নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মামুনুর রশী২৪৩৭

বাস্তবতায় বিশ্বাসী

মামুনুর রশী২৪৩৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোরিয়া উপদ্বীপে পারমানু সংকট এবং দুই কোরিয়ার একত্রীকরনের ¤স¢াবনা

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:২৭











¯œায়ুযুদ্ধের অবসানের পর কোরীয় উপদ্বীপের রাজনীতি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। বার্লিন দেয়াল ভাঙ্গনের মধ্য দিয়ে ইউরোপে দুই জার্মানির পুনঃএকত্রীকরণ সম্পন্ন হয়েছিল। অবশ্য বার্লিন দেয়াল ভাঙ্গনই ইউরোপে ¯œায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছে। উত্তর ও দক্ষিন কোরিয়ার একত্রিকরণের চেষ্টার জন্য দক্ষিন কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট কিম দায়ে জংকে ২০০০ সালে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয় । এই পুরস্কার দেয়ার ফলে দুই কোরিয়ার একত্রিকরণ ও কোরিয় উপদ্বীপের শান্তির সম্ভাবনার বিষয়টি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। কেননা কোরিয়া উপদ্বীপের উত্তেজনা শুধু পূর্ব এশিয়ার স্থীতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরুপ নয়, বরং তা বিশ্বস্থীতিশীলতাকে বিপন্ন করতে পারে। এ অঞ্চলের উত্তেজনাকে যদি কমানো না যায় তাহলে দুই কোরিয়াতে যে একটি পারমানবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হতে যাচ্ছে এটা নিশ্চিত।

চীন এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। এই উপদ্বীপে শান্তি ও স্থীতিশীলতার জন্য চীনের সংশ্লিষ্ঠতা খুবই জরুরী। আবার উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপনাস্ত্র কর্মসূচি জাপানের জন্য হুমকি স্বরুপ এবং যুক্তরাষ্ট্র এদিকে দক্ষিন কোরিয়াকে নিয়ে একটি নিরাপত্তা বেষ্ঠনি গড়ে তুলতে সচেষ্ঠ। ফলে দেখা যাচ্ছে, কোরিয়া উপদ্বীপের শান্তি ও স্থীতিশীলতা একটি জটিল প্রশ্ন!

এশিয়ার পূর্ব উপকূলে এই উপদ্বীপের উপস্থিতি। সমগ্র কোরিয়ার আয়তন প্রায় ২ লাখ ১৯ হাজার ২০ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ৭২.৫ মিলিয়ন । ১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর জাপান পরাজয় বরন করলে মার্কিন ও সোভিয়েত বাহিনী কোরিয়ায় অনুপ্রবেশ করে। জাপানি সৈন্যদের আতœসমার্পনের জন্য রণকেীশলগতভাবে কোরিয়াকে দুইভাগে ভাগ করা হয় । এক অংশে মার্কিন বাহিনী অপর অংশে সোভিয়েত বাহিনী অবস্থান নেয়। সোভিয়েত নিয়ন্ত্রিত অংশে একটি সোভিয়েত সরকার গঠন করা হয়। ১৯৪৮ সালে উত্তর কোরিয়া নিজেদের আলাদা রাষ্ট্র হিসাবে স্বাধীন ঘোষনা করে। ১৯৫০ সালে দুই কোরিয়ার মাঝে যুদ্ধ শুরু হয়। অনেক ক্ষয়ক্ষতির পর ১৯৫৩ সালে যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে এই যুদ্ধের অবসান ঘটে।

