নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্ম আমাদের নানান উপকারে আসে

১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:০৮

একটা বিকলাঙ্গ বৃক্ষের ছবি দেখা যাচ্ছে। মাটি ফুড়ে কিছুদূর সুস্থ স্বাভাবিকভাবেই সে বেড়ে উঠেছিল। মাঝে কিছু একটা হওয়ায় তার কোমরের দিকটা বেঁকে গিয়েছে। তারপর আবার সে সোজা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠেছে। নিচে ক্যাপশনে লেখা "রুকুরত অবস্থায় বৃক্ষ।"

আরেকটা পাথরের ছবি দেখলাম। পানির মাঝে বিশাল দ্বীপাকৃতির পাথর। সিজদাহরত মানুষের সাথে খানিকটা মিল আছে। সেখানেও লেখা "আল্লাহর দরবারে সিজদাহরত পাথর।"

একটা গরুর মাংসের মধ্যে লেখা আল্লাহু। ভেড়ার চামড়ার ডিজাইনে আল্লাহুর মিল। টমেটোর মধ্যে লেখা আল্লাহু। এরকম আরও কত কি! সব ছবির নিচে নিজস্ব ইন্টারপ্রিটেসনের সাথে লেখা, "লাইক দিন ও শেয়ার দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিন।"

লাইকের তালিকায় দেখি দশ হাজার, বিশ হাজার লাইক। শেয়ারের সংখ্যাও হাজার ছাড়ানো।

কেউ কেউ একটি চমৎকার কবরের ছবি দিয়ে বলেন, "প্রিয় নবীজি হজরত মুহম্মদের (সঃ) রওজা মোবারক। কয়টা লাইক ও শেয়ার পাওয়া যাবে?"

ঝড়ের বেগে লাইক ও শেয়ার পড়ে। মানুষ একটিবারের জন্যও চিন্তা করেনা নবীজির রওজা হিসেবে যে জিনিস দেখানো হচ্ছে, সেটা আসল নাকি নকল! নবীজির রওজার পাশে হযরত আবুবকর সিদ্দিকের কবর থাকার কথা। সাথে থাকবে একটি খালি স্থান, যেখানে হযরত ঈসার(আঃ) (যীশু খ্রিষ্টের) কবর হবে। সেগুলি কই? এই কবর আসলে ইরানের সুফী সাধক রুমীর কবরের ছবি। রাসূলের রওজা বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং পাবলিকও সেটা খাচ্ছে।

কয়েকজন আবার এক ডিগ্রী উপরের লেভেলের বাটপার। তারা একটা দোয়া, অথবা বানানো গল্প লিখে নিচে লিখে দেন, "যদি দশজন মানুষের কাছে এই গল্পটি পৌছে দিতে পারেন, তাহলে আগামী চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে আপনার সাথে ভাল কিছু ঘটবে। আর নাহলে আগামী চব্বিশ ঘন্টায় আপনার সাথে খারাপ কিছু ঘটবে।"

এইরকম একটা ম্যাসেজ পাবার পর জনৈক জনাব ফজলুর রহমান পাত্তা দেন না। তিনি অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময়ে পুলিশ তাঁকে আটকায়। স্পিডিংয়ের অভিযোগে তিনশো ডলারের একটি টিকেট পান। বাড়িতে ফিরেই তিনি সেই ম্যাসেজটি তাঁর পরিচিত মহলের সবার কাছে ফরোয়ার্ড করেন। সাথে নিজের অভিজ্ঞতাও যোগ করে দেন। আহাম্মক আর কাকে বলে!

ইসলাম ধর্ম একটি খুবই সেনসিটিভ বিষয়। আল্লাহর স্থান অনেক উঁচুতে। তাঁকে এত সস্তা বানানো উচিত না। কেউ যদি আল্লাহর মিরাকেল দেখতেই চায়, তাহলে সে আয়নায় নিজের চেহারাই দেখুক। সে নিজেই কি একটা মিরাকেল না? তার জন্ম হয়েছে কিভাবে? কিভাবে তার শরীরের প্রতিটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ফাংশন করছে? তার শরীরে প্রাণ কিভাবে ধরে রেখেছে? মিরাকেলের অভাব আছে?

