নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
আমি দুইহাজার সাত সালের মে মাসে অ্যামেরিকা আসি। শুরুতে উঠি চাচার বাসায়, ক্যালিফোর্নিয়ায়। আমার গন্তব্য ডালাস, টেক্সাস। দুই একমাসেই ইনশাআল্লাহ যাত্রা শুরু করবো।
ফুপাতো ভাই তারেকের সাথে ফোনে কথা বলি। তারেক আমাকে প্রথম কথাই বলে, "তুমি সরাসরি ডালাস চলে আসতা! তাহলে এ আর রেহমানের কনসার্ট মিস করতা না!"
আফসোসে আমি আমার হাত কামড়ালাম। এই লোকটার যে কত বড় ভক্ত আমি! এই কিছুদিন আগেই "রাং দে বাসান্তি" বেরিয়েছে। আমার মাথায় তখন ঘুরছে "খালবালি হ্যায় খালবালি....।" আমার মাথায় এখনও ঘুরছে "খালবালি হ্যায় খালবালি....." সহ অসংখ্য গান।
তিন বছর পর আমার শখ পূরণ হলো। তিনি আবার আসলেন ডালাসে। প্রায় দেড়শো ডলারের টিকেট কেটে আমরা গেলাম তাঁকে দেখতে। এত টাকার টিকেট কাটার শুধুই একটা উদ্দেশ্য, মঞ্চের যত কাছাকাছি থাকা যায় আর কি। যদিও কনসার্টটি তেমন ভাল লাগেনি। তাঁর মতে মিউজিক হ্যাজ নো ল্যাঙ্গুয়েজ। কিন্তু একের পর এক তামিল গান গেয়ে গেলে আমাদের চলবে? বিখ্যাত বিখ্যাত হিন্দি গানগুলোও তিনি তামিলে গেয়ে গেলেন। দক্ষিণ ভারতীয়রা মাতোয়ারা হয়ে গেলেও আমরা যারা কেবল হিন্দি বুঝি, তারা চুপচাপ বসে তালি বাজিয়ে গেলাম। আমার কয়েকটা বন্ধু কনসার্ট শেষে সরাসরিই বলে দিল, "জমলো না।"
ভারতীয় সঙ্গীত জগতের "বটম লাইন" হচ্ছেন এই মিউজিক মায়েস্ত্র। তিনি আমাদের দেশে এসে কনসার্ট করে গেছেন, এটা আমাদের দেশের দর্শকদের অনেক বড় সৌভাগ্য! কিন্তু সবকিছুর মত, এখানেও আমরা একটা ভুল করে ফেলেছি। তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো উচিৎ ছিল দুইহাজার এগারোর বিশ্বকাপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, কারণ তখন আমাদের সাথে যৌথ আয়োজক ছিল ইন্ডিয়া এবং শ্রীলংকা। এবারের আয়োজক কেবলই আমরা একা কিনা। এখানে অন্তত কেবল আমাদের শিল্পীদের প্রাধাণ্য দিলে কেউ কোন বিচার নিয়ে আসতো না। এ আর রেহমানের কনসার্ট আলাদা ভাবে অন্য একদিন করলে খুব কি বেশি ক্ষতি হতো?
