নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্যানভাসের জন্মকথা

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:৩৮

ফেসবুকে নিউজ ফেডে একদিন দেখি এক আপু "ভূতুড়ে গল্প" নামের একটা পেজ লাইক করেছেন। এর আগেই দুয়েকজন বন্ধুবান্ধবকে দেখেছি দুয়েকটা ভৌতিক পেজে লাইক দিয়ে বসেছে। আগেই বলে নেই, রেডিও ফূর্তিতে যে "ভূত এফএম" নামের একটা শো তখন চলছে, সেটা সম্পর্কে আমার বিন্দু মাত্র ধারণা ছিল না। এই কারণেই যে ঝাকে ঝাকে ভৌতিক পেজ কেন খোলা হচ্ছে, সেটা বুঝতে পারিনি। আমি তখনও ভাবছি, সবার মনে হঠাৎ এত ভূতপ্রীতি জাগলো কিভাবে?

বাংলা পেজ দেখে মনে কৌতূহল জাগলো। গেলাম পেজটি দেখতে। ভৌতিক গল্পে পেজটি ভরপুর। প্রত্যেক লেখক দাবী করছেন ঘটনাগুলো সত্যি সত্যিই তাদের জীবনে ঘটেছে। ভূতে কোনকালেই বিশ্বাস ছিল না, তবে ভৌতিক গল্প পড়তে কার না ভাল লাগে? পড়তে শুরু করলাম। দুই একটা ঘটনা বাদে সবগুলিই ফালতু। কিছু কিছু হাস্যকর রকমের ফালতু! একটা ছেলে লিখেছে, যেহেতু তার আগের লেখা অনেক পাঠক পছন্দ করেছেন, কাজেই সে তার নিজের জীবনের আরেকটি অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করছে। তাকে নাকি তার হুজুর বলেছেন, সূরাহ জ্বীন চল্লিশবার পড়লে জ্বীন নেমে আসে। তাই জ্বীন নামানোর আশায় সে চল্লিশ বার সূরাহ জ্বীন পড়া শুরু করে। উনচল্লিশ বার খতম করার পরে তার ঘরের বাতি আপনাআপনি নিভে যায়। বাইরে শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। সে বুঝতে পারে কারা এ কাজ করছে। তবু সে চাঁদের আলোয় সূরাহ পড়ে শেষ করে, এবং তারপরই দেখে তার সামনে বিকটাকার এক লোমশ মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে!

জ্বীন তাকে বলে, "তুই আমাকে কেন ডেকে আনলি? এবারে আমি তোকে মেরে ফেলবো!"

সে বুঝতে পারে তার প্রাণ সংশয়ে। সে তখন বুদ্ধি করে আয়াতুল কুরছি পড়তে শুরু করে। এবং তিনবার পড়ার সাথে সাথে জ্বীন তার ঘর থেকে চলে যায় এবং ঘরের বাতি ফিরে আসে! গল্পের শেষে সে বলেছে, কেউ যেন চল্লিশবার সূরাহ জ্বীন পড়ার চেষ্টা না করে। তার সাথে যা ঘটেছে, এটা যেন আর কারও সাথে না ঘটে।

ভয় পাবার জায়গায় হাসি পেল খুব। কমেন্ট পড়ে আরও মজা পেলাম। একজন পাঠক লিখেছেন, "ফালতু! পুরাই আজগুবি।"

তার জবাবে ছেলেটা লিখেছে, "এইজন্যই বাঙ্গালীর কোন উপকার(!?!?!?!) করতে নেই। আমার সাথে ঘটেছে, তাই আমি জানি কেমন লাগে! আল্লাহর কাছে দোয়া করি, এমনটা যেন আর কারও জীবনে না ঘটে।" ইত্যাদি ইত্যাদি।

আরে বাবাজি! সূরাহ জ্বীন পড়লেই যদি জ্বীন নেমে যেত, তাহলে বাংলাদেশের শিল্পকলা একাডেমীর মিলনায়তনে প্রতিদিন জ্বীন নামানো শো হতো। বাঙ্গালীর যে বুদ্ধি, দেখা যেত নিউ মার্কেট গাউছিয়ায় বোতলে করে জ্বীন বিক্রি হচ্ছে। হোমিও প্যাথির শিশিতে বন্দী ছোট জ্বীন একশো টাকা, হরলিক্সের বয়ামে বন্দী বড় জ্বীন, পাঁচশো টাকা। আর খাঁটি আরবী জ্বীনের দামও থাকতো সবচেয়ে বেশি, হাজারের উপরে। বোতলের লেবেলে লেখা থাকতো, "নকল হইতে সাবধান! আসল জ্বীন দেখে কিনুন।"

