নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am a house wife, I love to write something
টুনটুন আর মিষ্টি নেপালি ভাষায় বেশ স্বছন্দ। কারণ ওরা ছোট বেলা থেকে দার্জিলিং এ পড়ালেখা করছে। তাই নেপালি ভাষা, পোশাক, খাদ্য, বন্ধু সবই ওদের প্রিয়।
আমরা একবার ভেলুর গেছি। দার্জিলিং থেকে যাওয়া এক ভদ্রলোক আমার সংগে গল্প করতে এলো্ । মুশকিল হলো, আমি হিন্দি বলতে পারিনা। আমি বাংলায় বলি আর মিষ্টি হিন্দিতে বুঝিয়ে দেয়।
এক পর্যায়ে লোকটি হয়তো বুঝতে পারে যে, মিষ্টি নেপালি বোঝে। সে নেপালী তে একটি বাক্য বলে। ওমনি মিষ্টি আমাকে বাংলা করে দেয়। ভদ্রলোক তখন বলে,’তোমার মেয়ে নেপালি বোঝে আর তুমি হিন্দি বোঝ না?” মিষ্টি নেপালিতে বলে,” আংকেল- আমি নেপালি শুধু বুঝিনা, আমি নেপালি পড়তে, লিখতে এবং বলতে পারি।” ভদ্রলোকটি মিষ্টিকে আদর করে বুকের মাঝে টেনে নেয়। কারণ তিনি ছিলেন নেপালি বংশোদ্ভুত। আর মিষ্টির ক্লাশের ৩য় ভাষা হলো নেপালি।
এজন্য আমেরিকাতে যেয়ে টুনটুনের বন্ধুদের তালিকায় নেপালি ছেলেমেয়ে বেশী। আর তাছাড়া ওরা একবার যাকে বহিন বলে তার জন্য ওরা প্রাণটাও দিতে পারে। গতকাল রাতে টুনুর সাথে কথা হলো, জানতে চাইলাম, “ তোমার নেপালি বন্ধুদের স্বজনরা সবাই ভালো আছে?”
টুনু বলে, ”এত বড় দুর্যোগের পরে সবাই ভালো থাকে কি করে মা?” সিমা জেনেছে, ওর মা বাবা সকলে বেঁচে আছে, তবে তারা এখন খোলা আকাশের নীচে। আর প্রশান্তির মা বাবার আর ছোট বোনের খোঁজ এখনও পাই নি। ও কেবল ফোনের দিকে তাকিয়ে বসে আছে, কথন ওর বাবা মা বলবে, আমরা ভালো আছি। টুনু বল্লো,” মা আমি তো অনেক চাল কিনেছি এখন ভাত আর মুরগীর মাংস রান্না করে ওদের হাউজে যাব”। গতকাল থেকে ওরা কিছুই খায় নি। শুধু কাঁদছে ছেলেমেয়েগুলো।”
আগামীকাল থেকে সেমিস্টার ফাইনাল শুরু। হয়তো দিতে পারবে না। আমি হলেও পারতাম না মা। আমি আর ওর বাবা বল্লাম, যতটা পারো ওদের পাশে থাকো। ওদের মানসিক সাহস যোগাও। টুনু বল্ল হ্যা আমরা ইতিমধ্যে ফান্ড কালেক্সন করছি ওদের জন্য। আর সবাই বসি, ভাবি কি করা যায়? টুনুকে ওদের হাউজে যেতে বলে ফোন রাখলাম, কিন্তু দুচোখে ঘুম এলো না। মনে হতে রাগলো আজ টুনুর যদি এই অবস্থা হয়? জলে ভরে গেল দুচোখ।
আজ বেলা ১১ টায় আবার টুনুর ফোন। জানতে চাইলাম, মেয়েটি কেমন আছে? বল্লো আমি ওখানে আছি। তুমি কাঁদছো কেন মা? তোমার মা বাবার কথা মনে পড়ছে?” আমি বল্লাম না বাবা আমার মেয়েদের কথা মনে পড়ছে, আজ তোমার মতো আমি হাজার অসহায় নেপালি মেয়েদের কথা ভাবছি, দেখতে পাচ্ছি এক অজানা আশা আর দুরাশা নিয়ে মেয়েগুলো তাকিয়ে আছে আনাগত ভবিষত্যের দিকে আর ফোনের দিকে।
টুনু বলে প্রার্থনা করো ঠাকুর যেন কৃপা করেন,” ওদের ফোনটা যেন বেজে ওঠে, আর সুদূর নেপাল থেকে ওদের মা বাবারা যেন বলে, ”আমরা ভালো আছি।”
©somewhere in net ltd.