নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

madam

I am trying to publish my story, poem etc

মঞ্জু রানী সরকার

I am a house wife, I love to write something

মঞ্জু রানী সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

রূপোর মেডেল

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৩৭



১৯৮২ সাল। মার্চ মাস ২৭ বা ২৮ তারিখ হবে। চলছে দেশ জুড়ে ৪টি বোর্ডের এস এস সি পরীক্ষা। দেশের অবস্থা খুব একটা ভালো মনে করছেন না বয়োজেষ্ঠরা। ২২ শে মার্চ হুসেন মোহা: এরশাদ সামরিক শাষন জারী করে ক্ষমতায় এসেছেন। তাই সবার মধ্যে একটা উদ্বীগ্ন ভাব, কথন জানি কি হয়। একটা সামরিক শাষন শেষ করতেই আর একটা।
এরই মধ্যে মিনার বাবার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। বাবা আরো কিছুদিন আগে থেকে বিছানাগত। মিনার পরীক্ষা শেষ প্রায়। একদিন পরীক্ষার মধ্যে তাদের হলে গার্ড ছিলেন যে স্যার(বাইরের কোন স্কুলের যেন)তিনি মিনাকে জিজ্ঞেস করেছেন,”মা তোমার সাথে তো কেউ আসে না। তুমি একা আস, পরীক্ষা দাও, চলে যাও, তোমার কি কোন সমস্যা?” মিনা উত্তর দিল,” আমার বাবা অসুস্থ। মা গৃহবধূ। তাই তো একাই আসতে হয়।আমার বড় কোন ভাই বা বোন নেই, আমিই বড়”। স্যার মিনাকে সাহস দিলেন, ”তাতে কি? আমরা তো আছি।” এরই মাঝে এপ্রিল মাস পড়ে গেছে। ২৪ শে মার্চ মিনার লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ব্যবহারিকের জন্য তৈরী হচ্ছে।।
ক্যালেন্ডারে সেদিন এপ্রিলের ৫ তারিখ। সকাল বেলাতে নিয়মিত মিনা ডেস্ক ক্যালেন্ডারের তারিখটা বদলে দিল। বাবার শরীরটা ভীষন খারাপ। বাংলায় তখন প্রকৃতিতে চৈত্র মাস। প্রচন্ড গরম। বাবা গরমে ছটফট করছেন। মিনাদের ঘরে তখন বিদ্যুত নেই, বৈদতিক পাখা কোথা থেকে আসবে? হাত পাখায় আর কুল দিচ্ছে না। মা সহ মনারারা বাতাস করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। তাই দেখে বাড়ীর মধ্যে প্রতিবেশী দুলাল দাদা তার ঘর থেকে টেবিল ফ্যান এনে বিদ্যুতের লাইন টেনে বাতাসের ব্যাবস্থা করে দিলেন। মিনার মা স্বস্তির একটা বড় শ্বাস নিলো।

দুপুর বেলা এসে সেন বাড়ীর বড় বৌদি মিনার বাবাকে মাছের ঝোল ভাত খাইয়ে গেলেন। মার মুখে কোন কথা নেই। কেবল উদাস করা দৃষ্টি যেন কি খোঁজে, কোথায় যেতে চায়। বিকালে হঠাত মিনার মনের মধ্যে এলো,”আচ্ছা বাবা যদি সত্যি সত্যিই মরে যায়?” কথাটা মনে হতেই তার বুকটা কেমন যেন ধড়ফড় করে উঠলো। একটা মোচড় অনুভব করলো। মনে হলো আচ্ছা বাবা হীন মানুষ কি করে বেঁচে থাকে?
দুপুর গড়িয়ে বিকাল এল। প্রতিবেশী অনেকে বাবাকে দেখে গেলেন। মিনা আর ছোট বোনেরা কিছুই বুঝতে পারছে না। সন্ধ্যায় রূপছায়া সিনেমা হলের ম্যানেজার রায়হান সাহেব আরও লোকজন নিয়ে দেখে গেলেন বাবাকে। মাকে ডেকে বলে গেলেন, “বৌদি রাতটা খুব সাবধানে থাকবেন, ভয় নেই, আমরা তো আছি।” মিনা আর তার বোনেরা কিছু যেন বুঝে উঠতে পারছিল না।