সে যাক, এই সমস্ত লেখা পড়তে পড়তে মনে হলো, আমি নিজেও কিছু কিছু ভৌতিক ঘটনা শুনেছি। কাজেই এসব শেয়ার করাই যায়। তাছাড়া লেখালেখির শখতো মনের ভিতর ছিলই। সেটাও একটু ঝালাই হয়ে যাবে।

লিখে ফেললাম একটা গল্প।

তারপরে মনে হলো, এই সমস্ত আলতু ফালতু পেজে আমার লেখা দিব? প্রত্যেক লেখকের কাছেই তাঁর নিজের লেখা নিজের সন্তানসম। প্রত্যেক বাবা মাই যেমন চান সন্তানকে একটি ভাল স্কুলে পাঠাতে, আমারও তেমন ইচ্ছে হলো, লেখাগুলো একটি ভাল পেজে পোস্ট করতে। এবং সমস্যা দেখা গেল, ঘুরে ফিরে অনেক পেজ দেখার পরেও কোনটাই পছন্দ হলো না। সব স্কুলই বাজে ছাত্রে ভরপুর!

চিন্তা করলাম, নিজের পেজ খুললে কেমন হয়? এই পেজে মানুষ নিজের নিজের "ক্রিয়েটিভিটি" শো করবে। কেউ লিখবে, কেউ আঁকবে, কেউ ছবি দেখাবে। বাকিরা শুধুই পড়বে এবং মন্তব্য করবে। পেজটির নাম হবে "ক্যানভাস।" সাদা ক্যানভাসে যেমন শিল্পী যা খুশি আঁকতে পারেন, তেমনি আমাদের ক্যানভাসেও মানুষ যা খুশি করতে পারবেন।

আলোচনা করলাম তারেকের সাথে। সে নিজেও এসব ব্যপারে দারুণ উৎসাহী! সে বলল, "দারুণ হয়! চল শুরু করা যাক!"

শুরু হলো ক্যানভাসের যাত্রা। একটি পেজ হিসেবে।

শুরুতেই পোস্ট করলাম একটি ভৌতিক গল্প। গল্পের শুরুতেই বলে নিলাম যে সেটি একটি বানানো গল্প। রহস্যময় সত্য ঘটনাগুলো পরে সিরিজ আকারে শেয়ার করা হবে। যে কোন মন্তব্য এবং সমালোচনাকে স্বাগত জানানো হবে।

ক্যানভাস পেজে প্রথম লাইক দেন আমার স্ত্রীর এক বান্ধবী। সেই আমার গল্পের প্রথম পাঠক। তার কাছে যখন মন্তব্য চাইলাম, সে বলল, "nice try."

ভাল-খারাপ কিছু বলল না। শুধু বলল ভাল চেষ্টা নিয়েছি।

তাকে বললাম, "তোমার নিজের যদি কোন লেখা থাকে, তাহলে পোস্ট করে দিতে পারো।"

সে দিল স্বরচিত একটি কবিতা। কবিতার ভাষা পড়ে আমার মাথায় প্রথম যে কথাটি এলো তা হচ্ছে, "বাবারে!"

ওটা বাংলা ভাষা ছিল? বাংলা ভাষা এত কঠিন হয়?

বুঝে গেলাম, কবিতা নামক সাহিত্য কর্ম আমাকে দিয়ে হবে না। আমাকে দিয়ে কোনরকম সাহিত্যকর্মই হবে না। যা হবে, তা হচ্ছে গরুর বিষ্ঠা। গাছের সার ছাড়া যার তেমন কোন উৎকৃষ্ট ব্যবহার নেই।

দমলাম না। মেয়েটিকে অ্যাডমিন বানিয়ে দিলাম। সে করুক কঠিন সাহিত্য কর্ম। আমি আমার গু গোবর পোস্ট করতে থাকি। পেজটা তাহলে একটু ব্যালেন্সড হবে।

ক্যানভাস পেজে প্রথমেই যে সমস্যার সম্মুখীন হলাম, তা হচ্ছে, কেউ লাইক দিচ্ছে না। নানান পেজের অ্যাডমিনদের দেখি লাইকের জন্য রীতিমতন ভিক্ষা করেন।

কেউ কেউ এমন মেলোড্রামাটিক লেখা লেখেন যা পড়লে হাসি চলে আসে।

"জানি কেউ লাইক দিবেন না। অনেক আজে বাজে পোস্টে লাইক দেয়া হলেও ভাল পোস্টে লাইক আসে কম। কিন্তু আমরা আমাদের কাজ আমরা করে যাব, কষ্ট হলেও শুধুমাত্র আপনাদের জন্য ভাল ভাল পোস্ট করে যাব....."

