![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এমনি এক শ্রাবনদিনের দুপুরে । অজপাড়া গায়ে এক গ্রাম্য সালিশ বসেছিল ,বড়দা তার স্ত্রীকে ছেড়ে দিবে। তাই গ্রামীন বউ-ঝি আর মর্দারা আগে থেকেই আমাদের বাড়ি ভিড় করেছিল-বিচ্ছেদ দেখার জন্য । ভাবীর বাপের বাড়ি শিয়ালহাটি থেকেও তার মামা-কাকারা এসেছে , তাদের মুখে কোন হাসি নেই এর আগে তারা এ-বাড়িতে যতবার এসেছে সব-সময়ই মুখে হাসিঁ লাগেছিল । ভাবীর কাকা আমাকে অনেক আদর করতো ,ভাবী তার বাপের বাড়িতে নাঈওর যাওয়ার সময় আমাকে নিয়ে যেত আর তার কাকা আমাকে কোলে নিয়ে –হাঠঁ-মাটঁ ঘুরে বেড়াতো । ভাবীর মা,বাবা জীবিত ছিল না ,সে কাকার ঘরে মানুষ হয়েছিল । ভাবীর সাথে আমার যা সর্ম্পকছিল কোনদিন ভাঙ্গবে না , হৃদয়ের ভেতর একটা সেতু তৈরী হয়েছিল তার প্রতি।আমার মার সাথে যতনা সময় ছিলাম ভাবীর সাথে তার চেয়ে বেশি ছিলাম, ছোট বেলায় আমি দাদা-ভাবীর সাথেই বেশির ভাগ সময় ঘুমাতাম ।দাদা কিছু সময় বিরক্ত হলেও ভাবীকে কোনদিন দেখিনি আমার প্রতি সে বিরক্ত। আমার জ্বর এলে ,সারারাত জেগে থেকে মাথায় জল দিয়ে ঔষধ খাইয়ে আমাকে সেরে তুলতো , বাড়িতে নুতন কেউ আসলে সবাই ভাবতো আমি তার সন্তান হয়তো । আমার লেখা-পড়া থেকে শুরু করে ,সব কিছুতেই তার অবদান।ভাবী আমাকে নিয়ে পেয়ারা বন-জলপাইবন, ঝিঙেফুলের সমারোহের ভেতর ছেড়ে দিত, উর্জ্জ্বল করা দিন ছিল সেই সব। ঐ শ্রাবন দিনের দুপুরটা শুধু ভাবীর জন্য নয় আমার জন্যও এক খারাপ অধ্যায় ।
ভাবীকে ছেড়ে দেয়ার কারন হলো ভাবীর সন্তান ধারনের ক্ষমতা নেই । তার মেডিক্যাল রিপোট তাই বলেছিল ।তাই পারিবারিক সিদ্ধান্তেই তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য বললো-ভাবীর বাপের বাড়িতে খবর পাঠালো,তারাও আসলো । দুই দিন আগে থেকে ভাবী যেই শুনলো তাকে আর এ বাড়িতে রাখবে না সেই থেকে তাকে খুব নিশ্চুপ হয়ে যেতে দেখেছি, শুধু আমাকে আকড়ে ধরে কাদঁতো আর বলতো তোদের বাড়িতে আমি আর ঠাই পাবো নারে । আমাকে তাড়িয়ে দিবে-,তখন এত কিছু বুঝতাম না ভাবীর কান্না দেখে আমারও খুব কষ্ট হতো । একবার আমাকে কোলে নিয়ে আমার বাবার কাছে যেয়ে ভাবী বললো:- বাবা আপনার এই ছেলেটাকে লালন পালনের দায়িত্বটা আমাকে দেন, আপনাদের তো কাজের লোক লাগে, না হয় ভাত কাপড়েই এ বাড়িতে থাকলাম কিন্তু আমার বাবা হাজী সাহেবের মন গলেনি । সালিশ বলতে কি কি নিয়ে এসেছিল ভাবী সেসব সবই দিয়ে দেয়া হলো –দু’টা ভেন নিয়ে তার জিনিসপত্র তোলা হলো ।ভাবীও নিশ্চুপে কাকা-মামাদের সাথে বের হয়ে গেল চোখের ভেতর ঐদিন কোন জল দেখিনি ! হয়তো গত দুদিনে যে জল ফেলেছে তাতেই সব শুকিয়ে গেছে ।
যখন ভাবী চলে যেতে ছিল ।তখন আমাক কে যেন বললো:- এই তোর ভাবী চলে যাচ্ছে সে আর কখনো আসবে না । তখন আমি ভাবীদের ভেনের পিছনে দৌড়াতে লাগলাম –আর চিৎকার করে বলতে লাগলাম-ভাবী দাড়াও ,ভাবী দাড়াও !আমাকে পিছন থেকে কে যেন জাপটে ধরলো আর সামনে যেতে পারলাম না । আমি কাদঁতেছিলাম তখন ভাবীর মুখ আর দেখলাম না ।ভেন গ্রামীন মেঠোঁ পথ দিয়ে দুরে আকাশের সাথে মিশে আছে –ওদিগেই চলে গেল ভাবী। যতদুর দেখা যায় শুধু বিন্দু বিন্দু তারপর শূর্ন্য ।
