![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঢাকার শাহবাগে তথাকথিত গণজাগরণ
মঞ্চ ওরফে প্রজন্ম চত্বরে ফাঁসির
দাবিতে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর
কয়েকটি পত্রিকার প্রধান
সংবাদে (লিড নিউজ) শিরোনামগুলোর
ভাষা ছিল এরকম—‘স্ফুলিঙ্গ
থেকে দাবানল’। এই সংবাদের
মাধ্যমে তারা বলার চেষ্টা করেছিল এ
আন্দোলন ঢাকার বাইরেও বিস্তার লাভ
করছে। এই
সংবাদগুলো পড়লে বা টেলিভিশন
চ্যানেলগুলোর প্রচারের শব্দ
চয়নগুলো শুনলেই বোঝা যেত
আওয়ামী লীগ ও বাম জোটের
সরকারি পাহারায়
গড়ে ওঠা আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেয়ার
জন্য মিডিয়াগুলো এরকম উস্কানিমূলক
সংবাদ প্রচার করেছিল।
হালে গজিয়ে ওঠা কতিপয় ইলেক্ট্রনিক
মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়া দেশের
ভেতরে বিশৃঙ্খলা উস্কে দিতে
হরহামেশাই একপেশে উস্কানিমূলক
সংবাদ পরিবেশন করে। প্রায়ই
তারা অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির
অপতত্পরতায়। কতিপয়
পত্রিকা এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার
সংবাদ পরিবেশনের
দৃষ্টিভঙ্গি দেখলে যে কোনো সচেতন
মানুষের চোখে তা ধরা পড়ে। গ্রাম-
গঞ্জের ফুঁসে ওঠা মানুষের
ক্ষোভকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার
জন্য তারাই এখন আবার সাম্প্রদায়িক
উস্কানি দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত
হয়েছে।
পুরো ফেব্রুয়ারি মাস
জুড়ে বাংলাদেশে গণহত্যা চলছে।
বিশেষ করে ২৮ ফেব্রুয়ারি এক দিনেই
৬০ জন নিহত হয়েছেন পুলিশ ও
আওয়ামী গুণ্ডাদের যৌথ আক্রমণে।
রাজপথে প্রকাশ্যে গুলি করে তারা এই
হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর
বর্বরতাকেও হার মানায়। ভিডিও
ফুটেজে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে মানুষ
হত্যার দৃশ্যগুলো দেখলে যে কারও
বুঝতে আর অসুবিধা হয়
না এটা যে পরিকল্পিত গণহত্যা। পুলিশ
ধরে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় গায়ে বন্দুক
ঠেকিয়ে গুলি করছে—এরকম ফুটেজ
রয়েছে অনেক।
প্রতিবাদী মানুষকে এভাবে রাজপথে
আইন-
শৃঙ্খলা বাহিনী ধরে নিয়ে ঠাণ্ডা
মাথায় গুলি করার দৃশ্য পৃথিবীর
কোনো গণতান্ত্রিক
দেশে কল্পনা করা যায় না।
২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত
পাঁচদিনে রাজপথে পুলিশের
গুলিতে মৃতের সংখ্যা দেড়শ’
ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের
কোনো গণআন্দোলনে এত লোক নিহত
হওয়ার নজির নেই। এই গণহত্যা হার
মানায় ইসরাইলি বর্বরতাকেও।
জামায়াতে ইসলামী নেতা আবদুল
কাদের মোল্লার রায় ঘোষণার পর
আওয়ামী লীগ ও বামদের ইন্ধনে ফাঁসির
দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনকে উস্কে দেয়
একশ্রেণীর মিডিয়া। রায় পছন্দ
না হওয়ায় সরকারও আপিলের জন্য আইন
পরিবর্তন করে। পছন্দের রায়ের জন্য
বিচার চলাকালীন আইন পরিবর্তনের
নজির সারা দুনিয়ায় এটাই প্রথম। এর
