নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকৃতির কথা

মানিক সরেন

প্রকৃতিকে ভালো লাগে। নিজেকেও একজন প্রকৃতি পূজারী মনে করি।

মানিক সরেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আদিবাসী উচ্ছেদ আর কতদিন চলবে?

২০ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:৫৩

সমতল কি পাহাড় সমানতালে আদিবাসী উচ্ছেদ চলছে। এ রাষ্ট্রকাঠামোও নিশ্চুপ নেই। মাঝে মাঝেই ভূমিদস্যুদের সাথে তাল মিলিয়ে আদিবাসীদের জায়গা-জমি থেকে উচ্ছেদ করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। সম্প্রতি রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলায় পাঁচন্দর উপজেলার মাহালিপাড়া মিশনের পার্শ্বে দীর্ঘদিন থেকে বসবাসরত আদিবাসী সাঁওতালদের উচ্ছেদ করা হয়েছে (প্রথম আলো, ০১ এপ্রিল ২০১৪)। এই উচ্ছেদ কাজে ভূমিদস্যুদের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনও যোগ দিয়েছে। যথারীতি প্রশাসন বলছে যার জমি তাকে বুঝিয়ে দিতে আমরা সাহায্য করেছি। এই হচ্ছে আদিবাসী উচ্ছেদের খুব সাম্প্রতিক চিত্র। আদিবাসী উচ্ছেদের বহু ঘটনা আছে যা হয়তো লিখে বা বলে শেষ করা যাবেনা।



ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে বাংলাদেশ জন্মের পর নতুন এ রাষ্ট্রেও আদিবাসীরা উচ্ছেদের শিকার হয়ে আসছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারতে আশ্রয় নেওয়া আদিবাসীরা আবার যখন দেশে ফিরে আসলো তখন তারা দেখলো তাদের বসতভিটা, চাষজমি অন্যরা দখল করে নিয়েছে। এরপর শত্রু সম্পত্তি আইন এর দোহায় দিয়ে আদিবাসীদের উচ্ছেদ হতে হলো। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামে জোর করে অ-আদিবাসীদের বসত-বাড়ি করার জন্য জায়গা করে দেওয়া হলো। এসময় আবার আদিবাসীরা উচ্ছেদের শিকার হলো। এছাড়া পাহাড়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের সহিংস ঘটনার জের ধরে আদিবাসীরা উচ্ছেদের শিকার হয়েছে। এরপর সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প যেমন, ইকোপার্ক, ট্যুরিজম, সামজিক বনায়ন এর নামে আদিবাসীরা প্রতিনিয়ত উচ্ছেদের শিকার হচ্ছে।



মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান কাপেং ফাউন্ডেশনের ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার রিপোর্ট ২০১৩’তে উল্লেখ করা হয়, “২০১৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায় ৩,৭৯২ একর ভূমি হয় বেদখল করা হয়েছে অথবা জবরদখল ও অধিগ্রহণের জন্য প্রক্রিয়া চলছে, পক্ষান্তরে সমতল অঞ্চলে ১০৩ বিঘা জমি জবরদখল করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে জবরদখলকৃত জমির মধ্যে ৩,৭১৭ একর ভূমি প্রভাবশালী মহল ও প্রাইভেট কোম্পানী দ্বারা এবং বাকী ৭৫ একর ভূমি সরকার দ্বারা বেদখল করা হয়েছে বা বেদখলের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ভূমি দখলদারদের মধ্যে সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রী জনাব হাছান মাহমুদের স্ত্রীর নামও আছে। বছরব্যাপী ২৬টি আদিবাসী পরিবার নিজেদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের শিকার হয়েছে এবং ১,০৬২টি পরিবার উচ্ছেদের হুমকির মধ্যে রয়েছে। ভূমি দখলের উদ্দেশ্যে সমতল অঞ্চলের ৬৬টি আদিবাসী পরিবার সহিংসতার শিকার হয়েছে। বিগত পাঁচ বছরে বাঙালি ভূমি দুস্য কর্তৃক ভূমি জবরদখল, মিথ্যা মামলা ও হয়রানি, শারীরিক হামলা, আদিবাসী নারীর উপর যৌন হয়রানির ফলে উত্তর বঙ্গের কমপক্ষে ২০০ আদিবাসী পরিবার ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।”