রাত ৮ টার দিকে এলো, হোমিও চিকিতসক ডাক্তার খাজা। তিনি বাবার হাত ধরে, বুকে মেশিন দিয়ে পরীক্ষা করলেন। মা বল্রো, “উনি খুব রসগোল্রা খেতে চাচ্ছেন।” ডাক্তার বল্লেন, ”আজকের রাতটা যাক, কাল সকালে দেবেন।” কাল সকাল আর তার বাবর জীবনে আসেনি। আজও নিরালায় বসলে মিনার মনে একটা প্রশ্ন জাগে।” সে রাতে কি ডাক্ত্রার বুঝতে পেরেছিলেন? তাহলে বাবাকে কেন রসগোল্লা থেতে দিলেন না?” এর উত্তর আজ কোথায় পাবে?

কয়েকদিন আগেই গেছে অমাবশ্যা। এখন শুক্লপক্ষ। রাত বাড়তেই দূর আকাশে চাঁদ দেখা দিল। মিনার চোখ জুড়ে ঘুম নেমে এলো্। তার ছিল সেদিন রাত জাগার ডিউটি। মাকে বলেছে,”মা তুমি ঘুমাও।” কারন পরীক্ষা চলছিল বলে এ কয়দিন মা একাই রাত জেগেছে। “আমি রাতে বাবাকে দেখবো।” অথচ মিনা আর জেগে থাকতে পারছে না। রাত জেগে পড়াশুনা করে পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষা শেষে এক রাতে সারা রাত ঘুমাব ঠিক করেছিলো। সেটা কি আজকের রাত?
ঘুম তাড়াবার জন্য মিনা আস্তে আস্তে উঠে যেয়ে টিনের বাক্সটা খুলে পরীক্ষা শেষে পাওয়া বড় আপা ফিরোজা বেগমের দেওয়া রূপার মেডেলটা বের করে আনলো। ঘরে এসেছ চাঁদের একফালি আালো। মেডেলটা ঝিক ঝিক করছে। হটাত মনে হলো বাবাকে তো এটা দেখানো হয় নি। মা বলছিলো,”তোমার বাবা সুস্থ হোক, দেখিও।” মিনার কেমন যেন তড় সইলো না। সে বাবার চোখের উপর মেডেলটা ধরলো, বল্লো,” বাবা আমি পেয়েছি,” বাবা জড়ানো গলায় জানতে চাইলো ”কি লেখা আছে ?” মিনা বল্লো, ”কৃতি ছাত্রী্।” বাবা চোখ বুজলেন, ঠোঁট দুটোতে মনে হলো একটা হসির রেখা ভেসে উঠলো। মনে হলো, বাবা ঘুমিয়ে গেল। মিনা আর বসে থাকতে পারলো না। সে কথন যেন ঢলে পড়লো ঘুম দেবীর কোলে।

যখন ঘুম ভাংলো বাবার বুকের দিকে চোখটা চলে গেল। সে দেখতে পেলো, তার বাবার বুকটা প্রচন্ড জোড়ে উঠা নামা করছে। আর কেমন যেন একটা গোংরানির শব্দ।আস্তে আস্তে মিনা উঠে এলো, বসলো বাবার মাথার কাছে। পরম যত্নে বাবার মাথাটা কোলের উপর তুলে নিলো। ডাকতে লাগলো আদর ভরা কণ্ঠে,” বাবা।” বাবা আর জবাব দিল না, বল্লো না ”বলো মা”। বুকের গর্জনটাও থেমে গেল। থানা থেকে তখন ভোর রাতের ঘন্টা বেজে উঠল। ঢং..ঢং….ঢং..ঢং ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.