নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিজয় না হওয়া পযন্ত সংগ্রাম করো

মানুষ আজিজ১

মানুষ আজিজ১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জলের সচ্ছর্তা

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:০১

জয়দেবপুর নিরঞ্জন বিশ্বাস বসবাস করতো । কলেজে থাকতে বেটার কাছে ইংলিশ শিখতে যেতুম,নিরঞ্জন ছিল বড্ডো আন-স্মার্ট ও সেকেলে, আমাদের মধ্য যুগের পদ্ধতিতে ইংলিশ শেখাতো তার সাথে সাথে চর্চাপদ,পদাবলী সাহিত্যও পড়াতো তবে এগুলো বাধ্যতামুলক ছিল না । নিরঞ্জন আমার আচার-আচরণে মুগ্ধ হয়ে জামাই ডাকতো, পরবর্তিতে সবাই আমাকে-নিরঞ্জনের মেয়ের জামাই বলে খেপাতো । এটা জানি বেটা আমাকে কৌতুক করেই জামাই ডাকতো! তবে আমি নতুন জামাইয়ের মতই ছিলাম-তাকে শশুর মশায় ডাকতে পারিনি ।
তারপর অনেকগুলো বছর গতহলো, নিরঞ্জনের কথা এক রকম ভুলেই গিয়েছিলাম । গতবছর ঢাকা থেকে জয়দেবপুর গেলাম আমার বন্ধু রাশেদের বাসায়,তখন স্বরসতী পুর্জার সময় ছিল । বিকেলে পুর্জা মন্ডবে গেলাম রাশেদের সাথে । পুর্জা মন্ডবে রাশেদ বললোঃ ঐ দেখ নিরঞ্জনের মেয়ে ‘সচ্ছ’ । তারপর বহুবছর আগে চলে গেলাম-পন্ডিত মশায় তো আমাকে তার মেয়ের জামাই বানিয়েছিল । তখন সচ্ছকে দেখে সত্যিই তার মেয়ের জামাই হতে মন চাইলো ।নিরঞ্জন হলো কট্টোর পন্থি হিন্দু ,প্রোয়জনে জীবন্তু আগুনে আত্মহতি দিবে তবুও কোন মুচলমান ছেলের সাথে তার মেয়েকে বিয়ে দিবে না ।যাইহোক আমি সচ্ছর সাথে কথা বলতে চাইলাম,রাশেদ বললো: না ,এই কাজ করিস না!বেটার মেয়েটাও বানিয়েছে-কাঠ,জটিল পদার্থ দিয়ে কোন রস,কস রোমান্টিকতা নেই সবই তেতুলের টক!। আমি বললুমঃ কেন? আমার হবু বউকে তোরা ড্রিসাব করিস বুঝি?
আমি গেলাম সচ্ছর সম্মুখে, এবং বললুমঃ সচ্ছ কেমন আছ তুমি ?
সচ্ছঃ খুব ভালো,আজ স্বরসতী পুর্জাতে অনেক প্রসাদ খেলুম, খাবে তুমি ?এনে দিই?
আমিঃ সচ্ছ,তুমি আমাকে চেন?
সচ্ছঃ একটু গভীর হয়ে দেখে বললো , মনে হয়তো না ! তুমি এ শহরে নুতন?কে গো তুমি?
আমিঃ আমি তোমার বাবার মেয়ের জামাই ছিলাম!
সচ্ছঃ ছিলে? নাকি হতে চাও ? ঐদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছিলুম-পাসের মসজিদের মধ্যবয়স্ক ইমাম, আমার পথ আটকে দাড়িয়ে বললোঃ সে আমাকে বিয়ে করতে চায়!আমি তাকে বললুমঃ আমি-তো হিন্দু ! তারপর ইমাম অনেক মাসলা,হাদীস শাস্ত্র শুনিয়ে বললো-হিন্দুদেরও নাকি বিয়ে করা জায়েজ আছে ।
আমিঃ সচ্ছ তুমি বড্ডো বেশি কথা বলো। কে শুনতে চাইছে এ কথা ?যাও পছন্দ হলে ঃ বৃদ্ধ ইমামকেই বিয়ে করো ।
সচ্ছঃ হ্যা কেউ বলে আমি বেশি কথা বলি, কেউ বলে আমার কোন রস,কস নেই ইত্যাদি ইত্যাদি , কে কি বলছে এতে আমি কিছু মনে করি না । তো বাবা তোমাকে মেয়ের জামাই ডাকতো কেন?বাবা অন্য কোন মেয়ে আছে বা বিয়ে করছে বলে শুনিনি ।