উদাহরণ সংজ্ঞার চেয়ে বেশি কার্যকরী। কাজেই উদাহরণ দিয়েই বুঝাই।
আমরা প্রবাসীরা যখন দেশে যাই এবং আমাদের পরম আঁতেল কোন বন্ধু যদি আমাদের দাওয়াত করে খাওয়াতে পিৎজা হাটে নিয়ে যায়, তখন ইচ্ছা করে গাধার মাথায় চেয়ার তুলে বাড়ি মারি। আমরা দেশে গিয়েছি দেশীয় খাবার খেতে। ঘরের রান্না করা পোলাও, ভাত, মুরগীর রোস্ট, খাসীর রেজালা, ডাল, কচুর লতি দিয়ে চিংড়ি মাছ ভুনা, ভর্তা.....তোর সামর্থ্যে যা আছে তা খাওয়া। বাইরে খাওয়াতে চাইলে হাজির বিরিয়ানি, নান্নার মোরগ পোলাও, মুস্তাকিমের চাপ, শিক কাবাব খাওয়া! কেএফসি আর পিৎজা হাটে খেতে হলে আমি বাংলাদেশে যেতাম? কেএফসিতো আমি এদেশেই খাইনা।
তেমনি, আমাদের জেমস, আইয়ুব বাচ্চু, বাপ্পা, পার্থ, ফুয়াদ, সুমন এবং আরও অনেকে থাকতে কেন আমাদের বিদেশী শিল্পী আনতে হবে আমাদেরই আয়োজন করা একটি ইভেন্টে? বলিউডের কোন অনুষ্ঠানে দেখা যায় জেমসকে গিয়ে ভিগি ভিগি গান লাইভ গাইতে? উল্টা আতিফ আসলামকে "বেসুরো" বলে অপমানিত করা হয়।
বেস বাবা সুমনের আজকের ফেসবুক স্ট্যাটাস, "আমার ভাই এর রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি? হাহাহাহাহা, জ্বী... টিভি দেখুন "
মনে কতটুকু অভিমান জমলে তিনি এভাবে লিখেন।
এক বান্ধবী লিখেছে, লাইভ অনুষ্ঠানের একটা বড় অংশ মিস করার পর টিভি ছেড়ে সে একটাও বাংলা গান শুনতে পায়নি। বুঝতে পারছে না এটা কি আইপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কিনা।
ব্যান্ড লেজেন্ড আইয়ুব বাচ্চু লিখলেন, "দেশী বলেই বিশ মিনিট সুযোগ পেয়েছি। বিদেশী হলে আরও বেশিক্ষণের জন্য সুযোগ পেতাম। আরেকবার জন্মালে বিদেশী হয়ে জন্মাতে চাই।"
সোলসের পার্থদা লিখলেন, "শুধু আমরাই বেসুরো গাইলে দোষ!"
আমি জীবনে বহু গায়কের কনসার্টে গেছি। তবে আমার অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে জমজমাট কনসার্ট পারফরমার আমাদের নগরবাউল জেমস। এআর রেহমানেরও কনসার্টে ঝিমুনি এসে গিয়েছিল, জেমসের কনসার্টে আমি সারাক্ষণ পায়ের উপরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। যারা তাঁর কনসার্টে গেছে, তারা আমার সাথে একমত হতে বাধ্য। অ্যামেরিকা থেকে একনকে ডেকে আনা হলো। আমাদের দেশে জেমস একন থেকে বেশি জনপ্রিয়। সেই জেমসই নেই অনুষ্ঠানে।
অবশ্য এ ব্যপারে নগর বাউলের একটা আলাদা অভিমান থাকতে পারে। আদনান সামির একটি কনসার্টে জেমসকে ডাকা হয়েছিল গান গাইতে। এমনিতে মানুষ তাঁকে "গুরু গুরু" বলতে পাগল হলেও সেদিন গুরু মঞ্চে উঠতেই আমাদের দেশপ্রেমিক দর্শকেরা চ্যাচামেচি শুরু করে দিল তাঁকে বিদায় নিতে এবং আদনান সামিকে দ্রুত মঞ্চে আনতে। গুরু যদি অভিমান করেই থাকেন যে বিদেশীদের সাথে একই মঞ্চে আর গান নয়, তাহলে তাঁকে কি খুব দোষ দেয়া যায়?
আমরা আমাদের গুনী শিল্পীদের সম্মান করতে জানিনা। মানুষকে অপমান করাতেই বিমল আনন্দ পেয়ে থাকি। এই অনুষ্ঠানের পোস্টারে নাকি কেবল এ আর রেহমান এবং একনের ছবিই গেছে। অন্যান্য শিল্পীদের ছবি যায়নি। অথচ তাঁরা প্রত্যেকেই কিন্তু লেজেন্ড! তাঁদের এই অপমানের কোন ব্যাখ্যা হয়?