আগে দুনিয়ার কোথাও এরকম আজব
ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরপরই
ট্রাইব্যুনাল থেকে আল্লামা দেলাওয়ার
হোসাইন সাঈদীর রায়
ঘোষণা করা হলো। ২৮
ফেবু্রয়ারি ঘোষিত
রায়ে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন
সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়
ঘোষণার পর কতিপয় ইলেক্ট্রনিক
মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়ার উল্লাস
আমরা দেখছি। তাদের কখনও বিশ্লেষণ
করতে দেখিনি রায়ে কী বলা হয়েছে।
আমি রায়টি পড়ার চেষ্টা করেছি।
রায়ের মূল
চেতনা হলো আল্লামা দেলাওয়ার
হোসাইন সাঈদী পাকিস্তান
সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করেছেন।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর
সহযোগিতায় পাক সেনারা ইব্রাহিম
কুষ্টি ও বিসাবালী নামের দুই
ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। এই দুই
অভিযোগেই ফাঁসি হলো দেলাওয়ার
হোসাইন সাঈদীর। প্রশ্ন
হচ্ছে পাকিস্তান
সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করার
অভিযোগ এনে দেলাওয়ার হোসাইন
সাঈদীকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হলো। অথচ
সেই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর
চিহ্নিত ১৯৫ জন
যুদ্ধাপরাধীকে ছেড়ে দিয়েছিলেন শেখ
মুজিবুর রহমান। মূল আসামিদের
ছেড়ে দিয়ে তিনি গর্ব করে বলেছিলেন
বাঙালি জাতি ক্ষমা করতে জানে। আর
৪২ বছর পর সহযোগিতার অভিযোগ
এনে ফাঁসির আদেশ দেয়া হলো।
শাহবাগের মতো যদি আরেকটি জাগরণ
মঞ্চ তৈরি করে এখন যদি প্রশ্ন
বা দাবি ওঠে, সাঈদী যাদের
সহযোগিতা করেছিলেন তাদের বিচার
করা হোক, সেই মূল আসামিদের
যারা ছেড়ে দিয়ে ক্ষমার দম্ভ প্রকাশ
করেছিলেন তাদের বিচারের কাঠগড়ায়
দাঁড় করানো হোক। মূল আসামিদের
ক্ষমা করে আইন অনুযায়ী সহযোগীদের
বিচার চলে না।
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন
সাঈদীকে যে অভিযোগে ফাঁসি দেয়া
হয়েছে তার কিছু অংশ পাঠকের
সামনে তুলে ধরতে চাই।
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর
বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ
দেয়া অভিযোগের
মধ্যে একটি হচ্ছে ইব্রাহিম
কুট্টি নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা।
তাকে হত্যা করেছিল পাকিস্তান
সেনাবাহিনী। অভিযোগ হচ্ছে এই
হত্যাকাণ্ডে আল্লামা দেলাওয়ার
হোসাইন সাঈদী সহযোগিতা করেছেন।
ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার
অভিযোগে স্বাধীনতার পর ১৯৭২
সালে তার
স্ত্রী একটি মামলা করেছিলেন।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ইব্রাহিম
কুট্টির স্ত্রীর দায়ের করা মামলায়
পাকিস্তান সেনাবাহিনীসহ ১৩ জন
সহযোগীর নাম উল্লেখ
করে আসামি করা হয়। ১৯৭২
সালে ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রীর দায়ের
করা মামলায় পাকিস্তান আর্মিসহ
তাদের ১৩ সহযোগী আসামির
মধ্যে সাঈদীর নাম নেই। ১৯৭২