বরং একটি বিকলাঙ্গ গাছ অথবা বাঁকা পাথর দেখে কিংবা গরুর মাংসে, ভেড়ার চামড়ায় আল্লাহু লেখা দেখে আমরা যদি সেগুলোকে শ্রদ্ধা করা শুরু করে দেই, পারত পক্ষে সেটাই ইসলামে শিরক, আল্লাহর দরবারে একমাত্র গুনাহ যার কোন মাফ নাই।

একটা বিরাট কঙ্কালের খুলির পাশে দেখলাম একজন মানুষ মাটি খোড়াখুড়ি করছেন। নিচে লেখা "কোরআন শরীফে বর্ণিত আদ জাতির অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রমাণ। লাইক ও শেয়ার দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিন।"

বেকুবটা কোরআনের কতটুকু পড়েছে? আদ জাতির বর্ণনায় আল্লাহ বলেছেন, মহা পরাক্রমশালী আদ জাতিকে ঘূর্ণিঝড়ের মাধ্যমে এমনভাবে ধ্বংশ করা হয়েছে যে তাদের একটি চিহ্ন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যাবেনা। পৃথিবীর বুক থেকে তাদের পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে। এতেই রয়েছে সবার জন্য শিক্ষা।

আল্লাহ যেখানে স্বয়ং বলছেন তাদের কোন চিহ্ন পাওয়া যাবেনা, সেখানে জনৈক ছাগল ফটোশপের মাধ্যমে এসেছেন ইসলাম প্রচার করতে! আর ঝাকে ঝাকে মূর্খ বেকুব সেটা গ্রহণও করছে! নামাজের নামে নাই, কোরআন পাঠের নামে নাই। নিজের চরিত্র শোধরানোর ব্যপারে মাথাব্যথা নাই। একে ঠকিয়ে, ওকে মেরে নিজে লাভ করতে চায়। আর শুধু ফেসবুকে কয়েকটা ছবিতে লাইক আর শেয়ার দিয়েই জান্নাতে চলে যেতে চায়!

আমার বেড়ে উঠা সিলেটে। সিলেট শহর পরিচিত আধ্যাতিক নগরী হিসেবে। তিনশো ষাট আউলিয়ার কবর এই অঞ্চলেই অবস্থিত। বিখ্যাত দু মামা ভাগ্নের মাজারও সিলেটের প্রাণ।

শাহজালাল (রঃ) সাহেবের মাজারে আমার দাদির কবর, আমার বাবার কবর অবস্থিত। জীবনে কতবার যে সেই মাজারে গিয়েছি হিসেব নেই। সেখানে গেলেই ইসলাম ধর্মের বিকৃতি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। উদাহরণ দেই। উদাহরণ না দিলে আবার সহজে বোঝা যায় না।

"শবে বরাতের" রাতে কেউ দরগায় গিয়েছেন? সে এক দেখার মতন ব্যপার! লাখে লাখে মোমবাতি জ্বলে মাজার প্রাঙ্গনে। ফটোগ্রাফারদের জিভে পানি এনে ফেলার মত সুন্দর দৃশ্য! কিন্তু ইসলাম ধর্মে কোথায় এই ব্যাপরে অনুমতি দেয়া আছে? বরং মাজারের দেয়ালে সুস্পষ্টভাবে লেখা "মাজারে বাতি দেয়া হারাম!"

সেই লেখার পাশেই হাজারখানেক মোমবাতি জ্বলতে দেখা যায়। যেমন একটা দেয়ালে লেখা ছিল, "থুথু ফেলিবেন না।" সেখানে মানুষ থুথু ও পানের পিক ফেলতে ফেলতে "না" শব্দটাকে ঢেকে ফেলেছিল, শুধু লেখা ছিল "থুথু ফেলিবেন" - ব্যপার অনেকটা সেই রকম।

দেয়ালে আরও সুস্পষ্টভাবে লেখা "কবরে সেজদাহ করা হারাম!"

ঝাকে ঝাকে আহাম্মকের দল সেখানেই সিজদাহ দিচ্ছে।

হজরত মুহাম্মদ (সঃ) নিজে বলে গেছেন "এক আল্লাহর ইবাদত কর। ব্যক্তিপূজা ইসলামে নিষেধ।" নবীকেও (সঃ) সিজদা দেয়া হারাম। সেখানে আমরা দিব্যি কবরে গিয়ে মাথা ঠেকাই! ওরাকি বলতে চায় হযরত শাহজালাল(রঃ) নবীজির (সঃ) চেয়েও বড় ছিলেন? নাউজুবিল্লাহ!

