নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আন্দোলনপ্রিয় বাঙালি জাতি।

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৫:১৮

আমি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পৃথিবীতে আসিনি। তবে বাঙালি যে 'আন্দোলনের জাতি' সেটা আমি জন্মের কয়েক বছরের মধ্যেই টের পেয়েছিলাম।

সেই সময়ে টিভিতে একটা নাটক প্রচার হত, "বহুব্রীহি।" নাটকটির নামের অর্থ কী সেটা না বুঝলেও নাটকটা দেখতে মজাই লাগতো। ভারামিমুক্ত হাসির নাটক, ভাল লাগবে নাই বা কেন?

মনে পরে, সেই সময়ে দেশের ডাক্তার সমাজ নাটকটির লেখকের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলে। লেখকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নাটকটিতে একজন ডাক্তারকে বোকা দেখানো হয়েছে। ডাক্তাররা কী বোকা নাকি? তারা কেন একটি নাটকে হাসির পত্র হবেন? দেশের সকল ডাক্তার সম্মিলিতভাবে এই সিদ্ধান্ত নিলেন, ক্ষমা না চাইলে বহুব্রীহির লেখক হুমায়ুন আহমেদ এবং তাঁর পরিবারের কোন সদস্যের কোনরকম চিকিত্সা কেউ করবেন না।

এরপর আরেকটা আন্দোলনের কথা মনে পড়ে। আমি তখনও খুবই ছোট, পাঁচ বছর বয়স। স্মৃতির উপর ভরসা করে লিখছি। স্মৃতি ধোঁকা দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।

নব্বই ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালে আব্বুর সাথে সাথে আমিও রাত জেগে খেলা দেখছিলাম। ফুটবলের তখনও খুব বেশি কিছু বুঝিনা। শুধু এটা বুঝি, বল জালে ঢুকাতে পারলে গোল! এবং বুঝি আর্জেন্টিনা দলে ম্যারাডোনা নামের একজন ছোটখাটো খেলোয়ার আছে, যার মত ফুটবল খেলতে কেউই পারেনা। আমার আব্বু ছিলেন পাঁড় ব্রাজিল সমর্থক। তবু গুনির গুনের মান রাখতে তিনিই প্রথম আমাকে শিখিয়েছিলেন।

খেলার প্রায় শেষ মুহূর্তে সাদা এবং হালকা নীল জার্সি পড়া খেলোয়াররা রেফারিকে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে দিল। পারলে মেরেই বসে। আমি আব্বুকে জিজ্ঞেস করলাম, "ওরা রেফারিকে মারছে কেন?"

আব্বু বললেন, "রেফারি একটা অন্যায় পেনাল্টি দিয়েছে।"

আর্জেন্টিনার হেরে যাওয়ায় ফুঁসে উঠলো বাংলাদেশ। রাস্তায় রাস্তায় ঝাঁঝালো মিছিল, কুশপুত্তলিকা দাহ, জ্বালাময়ী স্লোগান, 'চোর রেফারির ফাঁসি চাই! ফাঁসি চাই! ফাঁসি চাই!'

"আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন....দিতে হবে, মানতে হবে!"

জাতীয় সংসদে নাকি বিল পাস হয়েছিল, ফিফার সভাপতি যদি কখনো বাংলাদেশে আসেন, তাহলে তাঁকে তাত্ক্ষণিক গ্রেপ্তার করা হবে।

স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনও আমার কাছ থেকে দেখা। ফ্ল্যাটের জানালা দিয়ে রাস্তায় তাকিয়ে থাকতাম, কখন মিছিল আসে। চিটাগং শহরের কাতালগঞ্জের রাস্তাটি সবসময়েই ব্যস্ত থাকত ধানের শীষ এবং নৌকা প্রতীকের মিছিলে। এরশাদ সাহেব নিজের গদি বাঁচাতে আর্মি নামালেন। আর্মির ট্রাক দেখতেও ভাল লাগতো। ছোটবেলায় আমি আর্মি অফিসার হতে চাইতাম কিনা!

সেই সময়ে দেয়ালে লেখা একটা স্লোগান এখনো মনে আছে।

"ধানের শীষ - চারশ বিশ! নৌকা ভরি - হাগি দিস!"