আমিঃ কৌতুক করে হয়তো । তবে তোমাকে দেখার পর আজ সত্যিই তার মেয়ের জামাই হতে মন চাচ্ছে ।
সচ্ছঃ এক দেখাতেই এত প্রেম! ?বাহ-! কি জানি বাপু, কিভাবে হয় এটা? অভিনয় নয়তো?
আমিঃ না ,অভিনয় না ।
সচ্ছঃ আমার বাবার ইচ্ছে, তার মেয়েকে যার কাছে বিয়ে দিবে তার কাছ থেকে অনেক যৌতুক নিবে । কি দিতে পারবে তুমি?
আমিঃ আমাদের বিয়ে হলে, অনেকগুলো সন্তান তোমাকে উপহার দিতে পারবো এছাড়া আর কিছু নাই-গো,জলের সচ্ছতা ।
সচ্ছঃ জলের সচ্ছতা বললে কেন?আর যৌতুক ছাড়া বিয়ে দিবে না বাবা।
আমিঃ তোমার বাবা এমন কেন?কিছুটা অমানবিক! চলো আমরা পালিয়ে বিয়ে করে ফেলি।
সচ্ছঃ আমার বাবা পুরাই অমানবিক তার চেয়ে বেশি আমি!যৌতুক ছাড়া বিয়ে হবে না, ছোকরা এবার অন্য পথ দেখ ।
আমিঃ তুমি ঘোলা জলের সচ্ছতা, সচ্ছ তোমার নামের সাথে যায় না ।
সচ্ছঃ হুম, ফ্রি দিলে সবাই খুশি । কেউ কাউকে ফ্রি দেয় নাকি ?তুমি যে লেখা পড়া করেছে বিশ্ববিদ্যালয় এমনি করিয়েছে,টাকা লাগেনি ? এটা শায়েস্তাখার –সময় না , এখনে প্রেম বিয়ে করতে হয় অর্থ দেখে ।
আমিঃ তুমি হৃদয়টা দেখবে না ।
সচ্ছঃ হৃদয় অদৃশ্য, অদৃশ্য জিনিসের বিশ্বাস নেই ।
আমিঃ কত টাকা লাগবে তোমাকে বিয়ে করতে?
সচ্ছঃ বাবা বলেছে ২ কোটি হলেই হবে!
আমিঃ ও ,তাহলে তো করা যায়। তোমার বাবাকে কিস্তিতে যদি টাকা দিই ।
সচ্ছঃ কিস্তি?। বাবা তো এটা বলেনি ! কিস্তি হবে কিনা ?। দড়াও ফোন করে জানি ।
এই বলে সচ্ছ-ফোন বের করে ওর বাবাকে ফোন দিল-তারপর বললোঃ বাবা ২ কোটির এক ছেলে পাইছি কিন্তু কিস্তিতে দিতে চায় ,তারপর ওর বাবা কি যেন বললো ।
এরপর সচ্ছ বললো ঃবাবা বলচ্ছে , কিস্তিতে হবে পরে টাকা না দিতে পারলে কিন্তু ডির্বোস আর কিস্তি শেষ হলেই সন্তান নেয়া যাবে এর আগে না আর একটি কথা – কিস্তিতে বিয়ে করলে ১ কোটি টাকা বেশি দিতে হবে ।
আমি চিন্তা করলুমঃ মাসে দুই লাখ টাকা কিস্তু দিলে তো বছরে চব্বিশ লাখ! ৩কোটি পুরন করতে যেয়ে তো আমি নিজেই পটল তুলবো ।
আমিঃ না সচ্ছ, হবে না এত টাকা নেই ।হবে না হবে না হবে ---------------
তোমার বাবা,তোমরা এমন কেন? আবারও কৌতুক করছো নাতো ?

সচ্ছঃ হাসচ্ছে শুধু---------

আমি বললামঃ তোমার বাবা, তুমি –এত সাহিত্য পড়ো,কবিতা পড়,রবীন্দ্রনাথ পড়ো কিন্তু মানুষের মনটা বুঝ না , এগুলো চর্চা করলে তো মানুষ ভালো হয় ।
সচ্ছ হঠাৎ একদম চুপ হয়ে গেল ।
তারপর আমি চলে এলাম ঢাকায় -------তারপর আর জয়দেবপুর যাওয়া হয়নি । ওখানে বার বার কৌতুক করে মানুষের বিশ্বাস হরায় । কেমন জানি ওখানকার মানুষ ।
শুধু দন্ধ আর সংঘাত । ----------

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.