দুই কোরিয়ার মধ্যকার দ্বন্দ্ব অনেকদিনের , এই দ্বন্দ্ব নিরসনে উপদ্বীপের শান্তি আনয়নে অনেকবার যেীথ উদ্যেগ নেয়া হয়েছে। ১৯৭১, ১৯৭২, ১৯৭৬ , ১৯৮০, ১৯৮৪, ১৯৯৩, এবং সর্বশেষ ২০০০সালে এই উপদ্বীপে স্থীতিশীলতার জন্য যেীথ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্ত দুই পক্ষের বিভিন্ন মতাদর্শজনিত কারন থাকায় তাদের মধ্যে ঐক্য প্রক্রিয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে সাম্প্রতিক এই উপদ্বীপে নতুন করে আবার উত্তেজনা শুরু হয়েছে। উত্তেজনা ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পায় ২০১০ সালে পীত সাগরে জাহাজ ডুবির ফলে উত্তেজনার সূত্রপাত হয়। ২০ মে ২০১০ সালে পাঁচ জাতির সমন্বয়ে গঠিত একটি তদন্ত দলের প্রতিবেদনে উত্তর কোরিয়াকে দোষারোপ করা হয়। যদিও উত্তর কোরিয়া এটি অস্বীকার করে আসছে। চেওনান জাহাজ ডুবির ফলে দুই কোরিয়ার মধ্যকার সম্পর্কে এক প্রস্থ টানাপোড়েন তৈরী করেছে। তার আঁচ না কমতেই যুক্তরাষ্টের সাথে দক্ষিন কোরিয়ার সামরিক মহড়া নতুন করে ¯œায়ুযুদ্ধের রসদ জুগিয়েছিল। উত্তর কোরিয়ার মতে , দক্ষিন কোরিয়ার এই যেীথ সামারিক মহড়া শুধু উপদ্বীপ নয় বরং এই পুরা অঞ্চলের জন্য বড় ধরনের হুমকি ছিল। ২০১০ সালে পিয়ংইয়ং ইঙ্গিত করেছিল তারা পারমানবিক অস্ত্র কর্মসূচিতে ফিরতে ছয় দেশের আলোচনায় আগ্রহী। তবে ওয়াশিংটন ও সিউল এই ব্যাপারে আগ্রহি নয়। কারন এর আগেও এই ধরনের আলোচনার পরে উত্তর কোরিয়া তাদের পরমানু কমর্সূচি চালিয়ে গেছে। বর্তমানেও এই চেষ্টা বন্ধ করেনি । বর্তমানে এই উপদ্বীপে সৃষ্ট চরম ইত্তেজনা এই একই কর্মসূচি নিয়েই সুতরাং এই বিষয়ে লেখালেখি বা আলোচনা সমালোচনা দ্বারা কোন আশানুরুপ ফলাফল পাওয়া যাবে বলে মনে করেন না আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞগন।

বর্তমানে কোরিয়া উপদ্বীপের উত্তেজনা এশীয় মহাদেশে পারমানবিক সংকটের সৃষ্টি করবে। কেননা এই উপদ্বীপের উত্তেজনা নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে চলছে নানামুখি রাজনীতি । দুই কোরিয়ার মধ্য আবার যুদ্ধ শুরু হলে তা গোটা বিশ্বকেই পারমানবিক সংকটে ফেলে দিবে। অবশ্য কেীশলগত কারনেই এই সংঘাত দীর্ঘদীনের, আর এই কারনে যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে তাদের অবস্থানের জানান দিতে গিয়ে এই উপদ্বীপে একটি অস্থীতিশীল পরিস্থতির সৃষ্টি করছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় রয়েছে তাদের শক্ত ঘাটি। আবার উত্তর কোরিয়ার মাধ্যমে চীনও এই উপদ্বীপে তাদের প্রভূত্ব কায়ম করতে চায়। প্রতিবেশী রাষ্ট্র গুলোর স্বার্থ রক্ষার্থে দুটি দেশের মাঝে সবসময় উত্তেজনা লেগেই থাকুক এটি যেন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের চাওয়া। কেননা উত্তেজনার সাথে সাথে তাদের স্বার্থ কায়েম হবে। দুই কোরিয়ার এই সমস্যায় আন্তর্জাতিক মহলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হাত রয়েছে। তাই কোরিয়া উপদ্বীপের অস্থিরতা অতি সহজেই গোটা বিশ্বে সৃষ্টি করতে পারে পারমানবিক সংকট।

দুই কোরিয়া একত্রিকরনের যে সুপ্ত মনোবাঞ্চা দুই দেশের জনগনের মধ্য রয়েছে , সেটাও পুরন হওয়া রাজনৈতিক কারণে এখন অসম্ভব। দিনে দিনে এই উপদ্বীপের উত্তেজনা বাড়তেই আছে। বর্তমানের এই উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে উত্তর কোরিয়াতে সামরিক শাসন জারি করা হয়েছে এমনকি সেদেশের সৈন্য বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। দুই দেশের মধ্য আবার নতুন করে যুদ্ধ শুরু হবার সম্ভাবনা অনেকটাই প্রবল।