সালে তো আর
জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় ছিল না।
বিএনপি তখন গঠনই হয়নি।
আল্লামা সাঈদী জড়িত থাকলে তখনই
তো সাঈদী সাহেবকে আসামি করা যেত।
ইব্রাহীম কুট্টির স্ত্রীর দায়ের
করা মামলায় ঘটনার বিবরণে উল্লেখ
করা হয় পাক আর্মি ও ১৩
সহযোগী গভীর রাতে পিরোজপুরের
নলবালিয়া গ্রামে এই হত্যাকাণ্ড
ঘটায়। ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রীর
দায়ের করা মামলার সার্টিফাইড
কপি বিচারের সময় সাঈদীর পক্ষ
থেকে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন
করা হয়েছে। রায়ে এ
বিষয়ে কোনোকিছুর উল্লেখ
পাওয়া যায়নি।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই
ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার
অভিযোগে ২০১০
সালে একটি মামলা দায়ের করা হলো।
মানিক পসারী নামে এক
ব্যক্তি বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের
করেন। এতে আল্লামা সাঈদীকেই শুধু
আসামি করা হয়। ইব্রাহিম কুট্টির
স্ত্রী বাদী হয়ে ১৯৭২ সালে দায়ের
করা মামলার আসামিদের কারও নাম
নেই মানিক পসারির মামলায়। মানিক
পসারির মামলায় অভিযোগের
বিবরণে বলা হয় তার সামনে ইব্রাহিম
কুট্টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
সাঈদী পাকিস্তান
সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করেছেন
এটা তিনি দেখেছেন। ইব্রাহিম
কুট্টির স্ত্রী ১৯৭২ সালে দায়ের
করা মামলায় যা দেখেননি ৪২ বছর পর
মানিক পসারী সেটা দেখলেন।
মানিক পসারির দায়ের করা মামলার
বর্ণনা অনুযায়ী ঘটনার সময় বিকাল
৩টা। এই মামলায় সরকার পক্ষের
সাক্ষী বাসুদেব মিস্ত্রি নামে এক
ব্যক্তি সাক্ষ্য দেন। তার
সাক্ষীতে বলা হয় ইব্রাহিম
কুট্টি হত্যাকাণ্ডের আগেই মানিক
পসারি সেই
বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিলেন। প্রশ্ন
হচ্ছে বাড়ি থেকে চলে গিয়ে থাকলে
মামলার বাদী মানিক
পসারি ঘটনা দেখলেন কেমন করে? বাসু
দেব মিস্ত্রির সাক্ষ্য
অনুযায়ী ইব্রাহিম কুট্টি হত্যাকাণ্ডের
পর দুপুরের খাবার
তিনি বাড়িতে খেয়েছেন। একই
মামলার দুই নম্বর সাক্ষী রুহুল আমিন।
তার বর্ণনা অনুযায়ী ইব্রাহিম
কুট্টি হত্যাকাণ্ড ঘটে বেলা ১১টায়।
১৯৭২ সালে স্ত্রীর দায়ের
করা মামলায় ঘটনার সময় হলো গভীর
রাত। ঘটনার স্থান
হলো নলবালিয়া গ্রাম। মানিক
পসারির দায়ের করা মামলায় ঘটনার
সময় বিকাল ৩টা। ঘটনার স্থান
চিতলিয়া গ্রাম। সাক্ষীদের
বর্ণনা অনুযায়ী ঘটনার সময় সকাল
১১টা। তবে রায়ে মানিক পসারির
মামলায়
আল্লামা সাঈদীকে ফাঁসি দেয়া হয়।
আরেকটি হত্যার
অভিযোগে আল্লামা সাঈদীর
বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়।
সেটা হলো বিসা বালী নামে এক
ব্যক্তিকে হত্যা। এই হত্যাকাণ্ডের
অভিযোগে দায়ের করা মামলায় মূল
সাক্ষী বানানো হয়েছিল সুখরঞ্জন
বালী নামে তার আপন ভাইকে।
বিসা বালী হত্যার ঘটনায় সুখরঞ্জন
বালী ছিলেন সরকার পক্ষের অন্যতম
সাক্ষী। মিথ্যা সাক্ষ্য
