নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am a house wife, I love to write something
১৯৯৫ সাল। আমি যখন আমার শারীরিক পরিবর্তন বুঝতে পারলাম তখনই আমি আর অশোক সিদ্ধান্ত নিলাম। না ঢাকা তে নয়। এখানে আমাদের আপন জন কেউ নেই। তাই আমার শ্বশুর বাড়ী মাগুরাতেই ডেলিভারী হবে। কারন ওখানে সকল আত্মীয় কে পাওয়া যাবে।
সেই মতো মাগুরাতে এসেই প্রথম টেস্ট করে আমরা নিশ্চিত হলাম যে, আমি মা হতে চলেছি।
অশোক আমার শ্বশুর শাশুড়ীকে আমাদের ইচ্ছার কথা জানিয়ে দিল। তারা তেমন কোন আপত্তি দেখালো না। তাই আমরা ১০ মাস ধরে প্রস্তুতি নিতে থাকলাম মাগুড়াতে ৩ মাস থাকবার।
সেই কথা ভেবে আমরা ঢাকাতে কোন ব্যবস্থা রখিনি।
তখন আমাদের আর্থিক অবম্থা তেমন ভালো নয়। অশোক কেবল প্র্যাকটিস শুরু করেছে। আমিও বেতন পাই অল্প। কারন চাকুরীর বয়স বেশী নয়।
যাই হোক নিয়মিত চেক আপ মাগুড়াতেই করাতাম। কোন ক্রিনিকে ডেলিবারী হবে তাও ঠিক করা হলো। প্রয়োজন হলে ডাক্তার যেন বিলম্ব না করে সীজার করে ফেলে। এর জন্য আমরা সেই সময়ে ১০ হাজার টাকা যোগাড় করে রেখেছিলাম।
আমার এক্সপেকটেড ডেট ছিল ২রা ডিসেম্বর। তাই ২৯ শে নভেম্বর আমরা মাগুড়াতে চলে গেলাম।
তখন মাগুড়া তাতী পাড়াতে আমার শ্বশুরের বাড়ী ছিল।রাত্রে খাওয়া দাওয়া শেষ করে যখন অশোক আমার শাশুড়ীর হাতে টাকাটা দিয়ে বলে, ”মা আমি কাল সকালে চলে যাবো। মজ্ঞু থাকবে।সময় মতো আমি চলে আসবো।”
তখন আমার শাশুড়ী বলে, ‘ এই বাড়ী তো তোর বাবা বেঁচে দিয়েছে।১লা ডিসেম্বর আমাদের বাড়ী ছাড়তে হবে। আমরা জজ কোট পাড়ায় নতুন বাড়ীতে উঠবো।
কথাটা শুনে আমি আর অশোক যেন গাছ হতে পড়ে গেলাম। মাটি পেলাম না। তাকিয়ে দেখি আসলে কথাটা ঠিক। ঘরে কোথাও একটি ফ্যান নেই। সব খুলে যাবার প্রস্তুতি। আমার শ্বশুর ঘুমিয়ে পড়ায় রাতে আর কথা হলো না
রাত্রে আমাকে যে ঘরখানিতে শুতে দেওয়া হলো তার ফ্যানটা খুলে ফেলা হয়েছে। প্রচন্ড গরম লাগছে আমার। হয়তো প্রেসারটাও বেড়ে গেছে। সারা রাত বাথরুমে যেতে লাগলাম। সেই রাত আর ভোর হয় না।
পাশের ঘরেই গৌরাংগ নামে এক সজ্জন ভাড়া থাকতো। সে রাতভোর আমার কার্যকলাপ দেখেছে। ভোর রাতে তার ঘর হতে একটা টেবিল ফ্যান এনে আমার মাথার কাছে সেট করে দিয়ে বললো,” বৌদি আপনি ঘুমান”। সেই ভোর রাতে আমি একটু ঘুমিয়ে গেলাম।
পর দিন সন্ধ্যায় আমার শ্বশুরের সাথে অশোকের কথা। ‘ বাবা আপনাকে আমি বলে গেলাম , বাড়ী বেচার আর সময় পেলেন না “ আমার শ্বশুর আমলে নিলেন না বিয়য়টা। তখন জজ কোট পাড়ার বাড়ীতে কেবল একটা ঘর বাইরে বাথরুম আর রান্না ঘর করা হয়েছে। অশোক বললো, “বাবা ঐ এক ঘরে মজ্ঞু ডেলিভারীর পরে আপনি সহ কি ভাবে থাকবে?”
আমার শ্বশুর কোন সদুত্তর বা প্রস্তাব দিলেন না। অশোক তখন বললো, “বেশ মজ্ঞুকে নিয়ে আমি চলে যাচ্ছি। ওর যখন কেউ নেই তখন আর কারো দরকার নেই, যা আছে কপালে হবে।”
সেই দিন রাত ১২ টার গাড়ীতে আমি আর অশোক ঢাকাতে চলে এলাম।
আজিমপুর ম্যাটারনিটি ক্লিনিকে ৩ তারিখ ভোর রাতে আমার কোলে টুনটুন এলো। অবশ্য ওকে প্রথম কোলে নিয়েছে ওর বাবা।পরে আমি ওকে কোলে নিয়ে অফিসের গাড়ীতে বাসায় এলাম।
আজ টুনটুনের জন্ম দিন। আমার থেকে হাজার হাজার সাইল দূরে আছে। পরীক্ষা চলছে তাই কেকও কাটবে না। তবুও তোমার মা বাবার আশীর্বাদ তোমার জন্য রইলো্। বড় হও মা, মানুষ হও।
২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৮
প্রামানিক বলেছেন: আপনার কাহিনী পড়লাম। টুনটুনের জন্য রইল আশীর্বাদ।
৩| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০০
ধুসর আলো বলেছেন: আম্মুকে মিস করেছি .।।।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৪
মাকড়সাঁ বলেছেন: আশীর্বাদ তোমার জন্য রইলো্। বড় হও টুনটুন, মানুষ হও।