নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

madam

I am trying to publish my story, poem etc

মঞ্জু রানী সরকার

I am a house wife, I love to write something

মঞ্জু রানী সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাশের বাড়ীর সেই মেয়েটি

১৪ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:০৫

আজ প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেল রজ্ঞনা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। পরীক্ষা নীরিক্ষা চলছে কিন্তু ডাক্তার কোন অসুখ ধরতে পারছে না।ক্রমে তার বুকের ব্যথা, কাশি এগুলো বেড়েই যাচ্ছে।
রজ্ঞনা দেখে প্রতিদিন সকাল ৮টা বাজলেই একঝাঁক নবীন প্রবীন ডাক্তার আসে। এক রাশ হাসি নিয়ে জিজ্ঞেস করে ভালো আছেন? কেউ দিদি বলে, কেউ বা মা, মাসি আবার কেউ বৌদি। যা হোক তারা রাত ১০টা তেও আসে। প্রেসার মাপে রিপোর্ট দেখে, কিছু সাহাসের কথা বলে চলে যায়।

রজ্ঞনা ডাক্তারদের চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই সাদা এ্যাপ্রোন পড়া ডাক্তার দেখলে সে এখনও প্রচণ্ড রকমের দুর্বলতা অনুভব করে।

নার্সরা পূর্ণিমার চাঁদের মতো উদয় হয়। এসেই রোবটের মতো যার যার ইনজেক্সন দরকার, তাদের হাতে, পাছায় পুশ করে দিয়ে চলে যায়। পাশের বেডের রোগীর সংগে হাই হ্যালো কিছুই করে না।প্রতি ঘন্টায় ক্লীনার এসে ফ্লোর পরিস্কার করে যাচ্ছে। সময় মতো খাবারও আসছে। সরকারী হাসপাতালে এর চেয়ে বেশী আর আশা করা যায় না।

সে দিন বিকালে চা খেয়ে রজ্ঞনা বিছানায় বসে মালা জপছে। দূরে একজন নার্স এক রোগীকে ইনজেক্সন দেয় আর তার দিকে তাকিয়ে হাসে। তার কাজ শেষ করে এগিয়ে এলো রজ্ঞনার বিছানার পাশে। ”দিদি আপনার সাথে কেউ নেই?” ”কে আর থাকবে? আপনারা সকলে আছেন।”

”আমাকে তুই বলো দিদি। আমি সুবর্ণা।” কে এই সুবর্না? রজ্ঞনা হারানো স্মৃতি খুঁজতে থাকে।
টেনে নেয় সুবর্নাকে বুকের কাছে্, জিজ্ঞেস করে, ”কাকা কাকিমা প্রবীর সবাই ভালো আছে?” ”হ্যা, দিদি, তুমিই তো সবাইকে ভালো থাকার পথ করে দিয়ে এসেছো।সেদিন যদি তুমি আমার দেহের ঐ জজ্ঞাল সরিয়ে ফেলতে এগিয়ে না আসতে, তবে হয়তো এই আমাকে নদীর জল অথবা ওড়না আর ঘরের ফ্যানকে বেছে নিতে হোত। আজ আমার সামাজিক মর্যাদা, চাকুরী, স্বামী, ছেলে কিছুই থাকতো না।”
রজ্ঞনা তাকিয়ে দেখে, হ্যা, সুবর্নার সিঁথির ফাঁকে এক চিলতে সিঁদুর ঝিকি মিকি করছে।

সুবর্না নার্সিং পড়ার সময় সুবীরের সাথে পরিচয় হয়্, পরে তার সথেই বিয়ে। একটি ছেলে। ওর চাকরীর টাকাতে ও বাবা মাকে দেখে। এ নিয়ে সুবীরের কোন আপত্তি নেই।

রজ্ঞনা আজ কতদিন বাড়ী যায়নি। বাড়ীর মান চিত্রটিও ভুলে গেছে। একটু পরেই মনের আয়নাতে সব পস্কিার দেখতে পেল। ওদের বাড়ীর উত্তর পাশে সুবর্নাদের বাড়ী। মাঝখানে একটা চাটাই এর বেড়া আছে, নামে মাত্র আলাদা করা। রজ্ঞনাদের রান্না ঘরটা যেন সুবরনাদের উঠানে চলে গেছে। রজ্ঞনার মা রা্ন্না করতো আর সুবর্নার মা নমিতা কাকিমার সাথে গল্প করতো।
আষাঢ় মাসে রজ্ঞনার মা বিয়ে হয়ে ওদের বাড়ীতে আসে আর শ্রাবন মাসে সুবর্নার মা। তাই রজ্ঞনার মা চিরকাল নমিতার কাছে দিদি হয়েই রইলো।

হটাত করেই নমিতা কাকিমার সংসারে খুব অভাব দেখা দিল। কাকার ব্যবসায় একটা বড় ধরনের ক্ষতি হযে গেল্, কি করে সামাল দেবে? তখন কাকা আর কাকিমা ঠিক করলো তাদের ২ টা ঘরের একটা ঘর ভাড়া দিয়ে দেবে। যা আসে। চলতি মাস থেকেই কাকিমা এক ঘরে রান্না খাওয়া থাকা সব করত লাগলো্, সবাইকে জানিয়ে দিল তার একটি ঘর ভাড়া হবে।

