নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
রাস্তার ওপারে আরেকটা ইউনিভার্সিটি, তাদের ক্যাম্পাসে দল বেঁধে সারি সারি রিকশা দাঁড়িয়ে থাকে। গুলশান এক নাম্বার গোল চক্করে (গোল চক্কর লুপ্ত হয়েছে বহু বছর হয়ে গেল, তবু এখনও সে জায়গার নাম "গুলশান এক নম্বর গোলচক্কর" রয়ে গেছে) যেতে হলে ওখানেই রিকশা নিতে হয়। রিকশাওয়ালাকে বলাও লাগেনা, ইশারাতেই ওরা বুঝে ফেলে কোথায় যেতে হবে।
আমি রাস্তা পার হয়ে একটা রিকশাওয়ালাকে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম যাবে কিনা। সেও হাতের ইশারায় তার খালি রিকশায় উঠতে বলল।
মনে হয় রিকশাওয়ালা আজকে সকালে খুব ভাল নাস্তা করেছে। সে ঝড়ের বেগে আমাকে উড়িয়ে নিয়ে চলল। একের পর এক রিকশাকে ওভারটেক করে এগোতে লাগলো। খুবই বিপজ্জনক ড্রাইভিং! আমি তবু তাকে সাবধান করলাম না। টাইট হয়ে বসে রইলাম। আকাশে মেঘ জমছে, বাতাসের বেগ থেমে গেছে। যে কোন সময়ে বৃষ্টি শুরু হবে। এই আবহাওয়ায় রিকশার ঝড়ো গতি ভাল লাগছে।
অবশেষে দুয়েক ফোঁটা করে তিনি নেমে আসতে শুরু করলেন। এই বছরের প্রথম বৃষ্টি। ঢাকার বৃষ্টি সিলেটের বৃষ্টির মত আকর্ষনীয় না। আবার, খুব একটা খারাপও না।
আমি বৃষ্টিকে স্বাগত জানাতে আকাশের দিকে মুখ উঁচু করলাম। ঠিক তখনই সে স্ববেগে নেমে এলো। আমার মুখ, চুল, জামা কাপড় ভিজে চুপচুপে হতে এক মুহূর্তও লাগলো না। রাস্তার লোকজন তার হাত থেকে বাঁচার জন্য ছোটাছুটি করছে।
রিকশাওয়ালা বলল, "হুড তুইলা বহেন, আমার পানি কাপড় নাই।"
আমি বললাম, "আপনি চালান। আস্তে ধীরেই চালান।"
আমি হুড তুললাম না। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এগোলাম। আমার ভাল লাগছে। পৃথিবীতে সুখী হতে খুব বেশি উপকরণের দরকার হয়না।
রাস্তার ওপার দিয়ে একটা গাড়িতে বসে আমারই সহপাঠি একটি মেয়ে যাচ্ছিল। তোলা জানালার ওপাশ থেকে কৌতূহলী চোখে বৃষ্টিস্নাত শহর দেখছিল। হঠাৎ তার চোখে পড়ে একটি ছেলে রিকশার হুড খুলে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে যাচ্ছে। ছেলেটি তার বন্ধু হয়, মনে মনে তাকে ভালও বাসে। ছেলেদের দৃষ্টিতে লুকানো ভালবাসার ভাষা মেয়েরা অতি সহজেই বুঝতে পারে।
মেয়েটা ভেবেছিল আহা! কি রোমান্টিক ছেলে! বৃষ্টি বিলাস করছে বুঝি!
কয়েক বছর পরে সেই ছেলের সাথেই তার বিয়ে হয়।
আমি বৃষ্টিতে ভেজা শুরু করি কোন রোমান্টিক বোধ থেকে নয়। আমার বাবাকে দেখতাম বৃষ্টিতে সামান্য ভিজলেই জ্বর সর্দি কাশি বাঁধিয়ে ফেলতেন। তিনি ভাবতেন আমরাও বুঝিবা তাঁরই মত হয়েছি। তিনি আমাদের বৃষ্টিতে ভিজতে দিতেন না। বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে পড়লেই তোয়ালে দিয়ে মুছে একেবারে খরখরে না করে ফেলা পর্যন্ত তিনি শান্তি পেতেন না।
আমার ধারনা ছিল ভিন্ন। কোথায় যেন পড়েছিলাম, বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে শরীরকে বৃষ্টিপ্রুফ বানিয়ে ফেললে তখন আর সামান্য ভেজায় জ্বর সর্দি হয় না। পিতৃ প্রদত্ত জ্ঞান থেকে আমি গ্রন্থগত বিদ্যাকেই বেশি প্রাধান্য দিলাম।
পরে ভিজতে ভিজতেই বৃষ্টির সাথে প্রেম হয়ে গেল।
অ্যামেরিকায় এসেছি সাত বছরের কিছুটা বেশি সময় হয়ে গেছে। টেক্সাস বর্ষার জন্য মোটেও বিখ্যাত নয়। তবু এখানেও বৃষ্টি হয়। মোটা মোটা বড় বড় ফোঁটার স্বাস্থ্যবান বৃষ্টি। কয়েক মিনিটের বর্ষনেই প্লাবন আনার ক্ষমতা রাখে এমন বৃষ্টি। বৃষ্টি প্রেমিক যেকারও জন্য লোভনীয় বৃষ্টি।
তবু আমি একবারের জন্যেও অ্যামেরিকার বৃষ্টিতে ভিজিনি। একদিন ঢাকার রাস্তায় গাড়ির বন্ধ জানালার ওপাশে বসে বৃষ্টি দেখা মেয়েটির বর্তমান ধারনা বিয়ের পরে সব ছেলের মত আমিও আনরোমান্টিক হয়ে গেছি। ওকে কে বোঝাবে, এই বৃষ্টি যে আমাকে কাছে টানেনা! আমার জন্যে আমার দেশের রোগা পাতলা বৃষ্টিই ভাল। ভিনদেশের বিদেশী বৃষ্টি আমার আপন কেউ নয়!
১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৩২
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:২৫
বৃষ্টি'র জল বলেছেন: " পৃথিবীতে সুখী হতে খুব বেশি উপকরণের দরকার হয়না। "
" ভিনদেশের বিদেশী বৃষ্টি আমার আপন কেউ নয়! "
খুব বেশি ভাল লাগলো ২টা লাইন
১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৩৩
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
বাকি লাইগুলি ভাল লাগেনি?
৩| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৬
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
বৃষ্টির এমন ভিন্নতা কখনও উপলব্ধি করিনি। আমার কাছে সব স্থানের বৃষ্টি একই রকম মনে হয়েছে।
১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৩৪
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
৪| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৩৭
শুকনোপাতা০০৭ বলেছেন: ভিনদেশের বিদেশী বৃষ্টি আমার আপন কেউ নয়! চমৎকার
১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৩৪
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
৫| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৪২
নেক্সাস বলেছেন: সুন্দর হয়েছে লিখাটি
১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৩৫
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!
৬| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫২
বৃষ্টি'র জল বলেছেন: বাকি গুলো শুধুই ভাল ,
কিন্তু ঐ দুইটা লাইন খুব বেশি ভাল লেগেছে
২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:২০
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৯
বোকামন বলেছেন:
মোটা মোটা বড় বড় ফোঁটার স্বাস্থ্যবান বৃষ্টি আমিও উপভোগ করিনা ।
ভিনদেশী কিছুই কেনো যেন খুব একটা আপন মনে হয় না ....।
ভালো লেগেছে আপনার লেখাটি ।
শুভকামনা রইলো ।
+