে বলেছিল বাড়ি আয় নাকি কাপড়চোপড় পাঠিয়ে দেব? যাওয়াও হয়নি কাপড়চোপড়ও পাঠায়নি। অজুহাত আমি বলেছিলাম কী দরকার এসবের?

বউ বলে তুমিইতো না করেছিলে...

একটা ফ্রিজ কিনে রেখেছি তোরা এসে নিয়ে যা....গিয়ে দেখি শুধু ফ্রিজ না, তাতে খাবার দাবাড়ে বোঝাই...আমরা যাওয়ারপর মা ছেলে আর পুত্রবধুতে ঝগড়া....একমাসপর নতুন একটা কিনে দেবে। দেড়বছর পার হলেও একমাস আর গেলো না। বাবুর জন্মদিনে কেউ আসেনি....তোরা দাওয়াত দিছিস?

নানী মামাকে নাকি দাওয়াত দিতে হয়। আমার বোনের চারনম্বর ছেলেটার জন্মদিন ছিল ১৫নভেম্বর সিডরের উপর রিপোর্ট নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম ফোনে উইশ করতে পারিনি। মনে পড়লো পরদিন কিন্তু বাবাকি আর মেনে নেয়? না তোর সাথে কথা নাই....

গত ঈদেও বলেছে বাবু আর তোর জন্য জামা কাপড় কিনে রেখেছে একবার এসে নিয়ে যাস....রোজার ঈদ গিয়ে কোরবানীর ঈদ এলো এবারও ঠিক অনুরূপ কথা...মার্কেটিং করার জন্য টাকা নিবি নাকি ড্রেস নিবি...টাকা পাঠাও....তারপর আর কোনও খবর নাই আগেও যেমন হয়নি এবারও হবে না...তবু সে আশায় থাকে বাবার বাড়ি থেকে কিছু একটা আসবে...আফটার অল মেয়ে হলেও অধিকারতো আছে....জমিজিরাত টাকা পয়সা সব যখন ছেলেদের দিয়ে দিয়েছে ভিটেটাও...তখন একআধটু গিফটতো মেয়েটাকে দিতে পারে এমন ভাবে আমার স্ত্রী! তার লোভ দেখে আমি খুব হতাশ হই। সে ইচ্ছে করলেই একটা ড্রেস কিনে আনে। গতকাল্ও একটা প্যান্ট কিনে আনে...দেখো কেমন হইছে। সে কয়েকবার বলে দেখো না কেমন হইছে। আমি টিভিতে তেরেমেরে সাথ রাহে দেখছিলাম অসাধারণ একটা ছবি! ওরদিকে খেয়াল করতে পারছিনা...ও খেপে গিয়ে বলে ও আমার কিছু কিনলেতো তোমার আবার সহ্য হয় না। টিভিটা চলছিল ইউপিএসএ টানটান উত্তেজনা আগে ইউপিএস বন্ধ হবে নাকি বিদ্যুত আসবে...অন্ধকারে ওর প্যান্ট ভালো দেখা যাচ্ছে না তবু দেখতে হবে.... সে কনে বাপের বাড়ির জিনিসের প্রতি এতো আগ্রহ নিয়ে বসে থাকবে? আর ওর মাই বা কেমন প্রতিবারই মানুষের একই কাণ্ড করতে খারাপ লাগে না?

আরেকবার কই আমাদের ড্রেস কই ? বলে শেষে কিছু না পেয়ে ওর মায়ের শাড়ি আর বাবার একটা পাঞ্জাবি নিয়ে আসে। বলে এই পাঞ্জাবিটা তোমার জন্য রিয়াজ পাঠাইছে....আমি কিছু না বলে গায়ে দেই, বেশ আয়েসেই গায়ে লাগাই....কিছুদিন আগে দেখলাম একই পাঞ্জাবি লিংকনের গায়ে স্টুডিও লাইট অ্যাসিস্টেন্ট। আগে ছিল লিফটবয়। ভাবতে মন্দ না সবাই আমরা একই মাটির মানুষতো!

কিন্তু ওর মা কি মানসিক রোগী? কেন সে আগ বাড়িয়ে ওসব বলে?....টাকা নিবি না ড্রেস নিবি...তোদেরজন্য মার্কেট করছি...কবে আসবি.....আসতে চাইলে বলে থাকবি কই? তন্বিও আসছে .....এটাকি রোগ নাকি অন্যকিছু? প্রতারণাও একধরণের রোগের কারণে করে মানুষ!

১০ টি +২/-৪