নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am a house wife, I love to write something
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে শতাব্দি এক্সপ্রেস কলকাতার উদ্দেশ্যে ভোর ৫ টায় ছাড়লো।আমি অশোক আর মিষ্টি যাচ্ছি। এ কয়দিন শতাব্দি এক্সপ্রেসে যে সারাক্ষণ খাবার দেয় তার গল্প অনেক শুনেছি।তাই রাত ৩টায় উঠে চা পর্যন্ত পান করি নি, ট্রেনে করবো বলে। ট্রেন ছাড়তেই কোমল কণ্ঠে ঘোষণা এলো। যাত্রা শুভ হোক , জানানো হলো আমাদের যাত্রা বিরতি হবে “কিষাণ গজ্ঞ, মালদা আর বোলপুর মানে শান্তিনিকেতন। ট্রেন ছাড়তেই মিষ্টি খাবারের জন্য ব্যকুল হলো। আমার কানে তখন বাজতে লাগলো ২ টা জায়গার নাম। একটা হলো কিষাণগজ্ঞ আর একটা হলো বোলপুর।আমি হারিয়ে যেতে লাগলাম। এমন সময় চায়ের সরজ্ঞাম এলো। সকাল বেলায় এক কাপ চা যেন সকল প্রাপ্তি মিটিয়ে দিল। চা পর্ব্ শেষ হলেই বাঁশির সুর আসতে লাগলো, চিকন বাঁশি, মোটা বাঁশি, চওড়া বাঁশি। সংগে সানাই এর স্বরও এলো।আশে পাশের সীটে তাকিয়ে দেখি: বন্ধুরা আমার চেয়ার সীট খুলে শুয়ে পড়েছে। আধো শোয়া হয়ে ভোরের ঘুমটুকু নাসিকা গর্জনের মাধ্যমে পুষিয়ে নিচ্ছে। এরই মধ্যে আমরা কিষাণগজ্ঞের কাছাকাছি চলে এসেছি। আমি আর অশোক মুখ চাওয়া চায়ি করছি। ্টামি বল্লাম এই সেই কিষাণগজ্ঞ না? অশোক উত্তর দিল হ্যা, বলে সে আমার মাথার উপর দিয়ে জানালা দিয়ে কি যেন খুঁজছে। আমি ও খুঁজতে লাগলাম। জানি আমরা যা হারিয়েছি তা আর পাবো না কোনদিন, কোন কালে। আমি বল্লাম এখানে না? ও বল্ললো হু, তখন এই ফ্লাই ওভারের কাজ চলছিল।এই জায়গাতে আমার লক্ষণের প্রাণঘাতি হয়েছিল। ২০০৭ সালের ১৯শে জুন একটা ট্রাক এসে সামনের দিক থেকে ওর বাইকে ধাক্কা দেয়। আর তাতেই আমাদের লক্ষণ আমাদের উপর অভিমানের ডালি রেখে চলে গেল নাম না জানা এক অচেনা দেশে।ইচ্ছে হলেও আর তাকে পাবো না কোনদিন। তার বেশ ক বছর আগে ও আমায় বাইক চালাবার সময় বেশ কবার দুর্ঘটনার গল্প শোনাল।আমা্র মাথায় হাত দিয়ে বলেছিলো বৌদি আমি হাইওয়ে তে কোন দিন বাইক চালাবো না।কথা রাখে নি । হয়তো এ্টা আমার সংগে সাক্ষাতে তার শেষ কথা। ঐ দিন বিধাতা ঠিকই জেনেছিল আর সীমার ওপারে বসে হেসেছিল।কিছুক্ষণ আমি আর অশোক কথা বলতে পারলাম না।আমরা হয়তো আর কোনদিনই এখান থেকে যাবার সময় কথা বলতে পারবো না। চুপচাপ দুজনে মুখোমুখি চেয়ে রইলাম।এর মধ্যে এলো brekfast। আমরা আবার ব্যস্ত হলাম।
খাওয়া শেষ করে মালদা পার হলাম। পার করলাম ফারাক্কা। মিষ্টিকে দেখালাম এপারে গংগা আর ওপারে পদ্মা। আমি একটা শিহরণ অনুভব করছি। কি যেন একটা সুর আমার প্রাণে বেজে চলেছে।কিসের লাগি আমার এ আকুলতা!। আমার মনে হলো আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের ট্রেনটা সেই পুণ্যভূমি ছুঁয়ে যাবে।সেই বোলপুর। নেই শান্তিনিকেতনের ভূমি। ট্রেনটা এসে দাঁড়ালো বোলপুর স্টেশনে।আমি কান পাতলাম অনিমেষ আর মাধবীলতার কথা শুনার জন্যে।মনের জানারা দিয়ে চোখ মেলে খুঁজতে থাকলাম এখান থেকে কত দূরে সেই শান্তিনিকেতনের কাছের কোন বাড়ীতে অনিমেষ আর মাধবীলতা ছিল?।আমার মনের পাতা উল্টাতে না উল্টাতে ট্রেন ছাড়লো । সকলে বল্লো আর ২ ঘন্টাতে আমরা কলকাতা পৌঁছে যাবো।
©somewhere in net ltd.