কারা লিখেছিল মনে নেই, জাতীয় পার্টি হবার সম্ভাবনা বেশি।

দেশে গণতন্ত্র আসার পরে আরেকটা আন্দোলনের কথা কখনই ভুলতে পারবো না।

এইবারও কালপ্রিট সেই পুরানো পাপী, হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর বিরুদ্ধে এবারের অভিযোগ, তিনি বাকের ভাইকে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেয়ার পায়তারা করছেন। পুরো দেশ বাকের ভাইয়ের পাশে এসে দাঁড়ালো। রাস্তায় রাস্তায় সম্মেলন, লেখকের কুশপুত্তলিকা দহন এবং জ্বালাময়ী স্লোগান, "বাকের ভাইয়ের কিছু হলে, ভাঙবে টিভি ঘরে ঘরে!"

আমি তখন আমাদের টিভি নিয়ে শঙ্কিত। কোথাও কেউ নেই ছাড়াও প্রতি বুধবারে ম্যাকগাইভার আমার প্রিয় অনুষ্ঠান। টিভি ভাঙলে ম্যাকগাইভার দেখব কী করে?

এর কিছুদিন পড়ে বুঝে গেলাম হুমায়ূন আহমেদ নামের লোকটার কিছু একটা সমস্যা আছে। তিনি ঝামেলায় না জড়িয়ে থাকতে পারেননা। তাঁর বিরুদ্ধে এবারে এক হয়েছেন আদালতের বিচারক সমাজ। অভিযোগ, তিনি ময়ুরাক্ষি নামের এক উপন্যাসে একটি দুষ্ট চরিত্রের লোককে দিয়ে বলিয়েছেন, "আগে দেশের জজ সাহেবেরা ঘুষ খেতেন না, এখন খান।"

তাঁর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়া হলো। এখন বুঝো ঠ্যালা! কোর্টে যাও, হাজিরা দিতে থাকো!



আমার নানী বলতেন, "মাইনষের যায় দিন ভালা, আসে দিন খারাপ!"

কথাটা বোধয় সত্যি।

আমার শৈশবেও আন্দোলনপ্রিয় বাঙালি জাতি আন্দোলন করতেন, এখনো করেন। পার্থক্য শুধু এখানেই, আগের আন্দোলনগুলো সভা সমিতিতেই সীমাবদ্ধ ছিল। খুব বেশি রেগে গেলে জ্বালাময়ী স্লোগানওয়ালা মিছিল শেষে কুশপুত্তলিকা দাহ। ব্যস! এরপর বাড়িতে যাও, চা খাও, বিটিভি দেখো, পরিবারের সাথে সুস্থ সময় কাটাও এবং রাতে আরামসে ঘুমিয়ে পরো।

এখনকার আন্দোলন বড্ড গোলমেলে। জনগনের দাবী আদায়ের স্বার্থে জনগনের সম্পত্তিই ভাংচুর করা হয়। এখনকার আন্দোলনের মিছিলে গোলাগুলি চলে, চলে বোমাবাজি। বাসে লাগানো হয় আগুন, পোড়ানো হয় জীবিত মানুষ!

আমাদের পৃথিবী যেহেতু গোল, সেই পৃথিবীতে বাস করা মানুষের জীবনও তেমনি চক্রাকারেই আবর্তিত হয়। আমার বিশ্বাস, আবারও আমরা ফিরে যাব সেইসব সুস্থ আন্দোলনের দিনগুলোতে। আমরা আবারও একটা নাটকের চরিত্রের অন্যায় ফাঁসির প্রতিবাদে রাজপথ কাঁপাব। বিদেশী একটা দল, যারা হয়তবা এটাও জানেনা বাংলাদেশ নামের একটা দেশ পৃথিবীর বুকে আদৌ আছে, তাদের বিশ্বকাপ ফাইনাল হেরে যাওয়ার প্রতিবাদে সংসদে বিল পাশ করব। জীবিত মানুষের দেহ নয়, কুশপুত্তলিকা দাহ করেই আমরা আমাদের ক্ষোভ প্রকাশ করব। আমরা আবার আমাদের সুন্দর দিনগুলোতে ফিরে যাব!

সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৭:২৮

মুনেম আহমেদ বলেছেন: ভাল লিখেছেন। নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইল :-)

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৩:০৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.