তবে দুই কোরিয়ার একত্রিকরন প্রশ্নে চীনের সহযোগিতা ছাড়া এই উত্তেজনার স্বাভাবিকরন কখনোই সম্ভব নয়। আবার যুক্তরাষ্ট্রের মর্য্দাা ছাড়াও এ অঞ্চলের শান্তি ফিরে আসবে না। ক্লিনটন তার পররাষ্ট্রনীতিতে চীনকে গুরুত্ব দিয়ে একটি কেীশলগতভাবে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিলেন । কিন্তু বুশ তার পররাষ্ট্রনীতিতে চীনের গুরুত্ব হ্রাস করেছিল। সেসময় যুক্তরাষ্ট্র তাদের জাতীয় নিরাপত্তাপর জন্য ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নের ঘোষনায় এখনো চীন ও উত্তর কোরিয়া যুযক্তরাষ্ট্রকে সন্দেহের চোখে দেখে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা চীনের সম্পর্ক নিয়ে খুব বেশী প্রত্যয়ী নয়। এতকিছু সত্ত্বেও কোরিয়া উপদ্বীপে শান্তির পূর্বশর্ত হলো উত্তর কোরিযার অর্থনীতি আরো উদারিকরন দরকার। দক্ষিন কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের মনোভাব , দুদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায়িক দলের সফর বিনিময় অব্যহত রাখা ও সর্বোপরি চীন – যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় সহযোগিতা, পাশাপাশি পুনঃএকত্রিকরনে কোরিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থা কিভাবে হবে সে ব্যাপারেও আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে হংকং এর চীনে অন্তর্ভূক্তির পর চীনের এক দেশে দুই নীতি অনুসৃত হয়। আবার জার্মানীর একত্রিকরনের মডেল অনুসরণ করা যেতে পারে। পররাষ্ট্রনীতির বিশ্লেষকদের অনকেই মনে করেন , আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই দুই কোরিয়ার একত্রিকরণ তথা কোরিয়া উপদ্বীপের শান্তি ও স্থীতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব নতুবা এরকম উত্তেজনা ক্রমেই আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলকে দূষিত করছে।

উল্লেখ্য যে, উত্তর কোরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট কিম জং ওন তার বাবার আদর্শ ‘জুচে’ নিয়েই পড়ে রয়েছেন। এ ধরণের একগুয়েমি উত্তর ও দক্ষিন কোরিয়ার একত্রিকরনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে। তবে তার উত্তর সূরি নির্বাচিত হলে হয়তোবা উত্তর কোরিয়া নমনিয় হতে পারে বলে বিশ্লেষকগণ আশা করছেন। উত্তর কোরিয়াকে তার মতাদর্শগত পরিবর্তন এবং নমনীয়তার সীদ্ধান্তে পরিবর্তন আনতে হবে এবং অত্যধিক নমনীয়তার পরিচয় দিতে হবে। নয়ত উভয় কোরিয়ার একত্রিকরনের স্বপ্নতো স্বপ্নই রয়ে যাবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট কিম দায়ে জং তার ‘সানশাইন নীতি’তে যে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেন পরবর্তী সরকার প্রধানদেরও সেই ্উন্মুক্ত পথে হাটার নীতি অবলম্বন করা এখন উভয় কোরিয়ার একত্রীকরন প্রশ্নে মুখ্য সমাধান হিসেবে দাড়িয়ে আছে। একই নৃ-গোষ্ঠি অধ্যুষিত অখন্ড উপদ্বীপটি কনফুসিয়ার আদর্শে লালিত পালিত হলেও খন্ডিত অবস্থায় দুদেশের মানসিক দুরত্ব লক্ষ যোজন। ক্রমেই গড়ে উঠছে ভিন্ন সংস্কৃতি ও আচরণগত ভিন্নতা। তারপরও দু’দেশের জনগনের চিন্তা ধারায় পরিবর্তন ঘটেছে এবং উভয় দেশের জনগনই বর্তমানে ভুলে যেতে চাই তাদের মধ্যকার বিভক্তির প্রাচীর। দু কোরিয়ার একত্রীকরনের এসকল সম্ভাবনাময় নীতিগুলো ধীরে কিন্তু দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে থাকলে হয়তো সেদিন বেশি দুরে নয় যখন আবার বিশ্ব মানচিত্র থেকে উত্তর ও দক্ষিণ শব্দ দুটির বিলুপ্তির মাধ্যমে গড়ে উঠবে কেবল একটি মাত্র দেশ যার নাম হবে ‘কোরিয়া প্রজাতন্ত্র’।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.