অ্যামেরিকা ফিরে আসার দিন ঘনিয়ে আসছে। আব্বুর কবর জিয়ারত করতে গেলাম। আকাশ মেঘ্লাই ছিল। সিলেটের বৃষ্টি বিখ্যাত বৃষ্টি। আমার জিয়ারত শেষ হতে হতে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। আমি এসে দরগার যেখানে মিলাদ পড়ানো হয় সেখানে দাঁড়ালাম। একটা লোক খুব উঁচু গলায় ঘোষণা দিতে দিতে মাজার থেকে বেরিয়ে আসলো, "বাবা আমার দোয়া কবুল করেছে! বাবার দরবারে আমি চোখের পানি ফেলেছি, বাবা আকাশ থেকে বৃষ্টির পানি ফেলেছেন! বাবা সত্য! আউলিয়া সত্য! ইসলাম সত্য!"

কয়েকজনকে দেখলাম লোকটার কথায় মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে। এদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখেই বোঝা যায় এরাও লোকটার মত পার্টটাইম মুসলমান। বিপদে পড়েছে, এখন আল্লাহকে খুঁজতে দরগায় এসেছে। নিজের ঘরে, মসজিদে যদি আল্লাহকে না পাওয়া যায়!

আহারে!

বিশালাকৃতির সেই কঙ্কালের একই ছবির নিচে আমি দেখেছিলাম একজন লিখেছিল, "ঘটৎকচের (মহাভারতের চরিত্র, ভীমের ছেলে) কঙ্কাল উদ্ধার!" সেখানেও দেখি হাজারে হাজারে হিন্দু ভাইয়েরা লাইক ও শেয়ার দিয়ে ভরিয়ে তুলছেন। গরুর চামড়ায় দেখলাম "ঔ"(ওম চিহ্ন) লেখা। সেই গরু হয়ে যাচ্ছে সেলিব্রেটি! ঠিক যেমনটা হয়ে গেছে সিজদাহরত পাথর, অথবা রুকুরত বৃক্ষ!

জয় হোক ফটোশপের!

হয়তো খুব শীঘ্রই আমাদের স্কুলের সিলেবাসে একটি নতুন রচনার বিষয় যুক্ত হবে, "ধর্ম।" বাচ্চারা ভূমিকা, ব্যাকগ্রাউন্ড ইত্যাদি পরে এর ব্যবহারে লিখবে, "ধর্ম আমাদের নানান উপকারে আসে। রাজনৈতিক নেতারা ভোট বাড়াতে ধর্মকে ব্যবহার করে থাকেন। ফেসবুকের পেজের অ্যাডমিনরা তাদের লাইক বাড়াতেও এর ব্যবহার করে থাকেন। প্রেমিকার পিতা মাতার মন জয় করতে ইদানিং প্রেমিকদের দেখা যায় তাঁদের সামনে নিয়মিত নামাজ আদায় করতে। কাজেই মানব জীবনে ধর্মের উপকারের কথা বলে শেষ করা যাবেনা।"

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৪৬

মোঃ আবুল হোসেন (হাবিব) বলেছেন: আপনার বক্তব্যের ফুলঝুরির সাথে পুরোপুরি একমত।
কেন জানি মনে হচ্ছে এটা আমারই আগে বলতে পারা উচিত ছিল... হাঃ হাঃ

১৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ২:১৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: খুব কি বেশি দেরি হয়ে গেছে?

২| ১৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:০২

অংকন কুরী বলেছেন: শেয়ার করলাম

১৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ২:১৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!

৩| ১৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৫৭

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: ইসলাম ধর্ম একটি খুবই সেনসিটিভ বিষয়। আল্লাহর স্থান অনেক উঁচুতে। তাঁকে এত সস্তা বানানো উচিত না। কেউ যদি আল্লাহর মিরাকেল দেখতেই চায়, তাহলে সে আয়নায় নিজের চেহারাই দেখুক। সে নিজেই কি একটা মিরাকেল না? তার জন্ম হয়েছে কিভাবে? কিভাবে তার শরীরের প্রতিটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ফাংশন করছে? তার শরীরে প্রাণ কিভাবে ধরে রেখেছে? মিরাকেলের অভাব আছে?

কিছু অত্যন্ত খাঁটি কথা লিখেছেন। অনেক চিন্তার খোরাক পেলাম। ধন্যবাদ।

১৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ২:১৪

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ!

৪| ১৫ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১০:৫৭

জো জো বলেছেন: অনেক ভাল লাগলো।

১৬ ই মার্চ, ২০১৪ ভোর ৫:১৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৫| ১৭ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১:৩১

ভারসাম্য বলেছেন: অনেক দামী দামী কথা লিখেছেন।

+++

১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:২১

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.