![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আদিবাসীদের অধিকারের প্রশ্নে আলাপ তুলতে গেলেই ইদানিং বেশ কিছু মানুষ একটি বিতর্ক হাজির করার চেষ্টা করছে। আসলেই বাংলাদেশে আদিবাসী আছে কিনা? বা যারা আছে তারা আদতে আদিবাসী নাকি অন্য কিছু। আদিবাসী অধিকারের প্রশ্নটিকে পাশ কাটিয়ে এই ধরনের একটি বিভ্রান্তিমূলক বিতর্ক আজ জিইয়ে রাখা হয়েছে। এই রাষ্ট্র যন্ত্রও সেই প্রশ্নটিকে উস্কে দিয়ে আদিবাসীদের নতুন একটি পরিচয় দাঁড় করিয়েছে। রাষ্ট্রের এই নতুন পরিচয়ের হাজির হয়েছে বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে। যেখানে নৃ-গোষ্ঠী নাম দিয়ে আদিবাসীদের নতুন নামকরণ করা হয়েছে। অনেকটা কেউ ধর্মান্তরিত হলে যেভাবে তাদের নতুন নামকরণ করা হয় ব্যাপারটি ঠিক সেইরকম মনে হয়েছে আমার কাছে। আমার নতুন জন্ম হলো, নতুন নাম হলো আর সবাই বাহ্ বাহ্ বলে আমার আসল পরিচয়কে ক্ষমতা কাঠামো ব্যবহার করে গলা টিপে হত্যা করলো। অনেক বুঝরুক ব্যক্তিরাও এটাকে হাত তালি দিয়ে স্বাগত জানালো। বর্তমান সরকারও বেশ গর্বের সাথে প্রচার শুরু করলো যে আমরাই আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠা করলাম। আমরাই একমাত্র যারা আদিবাসীদের ভালো চাই বা উন্নয়ন করছি টাইপ কথার ফুলঝুরি ফোটাতে শুরু করলো।
একজন মানুষের পরিচয় যখন অন্য কেউ করে দেয় তখন ভূল হবার সম্ভাবনা থাকে যদি না সে মানুষ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা থাকে বা তার সম্পর্কে কোন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। এখানে ভূল থেকে বাঁচার খুব সহজ উপায় হচ্ছে যার পরিচয় তাকে নিজেই পরিচিত হতে দিন। তাহলে নিশ্চয় সে তার নিজ পরিচয়টা ভূল দিবে না বলেই আমার বিশ্বাস। কিন্তু আমাদের সরকার বাহাদূর কি করলো? তা আজ আমরা সবাই জানি। আদিবাসী পরিচয়কে পাল্টে দিয়ে আমাদের নতুন পরিচয় দিল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। এ থেকে যেটা বুঝা যায় তাও খুব পরিস্কার। এক হতে পারে সত্যিই সরকারের আদিবাসীদের সম্পর্কে কোন ধারনা নেই। দুই হতে পারে সরকার জাতাভ্যিমান দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজটি করেছে। যেখানে নিশ্চয় সরকারের কোন না কোন স্বার্থ হাসিলের ব্যাপার আছে। আমি সকলকে অনুরোধ জানাবো একটু খোঁজ খবর নেওয়ার। সমতলের সাঁওতাল, উরাও, মুন্ডা, মালো, মাহাতো, সিং, বাগদী, তেলী, রাজোয়াড়সহ বিশেষত উত্তরবঙ্গের আরো অন্য আদিবাসীদের জিজ্ঞেস করে দেখুনতো। খুব সাধারণ খেটে খাওয়া কাউকে জিজ্ঞেস করলেও সে তার পরিচয় দিবে আদিবাসী হিসেবে। আমি আমার জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনদিন শুনিনি উত্তরবঙ্গের কোন আদিবাসী নিজেকে আদিবাসী ছাড়া অন্য কোন নামে পরিচয় দিয়েছে। এমনকি সেখানকার বাঙ্গালি জনগণও তাদেরকে আদিবাসী হিসেবেই জানে। আমরা ব্রিটিশ শাসনকালেও দেখি আদিবাসী হিসেবেই বলা হয়েছে। এমনকি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইনেও আদিবাসী শব্দটি রয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দলিল যেমন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ১০৭ ও ১৬৯ নং কনভেনশন অনুয়ায়িও বাংলাদেশে আদিবাসী আছে বলেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও খুজতে শুরু করলে সরকারী অনেক দলিলেও আদিবাসী শব্দটি পাওয়া যাবে। দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোতে আদিবাসী শব্দটিই বেশী গ্রহণযোগ্য। প্রধানমন্ত্রী নিজেও নাকি কোন এক বক্তৃতায় বলেছেন “বাংলাদেশে যদি কোন আদিবাসী থেকে থাকে তাহলে সেটা সাঁওতালরা”। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও অন্যান্য অঞ্চলের আদিবাসীদের একসময় নানা ঐতিহাসিক কারণে বিভিন্ন নামে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। কখনো পাহাড়ী মানুষ, কখনো উপজাতি বলা হয়েছে। কিন্তু তারাতো নিজেদের আদিবাসী পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