আদিবাসী উচ্ছেদ ও ভূমি দখলের এ হিসাব দেখলে মনে হয় যেন কোন প্রতিযোগিতা চলছে। আদিবাসীদের কোন কিছুই বাদ যাচ্ছেনা। বসতভিটা, চাষের জমি, ধর্মীয় উপাসনা স্থল, শ্বশান সবই দখল করার ষড়যন্ত্র করছে ভূমিদস্যুরা। আর এ কাজে ভূমি অফিসের এক শ্রেনীর কর্মকর্তারাই সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। এ বছর সিলেটে ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক আদিবাসী উরাও সম্প্রদায়ের জমি দখলের ঘটনা ঘটেছে (প্রথম আলো, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪) জয়পুরহাট থানার গোপালপুর মৌজায় আদিবাসীদের ৪.৭০ একর জমি ভূমিদস্যুরা দখলের চেষ্টা করে। এই ঘটনায় স্থানীয় থানাও ভূমিদস্যুদের সহযোগিতা করেছে (আদিবাসী নিউজ.কম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। গত বছর লামাতে বাদঝিরির (আলেক্ষ্যং মৌজা) ২১ টি চাক পরিবার তাদের জায়গা-জমি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয় (প্রথম আলো, ২২ জুন ২০১৩)। মৌলভিবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় খাসিয়োদের পান পুঞ্জি দখলের চেষ্টা ও তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালায় বন ভিাগরে কর্মকর্তারা (সমকাল, ১৩ অক্টোবর ২১০৩)। আদিবাসীদের উচ্ছেদ ও ভূমি দখল বন্ধে প্রতিবাদ, মিছিল-মিটিং, মানববন্ধন, আলোচনা, সমাবেশ, স্মারকলিপি প্রদান করেই যাচ্ছে আদিবাসীরা। কিন্তু কে শোনে অসহায়ের কথা। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং লামাতে চাক ও ¤্রাে পরিবার উচ্ছেদের প্রতিবাদে কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি দল ৬ দফা দাবির সুপারিশ করে (সমকাল, ১৯ জুন ২০১৩)। উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় প্রশাসন ঐ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং উল্টো আদিবাসীদের নামেই মামলা করে।



আলফ্রেড সরেন, পীরেন স্লাল, গিদিতা রেমা, চলেশ রিছিল এর মতো সাহসী আদিবাসী সৈনিকেরা যখনই আদিবাসী উচ্ছেদের প্রতিবাদ করতে গেছে তখনই তাদের হত্যা করা হয়েছে। এসব হত্যার কোনটিরই সঠিক বিচার আজো হয়নি। লোকদেখানো গ্রেফতারের নামে প্রশাসন ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার করে। কিছুদিন পরে দেখা যায় ভূমিদস্যুরা বহাল তবিয়তে জেল থেকে বের হয়ে আবারো আদিবাসীদের জায়গা-জামি দখল করে আদিাবসীদের উচ্ছেদ উৎসবে যোগ দেয়। আদিবাসী বিভিন্ন সংগঠন অনেকদিন থেকে সরকারের কাছে এসবের প্রতিকার চেয়ে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করে আসছে। সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের দীর্ঘদিনের দাবি আজো গোচরে নেয়নি সরকার। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ‘ঘ অনুচ্ছেদের ৪নং ও ৫নং ধারায়’ ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কমিশন গঠনের শর্ত পূরন সাপেক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন পাশ হলেও তার অনেক ধারায় শুভংকরের ফাকি রয়েছে বিধায় এটি এখনও পাহাড়ী আদিবাসীদের ভূমি রক্ষায় তেমন কার্যকর হয়নি। সমতলের আদিবাসীদের জন্য একমাত্র ভূমি রক্ষার কবচ ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ত আইনের ৯৭ ধারায় বলা আছে, জেলা পশাসকের অনুমতি ব্যাতিত কোন আদিবাসীর জমি অ-আদিবাসীরা কিনতে পারবেনা। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে এখানেও জাল অনুমতি সংগ্রহ করে আদিবাসীদের জমি বিক্রীর ঘটনা ঘটছে।



আদিবাসীদের উচ্ছেদ কি কোনদিন বন্ধ হবে? অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম চলছে। কিন্তু কই আদিবাসী উচ্ছেদ তো থামছে না। আদিবাসীদের ভূমি দিন দিন কমতেই আছে। একদিন দেখা যাবে দেশের সব আদিবাসী ভূমিহীনে পরিণত হয়েছে। সমতলের জন্য একটি কার্যকরী ভূমি কমিশন গঠনসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি নিষ্পত্তি কমিশন আইনকে সত্যিকার অর্থে কার্যকর করার মধ্য দিয়ে আদিবাসীদের ভূমি সংক্রান্ত সমস্যার নিরসন হবে বলে মনে করি এবং এর মধ্য দিয়ে আদিবাসী উচ্ছেদও কমে যাবে। আশা করি সরকার এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে যাতে করে আর যেন আদিবাসীদের মা’কে (ভূমি) রক্তাক্ত হতে না হয়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৩

আমিনুর রহমান বলেছেন:




সামূ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি পোষ্টটি স্টিকি করার জন্য।


আদিবাসীদের উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে !!!

২| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১১

স্নিগ্ধ শোভন বলেছেন:
গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট !


সামু ও সকল ব্লগারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি !!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.