ভাবী চলে যাওয়ার পর মন খারাপ করে –ঐ পথে একা একা অনেক হেঠেছিলাম আর ভেবেছিলাম ভাবী আমাকে দেখতে হয়তো এ পথেই আসবে কিন্তু কোনদিন আর আর আসেনি।
পুনশ্চ
প্রায় ১৮ বছর পর সেই ভাবীকে খোজার তার গ্রামে গিয়েছিলাম। অনেক খুজে বের করেছি তার ঠিকানা । যখন নিশ্চিত হলাম তাদের বাড়িটা দারুন রোমাঞ্চিত ছিলাম-তাকে নিয়ে, কত কত বছর পর তাকে দেখবো ।ভাবীর আগের মুখটাই ভুলে গেছিলাম। যখন তার সামনে গিয়ে দাড়ালাম তখন মনে হলো- এই নারীটি আমাকে এত ভালোবাসতো ,আদর করতো ! অথচ কত কত সময় তাকে মনে মনে ধারন করেছি মায়া করেছি, তার প্রতি অবিচার হবে এটা ভেবেছি । ভাবীর শরীর সত্যিই ভেঙ্গে গেছে। ভাবী আমাকে বললো- আমাকে খুচ্ছেন কেন?।আমি নিরবে ভাবীর দিগে তাকিয়ে বললাম:-ভাবী আমাকে চিনতে পার ! যাকে আদর করে দুরে রেখে এসেছিলে !আমি সেই । ভাবী একদ, নিশ্চুপ হয়ে গেল । এরপর ভাবীর সাথে সারাদিন কাটালাম। ভাবীর আর বিয়ে হয়নি। কাকার সংসারেই সে টিকে আছে , তার কাকা মারা গেছে বছর চারেক আগে।ভাবী বললো-তোদের কথা প্রচুর মনে পড়ে। আমাদের পাশের গ্রামের শ্যামল তোদের গ্রামেই বিয়ে করেছে মাঝে মাঝে যেতাম ওর কাছে তোদের কথা জানার জন্য ।ভাবী আমাদের এত খবর রাখতো অথচ আমরা কেউ কোনদিন তার খোজ নেইনি। এটাই প্রেম,ভালোবাসা। ভাবী সবার কথা জিজ্ঞাসা করলো । দাদার কথাটা জিজ্ঞাসা করে বললো- ঐ মানুষটা কেমন আছে?। আমি হেয়ালি উত্তর দিয়ে বলেছি-ওর মতই ,বিয়ে করেছে সংসার করছে ,সন্তান হয়েছে এই তো । ভাবী কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে বললো- ইশ্বর কেন যে আমার মত মেয়েদের সন্তান ধারন করার ক্ষমতা কেড়েনিল ! তোর দাদাকে অনেক বলেছি-যে তুমি দ্বিতীয় বিয়ে করো আর আমাকেও রাখ । লোকটা এত ভিতু বাপকে এত ভয় পায় । আমিও বিরক্ত নিয়ে বললাম-ওনার কথা আর বলোনা-প্রতিবছর যায় হর্জ্বে জানি না লোকটা কত পাপ করেছে এত হর্জ্ব করে কেন?। ভাবী আমাকে আক্রমন করে বললো-বাবাকে নিয়ে এমন কথা বলো না! আমি বললাম-ইস! তোমার সাথে যা ব্যাবহার করেছে তাকে আবার সমর্থন কিসের । ভাবী বললো-ভালোই হয়েছে চলে এসেছি, ওখানে থাকলে ঘৃর্ণা অভিশাপ নিয়েই বেচেঁ থাকতে হতো। আমি বললাম- তো এখানে কি ভালো আছো? । ভা্বী নিশ্চুপ হয়ে গেল। তারপর বিকেলে ভাবীর ওখান থেকে চলে আসছিলাম-ভাবীকে বললাম তুমি তোমার শরীরের যত্ন নিও, মাঝে মাঝে আমি তোমার খুজ নিব ফোন করে । তোমারও যখন ইচ্ছে মন চায় আমাকে ফোন কইরো, ভাবীও আমাকে পেয়ে খুব খুশি তার হাতে হাত রেখে কথা দিয়ে আসতে হলো আবার আসবো । এরপর রিকশা নিয়ে চলে আসছিলাম গ্রামীণ মেঠো পথ দিয়ই –কিছুক্ষন পর পর পিছনে থেকে ফিরে দেখি আমার ভাবী তাকিয়ে রয়েছে অশ্বথ গাছের নিচে আরো দুরে আসার পর দেখি শুধু লাল শাড়ীর একটা ছায়া দেখা যায় সে এখনো দাড়িয়ে রয়েছে । আমার তখন মনে পড়ে গেল-সেই শ্রাবন দুপুরের কথা শেষ ছায়া পযর্ন্ত যখন আমিও তাকিয়ে রয়েছিলাম – এই কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ চোখে জল এসে গেল । পৃথিবীতে যদি বিচ্ছেদ না থাকতো । পৃথিবীতে যাদের সন্ধ্যান করি তারা সর্বদা যদি পাশে থাকতো ।
(সত্য-ঘটনা )
(উৎসর্গ-নীলিমা,রমাকে
©somewhere in net ltd.