আজকে যদি দেশের সব শিল্পীরা একজোট হয়ে বলতেন, তাঁরা কনসার্টে গান করবেন না, তাহলে আমাদের আয়োজকদের খুব কি বেশি যেত আসতো? মুশফিক যেমন আইপিএলে সাইন করেনি, কারণ বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের যথেষ্ট সম্মান তাঁরা করেননা, এতে আইপিএলের কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে গেছে? কিছুই হয়নি। উল্টো মুশফিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কয়েক কোটি টাকা কম জমা হলো। কিন্তু আমাদের হৃদয়ে আমাদের ছোটখাট শরীরের ক্যাপ্টেনটি বিশাল স্থান দখল করে নিয়েছে। লঙ্কা ওয়াশের পরে এশিয়া কাপের সব ম্যাচ হারলে, বিশেষ করে আফ্রিদির ক্যাচ ছাড়ার পরেও তাঁর সে স্থান এতটুকু কমেনি।
তাহসান ভাই আজকে লিখলেন, "অনেক দিন আগের কথা। আমার এক ভাতিজা নতুন এক হিন্দী সিনেমার গান গাইছিলো। কথাগুলো এমনঃ
“ফির ভি দিল হেই হিন্দুস্তানি”।
আমি বকা দিয়ে বলি, তুই বাংলাদেশী বাঙ্গালী হয়ে…
আমাকে শেষ করতে না দিয়ে ও বললঃ
“আমার দেশে এ আর রহমান আছে? সাহরুখ খান আছে? টেন্ডুল্কার আছে?”
উত্তর দিতে পারিনি। আজ চেষ্টা করব। প্রতিভার মাপে হয়তো আমরা অনেক ক্ষুদ্র। কিন্তু যতটুকু প্রতিভা এ দেশে আছে তার মর্যাদা থাকলে হয়তো প্রতিভার শিখরে এদেশেও কেও থাকতে পারতো।"
এরপরে আমার আর কিছু বলার থাকে না। বাংলাদেশের জন্য শুভ কামনা রইলো। আশা করি ইনশা আল্লাহ দারুন খেলে টাইগাররা সেমিফাইনাল, ফাইনাল পর্যন্ত যেতে পারবেন। আশা করি আমাদের দেশের বিপক্ষে খেলার সময়ে আমাদের বাঙ্গালি মেয়েরা তাদের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিবে না "বিরাট কোহলি! মাই লাভ!" "শাবাস আফ্রিদি!" আশা করি চামচামি বাদ দিয়ে আমাদের আয়োজকদেরও সুবুদ্ধির উদয় হবে।
১৩ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৫১
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
২| ১৩ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৩৪
আলী খান বলেছেন: কিচ্ছু করার নাই, ওখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও আছেন...
১৩ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৫১
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন:
৩| ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:০৭
মেহেদী হাসান '' বলেছেন: কিচ্ছু বলার নাই
৪| ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:০৯
সুমন কর বলেছেন: খানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও আছেন... X
৫| ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:১২
প্রবাসী পাঠক বলেছেন: সত্যিই লজ্জাজনক। আয়োজকদের ব্যাপারে কিছু বলতে চাইনা। কারণ বাংলাদেশে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা না হলে এ ধরনের আসনে কেউ বসতে পারে না এইটা অলিখিত আইন। কিন্তু আমাদের দর্শকরাও একই আচরণ করছে। দিনে দিনে আমরা জাতি হিসাবে হীনমন্যতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছি।
যতদিন মায়ের হাতের বানানো আলু ভর্তা আর কেএফসির পোরা মুরগির মধ্যে পার্থক্য আমরা না বুঝতে পারব, ততদিন এই রকম চলতেই থাকবে।
১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১:১২
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন:
৬| ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:১৭
মুসাফির... বলেছেন: আশা করি চামচামি বাদ দিয়ে আমাদের আয়োজকদেরও সুবুদ্ধির উদয় হবে।
-----------------------------------------------------------------------
>>> শুভ বুদ্ধির উদয় হবে না... কারন গত পাঁচ বছরে ইন্ডিয়ান শিল্পীদের দিয়ে অনেক অনুষ্ঠান হয়েছে। আর এসব নিয়ে সমালোচনা ও কম হয়নি। কিণ্তু ফলাফল শুন্য।
..... আমার মনে হয় এই সরকার বাঙ্গালীকে জোড় করে ভারতপ্রীতি শেখানোর চেষ্টা করছে।
১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১:১৩
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আমার আগের লেখাতেই আমি বলেছি, বেশি জোর করে খাওয়ালে বমি হয়ে যায়। মানুষ এখন বমি করছে, সরকার দেখতে পারছে না।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:২৯
বদিউজ্জামান মিলন বলেছেন: ধন্যবাদ। কনসার্ট না জমলেও লেখাটা জমলো..