এরা এক পুলিশ দম্পতী। ছেলে পুলে নেই। যাক অভাবের সংসারে একটু তালি দেওয়া।

এক শীতের রাত। পাড়া প্রায় নিশুতি হয়ে গেছে। শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকারা দল বেধে থেকে থেকে আলো জ্বালছে আর গুন গুন করে গান গাচ্ছে। রজ্ঞনা সারাদিন অফিস করে ফিরে বই হাতে একটু পড়া সারছে। এমন সময় দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে নমিতা কাকিমা। হাত ইশারায় রজ্ঞনাকে বাইরে ডাকলো্। অন্ধকারে কাকিমা তাকে ঘরের মধ্যে নিয়ে গেল। বল্লো, ’দ্যাখ তো সুবর্না কয়দিন কিছু খাওয়া দাওয়া করে না, শুধু শুয়ে থাকে। একটু যদি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতিস।” ”ঠিক আছে আজ তো আর সম্ভব নয়।, কাল সকালে দেখবো।”

সকালে যে যার কাজে বের হয়ে গেল। পুরো পাড়াটাই পুরুষ শুন্য। তরুন তরুনী আর কিশোর কিশোরী সকলে স্কুলে। কাকিমা মাসিমারা সকলে স্নান, রান্না আর পুজা করা নিযে ব্যস্ত।
রজ্ঞনা ভাবছে কোথায় দেখাবে সুবর্নাকে? ওর মনে হলো কয়েক বছর ওরা কযেক বান্ধবী মিলে হোমিওপ্যাথি পড়েছিল। তাহলে যাওয়া যাক কলেজের প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে।

যেতেই স্যার সুবর্নার হাত ধরে নাড়ী দেখতে লাগলেন, স্যারকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে। জিজ্ঞেস করলেন,”মেয়েটি তোমার কে?” ”কাকাতো বোন স্যার” ”বিয়ে হয়েছে?” ”না।”
তারপর যা বললেন শুনে রজ্ঞনার মাথা ঘুরতে লাগলো্। ওকি বলবে নমিতা কাকিমা কে? কাকিমা কি বুঝতে পেরেছে নইলে রাতরে আঁধারে তাকে গোপনে ডেকে বলল কেন?

বাড়ীতে এসে বলতেই কাকিমা কাপড়ে মুখ চেপে কাঁদতে লাগলো। বললো, “ওর কাছে শুনে দ্যাখ কি করে এটা হলো।” ঘটনা শুনে কাঁটা দিয়ে উঠলো গায়ে। ভাড়াটে পুলিশ এর নায়ক।

”একদিন মা গেছে নদীতে স্নান করতে। পুলিশের বউ তখন বাবার বাড়ী গেছে। বারন্দায় বসে সুবর্ণা পড়ছে। বাইরে ছিপ ছিপ করে বৃষ্টি। চারিদকে মেঘে অন্ধকার। এমন সময় পুলিশ দাদা এগিয়ে এলো, আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে পাজা কোলা করে ঘরের মধ্যে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। তারপর আমাকে খাটে শুইয়ে পাজামার ফিতা খুলে ফেললো। মুখটা চেপে ধরলো।
পরে বললো কেউ যেন জানতে না পারে। ওকে দরজা খুলে বের করে দিল।

তারপরে দুজনাই অপেক্ষায় থাকতো কখন কাকিমা আর পুলিশ বৌদি ঘাটে যাবে। ওরা ঘাটে স্নান করতে গেলেই ওরা নিয়মিত কাজটি সেরে ফেলতো।

কিন্তু এখন কি করবে। কাকমিা বলে তোর হাতে তুলে দিলাম মা। সমাজ কুল রক্ষা কর। রজ্ঞনা চিন্তায় পড়লো। মনে পড়লো ওর এক বান্ধবীর বড় বোন হেলেন আপা গাইনীর ডাক্তার। দেরী না করেই বিকালে ওকে নিযে চলে গেল। সব শুনে হেলেন আপা বললেন. ”দেখি সময় আছে কি না।” ওকে ভিতরে নিয়ে গেল। বেশ কিছু সময় পরীক্ষা করলো। বললো হবে, তবে রাত ৮টার দিকে। চেম্বার ফাঁকা হয়ে গেলে।

শীতের রাত। ১০টা মানে অনেক রাত। অন্ধকার। হয়তো অমাবশ্যা সামনে। চাদর মুড়ূী দিয়ে রজ্ঞনা আর সুবর্না ঘরে ঢুকলো। কাকিমা একটা ছেড়া শাড়ী চাদরের মতো করে গায়ে জড়িয়ে ঘরের দরজা খুলে দাড়িয়ে আছে। কাকা তখনও বাড়ী ফেরে নি।

ঘরে ঢুকতেই কাকিমা বল্লো. ”সব ঠিক মতো পরিস্কার হয়েছে তো?” ” হ্যা, ওকে কিছু বলেন না্ ওর এখন বিশ্রাম দরকার “ কাকমিা এক গ্লাস গরম দুধ হাতে এগিয়ে এলো্।

সেই সুবর্না। সেদিন যদি নদীতে ওকে পাওয়া যেত, কি হতো আজ এই কাকা কাকিমার। কিন্তু কি হলো সেই পুলিশ ভাড়াটের? সে হয়তো আরও কয়েক জনকে গলায় কলস বেঁধে নদীতে পাঠিয়েছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.