আমরা হচ্ছি চৌধুরী, আমরা করবো ভিক্ষা? প্রশ্নই আসে না। যা শালার, দরকারই নাই তোদের লাইকের।

তারেক সমাধান নিয়ে হাজির হলো। বলল, ক্যানভাসকে গ্রুপাকারে চালু করতে। তাহলে লাইকা-লাইকির কোন ঝামেলা থাকবে না। আবার ইচ্ছা করলে আমরা সব লেখা ফাইলাকারেও সেভ করে রাখতে পারবো। পেজে পোস্ট করা সব লেখাতো চাপা পড়তে পড়তে একটা সময়ে হারিয়ে যায়। গ্রুপে এই সমস্যা থাকবে না।

বুদ্ধি ভাল। ব্যস, জন্ম হলো ক্যানভাস গ্রুপের। দুইহাজার বারো সালের ফেব্রুয়ারী মাসেই জন্মেছিল ক্যানভাস। খুব সম্ভব শেষের দিকে। তারিখটা মনে নেই। তাই এখন আফসোসেরও সীমা নেই।

শুরুতে কেউই ছিল না। তারেকের মাথায় নিত্য নতুন গল্প আসে। কিন্তু আলসেমীর জন্য তার আর লেখা হয়ে উঠে না। আমার নিজেকেই লিখতে হয়েছে অবিরত। প্রতিদিন দুই তিনটা করে গল্প লিখে পোস্ট করেছি। ধীরে ধীরে সাহস এতই বেড়ে গেল যে সম্পূর্ন উপন্যাসই লিখে ফেললাম! এখন মনে হচ্ছে, সেই সব উপন্যাসগুলোকে আরেকটু ঘষামাজা করে রিপোস্ট করতে হবে। তখন হাত ছিল কাঁচা, এখনও পেকেছে বলা যাবে না, তবে আগের চেয়ে যে ভাল হয়েছে, সেটা নিজেই বুঝতে পারছি।

ক্যানভাসের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ পেয়েছি, সবচেয়ে বড় অভিযোগটা হলো, ফেসবুকে সার্চ করলে ক্যানভাসকে খুঁজে পাওয়া যায় না। বাংলায় নাম হওয়ায় এই সমস্যা হচ্ছে। আমরা এই কারণে দুঃখিত। অনেক চেষ্টা করেছিলাম, নামটিকে ইংরেজীতে পাল্টে ফেলতে, পারা যায়নি।

আরেকটি অভিযোগ হচ্ছে, ক্যানভাসের পাঠকেরা লাইক, মন্তব্য কিছুই করেননা। এতে অনেক লেখকই নিরুৎসাহীত হন। যেখানে অন্যান্য পেজে পোস্ট করার সাথে সাথেই লাইক এবং মন্তব্য গুনতে গুনতে তাঁরা হাঁপিয়ে উঠেন, সেখানে ক্যানভাসে তাঁদের লেখা কেউ পাত্তাই দেয় না। সংগত কারণেই তাঁরা এখানে তাঁদের লেখা পোস্ট করতে চাননা। এই বিষয়টা আসলে আমিও লক্ষ্য করেছি। এবং স্রেফ এই কারণেই আমরা অনেক লেখক, কবিকে হারিয়ে ফেলেছি। অনেক ফটোগ্রাফার তাঁদের ছবি পোস্ট করা বন্ধ করে দিয়েছেন। এমন নয় যে কেউ পড়েন না, পড়েন ঠিকই, তবে তাঁরা নিজেদের "সাইলেন্ট রীডার" হিসেবে পরিচয় দিতে ভালবাসেন। তাঁদের কাছে অনুরোধ, আপনাদের ভাল লাগলে অবশ্যই একটি লাইক অন্তত দিবেন। কোন লেখকের মতামতের সাথে যদি দ্বিমত থাকে, তবে অবশ্যই সেটা মন্তব্যে প্রকাশ করবেন। কোন সমালোচনা করার থাকলে সেটাও। আপনাদের এই কন্ট্রিবিউশনে আমরা কিছু লেখক, শিল্পী, কবি ধরে রাখতে পারবো। উৎসাহিত হয়ে আরো নতুন নতুন লেখক গ্রুপে জয়েন করবেন। আপনারাও নতুন নতুন লেখকের লেখা পড়তে পারবেন। একঘেয়েমি আসবে না।

ক্যানভাসের সাথে থাকার জন্য সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ! আপনারা আছেন বলেই আমরা আমাদের হিজিবিজি লেখা লেখার সাহস পাই। আপনারা আমাদের লেখাগুলোকে তাদের দূর্বলতাগুলো উপেক্ষা করে আলিঙ্গন করেন পরম ভালবাসায়। আপনাদের এই ভালবাসারই আমাদের বড় বেশি প্রয়োজন।

ক্যানভাসের লিংক: https://www.facebook.com/groups/canvasbd/

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.