দিতে রাজি না হওয়ায় প্রসিকিউশন
থেকে জানানো হয় ৪০ জন
সাক্ষীকে হাজির করা যাচ্ছে না।
তাদের মধ্যে কেউ
বিদেশে চলে গেছেন,
কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না, আবার
কাউকে হাজির করা দুরূহ ব্যাপার।
এজন্য তাদের
নামে তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষ
থেকে জমা দেয়া বর্ণনাকে সাক্ষ্য
হিসেবে গ্রহণের আবেদন জানায়
সরকার পক্ষ। ট্রাইব্যুনাল এর মধ্যে ১৫
জনের নামে উপস্থাপন করা তদন্ত
কর্মকর্তার বর্ণনা সাক্ষ্য
হিসেবে গ্রহণ করেন। এই ১৫ জনের
একজন হলেন সুখরঞ্জন বালী।
তিনি পরবর্তী সময়ে আল্লামা সাঈদীর
পক্ষে সাক্ষী দেয়ার জন্য
ট্রাইব্যুনালে এসেছিলেন। সাক্ষ্য
দিতে এলে তাকে ৫ নভেম্বর
ট্রাইব্যুনালের গেট থেকে অপহরণ
করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের
গাড়িতে করে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া
হয়।
সুখরঞ্জন বালী অপহরণ হওয়ার আগের
দিন দৈনিক আমার
দেশকে একটি সাক্ষাত্কার
দিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন
সত্য কথা বলতে ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার
জন্য এসেছেন।
ট্রাইব্যুনালকে তিনি সত্য
ঘটনা জানাতে চান। এই সাক্ষাত্কার ৬
নভেম্বর প্রকাশিত হয়েছে। আমার
জানা মতে, সুখরঞ্জন বালীকে অপহরণ
করার সময় কয়েকটি মিডিয়ার
সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। যেহেতু
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর
পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসেছেন, এজন্য
তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এছাড়া সরকারি বর্ণনা অনুযায়ী
পালিয়ে থাকা বা নিখোঁজ সাক্ষীদের
১৫ জনের আরেকজন গণেশ
এসে আল্লামা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য
দিয়ে গেছেন। তিনিও
ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছেন তার
নামে তদন্তকারী কর্মকর্তা যে বর্ণনা
উপস্থাপন করেছে সেটা সঠিক নয়।
তিনি সাঈদীর পক্ষে সত্য
কথা বলতে হাজির হয়েছেন এবং সত্য
ঘটনা বর্ণনা করে গেছেন। সরকার
পক্ষের তালিকায়
থাকা সাক্ষী এসে সাঈদীর
পক্ষে সাক্ষী দিলেন। এই বিষয়গুলোও
রায়ে সেভাবে উঠে আসেনি।
আল্লামা সাঈদীর রায় ঘোষণার পর
ফুঁসে উঠেছে দেশের জনগণ। শহর
ছাড়িয়ে আন্দোলন গ্রামের পাড়ায়-
মহল্লায় পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছে।
আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে রায়
ঘোষণার পর প্রতিবাদে রাস্তায়
নেমে আসা নারী ও শিশুর প্রতিও পুলিশ
গুলি ছুড়ছে। পুলিশের গুলিতে নিহত
হওয়া লাশের মিছিলে নারীর লাশ
নিয়েও পুলিশ টানাটানির দৃশ্য
পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। গ্রামে-
গঞ্জে-পাড়ায়, মহল্লায়
ফুঁসে ওঠা প্রতিবাদী মানুষের
আন্দোলনকে একশ্রেণীর ইলেক্ট্রনিক ও
প্রিন্ট মিডিয়া বিকৃত করে প্রচারের
অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা দেখানোর
