নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাবা দিবস

১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ২:২০

আমরা তিনভাইবোনের মধ্যে আমি দ্বিতীয়। আমার বড় বোন প্রথম সন্তান হওয়ায় এমনিতেও আমার বাবার সবচেয়ে প্রিয় ছিল। তাছাড়া সে মেয়ে। মেয়েদের প্রতি বাবারা এমনিতেও একটু বেশিই দুর্বল থাকেন।

আমার পরেরজন আমার ছোট ভাই। যে গর্ভে থাকা অবস্থায় আমার মায়ের কি যেন একটা জটিল রোগ ধরা পড়ে। ডাক্তার অনুমান করেছিলেন ক্যানসার। ডাক্তারের পরামর্শে কি যেন একটা ওষুধ খাওয়ানো হয়। গাইনি বিশেষজ্ঞ মহিলা ডাক্তার সেটা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন।

ডাক্তারের চেহারা দেখে আব্বু শঙ্কিত গলায় জিজ্ঞেস করলেন, "any problem?" (জার্মান কোম্পানিতে কাজ করার জন্য অফিসে বিদেশী বসদের সাথে তাঁদের ইংরেজিতে কথা বলতে হত। তাই সুযোগ পেলেই স্পোকেন ইংলিশ ঝালিয়ে নিতেন।)

ডাক্তার বললেন, "এ ওষুধ কোন ডাক্তার প্রেসক্রাইব করেছে?"

আব্বু এবার ডাক্তারের নাম বললেন। মহিলা ডাক্তার বললেন, "আপনি এখনই তার বিরুদ্ধে ল স্যু করুন। ঐ ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় আপনার স্ত্রীর গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যেতে পারে।"

ভয়ে আব্বুর হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো। তিনি বরাবরই আবেগপ্রবন মানুষ। অনাগত সন্তানের জন্য তাঁর চোখ ছলছল করে উঠলো। তিনি নিজেকে খানিকটা সামলে নিয়ে বললেন, "ওকে বাঁচানোর কোনই উপায় নাই?" (এবারে পরিষ্কার বাংলায় বললেন। হৃদয়ের কথা মাতৃভাষা ছাড়া ঠিক মত প্রকাশ পায় না।)

ডাক্তার বললেন, "যদি মারা গিয়ে না থাকে তবে বিকলাঙ্গ হবে এটা নিশ্চিত।"

তারপর আব্বুর চেহারা দেখে হয়তো সান্তনা দিতেই বললেন, "আল্লাহ আল্লাহ করেন। মিরাকেলতো হয়ই, তাই না? দোয়া করেন, আপনার ক্ষেত্রেও যেন মিরাকেল কিছু ঘটে।"

উনিশশো আটাশি সালের বাইশে জানুয়ারী আশরাফুর রহমান চৌধুরীর জীবনে একটি মিরাকেল ঘটলো। সন্তান জন্ম নেয়াটাই একটি মিরাকেল। কিন্তু নিশ্চিত বিকলাঙ্গ সন্তানকে সম্পূর্ণ সুস্থ্য হয়ে জন্মাতে দেখাটাওতো আরেক মিরাকেল। তৃতীয় সন্তানটিও সে কারনেই আব্বুর প্রিয়র খাতায় নাম লেখালো।

আমি পড়ে গেলাম মাঝখানে। তাই বলে কি আমার বাবা আমাকে ভালবাসতেন না? অবশ্যই ভালবাসতেন। ভালবাসা যে সমান তিনভাগে ভাগ হওয়া সম্ভব, সেটা আমি সেই ছোট বেলা থেকেই দেখে দেখে শিখেছি।

আমার বোনের প্রতি বাবার ভালবাসা ছিল বাড়াবাড়ি পর্যায়ের। ছোটভাইয়ের প্রতিও। আমার ক্ষেত্রে আব্বুর কোন বাড়াবাড়ি আমি তেমন একটা দেখিনি। তবু সকাল বেলা ফজরের নামাজ শেষে আয়াতুল কুরছি পড়ে আমার মুখে ফু দিয়ে আমার ঘুম ভাঙ্গাতেন। আয়াতুল কুরছি। যে আয়াত পাঠ করলে পৃথিবীর যাবতীয় অশুভ কিছু পাঠকারীকে স্পর্ষ করে না। ছোট্ট আমাদের এত লম্বা আয়াত মুখস্ত হয়নি, বাবাই তাই নিজে পড়ে আমাদের গায়ে ফু দিয়ে দিতেন। পৃথিবীর অশুভ কিছু যেন আমাদের স্পর্শ করতে না পারে।

পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে দেখতাম হলের গেটের বাইরে লাল ভেসপা পার্ক করে চশমা পড়া এক ভদ্রলোক উন্মুখ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমার বাবা! ছেলে মেয়েদের পরীক্ষার টেনশনে আমাদের চেয়ে উনিই বেশি নার্ভাস হয়ে যেতেন। আমাদের সামান্য সাফল্যে যিনি গর্বে বুক ফুলিয়ে সবাইকে বলে বেড়াতেন। আমাদের ব্যর্থতায় যিনি নিজে ব্যথিত হতেন ঠিকই, কিন্তু আমাদের আবার লড়াই করার সাহস দিতেন। সামান্য কিছু উপহার দিলে গর্বভরে পুরো দুনিয়াবাসীকে জানিয়ে বেড়াতেন, "আমার ছেলে/মেয়ে এটা দিয়েছে!"

সিলেটে ছুটি কাটানো শেষে পড়ালেখার জন্য ঢাকায় ফেরার পথে বাস কাউন্টারে আমাদের তিনি বিদায় দিতে আসতেন। বাস ছাড়তো, আর পিছন ফিরে দেখতাম তাঁর ছলছল চোখ। প্রতিবার এক ঘটনা! যিনি চাইতেন তাঁর সন্তানেরা যেন সবসময়ে তাঁর আশেপাশে থাকে। একটা বয়স পরে যা কখনও সম্ভব হলো না। তাঁর মৃত্যুর সময়েও না।

আমার বাবা মারা গেছেন দুবছর হয়ে গেছে। এখনও বাবার বয়সী বা একই চেহারার কাউকে দেখলে মনটা উদাস হয়ে যায়। মনে হয় কত কিছু করার ছিল, কিছুই করা হলো না। সুযোগ আসার আগেই সময়ের কাছে হারতে হলো।

যাদের বাবা আছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ, অন্তত একটা দিন বাবাকে নিয়ে বাইরে ঘুরে আসুন, কোন ভাল রেস্টুরেন্টে অথবা বাসাতেই ভালমন্দ কিছু খান। খানিক্ষন গল্প করুন। বৃদ্ধ পিতার বুকটা আনন্দে ভরে উঠুক। পিতৃস্নেহের ঋণ শোধ কখনই সম্ভব নয়, কিন্তু পিতার মন জয়? খুবই সম্ভব।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:৩৫

জে.এস. সাব্বির বলেছেন: আপনার প্রথম পোস্ট(সম্ভবত)টি খুবই ভাল লাগল ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.