নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
সুরমা একটি অতি নিরীহ নদী। পদ্মার মত সর্বনাশা স্বভাব তার মধ্যে নেই, তবু বর্ষায় বৃষ্টির পাল্লায় পড়ে সেও আগ্রাসী হয়ে উঠে। সাগরের টানে তীব্র বেগে ছুটে যাবার সময়ে আসেপাশের দুকূল থেকে অনেক কিছুই ধুয়ে মুছে নিয়ে যায়। কৃষকের হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফসল, মাঝি পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস ভাঙ্গা নৌকাটি, নিরীহ গবাদি পশু - কিছুই বাদ যায় না। আমরা পাকা দালানের বাসিন্দারা সুরমার কংক্রিটের ব্রিজের ওপর থেকে আগ্রাসী নদীর "সৌন্দর্য" উপভোগ করে মুগ্ধ হই।
"ঐ দ্যাখ, দ্যাখ! আস্ত বাড়ি ভেসে যাচ্ছে।"
"ছবি তোল! ছবি তোল! ধ্যাত! মোবাইলটা কই রাখলাম!"
মোবাইল বের হয়। বোতাম টেপাটেপি চলতে থাকে।
...
সুরমার বাঁকে একটি বড় বট গাছকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমি খুব কৌতূহলী হয়ে উঠি। রেগে উন্মাদিনী এক নদীর সাথে বছরের পর বছর মাটি কামড়ে লড়ে যাচ্ছে। সামান্য বৃক্ষের কাছে পরাজিত নদী ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে আরও অনেক কিছুই ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তবু বট বৃক্ষটি সেখানেই অনড় দাঁড়িয়ে থাকে। তার শরীরে যেন ভর করে পর্বতের অটলতা।
প্রতি বছর সুরমার ভরা যৌবনের সৌন্দর্য আমি উপভোগ করতে যেতাম। প্রতিবছর একই দৃশ্য দেখা যেত। সর্ববিজয়া সুরমা এক বটবৃক্ষের কাছে হার মানে, বাধ্য হয়ে মাথা নিচু করে পাশ কাঁটিয়ে বয়ে যায়। বিজয়ী বৃক্ষটি মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে থাকে। উন্নত মস্তক। সে যেন ঘোষনা দেয়, নদীর স্রোতে ভেসে যাবার জন্য তার জন্ম হয়নি।
আজ থেকে পয়ষট্টি বছর আগে, হুমায়ূন আহমেদের জন্ম। চল্লিশ বছরের লেখালেখি জীবনে তিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন জাদুকরী বেশ কিছু চরিত্র, কালজয়ী সব উপন্যাস, ছোট গল্প, নাটক এবং সিনেমা। মাত্রই কয়েক বছরের পরিশ্রমে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যিকে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। তাঁর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে হিংসুটেরা তাঁকে "সস্তা, বাজারী লেখকের" উপাধি দিয়েছিলেন।
আজকে সেই "সস্তা" লেখকের জন্মদিন। তাঁর নিন্দুকেরা অবাক হয়ে দেখছেন, তাঁর অগণিত ভক্ত সারা বিশ্ব জুড়ে পালন করছে বিশেষ দিবসটি। নিন্দুকেরাও জানেন, সময়ের প্রবল স্রোতে তাঁরা নিজেরাও আর সব সাধারণ জনতার মত ভেসে হারিয়ে যাবেন। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ টিকে থাকবেন। অটল, অবিচল। সময়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে লড়ে যাওয়া বট বৃক্ষদের একজন তিনি।
বহু বছর পরে, সময়ের স্রোতের তীব্রতা দেখে যখন কোন পর্যবেক্ষক বিস্ময় প্রকাশ করবেন, তখন অমর কিছু মানুষের কর্মফলও তাকে মুগ্ধ হতে বাধ্য করবে। একজন সৃষ্টিশীল মানুষের ছোট্ট পার্থিব জীবনে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী থাকতে পারে?
১৪ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৬
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আপনি কি তার ভক্ত নন?
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২২
ওবায়েদুল আকবর বলেছেন: বটবৃক্ষ হুমায়ূন চিরদিন তার ভক্তদের থুক্কু আমাদের হৃদয়ে টিকে থাকবেন যুগ যুগ ধরে।