নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোরে গোরে নটি নটি টুং! "ফর্সা ফর্সা দুষ্টু দুষ্টু পাছা!"

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৩:৪১

ছোট বেলায় বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় একটা প্রশ্ন অবশ্যই আসতো, একটি কবিতার কয়েকটি চরণ তুলে দিয়ে পেছনে লেখা থাকতো, "এখানে কবি কী বুঝিয়েছেন?"

খুবই কঠিন প্রশ্ন! কবি কী বুঝিয়েছেন সেটা আমি কী করে জানবো? গাইড বইয়ের লেখক যা বুঝেছেন, তাই লিখে দিয়েছেন, আমরাও মুখস্ত করে লিখে এসেছি। এখন নিজেও হালকা পাতলা ক্রিয়েটিভ কর্মের সাথে যুক্ত আছি, তাই বুঝি, অনেকসময় কবি কিছু মনে না করেই লিখেন। পাঠকেরা নিজেদের মতন গভীরতা খুঁজে নেন।

উদাহরণ দেয়া যাক।

হুমায়ূন আহমেদকে শ্রদ্ধাঞ্জলী দিতে আমরা তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস '১৯৭১' অবলম্বনে মঞ্চ নাটক নির্মাণ করছি। তিনি নিজেই একটি স্ক্রিপ্ট লিখে গেছেন। আমরা সেটাকেই পরিবর্ধিত করছি।

সেখানে একটা দৃশ্য আছে অনেকটা এরকম, রাজাকার রফিক গ্রামের অন্ধ বৃদ্ধ মীর আলীর বাড়ির সামনের উঠোন দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। পায়ের শব্দ শুনে বৃদ্ধ তাকে ডেকে গল্প জুড়ে দেয়। রফিকও গল্পের ছলে বাড়ির ভিতরে ও বাইরে উঁকি দিয়ে দেখে নেয় কোন হিন্দু, মুক্তিযোদ্ধা বা আওয়ামীলীগের কেউ লুকিয়ে আছে কিনা। বৃদ্ধের সাথে তার নিম্নোক্ত কথোপকথন হয়।

বৃদ্ধ: বাবাজি আপনের নামটা কী?

রফিক: আমাকে আপনি চিনবেন না। আমি বিদেশী মানুষ।

বৃদ্ধ: বিদেশী মাইনষেরওতো একটা নাম থাকে, থাকে না?

রফিক: আমার নাম রফিক।

বৃদ্ধ: রফিক? হুনছি এই নামের এক কমিনের বাইচ্চা মিলিটারীরে পথ দেখায়া গেরামে আনছে! আপনেই কী......?

রফিক: জ্বী চাচাজী! আপনি ঠিকই শুনেছেন!

বৃদ্ধ ভয় পেয়ে যায়। রফিক এগিয়ে আসে বৃদ্ধের দিকে। টেনশন বিল্ড আপ হয়।

রফিক: চাচাজী! আপনি ভিতরে গিয়ে বসেন। বাইরে ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে। শরীর খারাপ করবে।

এই সীনটা আমরা প্রায় পাঁচ মাস রিহার্স্যাল করলাম। শোর প্রায় একমাস আগে ডিরেক্টর ফরহাদ ভাই বললেন, "আমার কাছে একটা সাউন্ড ক্লিপ আছে ঝড় তুফানের। আমরা সেটা এখানে ইউজ করতে পারি। রাজীব! এক কাজ করো, তুমি 'বাইরে ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে'র জায়গায় বল, 'আকাশে মেঘ জমছে, যে কোন সময়ে বৃষ্টি আসতে পারে, আপনি ভিতরে গিয়ে বসেন' - ঠিক আছে?"

সামান্যই পরিবর্তন। কোনই সমস্যা না। বললাম, "ঠিক আছে!"

নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে আমার আরেক গুরু মোর্শেদ ভাই এলেন রিহার্স্যাল দেখতে। তিনি আমাকে তাঁর বাসায় যেতে বললেন। যেহেতু নাটকটিতে আমিই প্রধাণ চরিত্র, তাই তিনি চান আমাকে ভাল মতন টিউন করতে।

গেলাম। তিনি আমাকে এই দৃশ্যটি এইভাবে বুঝলেন, "দেখো, এই সীনটা কল্পনা কর! এই সীনটা কিন্তু অনেক গভীর! 'আকাশে মেঘ জমছে!' মানে কী? মানে হচ্ছে - মিলিটারী গ্রামে আসতে শুরু করেছে! 'যে কোন সময়ে বৃষ্টি শুরু হবে।' - মানে হচ্ছে যুদ্ধ লেগে যাবে! Think about it! Try to feel it!"

এই ডায়লগটির শান-এ-নযূল আমি আর তাঁকে বলতে গেলাম না।

যদি এইটিই আমার পরীক্ষায় প্রশ্ন আসতো, "এখানে লেখক কী বুঝিয়েছেন" - উত্তর লিখতে গিয়ে যদি লিখতাম লেখক এখানে বেঁচে যাওয়া সাউন্ড ক্লীপ ব্যবহার করতে চেয়েছেন, তাহলে দশে মাইনাস ওয়ান পেতাম। টিচার শূন্য দিতেন উত্তর না পারার জন্য, এবং তার উপর আরও এক কেটে রাখতেন উনার সাথে 'ফাইজলামি' করেছি ভেবে।

গত কয়েকদিন ধরে দেখছি আমার সোনার বাংলার সোনামণি মেয়েরা ফেসবুক ভরিয়ে ফেলছেন নিজেদের পশ্চাৎদেশের ছবি তুলে তুলে। কেউ কেউ আবার তর্জনী দিয়ে ঐদিকে ইঙ্গিতও করছেন। খুবই ভয়াবহ ব্যাপার!

স্কুলের পরীক্ষার প্রশ্নটা সাথে সাথে মনে পড়ে গেল, যেন পশ্চাৎদেশে তর্জিনি ইশারা করা একটি ছবির নিচে অদৃশ্য প্রশ্ন লেখা আছে, কবি এখানে কী বুঝিয়েছেন?

ব্যখ্যা খুঁজতে গিয়ে জানলাম বলিউডের জিরো ফিগারের অধিকারিনী, পাতৌদির নবাব পরিবারের বউ, কারিনা কাপুরের একটি গান বেরিয়েছে, যার নাম "টু!" পাঞ্জাবীতে "টু"(উচ্চারণ ইংরেজী সংখ্যা দুইয়ের মত নয়, বিশেষ পাঞ্জাবি টানে বলতে হবে, টুং!) মানে পাছা!

লিরিক্স খেয়াল করতে গিয়ে তাজ্জব হয়ে গেলাম। একঝাক যুবতী মেয়ে নেচে নেচে গাইছে "গোরে গোরে নটি নটি টু!" ("ফর্সা ফর্সা দুষ্টু দুষ্টু পাছা!")

মাশাআল্লাহ!

একটা কিছু চালু হলেই হলো, বাঙ্গালীরা ঝাপিয়ে পড়ে তার পিছনে। পর্বতাকৃতির মেয়েরাও এখন নিজের পাছার ছবি তুলে ক্যামেরার মেমরী কার্ড ভরিয়ে ফেলছে! তা আম্মাজিরা, তোমরা নিজেদের পশ্চাৎদেশের ছবি নিজেদের কম্পিউটারেই রাখো না! ফেসবুকে শেয়ার করতে যাও কেন? কারিনা কাপুরের গানটা দেখতে গেলে চোখে আপনাদের ছবিগুলো ভেসে উঠে। বিশ্বাস করুন, দৃশ্যটি মোটেও সুখকর নয়! কেন সাধারণ জনতার জীবনটা এইভাবে বর্বাদ করে দিলেন?

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৬:৫৪

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: কি বিচিত্র কি বিচিত্র। পশ্চাৎদেশের সেলফির যে এমন সংক্রামক বিস্তার ঘটেছে তাতো জানতামই না।

শুভেচ্ছা।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৩৬

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: জ্বী, এটাই আফসোস, বাঙালী বাজে জিনিসটাই আগে ফলো করে!

২| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৬:৫৫

খেয়া ঘাট বলেছেন: একটা কিছু চালু হলেই হলো, বাঙ্গালীরা ঝাপিয়ে পড়ে তার পিছনে।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৩৬

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ঠিক বলেছেন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.