নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am a house wife, I love to write something
টুনুর বয়স সেদিন ৩ মাস পূর্ণ হলো। আর আমার মার্তৃত্বকালীন ছুটির ৯০ দিন অতিক্রম করলাম। পরদিন প্রথম মা হিসাবে কর্মস্থলে যাবো। এতটাই এক্সাইটেড ছিলাম যে সারা রাত ঘুমাতে পারিনি।
রাতেই অফিসের ব্যাগ গুছিয়ে রাখলাম। সকাল ৭ টায় গৃহ পরিচারিকা কল্পনার কোলে রেখে টুনুর দুগালে চুমু দিয়ে রওনা হলাম অফিসের পথে। সারাটা পথ টুনুর মুখটা ভাবতে ভাবতে অফিসে গেলাম। সাথে ছিল মিষ্টির প্যাকেট।
অফিসে পৌছানোর পর রুমে ডাক পড়লো ততকালীন প্রশাসনিক পরিচালক জনাব বিটু ডি’ কস্তার। বস নয় পিতা। পিতার আসনে বসে আশীর্বাদ করলেন, আমার টুনু পাখীকে আর আমাকে।
সংগে এও জানালেন, ”তোমাকে প্রজেক্টে বদলী করা হবে।” শুনে তো আমার মাথায় বাজ। প্রজেক্টে চাকুরী মানে ট্যুর করা। আমি প্রশাসনে অফিস বেজড চাকরি করছি।
৮.৩০টা -৪.৪৫টা অফিস। এক কথায় চাকরী টা খুব এনজয় করছি আর তার উপরে উপরি পাওনা বিটু স্যারের মতো বস।
আমার টুনুর মুখটা মনে হলো। সাথে সাথে উত্তর,” আমি চাকরী ছেড়ে দেবো”, স্যার বললেন, “ মেয়েরা তো ট্যুর করছে, তোমার সমস্যাটা কোথায়?” আমি বল্লাম, “আমার বাচ্চা ছোট, আমার পরিবারে তাকে দেখার মতো কেউ নেই, আমি যাবো না।” ”কি করবা?” আমি উত্তর দিলাম,: “আমার শ্বশুর বাড়ী মাগুড়ায়, আমি সেখানে চলে যাবো।” স্যার বললেন,”আমি জানি তোমার স্বামী এডভোকেট। এদিক থেকে তোমার মাথার উপরে ছাতাটা অনেক শক্ত। কিন্তু এ পেশাতে ভাগ্যদেবী কারো উপর ২০ দিনে প্রসন্ন হয়, কারো উপর ২০ বছরে প্রসন্ন্ হয়। তুমি এ ভুলটা করো না, চাকরী ছেড়ো না, তুমি না চাওয়া পর্যন্ত তোমাকে আর বদলী করা হবে না।’ পরবর্তীতে উনি নির্বাহী পরিচালক হন। উনি চাকরীতে থাকা কালীন আমাকে আর বদলী করা হয় নি।
চাকরীতে থাকা কালীন প্রতিমুহূর্তে তার কাছে কাজ শিখেছি। কাজে ভুল করলে সে ভুলটা নিজে স্বীকার করে নিয়ে কি ভাবে অধস্তন কর্মচারীকে বাঁচাতে হয় তাও জেনেছি তার কাছ থেকেই।
কাজে ভুল করলে ভয় লাগতো না। আনন্দ পেতাম এই ভেবে যে , এবার স্যারের বকা খাবো। কি সুন্দর সে বকা, কি তার মাধুর্য। একবার মনে পড়ে, ফিলিপ মন্ডর নামে একজন কর্মী ছিল( পরে সে আশাসুনি গ্রামের বাড়ীতে বড়দিনের ছুটি উপভোগ করার সময়ে আতাতায়ির হাতে খুন হয়) কি একটা কাজ ভুল করেছে, ডাক পড়েছে স্যারের রুমে।
আমরা বাইরে। সকলের রুদ্ধ শ্বাস অবস্থা, কি আছে ফিলিপের কপালে। পরে দেখি ফিলিপ হাসতে হাসতে বেড়িয়ে আসছে।
এসে বলে, হেসে হেসে স্যার বললেন.” আমাকে ৩ তলা থেকে ফেলে দেবেন,” ’আচ্ছা দিদি বলেন, স্যার আামাকে তুলতে পারবেন? যে ৩ তলা থেকে ফেলে দেবেন।’ এই হলো স্যারের বকা দেবার নমুনা।
পিতার মতো ছাতা ধরে তিনি সকল মেয়েদের তার মেয়ের মতো চোখে দেখেছেন।
আমি যখন ২ মেয়েকে দার্জিলিং রেখে এলাম, আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে একদিন কাছে ডাকলেন। পরম যত্নে মেয়েদের খোঁজ নিলেন্, উকিল সাহেবের খোজঁ নিলেন। জানতে চাইলেন বাসায় আমরা ২ জন কি?
শুনে বললেন, মঞ্জু, আল্টিমেটলি এটাই আমাদের সকলের ভবিষ্যত। তবে তোমারটা খুব আগে শুরু হয়ে গেছে।তিনি আমাকে এতটুকু খারাপ বললেন না। আরও উতসাহ দিলেন।
অথচ তখন অফিসে সমালোচনার ঝড় বইছে যে, আমি হলাম নিষ্ঠুর মা।
তিনি ছিলেন একাধারে সংস্থার প্রধান, কর্তব্য পরায়ন স্বামী আর স্নেহশীল পিতা। আজ এই দু:খের দিনে সবিতা বৌদি তুমি সাহস ধরো, আগলে রাখো ঝিনা, বীনা শম্পা আর নিপাকে। ঈশ্বর এই শোক থেকে তোমাদের পরিত্রাণ করুন। আর স্যার যেন চির শান্তিতে ঘুমিয়ে থাকেন।
©somewhere in net ltd.