সংবাদপত্রের পাতায় বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে পাহাড়ের মানুষের উপর সামরিক বাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়ণ, দখলদারিত্ব ইত্যাদির কথা পড়ি-দেখি। এও শুনেছি সরকার পাহাড়ের আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নাকি বাংলাদেশের সেনাদের আর নেওয়া হবেনা। এই ভয়টা অমূলক না। কথায় আছে দুষ্ট ব্যক্তি কোন অন্যায় করলে সেটা ঢাকার জন্য আরেকটি অন্যায় করে। আমাদের রাষ্ট্র যন্ত্রের আচরণ কি সেইরকম কোন দুষ্ট ব্যক্তির আচরণের মতো মনে হচ্ছেনা। আবার আদিবাসী স্বীকৃতির ব্যাপারে বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের দাম্ভিক রূপটাও ভেসে উঠেছে। অনেক বাঙ্গালি মনে করছেন অন্যরা যদি আদিবাসী হয় তাহলে আমরা কি পরবাসী। কিন্তু এই ধরনের ছেলেমি যুক্তি কি আজীবন টিকবে নাকি। সংখ্যার রাজণীতি করেই কি কারো সত্যিকার পরিচয় লুকানো সম্ভব হবে। আমি সেটা মনে করিনা।
এই বছর আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে “Bridging the gap: Implementing the rights of indigenous people” । বাংলাদেশের আদিবাসীরা জাতিসংঘের দেওয়া এই প্রতিপাদ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বলছে, “আদিবাসী অধিকার প্রতিষ্ঠায় মুক্তিকামী জনতার সেতুবন্ধন”। আমরা বাংলাদেশের আদিবাসীরা এই লক্ষ্যেই কাজ করছি। আমরা এখনো শক্তি হারায়নি। সরকার আমাদের অপমান করতে পারে। তবুও আমরা বিশ্বাস করি একদিন সরকার তার এই আচরণের জন্য ক্ষমা চাইবে। ঠিক যেভাবে অস্ট্রেলিয়ান সরকার ক্ষমা চেয়ে দীর্ঘ দুইশ বছরের অধিক সময় ধরে যাদের উপর অন্যায় অত্যাচার করা হয়েছে সেইসব আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে। আমরাও আমাদের লড়াই চালিয়ে যাবো। আমাদের অধিকারের কথাগুলো বলে যাবো। মুক্তিকামী মানুষের হাত আমাদের হাতের সাথে মিলবে। তৈরি হবে ভাতৃত্বের এক সেতুবন্ধন। আদিবাসীদের উপর সরকারের মিথ্যাচার যত বাড়বে মুক্তিকামী মানুষের সংখ্যাটা দিন দিন ততই বাড়তে থাকবে। আদিবাসী অধিকার প্রশ্নে সরকারের মিথ্যাচারের অনকেগুলো দলিল সরকার নিজেই তৈরি করে গেছে। আমার কাছেও এরকম একটি দলিল আছে। আমরা যখন এসব দলিলগুলো একসাথে করবো সেদিন কোন যুক্তিতে সরকার বলবে এ দেশে কোনদিন আদিবাসী ছিলনা। যদি নাই থাকতো তাহলে এতগুলো সরকারী দলিলে আদিবাসী শব্দটি কিভাবে আসলো? বিশ্ব বিবেক আর মুক্তিকামী মানুষের এই প্রশ্নের উত্তরে কি সরকার বলবে আমরা আমাদের দেশের সমস্ত আদিবাসীকে মেরে ফেলেছি, আর কোন আদিবাসী বেঁচে নেই। আমি মরে গেলেও রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে ২০০৫ সালে আমাকে দেওয়া একটি সরকারী দলিল সবাইকে দিয়ে যাবো যেখানে সুস্পষ্ট লেখা আছে আমি একজন সাঁওতাল আদিবাসী।
২| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৫
মানিক সরেন বলেছেন: তাহলে আজ থেকে আপনি নিজেকে বাঙ্গালি না বলে আদিবাসী পরিচয় দিয়েন!!!
৩| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:০৮
নীল আকাশ ২০১৪ বলেছেন: বাঙালিরা আমেরিকার ইন্ডিয়ান বা অস্ট্রেলিয়ার এ্যাবোরিজিনদের মত কোণঠাসা নয় যে তাদেরকে আদিবাসী দাবী করতে হবে। বরং তাদেরকে ডমিনেট করতে আসা সাম্রাজ্যবাদীরা যুগে যুগে মার খেয়ে ফিরে গেছে। তারা নিজেদের পরিচয়েই গর্বিত - আদিবাসী দাবী করে জাতিসংঘের শান্তি বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রয়োজনীয়তা তাদের একেবারেই নেই।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:২২
নীল আকাশ ২০১৪ বলেছেন: আপনারা নিজেদেরকে আদিবাসী বলতে ভালবাসেন, খুব ভালো কথা। কিন্তু সেটা মানুষকে খাওয়ানোর আগে দোয়া করে একটু ডিকশনারি ঘেঁটে দেখুন তো আদিবাসী কাকে বলে! বাংলাদেশে খাঁটি বাঙালি ছাড়া আর কেউ কি সেই সংজ্ঞানুযায়ী আদিবাসী হয়?
একটা মিথ্যাকে বারবার বললেই সেটা সত্য হয়ে যায়না - আপনাদেরকে সেটা বুঝতে হবে।