চেষ্টা করছে পুলিশের প্রতি ইট-
পাটকেল নিক্ষেপের পর
গুলি ছুড়ছে পুলিশ। পুলিশের উপর ইট-
পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা নতুন কিছু
নয়। অতীতেও সব
আন্দোলনে প্রতিবাদীদের পুলিশের উপর
ইট-পাটকেল নিক্ষেপ
করতে দেখা গেছে।
পুলিশকে এভাবে নির্বিচারে গুলি
নিক্ষেপ করতে কখনো দেখা যায়নি।
এছাড়া কোনো আন্দোলনে এভাবে গ্রামে-
গঞ্জে, পাড়ায়, মহল্লায়, নারী-
শিশুকে প্রতিবাদে বের
হয়ে আসতে দেখা যায়নি। শাহবাগের
আওয়ামী-বাম জোটের
জমায়েতকে যারা স্ফুলিঙ্গ
থেকে দাবানল
বলে প্রচারণা চালিয়ে উস্কানি
দিয়েছিলেন তাদের কাছে প্রশ্ন
রেখে বলতে চাই—গ্রামে, গঞ্জে,
পাড়ায়, মহল্লায় ফুঁসে ওঠা মানুষের এই
আন্দোলনকে আপনারা কোন
চোখে দেখছেন! শাহবাগের রঙিন
চশমা খুলে দয়া করে স্বচ্ছ কাচের
চশমায় একবার তাকান। প্রকৃত
ঘটনা তুলে ধরুন। অপরাধ
করে থাকলে ফাঁসি দিতে কারও
আপত্তি নেই। সাজানো অপরাধের পরও
সরকার পক্ষের
সাক্ষীরা যেখানে এসে সাঈদীর
পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন,
যেখানে ট্রাইব্যুনালের গেট
থেকে আইন-
শৃঙ্খলা বাহিনী সাক্ষী অপহরণ
করে নিয়ে যায়, সেখানে ন্যায় বিচার
হয়েছে কিনা সেটা বিবেচনার ভার
পাঠকের আদালতে উপস্থাপন করলাম।
ইদানীং টকশোগুলোতে আওয়ামী সমর্থক
তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের
বলতে শোনা যায়,
ট্রাইব্যুনালে বিচারের পর আপিলের
সুযোগ রয়েছে। তারা বলেন, আইনের
পথে না গিয়ে সহিংস আন্দোলন কেন
করা হচ্ছে। এসব
জ্ঞানপাপীরা ভুলে যান আবদুল কাদের
মোল্লার রায় ঘোষণার পর কারা ফাঁসির
দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে। ভারতীয়
পত্রিকাগুলোর বর্ণনা অনুযায়ী ভারতের
ইন্ধনে গড়ে ওঠা ফাঁসির
দাবিতে শাহবাগের
আন্দোলনকে তারা তখন ভুলে যান। তখন
তো তারা বলেননি আপিল করা হোক।
একশ্রেণীর মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীদের
মতে এক কথায় আওয়ামী-
বামরা মিলে যা করবেন সেটাই সঠিক।
অন্যরা পাল্টা একই ইস্যুতে একই
কর্মসূচি দিলে সেখানে গুলি চালাতে
হবে। সেই আন্দোলনে মানুষ মরলেও
কোনোকিছু তাদের যায় আসে না। এরকম
ফ্যাসিবাদী চিন্তার ফলেই দেশে আজ
চরম বিশৃঙ্খলা। এই বিশৃঙ্খলার জন্য
ফ্যাসিবাদী মিডিয়া এবং উস্কানিদাতা
বুদ্ধিজীবীরা কম দায়ী নন।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর
রাজপথে প্রকাশ্যে লগি-বৈঠার
তাণ্ডবে মানুষ হত্যার পর লাশের উপর
যারা নৃত্য করেছিল তারাই এখন ফাঁসির
দাবিতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে। সেই
লগি-বৈঠার তাণ্ডবের
ধারাবাহিকতায় আজকের আওয়ামী-বাম
জোটের সরকার ক্ষমতায়। লগি-বৈঠার
তাণ্ডবের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতায়
এসে এখন গুলি করে পাখির মতো মানুষ
মারছে। ক্ষমতায় আসার আগে মানুষ
হত্যা করেছে লগি-বৈঠা দিয়ে, এবার
হত্যা করছে বন্দুকের গুলি চালিয়ে—
এই হচ্ছে পার্থক্য।
©somewhere in net ltd.